নাশপাতি চাষের অপার সম্ভাবনা by আকমল হোসেন
নাশপাতি
বিদেশি ফল। এটি সাধারণত শীতপ্রধান অঞ্চলে ব্যাপক ফলে। সাত সাগরের ওপার
থেকে এ দেশে নাশপাতি আসে। অন্য ফলের পাশাপাশি নাশপাতি নামটি অনেকের কাছেই
পরিচিত। তবে এই আকর্ষণীয় ও স্বাদু ফলটিও বাংলার মাটিতেও যে ফলতে পারে, এ
ধারণা এখনো অনেকের নেই। আর তা শুধু শখের বাগানেই নয়, বাণিজ্যিকভাবে এ দেশে
নাশপাতির চাষ সম্ভব।
মৌলভীবাজারের আকবরপুরে অবস্থিত আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে নাশপাতির চাষ হয়েছে। তাতে ফল ধরেছে। বাগানের গাছে ঝুলে আছে থোকা থোকা নাশপাতি। ফলের আকার ও স্বাদ ভালো। আমদানি করা নাশপাতির চেয়ে একটু বেশিই মিষ্টি।
আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের একটি এলাকায় নাশপাতির বাগান। সেখানে অনেকগুলো গাছ। তখন শ্রাবণের রোদে পুড়ছে বাগানটি। নাশপাতি ঝুলে আছে শাখায় শাখায়। রোদ, পোকামাকড় ও কাঠবিড়ালি থেকে নাশপাতি রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাগিং প্রযুক্তি। প্রতিটি গাছে সাদা সাদা ব্যাগে মোড়ানো নাশপাতি।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, নাশপাতির মাতৃবাগানটি করা হয়েছিল ২০১০ সালে। এতে এখন ৩৫টি গাছ আছে। ফল আসবে কি না, এলেও ফলন কতটা ভালো হবে, স্বাদ হবে কি না—এমন নানা প্রশ্ন ছিল কৃষিবিজ্ঞানীদের মাথায়। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে ২০১৭ সাল থেকে নাশপাতিবাগানে ফল আসতে শুরু করেছে। চৈত্র মাসে ফুল আসে। আর শ্রাবণ-ভাদ্রে ফল তোলার উপযোগী হয়ে ওঠে। ফলনও ভালো, ফলের আকারও বড়। প্রতিটি গাছে ৬০ থেকে ৭০টি নাশপাতি ধরছে। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ১৩৫ গ্রাম। ফল বাদামি রঙের। ফলের উপরিভাগের ত্বক কিছুটা খসখসে। শাঁস সাদাটে। খেতে কচকচে ও সুস্বাদু। বিদেশ থেকে যেসব নাশপাতি আনা হয়, তার স্বাদ কিছুটা পানসে। কিন্তু আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের নাশপাতির স্বাদ কিছুটা নোনতা ও বেশ মিষ্টি।
আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরফ উদ্দিন জানিয়েছেন, নাশপাতি মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায় এর ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া থেকেই নাশপাতি এ দেশে আমদানি করা হয়। তবে শীতপ্রধান অঞ্চলের হলেও এর কোনো প্রজাতি বা জাত অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় জন্মাতে ও ফলন হতে পারে। দেশে এই ফলের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি নাশপাতি-১ নামের নাশপাতির একটি জাত অবমুক্ত করে। সেই জাতেরই মাতৃবাগান আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। জাতটি নিয়মিত ফল ধারণে সক্ষম ও উচ্চফলনশীল। নাশপাতির গাছ খাড়া ও অল্প ঝোপ থাকে। পানি নিষ্কাশিত হয়—এমন মাটিতে নাশপাতির চাষ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে পানিনিষ্কাশনে ভালো সুবিধা ও দোআঁশ মাটি এবং মাটির পিএইচ মান ৫ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ নাশপাতি চাষের জন্য উত্তম। তবে এর চেয়ে কমবেশি হলেও নাশপাতি জন্মাতে ও ফলন দিতে পারে। নাশপাতি চাষের জন্য সূর্যালোক দরকার। শুষ্ক গরম বাতাস নাশপাতির জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে নাশপাতির গাছ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে না। সাধারণত শাখা কর্তন এবং গুটি কলমের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়ে থাকে। বর্ষাকাল কলম করার উপযুক্ত সময়। ফল সংগ্রহ এবং গাছের ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করার জন্য গাছের উচ্চতা ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার হলে ভেঙে বা ছেঁটে দিলে ভালো। নাশপাতির খাড়া ডালে নতুন শাখা-প্রশাখা কম হয়ে থাকে। শাখা-প্রশাখা কম হলে ফলন কম আসবে। যে কারণে ভারী কিছু বা দড়ি টানার সাহায্যে ঊর্ধ্বমুখী ডালকে মাটির দিকে নুইয়ে দিলে ভালো হয়। এতে করে ডালের বিভিন্ন স্থানে টান বা হালকা ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং ওই সব টানের স্থানে নতুন কুঁড়ি বা শাখার সৃষ্টি হয়। এতে ফলন ও ফলের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে কড়া রোদে নাশপাতির ত্বক নষ্ট হবে না। ফল সুন্দর থাকবে। পোকামাকড়ও আক্রমণ করতে পারবে না। কাঠবিড়ালি ফসল নষ্ট করতে পারবে না। এ অঞ্চলে কাঠবিড়ালি একটি বড় সমস্যা। কিন্তু ব্যাগিং করা ফল কাঠবিড়ালি নষ্ট করে না। প্রতি হেক্টরে ছয় থেকে সাত টন ফলন হতে পারে। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে সফল জাতটি চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের টিলা ও পাহাড়ি এলাকায় চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এসব এলাকায় নাশপাতি হতে পারে নতুন মৌসুমের একটি ফসল। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে যখন আম-কাঁঠাল, আনারস ফুরিয়ে যাবে, তখন এটি বাজারে আসবে। এই ফলের আমদানিনির্ভরতা কমবে।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এ দেশে এখনো বাণিজ্যিকভাবে নাশপাতির চাষ শুরু হয়নি। কিন্তু এটি একটি অপার সম্ভাবনাময় ফসল। পোকামাকড়, রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম। বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকাতে নাশপাতির চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া পানি জমে না, এমন মাটিতেও এই ফলের চাষ হবে।
মৌলভীবাজারের আকবরপুরে অবস্থিত আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে নাশপাতির চাষ হয়েছে। তাতে ফল ধরেছে। বাগানের গাছে ঝুলে আছে থোকা থোকা নাশপাতি। ফলের আকার ও স্বাদ ভালো। আমদানি করা নাশপাতির চেয়ে একটু বেশিই মিষ্টি।
আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের একটি এলাকায় নাশপাতির বাগান। সেখানে অনেকগুলো গাছ। তখন শ্রাবণের রোদে পুড়ছে বাগানটি। নাশপাতি ঝুলে আছে শাখায় শাখায়। রোদ, পোকামাকড় ও কাঠবিড়ালি থেকে নাশপাতি রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাগিং প্রযুক্তি। প্রতিটি গাছে সাদা সাদা ব্যাগে মোড়ানো নাশপাতি।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, নাশপাতির মাতৃবাগানটি করা হয়েছিল ২০১০ সালে। এতে এখন ৩৫টি গাছ আছে। ফল আসবে কি না, এলেও ফলন কতটা ভালো হবে, স্বাদ হবে কি না—এমন নানা প্রশ্ন ছিল কৃষিবিজ্ঞানীদের মাথায়। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে ২০১৭ সাল থেকে নাশপাতিবাগানে ফল আসতে শুরু করেছে। চৈত্র মাসে ফুল আসে। আর শ্রাবণ-ভাদ্রে ফল তোলার উপযোগী হয়ে ওঠে। ফলনও ভালো, ফলের আকারও বড়। প্রতিটি গাছে ৬০ থেকে ৭০টি নাশপাতি ধরছে। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ১৩৫ গ্রাম। ফল বাদামি রঙের। ফলের উপরিভাগের ত্বক কিছুটা খসখসে। শাঁস সাদাটে। খেতে কচকচে ও সুস্বাদু। বিদেশ থেকে যেসব নাশপাতি আনা হয়, তার স্বাদ কিছুটা পানসে। কিন্তু আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের নাশপাতির স্বাদ কিছুটা নোনতা ও বেশ মিষ্টি।
আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরফ উদ্দিন জানিয়েছেন, নাশপাতি মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায় এর ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া থেকেই নাশপাতি এ দেশে আমদানি করা হয়। তবে শীতপ্রধান অঞ্চলের হলেও এর কোনো প্রজাতি বা জাত অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় জন্মাতে ও ফলন হতে পারে। দেশে এই ফলের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি নাশপাতি-১ নামের নাশপাতির একটি জাত অবমুক্ত করে। সেই জাতেরই মাতৃবাগান আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। জাতটি নিয়মিত ফল ধারণে সক্ষম ও উচ্চফলনশীল। নাশপাতির গাছ খাড়া ও অল্প ঝোপ থাকে। পানি নিষ্কাশিত হয়—এমন মাটিতে নাশপাতির চাষ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে পানিনিষ্কাশনে ভালো সুবিধা ও দোআঁশ মাটি এবং মাটির পিএইচ মান ৫ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ নাশপাতি চাষের জন্য উত্তম। তবে এর চেয়ে কমবেশি হলেও নাশপাতি জন্মাতে ও ফলন দিতে পারে। নাশপাতি চাষের জন্য সূর্যালোক দরকার। শুষ্ক গরম বাতাস নাশপাতির জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে নাশপাতির গাছ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে না। সাধারণত শাখা কর্তন এবং গুটি কলমের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়ে থাকে। বর্ষাকাল কলম করার উপযুক্ত সময়। ফল সংগ্রহ এবং গাছের ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করার জন্য গাছের উচ্চতা ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার হলে ভেঙে বা ছেঁটে দিলে ভালো। নাশপাতির খাড়া ডালে নতুন শাখা-প্রশাখা কম হয়ে থাকে। শাখা-প্রশাখা কম হলে ফলন কম আসবে। যে কারণে ভারী কিছু বা দড়ি টানার সাহায্যে ঊর্ধ্বমুখী ডালকে মাটির দিকে নুইয়ে দিলে ভালো হয়। এতে করে ডালের বিভিন্ন স্থানে টান বা হালকা ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং ওই সব টানের স্থানে নতুন কুঁড়ি বা শাখার সৃষ্টি হয়। এতে ফলন ও ফলের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে কড়া রোদে নাশপাতির ত্বক নষ্ট হবে না। ফল সুন্দর থাকবে। পোকামাকড়ও আক্রমণ করতে পারবে না। কাঠবিড়ালি ফসল নষ্ট করতে পারবে না। এ অঞ্চলে কাঠবিড়ালি একটি বড় সমস্যা। কিন্তু ব্যাগিং করা ফল কাঠবিড়ালি নষ্ট করে না। প্রতি হেক্টরে ছয় থেকে সাত টন ফলন হতে পারে। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে সফল জাতটি চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের টিলা ও পাহাড়ি এলাকায় চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এসব এলাকায় নাশপাতি হতে পারে নতুন মৌসুমের একটি ফসল। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে যখন আম-কাঁঠাল, আনারস ফুরিয়ে যাবে, তখন এটি বাজারে আসবে। এই ফলের আমদানিনির্ভরতা কমবে।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এ দেশে এখনো বাণিজ্যিকভাবে নাশপাতির চাষ শুরু হয়নি। কিন্তু এটি একটি অপার সম্ভাবনাময় ফসল। পোকামাকড়, রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম। বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকাতে নাশপাতির চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া পানি জমে না, এমন মাটিতেও এই ফলের চাষ হবে।
No comments