উদ্বাস্তু ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে রোহিঙ্গারা by ড. আজিম ইব্রাহিম
রোহিঙ্গারা
এখন বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম উদ্বাস্তু ক্যাম্পটি দখল করে
আছে। জাতিসংঘ উদ্বাস্তুবিষযক কমিশনারের হিসাব অনুযায়ী, তাদের সংখ্যা প্রায় ৯
লাখ। তবে অনেকে মনে করেন, তাদের প্রকৃত সংখ্যা ১০ লাখ।
তারা প্রথমে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর শুদ্ধি অভিযান থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে নিরাপদ স্থান পেয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তা পেলেও আধুনিক পরিবেশে বাঁচার মতো অবস্থা পায়নি। এখন তারা আশ্রয় শিবিরগুলোতে যেভাবে রয়েছে, সেভাবে অন্তত তারা বাঁচতে চায়নি।
ঢাকা ও জাতিসংঘ উভয়েই আশায় ছিল যে উদ্বাস্তু পরিস্থিতি হবে সাময়িক। ফলে কক্সবাজার এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছিল সামান্যই। তখন মনে হচ্ছিল, শিগগিরই উদ্বাস্তুরা তাদের দেশে ফিরে যেতে পারবে। বাংলাদেশই একটি গরিব দেশ, এখানে রয়েছে হাজারো সমস্যা। ফলে উদ্বাস্তুদের যথাযথভাবে দেখাশোনা করার সামর্থ্য কই?
কিন্তু যে পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের তাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দিয়েছিল, তাতে কোনো উন্নতি ঘটেনি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা কক্সবাজারেই রোহিঙ্গাদের নতুন আশ্রয় বলে মেনে নিয়েছে।
অন্যদিকে ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করার সময় যেসব রোহিঙ্গার সাথে আমি কথা বলেছি, তারা সবাই নীতিগতভাবে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগ্রহের কথা বলেছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই তারা জোর দিয়ে বলেছে, পূর্ণ নাগরিক অধিকার ছাড়া তারা ফিরে যেতে পারে না। তারা আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততায় সমান অধিকার নিয়েই ফিরে যেতে চায়।
মিয়ানমার এখনো রয়েছে কঠোর সামরিক নিয়ন্ত্রণে। ওই দেশটিতে অমানবিক গণহত্যা চলছে। এমনকি আগে মানবাধিকার আইকন হিসেবে পরিচিত অং সান সু চি পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের গণহত্যার সমর্থক বলে মনে হচ্ছে।
অবস্থা যত দিন এমন থাকবে, তত দিন রোহিঙ্গাদের পক্ষে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করা অসম্ভব হবে। আর এমন পরিস্থিতিতে তাদেরকে ফিরে যেতে বাধ্য করাটাও হবে অপরাধমূলক কাজ।
ফলে আমাদেরকে এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। কক্সবাজারই রোহিঙ্গাদের শেষ ঠিকানা হওয়া উচিত নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে এসব লোকের দীর্ঘ মেয়াদি, টেকসই বসতির ব্যবস্থা করা।
মিয়ানমার সরকারকে যত দিন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে বাধ্য করা না যাবে, তত দিন পর্যন্ত এসব লোকের দায়িত্ব আমাদের গ্রহণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে, সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
বলা নিষ্প্রয়োজন, বাংলাদেশের পক্ষে এই আর্থিক বোঝা বহন করা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ দিয়ে তাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। যেসব দেশ তাদের আশ্রয় দিতে পারছে না, তাদের উচিত হবে আর্থিক সহায়তা দিয়ে উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করা। তারা রোহিঙ্গা জনসাধারণকে সরাসরি সহায়তা দিতে পারে যাতে তারা তাদের জীবনযাপন করতে পারে এবং বাংলাদেশ সরকারকেও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে যাতে যে ব্যয় বাংলাদেশ করছে, তা পূরণ হয়।
আর রোহিঙ্গারাও খুব বেশি কিছু চাচ্ছে না। তারাও রাষ্ট্রহীন গ্রুপ হিসেবে তাদের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মৌলিক মানবিক প্রয়োজনের বাইরে তারা কিছুই দাবি করছে না। বাস্তবে তারা বাংলাদেশের প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তারা আর কিছু চায় কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তাদের প্রায় সবাই তাদের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগের কথা জানিয়েছে। বোধগম্য কারণেই বাংলাদেশ উদ্বাস্তুদের পূর্ণ স্কুল সুবিধা দিতে আগ্রহী নয়। খরচ ছাড়াও নেতারা আশা করছেন, উদ্বাস্তু পরিস্থিতি সাময়িক। এখন তারা স্থায়ী সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করলে তাদের ভয় হবে যে বর্তমান অবস্থা মেনে নেয়া হয়েছে। এর অর্থ হবে রোহিঙ্গারা আর মিয়ানমারে ফিরে যাবে না, এমনকি সেখানে যদি যৌক্তিক পরিবেশও সৃষ্টি হয়।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, কক্সবাজারে প্রায় চার লাখ শিশু শিক্ষা বঞ্চিত থাকছে। আর রোহিঙ্গারাও ঠিক কথা বলছে, তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে তাদের শিশুদের শিক্ষার ওপর। আর শিক্ষার ব্যয় খুব বেশি নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর ব্যবস্থা করতে পারে।
তারা প্রথমে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর শুদ্ধি অভিযান থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে নিরাপদ স্থান পেয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তা পেলেও আধুনিক পরিবেশে বাঁচার মতো অবস্থা পায়নি। এখন তারা আশ্রয় শিবিরগুলোতে যেভাবে রয়েছে, সেভাবে অন্তত তারা বাঁচতে চায়নি।
ঢাকা ও জাতিসংঘ উভয়েই আশায় ছিল যে উদ্বাস্তু পরিস্থিতি হবে সাময়িক। ফলে কক্সবাজার এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছিল সামান্যই। তখন মনে হচ্ছিল, শিগগিরই উদ্বাস্তুরা তাদের দেশে ফিরে যেতে পারবে। বাংলাদেশই একটি গরিব দেশ, এখানে রয়েছে হাজারো সমস্যা। ফলে উদ্বাস্তুদের যথাযথভাবে দেখাশোনা করার সামর্থ্য কই?
কিন্তু যে পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের তাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দিয়েছিল, তাতে কোনো উন্নতি ঘটেনি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা কক্সবাজারেই রোহিঙ্গাদের নতুন আশ্রয় বলে মেনে নিয়েছে।
অন্যদিকে ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করার সময় যেসব রোহিঙ্গার সাথে আমি কথা বলেছি, তারা সবাই নীতিগতভাবে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগ্রহের কথা বলেছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই তারা জোর দিয়ে বলেছে, পূর্ণ নাগরিক অধিকার ছাড়া তারা ফিরে যেতে পারে না। তারা আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততায় সমান অধিকার নিয়েই ফিরে যেতে চায়।
মিয়ানমার এখনো রয়েছে কঠোর সামরিক নিয়ন্ত্রণে। ওই দেশটিতে অমানবিক গণহত্যা চলছে। এমনকি আগে মানবাধিকার আইকন হিসেবে পরিচিত অং সান সু চি পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের গণহত্যার সমর্থক বলে মনে হচ্ছে।
অবস্থা যত দিন এমন থাকবে, তত দিন রোহিঙ্গাদের পক্ষে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করা অসম্ভব হবে। আর এমন পরিস্থিতিতে তাদেরকে ফিরে যেতে বাধ্য করাটাও হবে অপরাধমূলক কাজ।
ফলে আমাদেরকে এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। কক্সবাজারই রোহিঙ্গাদের শেষ ঠিকানা হওয়া উচিত নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে এসব লোকের দীর্ঘ মেয়াদি, টেকসই বসতির ব্যবস্থা করা।
মিয়ানমার সরকারকে যত দিন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে বাধ্য করা না যাবে, তত দিন পর্যন্ত এসব লোকের দায়িত্ব আমাদের গ্রহণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে, সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
বলা নিষ্প্রয়োজন, বাংলাদেশের পক্ষে এই আর্থিক বোঝা বহন করা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ দিয়ে তাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। যেসব দেশ তাদের আশ্রয় দিতে পারছে না, তাদের উচিত হবে আর্থিক সহায়তা দিয়ে উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করা। তারা রোহিঙ্গা জনসাধারণকে সরাসরি সহায়তা দিতে পারে যাতে তারা তাদের জীবনযাপন করতে পারে এবং বাংলাদেশ সরকারকেও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে যাতে যে ব্যয় বাংলাদেশ করছে, তা পূরণ হয়।
আর রোহিঙ্গারাও খুব বেশি কিছু চাচ্ছে না। তারাও রাষ্ট্রহীন গ্রুপ হিসেবে তাদের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মৌলিক মানবিক প্রয়োজনের বাইরে তারা কিছুই দাবি করছে না। বাস্তবে তারা বাংলাদেশের প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তারা আর কিছু চায় কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তাদের প্রায় সবাই তাদের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগের কথা জানিয়েছে। বোধগম্য কারণেই বাংলাদেশ উদ্বাস্তুদের পূর্ণ স্কুল সুবিধা দিতে আগ্রহী নয়। খরচ ছাড়াও নেতারা আশা করছেন, উদ্বাস্তু পরিস্থিতি সাময়িক। এখন তারা স্থায়ী সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করলে তাদের ভয় হবে যে বর্তমান অবস্থা মেনে নেয়া হয়েছে। এর অর্থ হবে রোহিঙ্গারা আর মিয়ানমারে ফিরে যাবে না, এমনকি সেখানে যদি যৌক্তিক পরিবেশও সৃষ্টি হয়।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, কক্সবাজারে প্রায় চার লাখ শিশু শিক্ষা বঞ্চিত থাকছে। আর রোহিঙ্গারাও ঠিক কথা বলছে, তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে তাদের শিশুদের শিক্ষার ওপর। আর শিক্ষার ব্যয় খুব বেশি নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর ব্যবস্থা করতে পারে।
কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে ত্রাণের জন্য জড় হয়েছে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা |
No comments