পাকিস্তান-রাশিয়া সম্পর্ককে মনযোগের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে কাশ্মীর by উমে ফারওয়া আজিমি
পাঁচ
দশক পর প্রায় দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আবারো
কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে। জাতিসংঘের অসহায়ত্ব এতটা করুণ পর্যায়ে
পৌছেছে যে তা বুঝা যায় যখন আগ্রাসী শক্তিগুলোর মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক
আইন লঙ্ঘন নিয়ে সমালোচনা করা হয়। এ অবস্থায় একটি রাষ্ট্রের কিইবা করার আছে?
তারা তখন লবিংয়ের পথ বেছে নেয়। এ কাজটিই পাকিস্তান করেছে।
রাশিয়ার কূটনীতি
‘সর্ব মওসুমের বন্ধুকে’ বিশ্বাস করে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে যাওয়ার বিষয়টি ছিলো পাকিস্তানের বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। বৈঠকের আগে সে মস্কোর কাছে ধর্না দেয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি তার রুশ প্রতিপক্ষ সার্গেই লাভরভের সঙ্গে কথা বলেন, তবে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিলো আগ্রহশূণ্য, কূটনৈতিক বুলি সম্বলিত: উত্তেজনা কমাতে হবে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করতে হবে। জাতিসংঘে রাশিয়া তার ঐহিত্যবাহী অবস্থান বজায় রাখবে বলে জানান।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আসল সত্য হলো যা চোখে দেখা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু সেখানে থাকে। খুবই সতর্কতার সঙ্গে মস্কো তার কার্ড খেলেছে। কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা আয়োজনে নিজের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেনি মস্কো। এটা করে তারা ভারতের কাছে স্পষ্ট করে দিলো যে নিকট ভবিষ্যতে কাশ্মীর প্রসঙ্গ আলোচনার টেবিল থেকে বাদ পড়বে না। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া যে অবস্থান নিয়েছে এটা তার বিপরীত: কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠলেই ভেটো দেয়া। এতে স্পষ্ট হয় যে মস্কো চিরদিনের জন্য কাশ্মীরকে নয়া দিল্লির মর্জির উপর ছেড়ে দেয়নি। আগের দিন গত হয়েছে।
আলোচনা শুরুর আগে রাশিয়ার উপ স্থায়ী প্রতিনিধি দিমিত্রি পোলিনস্কি তিনটি দ্ব্যর্থবোধক টুইট করেন: রাশিয়ার মধ্যস্থতা করার ইচ্ছার ইংগিত দেন; দুই দেশের সঙ্গেই ভালো ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার কথা বলেন; ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি ও লাহোর ঘোষণার আলোকে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে বিরোধ মীমাংসা করা উচিত বলে ভারতকে মনে করিয়ে দেন। এসব টুইট বেশ বিভ্রান্তিকর।
রাশিয়ার কূটনীতিবি সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘ প্রস্তাবের প্রসঙ্গ উত্থাপন করতেই নড়চেড়ে বসেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। কারণ জাতিসংঘ প্রস্তাবটি মোটামুটিভাবে পাকিস্তান ও চীনের অবস্থান। জাতিসংঘ প্রস্তাবের কথা মনে করিয়ে দেয়া মানে কাশ্মীর কোন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়। এটা পাকিস্তানের জন্য একটি কূটনৈতিক বিজয়।
রাশিয়ার এরকম আচরণে খোদ মস্কোর বিশ্লেষকরাও অবাক হন। যদিও এক বিশ্লেষক রাশিয়া তার অবস্থান পরিবর্তন করেনি দাবি করে বলেন যে মস্কো তার কৌশলগত অংশীদার বেইজিংকে অসম্মান করবে এটা ভাবা যায় না। তাই রাশিয়া ভেটো না দিয়ে বরং নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বানে পাকিস্তানের অনুরোধে সাড়া দিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতের কথা কিছু বলা যাচ্ছে না।
মস্কোর সঙ্গে সুদূরের পথে হাটা
বিশ্ব দ্রুত বিশৃঙ্খলার পথে ধাবিত হচ্ছে, এতে সন্দেহ নেই। উদার বিশ্বব্যবস্থার এই ক্ষয় বর্তমানে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক কিভাবে তৈরী হবে তা নির্ধারণ করছে। এটাই পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কের বাস্তবতা। নতুন যুগে প্রবেশ করছে এই সম্পর্ক। এটা দীর্ঘ কঠিন খেলা। কেউ কেউ একে বলছেন ভূরাজনীতির পুনরুত্থান। আবার অন্যরা বলছেন – পুরনো গ্রেট গেমের পুনরুজ্জীবন। এই কঠোর বাস্তবতা আমাদের উপর এসে পড়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের জন্য এখন নতুন যুগের নতুন কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
এক সময় যে চীন ও রাশিয়া চোখে চোখ রেখে কথা বলতো তারা এখন ঘনিষ্ঠ মিত্র। জাতিসংঘের অধীনে ক্ষয়িষ্ণু ও পুরনো বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর পাওয়ার পলিটিক্স বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার ধারণাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। পাশাপাশি আরেকটি বিশ্বের উন্মেষ ঘটছে। এই বিশ্ব তৈরি করছে চীন ও রাশিয়া। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) ও গ্রেটার ইউরেশিয়ান ধারণা এমন এক ক্ষেত্র যেখানে পাকিস্তান তার অর্থনৈতিক দুর্দশা সত্ত্বেও চীন ও রাশিয়ার স্বার্থকে সমুন্নত রেখে ইউরোশিয়ান অঞ্চলে ভারতকে কঠিন অবস্থায় ফেলে দিতে পারে।
এসসিও ফোরামে চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রশ্নে ভারত একঘরে হয়ে আছে। এই একঘরে অবস্থা কাটাতে ১৪তম এসসিও ফোরামে ভারতকে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করতে দেখা যায়। বিআরআই অনুমোদন করেছে রাশিয়া, যা ভারতের অনুকূলে যায়নি। আসলে এমন অনেক মিল রয়েছে যা পাকিস্তান কাজে লাগাতে পারে। তবে এটা সহজ কাজ নয়, অনেক পথ পারি দিতে হবে।
আজকের রাশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়। এটা এক নতুন রাশিয়া, এটা এক আধুনিক রাশিয়া। পশ্চিমা ধারণা ও মানের মাপকাঠিতে তারা আধুনিক না হলেও উন্নয়নের জন্য এক নতুন ও অনন্য পথের সন্ধান করছে রাশিয়া। তাই ইসলামাবাদের নীতিনির্ধারকদের সামনে একটি নতুন সুযোগের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। আজকের দুনিয়ায় অর্থনীতির অধিক্ষেত্রে ভূরাজনীতির খেলাটি সবচেয়ে ভালোভাবে খেলা যায়। এটা পাকিস্তানকে তার ‘কৌশলগত গভীরতা’ প্রয়োগের সুযোগ করে দিতে পারে।
রাশিয়ার কূটনীতি
‘সর্ব মওসুমের বন্ধুকে’ বিশ্বাস করে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে যাওয়ার বিষয়টি ছিলো পাকিস্তানের বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। বৈঠকের আগে সে মস্কোর কাছে ধর্না দেয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি তার রুশ প্রতিপক্ষ সার্গেই লাভরভের সঙ্গে কথা বলেন, তবে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিলো আগ্রহশূণ্য, কূটনৈতিক বুলি সম্বলিত: উত্তেজনা কমাতে হবে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করতে হবে। জাতিসংঘে রাশিয়া তার ঐহিত্যবাহী অবস্থান বজায় রাখবে বলে জানান।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আসল সত্য হলো যা চোখে দেখা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু সেখানে থাকে। খুবই সতর্কতার সঙ্গে মস্কো তার কার্ড খেলেছে। কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা আয়োজনে নিজের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেনি মস্কো। এটা করে তারা ভারতের কাছে স্পষ্ট করে দিলো যে নিকট ভবিষ্যতে কাশ্মীর প্রসঙ্গ আলোচনার টেবিল থেকে বাদ পড়বে না। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া যে অবস্থান নিয়েছে এটা তার বিপরীত: কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠলেই ভেটো দেয়া। এতে স্পষ্ট হয় যে মস্কো চিরদিনের জন্য কাশ্মীরকে নয়া দিল্লির মর্জির উপর ছেড়ে দেয়নি। আগের দিন গত হয়েছে।
আলোচনা শুরুর আগে রাশিয়ার উপ স্থায়ী প্রতিনিধি দিমিত্রি পোলিনস্কি তিনটি দ্ব্যর্থবোধক টুইট করেন: রাশিয়ার মধ্যস্থতা করার ইচ্ছার ইংগিত দেন; দুই দেশের সঙ্গেই ভালো ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার কথা বলেন; ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি ও লাহোর ঘোষণার আলোকে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে বিরোধ মীমাংসা করা উচিত বলে ভারতকে মনে করিয়ে দেন। এসব টুইট বেশ বিভ্রান্তিকর।
রাশিয়ার কূটনীতিবি সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘ প্রস্তাবের প্রসঙ্গ উত্থাপন করতেই নড়চেড়ে বসেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। কারণ জাতিসংঘ প্রস্তাবটি মোটামুটিভাবে পাকিস্তান ও চীনের অবস্থান। জাতিসংঘ প্রস্তাবের কথা মনে করিয়ে দেয়া মানে কাশ্মীর কোন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়। এটা পাকিস্তানের জন্য একটি কূটনৈতিক বিজয়।
রাশিয়ার এরকম আচরণে খোদ মস্কোর বিশ্লেষকরাও অবাক হন। যদিও এক বিশ্লেষক রাশিয়া তার অবস্থান পরিবর্তন করেনি দাবি করে বলেন যে মস্কো তার কৌশলগত অংশীদার বেইজিংকে অসম্মান করবে এটা ভাবা যায় না। তাই রাশিয়া ভেটো না দিয়ে বরং নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বানে পাকিস্তানের অনুরোধে সাড়া দিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতের কথা কিছু বলা যাচ্ছে না।
মস্কোর সঙ্গে সুদূরের পথে হাটা
বিশ্ব দ্রুত বিশৃঙ্খলার পথে ধাবিত হচ্ছে, এতে সন্দেহ নেই। উদার বিশ্বব্যবস্থার এই ক্ষয় বর্তমানে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক কিভাবে তৈরী হবে তা নির্ধারণ করছে। এটাই পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কের বাস্তবতা। নতুন যুগে প্রবেশ করছে এই সম্পর্ক। এটা দীর্ঘ কঠিন খেলা। কেউ কেউ একে বলছেন ভূরাজনীতির পুনরুত্থান। আবার অন্যরা বলছেন – পুরনো গ্রেট গেমের পুনরুজ্জীবন। এই কঠোর বাস্তবতা আমাদের উপর এসে পড়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের জন্য এখন নতুন যুগের নতুন কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
এক সময় যে চীন ও রাশিয়া চোখে চোখ রেখে কথা বলতো তারা এখন ঘনিষ্ঠ মিত্র। জাতিসংঘের অধীনে ক্ষয়িষ্ণু ও পুরনো বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর পাওয়ার পলিটিক্স বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার ধারণাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। পাশাপাশি আরেকটি বিশ্বের উন্মেষ ঘটছে। এই বিশ্ব তৈরি করছে চীন ও রাশিয়া। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) ও গ্রেটার ইউরেশিয়ান ধারণা এমন এক ক্ষেত্র যেখানে পাকিস্তান তার অর্থনৈতিক দুর্দশা সত্ত্বেও চীন ও রাশিয়ার স্বার্থকে সমুন্নত রেখে ইউরোশিয়ান অঞ্চলে ভারতকে কঠিন অবস্থায় ফেলে দিতে পারে।
এসসিও ফোরামে চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রশ্নে ভারত একঘরে হয়ে আছে। এই একঘরে অবস্থা কাটাতে ১৪তম এসসিও ফোরামে ভারতকে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করতে দেখা যায়। বিআরআই অনুমোদন করেছে রাশিয়া, যা ভারতের অনুকূলে যায়নি। আসলে এমন অনেক মিল রয়েছে যা পাকিস্তান কাজে লাগাতে পারে। তবে এটা সহজ কাজ নয়, অনেক পথ পারি দিতে হবে।
আজকের রাশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়। এটা এক নতুন রাশিয়া, এটা এক আধুনিক রাশিয়া। পশ্চিমা ধারণা ও মানের মাপকাঠিতে তারা আধুনিক না হলেও উন্নয়নের জন্য এক নতুন ও অনন্য পথের সন্ধান করছে রাশিয়া। তাই ইসলামাবাদের নীতিনির্ধারকদের সামনে একটি নতুন সুযোগের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। আজকের দুনিয়ায় অর্থনীতির অধিক্ষেত্রে ভূরাজনীতির খেলাটি সবচেয়ে ভালোভাবে খেলা যায়। এটা পাকিস্তানকে তার ‘কৌশলগত গভীরতা’ প্রয়োগের সুযোগ করে দিতে পারে।
No comments