তিন মণ ধানে এক কেজি ইলিশ! by তৈয়ব আলী সরকার
পহেলা
বৈশাখ উপলক্ষে নীলফামারীর বাজারে ইলিশের দাম বেশ চড়া। বাজারগুলোতে এক কেজি
ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়। যেখানে একজন
দিনমজুরের আয় দিনে তিনশ টাকা, এক কেজি ইলিশ কিনতে হলে ছয়দিনের মজুরির টাকা
খরচ করতে হবে তাকে। আবার প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা দরে। ফলে এক
কেজি ইলিশ কিনতে হলে একজন কৃষককে তিন মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই কৃষক ও
দিনমজুরদের পক্ষে নববর্ষের দিনে ইলিশ খাওয়াটা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে
দাঁড়িয়েছে।
জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বড় খামাতপাড়ার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, ‘কাজ করে দিনে একবেলা নাশতা ও ৩০০ টাকা হাজিরা পাই। বাজারে জাট্কা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়। আর এক কেজির ওপরের সাইজের ইলিশগুলো বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ১০০ টাকায়। আমার আয়ের তিন শত টাকা দিয়ে সাত সদস্যের পরিবার চালায়। ইলিশ মাছ কেনার উপায় নেই। আমাদের আবার বৈশাখ আছে নাকি?’
পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে ধুম পড়ে যায় কেনাকাটার। সর্বজনীন এই উৎসবে পরিবারের ছোট মেয়েরা বাবা মায়ের কাছে বায়না ধরে নতুন কাপড়ের। পাশাপাশি, খাবার তালিকায় থাকতে হবে ইলিশ মাছ। বৈশাখ উদযাপনের আগ দিয়ে নীলফামারীর গ্রামগঞ্জে মাছের বাজারগুলোতে জমজমাট ব্যবসা চলছে। বিশেষ করে ইলিশের। দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই বিত্তবানরা এই মাছ কিনতে পারলেও দিনমজুর, কৃষক ও পেশাজীবীরা তা কিনতে পারছে না। বর্তমানে এক কেজি ইলিশ কেনার জন্য দুই-তিন মণ ধান বিক্রি করতে হয় কৃষককে।
সরেজমিন কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়; আর প্রতি বস্তা (৮০ কেজি) এক হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। ফলে একজন কৃষককে এক কেজি ইলিশ কিনতে দরকার হচ্ছে তিন মণ ধান। আর দিনমজুরকে লাগে ৫-৬ দিনের টাকা।
পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। বাজারে নতুন নতুন শাকসবজি আসার পরেও কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। দাম বেড়েছে মাংসেরও। দেশি মুরগি ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০, পাকিস্তানি মুরগি ২৮০ টাকা থেকে ৩০০, ব্রয়লার ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা এবং গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দাম নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ।
নীলফামারী কিচেন মার্কেটের মাছ ব্যবসায়ী ও আড়তদার ছাইদুল ইসলাম সঙ্গে বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মাছের চালান আসছে কম। তাই মোকামে দামটা একটু বেশি। যে কারণে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়াও মাছ আড়তে আসা পর্যন্ত অনেক খরচ হয়। বিক্রি না হলে ফ্রিজে রাখতে অথবা বরফ দিয়ে রাখতে হয়। সব মিলিয়ে দেখা যায় কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকা বেশি দাম পড়ে যায়।
মাছের বাজারে কথা হয় জেলা শহরের রিকশাচালক রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো লোকের বৈশাখ নেই। কারণ, সারা দিন যা আয় হয়, তা থেকে রিকশার মালিককে জমার টাকা দিতে হয় ১৫০ টাকা, আমার বাড়ির খরচ ২৫০ টাকা। কোনও কোনও দিন কাজ থাকে না। এই পরিস্থিতিতে ইলিশ কিনবো কোথা থেকে?’
জেলা শহরের কিচেন মার্কেটে ইলিশ মাছের খুচরা ব্যবসায়ী তপন কুমার রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন আড়তদাররা। চারবার হাতবদল হয়ে আমাদের কাছে আসে মাছ। শেষে আড়তদাররা আমাদের যে দাম বলে দেয়, সেটাতেই বিক্রি করি। বাজার নিয়ন্ত্রণে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনও হাত থাকে না।’
জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা এটিএম এরশাদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখে ইলিশের দাম একটু বেশি হয়। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বাড়তি মুনাফার আশায় সাধারণ ক্রেতাদের কাছে চড়া দামে ইলিশ বিক্রি করছে। আমরা বৈশাখ উপলক্ষে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রেখেছি।’
উল্লেখ্য, প্রজাদের খাজনা আদায়ের নতুন প্রথা প্রণয়নের লক্ষ্যে মোগল সম্রাট আকবর নতুন সনের প্রবর্তন করেন। আকবরের আদেশ মোতাবেক জ্যোতির বিজ্ঞানী ফতেহউল্যা সিরাজী সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন সনের নিয়ম চালু করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ কিংবা ১১ মার্চ থেকে নতুন সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসনে বসার সময় (৫ নভেম্বর ১৫৫৬ সালে)। প্রথমে এই সনের নাম ছিল এলাহি সন বা ফসলি সনের বঙ্গাব্দ। পরে বাংলা বর্ষ নামে পরিচিতি পায়।
জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বড় খামাতপাড়ার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, ‘কাজ করে দিনে একবেলা নাশতা ও ৩০০ টাকা হাজিরা পাই। বাজারে জাট্কা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়। আর এক কেজির ওপরের সাইজের ইলিশগুলো বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ১০০ টাকায়। আমার আয়ের তিন শত টাকা দিয়ে সাত সদস্যের পরিবার চালায়। ইলিশ মাছ কেনার উপায় নেই। আমাদের আবার বৈশাখ আছে নাকি?’
পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে ধুম পড়ে যায় কেনাকাটার। সর্বজনীন এই উৎসবে পরিবারের ছোট মেয়েরা বাবা মায়ের কাছে বায়না ধরে নতুন কাপড়ের। পাশাপাশি, খাবার তালিকায় থাকতে হবে ইলিশ মাছ। বৈশাখ উদযাপনের আগ দিয়ে নীলফামারীর গ্রামগঞ্জে মাছের বাজারগুলোতে জমজমাট ব্যবসা চলছে। বিশেষ করে ইলিশের। দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই বিত্তবানরা এই মাছ কিনতে পারলেও দিনমজুর, কৃষক ও পেশাজীবীরা তা কিনতে পারছে না। বর্তমানে এক কেজি ইলিশ কেনার জন্য দুই-তিন মণ ধান বিক্রি করতে হয় কৃষককে।
সরেজমিন কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়; আর প্রতি বস্তা (৮০ কেজি) এক হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। ফলে একজন কৃষককে এক কেজি ইলিশ কিনতে দরকার হচ্ছে তিন মণ ধান। আর দিনমজুরকে লাগে ৫-৬ দিনের টাকা।
পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। বাজারে নতুন নতুন শাকসবজি আসার পরেও কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। দাম বেড়েছে মাংসেরও। দেশি মুরগি ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০, পাকিস্তানি মুরগি ২৮০ টাকা থেকে ৩০০, ব্রয়লার ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা এবং গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দাম নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ।
নীলফামারী কিচেন মার্কেটের মাছ ব্যবসায়ী ও আড়তদার ছাইদুল ইসলাম সঙ্গে বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মাছের চালান আসছে কম। তাই মোকামে দামটা একটু বেশি। যে কারণে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়াও মাছ আড়তে আসা পর্যন্ত অনেক খরচ হয়। বিক্রি না হলে ফ্রিজে রাখতে অথবা বরফ দিয়ে রাখতে হয়। সব মিলিয়ে দেখা যায় কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকা বেশি দাম পড়ে যায়।
মাছের বাজারে কথা হয় জেলা শহরের রিকশাচালক রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো লোকের বৈশাখ নেই। কারণ, সারা দিন যা আয় হয়, তা থেকে রিকশার মালিককে জমার টাকা দিতে হয় ১৫০ টাকা, আমার বাড়ির খরচ ২৫০ টাকা। কোনও কোনও দিন কাজ থাকে না। এই পরিস্থিতিতে ইলিশ কিনবো কোথা থেকে?’
জেলা শহরের কিচেন মার্কেটে ইলিশ মাছের খুচরা ব্যবসায়ী তপন কুমার রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন আড়তদাররা। চারবার হাতবদল হয়ে আমাদের কাছে আসে মাছ। শেষে আড়তদাররা আমাদের যে দাম বলে দেয়, সেটাতেই বিক্রি করি। বাজার নিয়ন্ত্রণে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনও হাত থাকে না।’
জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা এটিএম এরশাদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখে ইলিশের দাম একটু বেশি হয়। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বাড়তি মুনাফার আশায় সাধারণ ক্রেতাদের কাছে চড়া দামে ইলিশ বিক্রি করছে। আমরা বৈশাখ উপলক্ষে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রেখেছি।’
উল্লেখ্য, প্রজাদের খাজনা আদায়ের নতুন প্রথা প্রণয়নের লক্ষ্যে মোগল সম্রাট আকবর নতুন সনের প্রবর্তন করেন। আকবরের আদেশ মোতাবেক জ্যোতির বিজ্ঞানী ফতেহউল্যা সিরাজী সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন সনের নিয়ম চালু করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ কিংবা ১১ মার্চ থেকে নতুন সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসনে বসার সময় (৫ নভেম্বর ১৫৫৬ সালে)। প্রথমে এই সনের নাম ছিল এলাহি সন বা ফসলি সনের বঙ্গাব্দ। পরে বাংলা বর্ষ নামে পরিচিতি পায়।
No comments