একাল সেকালের ধর্মকর্ম এবং রাজনীতি by গোলাম মাওলা রনি
ধর্মকর্ম
যে রাজনীতির অনেক আগে চালু হয়েছিল, সে ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ নেই। সব
ধর্ম, সব মতাদর্শ এবং সব বিজ্ঞানই স্বীকার করে যে, হজরত আদম আ:-ই প্রথম
মানব এবং আমাদের আদিপিতা। তার আগমনের সাথে সাথেই পৃথিবীতে ধর্মকর্মের
রেওয়াজ চালু হয়ে যায়। আমরা জানি না, পৃথিবীতে হজরত আদম আ:-এর আগমনের ঠিক
কয়দিন পর রাজনীতি চালু হয়েছিল। তবে আন্দাজ করতে পারি, রাজনীতির আগে অবশ্যই
রাজার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রথম দিকে রাজা ছিলেন গোত্রভিত্তিক। পরে তা গোত্রের
সীমানা পেরিয়ে চলে দূর-দূরান্তে। সৃষ্টি হয় রাজ্য ও সাম্রাজ্য। রাজাগণের
অনেকে হয়ে যান মহারাজা কিংবা সম্রাট।
রাজনীতির শুরু থেকে আজ অবধি সর্বকালে সব সমাজে ও রাষ্ট্রে ধর্মই রাজনীতির অন্যতম নিয়ামক হয়ে আছে। কখনো ধর্ম রাজনীতিকে গ্রাস করার চেষ্টা করেছে, আবার কখনো বা রাজনীতি চেষ্টা করেছে ধর্মকে নির্বাসনে পাঠাতে। ধর্ম ও রাজনীতির পারস্পরিক দ্বন্দ্বে বহু রাজা প্রাণ হারিয়েছেন, বহু রাজা সিংহাসনচ্যুত হয়েছেন এবং বহু রাজ্য ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। অন্য দিকে প্রভাবশালী রাজাদের কেউ কেউ স্বল্পসময়ের জন্য ধর্মকর্মের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন- কেউ কেউ আবার নিজেকে ধর্মীয় প্রধান বানিয়ে ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে খেলা করেছেন। দু-চারজন প্রতাপশালী ও পরাক্রান্ত রাজা তো নিজেদের খোদা পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেছিলেন। আমরা সবাই কম-বেশি সেসব স্বঘোষিত খোদার পরিণতি জানি এবং এ কথাও জানি যে, ধর্ম ও রাজনীতির বিরোধিতায় এযাবৎকালে পৃথিবীর পথে প্রান্তরে মারা যাওয়া শত কোটি মানুষের হিসাব পৃথিবীর কোনো রাজদরবারে সংরক্ষিত নেই।
ধর্ম ও রাজনীতির অস্থির এবং সঙ্ঘাতপূর্ণ ইতিহাস যেমন রয়েছে তেমনি সহযোগিতামূলক সম্প্রীতির ইতিহাসও কম নয়। যেসব ক্ষেত্রে ধর্মের নামে ভণ্ডামি হয়নি এবং রাজনীতির নামে জুলুম-অত্যাচার হয়নি, সেসব ক্ষেত্রে রাজনীতির অঙ্গন তৈরি করতে পেরেছিল খলিফা আল মনসুর, খলিফা হারুন-আল-রশিদ, সুলতান সুলায়মান, দি ম্যাগনিফিসেন্ট প্রমুখের মতো ব্যক্তিত্ব। অন্য দিকে রাজনীতিবিদদের সম্মান ও মর্যাদা নিয়েই বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী র:, ইমাম গাজ্জালী, ইবনে কাসির, খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী র: এবং খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মতো মহান অলি আল্লাহগণ এই জমিনে তাদের কীর্তিকে অমর করার সুযোগ পেয়েছিলেন। ধর্ম ও রাজনীতির সুদীর্ঘ ইতিহাসের কোথাও একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাকে কোনো ভণ্ড ধর্ম ব্যবসায়ী যেমন বিব্রত করতে পারেনি, তেমনি কোনো জুলুমবাজ শাসক শত চেষ্টা করেও কোনো ওলি আল্লাহর মর্যাদাহানি করতে পারেনি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে বলে নিই কেন আমার হঠাৎ করেই এই শিরোনাম প্রসঙ্গে নিবন্ধ লেখার সাধ জাগল-
গত শুক্রবার জুমার নামাজে মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবের বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি অন্যান্য দিনের মতো দ্বীন-দুনিয়ার কথা না বলে বাংলাদেশের পুলিশপ্রধানের প্রশংসা করছিলেন। তার বক্তব্যের ধরন ও প্রকৃতি দেখে উপস্থিত মুসল্লিরা উসখুস করছিলেন, আবার কেউ বা মুখটিপে হাসছিলেন। ইমাম সাহেব পুলিশপ্রধানের শিখিয়ে দেয়া জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য হয়তো ভালোমতো রপ্ত করতে পারেননি অথবা সেই বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইসলামের নীতি ও আদর্শ বর্ণনা করে একটি বক্তব্য পরিবেশন করতে পারেননি। ফলে একটি জগাখিচুড়ি মার্কা খুতবা শুনে উপস্থিত সবাই মহাবিরক্ত হয়ে ওঠেন এবং নামাজের পর ইমাম ও তার মদদদাতাদের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে যাচ্ছেতাই বলতে বলতে মসজিদ ত্যাগ করেন। এই ঘটনার কয়েক দিন আগে আমি পত্রিকায় দেখেছিলাম, বাংলাদেশের পুলিশপ্রধান বেশ কিছুসংখ্যক আলেম-ওলামা, ইমাম ও খতিবকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে লম্বা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি দেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে আলেম-ওলামাদের সহযোগিতা চেয়েছেন এবং অনুরোধ করেছেন জুমার নামাজের খুতবায় জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে মুসলমানদের করণীয় বিষয়াদি সম্পর্কে বক্তব্য রাখার জন্য।
স্বাভাবিক ও সরল দৃষ্টিতে যদি উপর্যুক্ত ঘটনা মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে আপাতদৃষ্টিতে কোনো ত্রুটি বা অসামঞ্জস্য ধরা পড়বে না। কিন্তু জঙ্গি হামলা যেহেতু একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক বিষয়, সেহেতু বিষয়টি নিয়ে সাধারণ সরলীকরণ করলে মারাত্মক ভুল হবে। পশ্চিমা বিশ্বের মতো দেশের বর্তমান প্রশাসন ভাবছে না কেন জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে অথবা শক্তি প্রয়োগ ব্যতিরেকে কী করে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা যায়! তারা পশ্চিমাদের মতোই জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য ইসলাম ধর্ম এবং সেই ধর্মের অনুসারীদের দায়ী করে যাচ্ছেন। মুসলমানদের দুর্ভাগ্য যে, দেশে-বিদেশে তাদের এমন কোনো নেতা বা পীর নেই, যিনি জ্ঞানগরিমা, চেহারা-চরিত্রে এবং মন-মানসে সর্বজনশ্রদ্ধেয় এবং সর্বজন মান্য হতে পারেন। অশিক্ষা-কুশিক্ষা, ধর্মান্ধতা, চরিত্রহীন লাম্পট্য, দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং ভোগবিলাস কিছু নেতাকে এমনভাবে গ্রাস করেছে, যার বিনিময়ে আইজি সাহেবের মতো প্রশাসনিক ব্যক্তিরা আলেম-ওলামাগণকে নিজ দফতরে ডেকে নিয়ে নানা পরামর্শ, আদেশ-উপদেশ দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।
আইজি সাহেবের দফতরে কারা গিয়েছিলেন তা আমার জানা নেই। তবে এ কথা নিশ্চিত যে, তারা বিভিন্ন কারণে প্রশাসনের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছেন এবং আইজির দফতরের চা-বিস্কুট আপ্যায়ন লাভ করে নিজেদের ধন্য মনে করেছেন। অন্য দিকে, আইজি সাহেবও তাদের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পেরেছিলেন, এদেরকে অনেক কিছু বলা সম্ভব। অথচ নিয়ম মোতাবেক ঘটনা হওয়ার কথা উল্টো। আইজির যদি কোনো বক্তব্য থাকে তাহলে তার উচিত ছিল বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদের খতিবের সাথে দেখা করা। পুলিশপ্রধান যদি তার সহযোগী কর্মকর্তাদের নিয়ে বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তেন এবং নামাজ শেষে হুজুরের খাস কামরায় সাক্ষাৎ করে নিজেদের কথা বলতেন, তবে প্রেক্ষিতটি সর্বাঙ্গীণ সুন্দর দেখাত। পুলিশপ্রধানের কথা শোনার পর খতিব মহোদয় যদি দেশের শীর্ষ আলেম-ওলামাগণকে জাতীয় মসজিদে দাওয়াত দিতেন, তবে সরকার দেশের মসজিদ-মাদরাসাগুলো থেকে অধিকতর সাহায্য-সহযোগিতা পেত।
গত এক বছরে সরকার জঙ্গি দমনের জন্য যা করছে তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে তারাই ভালো বলতে পারবেন। জনগণ তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কী ভাবছে, এমন কোনো প্রশ্ন যদি তারা করত কিংবা জনগণের মনোভাবের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করত তাহলে তারা বুঝত, জনগণ তাদেরকে একটুও বিশ্বাস করে না। জনগণ মনে করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারকে খুশি করার জন্য প্রায়ই নাটকীয় সব ঘটনা ঘটায়। নিজেদের কর্মকে নিয়োগকর্তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা, নিয়োগকর্তার শত্রুদের নির্বিচারে এবং অমানবিকভাবে নির্মূল করা এবং তাদের বন্ধুদের ধনে-জনে-মনে বেড়ে উঠতে সাহায্য করাকে নিজেদের ধ্যানজ্ঞান বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় কর্মচারীরা যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে বলেই দেশবাসী বিশ্বাস করে। কর্মচারীদের বিশ্বাস এবং আস্থা এতটাই সুদৃঢ় ও বদ্ধমূল যে, তারা মনে করে- তারা যা বলবে, যা করবে, যা করতে বলবে তার সবগুলোই জনগণ মানবে, বিশ্বাস করবে এবং মুখ বন্ধ করে কোনো প্রশ্ন তো করবেই না- এমনকি মনে মনে অথবা স্বপ্নেও বিপরীত কিছু স্থান দেবে না।
গত দুই বছরে আমরা দেখলাম- দেশের সব নাশকতা, অনাসৃষ্টি, জঙ্গি তৎপরতা করছে বিএনপি-জামায়াতের লোক। এরপর দেখলাম, সব কিছু করছে হরকাতুল জেহাদ। পরবর্তীকালে বেশ কিছুদিন শুনলাম আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের নাম। তাদেরকে হটিয়ে দিয়ে মাঠ দখল করল আইএস। সরকার জোরগলায় বলল, দেশে আইএস মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আইএসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আখ্যা দিয়ে সরকারদলীয় কুশীলবেরা বক্তৃতা, বিবৃতি, টকশো এবং টিভি সাক্ষাৎকারে কথার ফুলঝুরি ছোটালেন। এরপর আবার গতি পরিবর্তিত হলো। বলা হলো, দেশের প্রধান বিরোধী দলের প্রবাসী নেতৃবৃন্দ এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা বিদেশী হত্যাসহ সব অপকর্ম করছে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য। এভাবে কিছু দিন চলার পর রাষ্ট্রীয় কর্তারা পুনরায় জনগণের রুচিতে পরিবর্তন এবং ভিন্ন স্বাদ সংযোজনের চেষ্টা করল। প্রথমত, দেশবাসীকে হুকুম করা হলো এ কথা বিশ্বাস করার জন্য যে, এ দেশে কোনো আইএস নেই। দ্বিতীয়ত, বর্তমানের সব জঙ্গি তৎপরতা যে জেএমবি নামে একটি কুখ্যাত সংগঠন চালাচ্ছে, সে ব্যাপারে শতভাগ আস্থা রাখার পরিবেশ দৃশ্যপটে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হলো।
সাম্প্রতিক সময়ে বাঙালির মন ও মানসিকতা আনুগত্য, ধৈর্য, নীরব থাকা, সব কিছু মেনে নেয়া এবং সব কিছু ভুলে যাওয়ার যে মাত্রা প্রদর্শন করছে, তা এ দেশ তো বটেই সারা দুনিয়ার পথে-প্রান্তরে কোনো কালে দেখা যায়নি। আমাদের সমাজের মধ্যে যে নবতর গৃহপালিত উচ্ছিষ্টভোগী শ্রেণীটির সৃষ্টি হয়েছে, তাদের ভাবসাব এবং কথাবার্তা শুনে বোবা ইতর প্রাণীরা পর্যন্ত লজ্জায় মরে যেতে চাচ্ছে। সমাজের সব পেশা, সব শ্রেণী, সব বর্ণ এবং সব ধর্ম একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে গৃহপালিত হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। ফলে সরকারি লোকজন এদেরকে কতটুকু মূল্যায়ন করবে তা বোঝার জন্য খুব বেশি জ্ঞানী হওয়ার দরকার পড়বে না। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। কারণ, ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে হাজারো উদাহরণ দেখা যাবে যেখানে রাজনীতি, রাষ্ট্রক্ষমতা ও সিংহাসন আলেম-ওলামাগণের কদমবুচি করেছে।
আব্বাসীয় খিলাফতের ক্রান্তিকালে বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী রহ: বাগদাদে বসবাস করতেন। ওই সময়ের খলিফারা বিভিন্ন কারণে মারাত্মক নীতিভ্রষ্টতায় ভুগছিলেন। তাদের দুর্নীতি, ক্ষমতার দম্ভ, ভোগবিলাস, ধনসম্পদের আধিক্য এবং অত্যাচার করার ক্ষমতার সাথে বর্তমানকালের কোনো কিছুই তুলনীয় নয়। তারপরও শাসকেরা কোনো ওলি আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে উচ্চবাচ্য তো দূরের কথা, আড়ালে-আবডালেও বিরূপ মন্তব্য করতে সাহস পেতেন না। বাগদাদের খলিফা স্বয়ং বড়পীরের সাথে দেখা করতে এসে তার অনুমতি না পেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন। খলিফা অনেক চেষ্টা করে রাজকোষ থেকে একটি পয়সাও বড়পীরের মক্তবের জন্য বরাদ্দ দিতে পারেননি।
পাক ভারতে হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া জীবিত ছিলেন তখন দিল্লির সিংহাসনে অনেক নামজাদা সুলতান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। গিয়াস উদ্দিন বলবান, কুতুব উদ্দিন মুবারক শাহ, আলাউদ্দিন খলজি, মালিক কাফুর ও গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের হুঙ্কারে প্রকাশ্য রাজদরবারে অনেক উজির-নাজির পায়খানা-প্রস্রাব করে দিতেন।
এসব ভয়ঙ্কর শাসকগণকে খাজা সাহেব কোনো দিন স্বীকৃতি দেননি, উল্টো নানা কটুবাক্যে প্রকাশ্যে সমালোচনা করতেন। অন্য দিকে শাসকগণও কোনো দিন খাজা সাহেবকে দরবারে ডেকে পাঠানো তো দূরের কথা, নিজেরা যে খাজার খানকা শরিফ মেহরুলিতে উপস্থিত হবেনÑ এমন বুকের পাটা তাদের ছিল না। ব্রিটিশ ভারতে দেওবন্দ মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা রশিদ আহম্মদ গাঙ্গুহী কিংবা মাওলানা আশরাফ আলী খান থানভীবে শাসককুল কতটা ভয় ও সমীহ করে চলতেন, তা সমসাময়িককালের ইতিহাস থেকে জানা যায়। অন্য দিকে, মাওলানা শিবলী নোমানীর কথা বলতে গিয়ে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে যে, তার মুরিদগণের মধ্যে দুইজন ছিলেন ভারতীয় কংগ্রেসের সর্বকালের কিংবদন্তি দুই সভাপতি। প্রথমজন হলেন মহাত্মা গান্ধী এবং দ্বিতীয়জনের নাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। অন্য দিকে খাজা মইনউদ্দিন চিশতী রহ:-এর কথা না হয় বাদই দিলাম। কারণ, গত প্রায় সাড়ে ৮০০ বছরের ইতিহাসে পৃথিবীর কোনো সিংহাসনের মালিক খাজা সাহেবের দরবারে জুতা পায়ে দিয়ে ঢুকতে সাহস পাননি।
বাংলাদেশে যদি এমন আলেম থাকতেন, যার দরবারে পুলিশপ্রধানকে ঢুকতে হলে অনেক মেহনতের প্রয়োজন পড়ত এবং তিনি সেসব মেহনত করে যখন কাঁচুমাচু হয়ে আলেমের দরবারে দাঁড়িয়ে থাকতেন, তখন মুসলমানদের নেতা স্মিতহাস্যে আইজিকে জিজ্ঞেস করতেন- ‘বাবা, ঠিকমতো নামাজ পড়েন কি না? ছেলে-সন্তানদের নামাজ পড়তে বাধ্য করেন কি না এবং আপনার অধীনস্থদের মসজিদে যেতে বাধ্য করেন কি না? আগে আপনার লোকজনকে নামাজ পড়তে মসজিদে পাঠান এবং নিজে যান- দেখবেন মসজিদকে ঘিরে জঙ্গি হামলার যে আশঙ্কা করছেন তা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। খুতবায় জঙ্গিবিরোধী কথা বলা লাগবে না- দ্বীনের কথা বললেই হবে। কারণ, দ্বীন পালনকারীরা জঙ্গি হয় না।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য
রাজনীতির শুরু থেকে আজ অবধি সর্বকালে সব সমাজে ও রাষ্ট্রে ধর্মই রাজনীতির অন্যতম নিয়ামক হয়ে আছে। কখনো ধর্ম রাজনীতিকে গ্রাস করার চেষ্টা করেছে, আবার কখনো বা রাজনীতি চেষ্টা করেছে ধর্মকে নির্বাসনে পাঠাতে। ধর্ম ও রাজনীতির পারস্পরিক দ্বন্দ্বে বহু রাজা প্রাণ হারিয়েছেন, বহু রাজা সিংহাসনচ্যুত হয়েছেন এবং বহু রাজ্য ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। অন্য দিকে প্রভাবশালী রাজাদের কেউ কেউ স্বল্পসময়ের জন্য ধর্মকর্মের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন- কেউ কেউ আবার নিজেকে ধর্মীয় প্রধান বানিয়ে ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে খেলা করেছেন। দু-চারজন প্রতাপশালী ও পরাক্রান্ত রাজা তো নিজেদের খোদা পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেছিলেন। আমরা সবাই কম-বেশি সেসব স্বঘোষিত খোদার পরিণতি জানি এবং এ কথাও জানি যে, ধর্ম ও রাজনীতির বিরোধিতায় এযাবৎকালে পৃথিবীর পথে প্রান্তরে মারা যাওয়া শত কোটি মানুষের হিসাব পৃথিবীর কোনো রাজদরবারে সংরক্ষিত নেই।
ধর্ম ও রাজনীতির অস্থির এবং সঙ্ঘাতপূর্ণ ইতিহাস যেমন রয়েছে তেমনি সহযোগিতামূলক সম্প্রীতির ইতিহাসও কম নয়। যেসব ক্ষেত্রে ধর্মের নামে ভণ্ডামি হয়নি এবং রাজনীতির নামে জুলুম-অত্যাচার হয়নি, সেসব ক্ষেত্রে রাজনীতির অঙ্গন তৈরি করতে পেরেছিল খলিফা আল মনসুর, খলিফা হারুন-আল-রশিদ, সুলতান সুলায়মান, দি ম্যাগনিফিসেন্ট প্রমুখের মতো ব্যক্তিত্ব। অন্য দিকে রাজনীতিবিদদের সম্মান ও মর্যাদা নিয়েই বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী র:, ইমাম গাজ্জালী, ইবনে কাসির, খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী র: এবং খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মতো মহান অলি আল্লাহগণ এই জমিনে তাদের কীর্তিকে অমর করার সুযোগ পেয়েছিলেন। ধর্ম ও রাজনীতির সুদীর্ঘ ইতিহাসের কোথাও একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাকে কোনো ভণ্ড ধর্ম ব্যবসায়ী যেমন বিব্রত করতে পারেনি, তেমনি কোনো জুলুমবাজ শাসক শত চেষ্টা করেও কোনো ওলি আল্লাহর মর্যাদাহানি করতে পারেনি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে বলে নিই কেন আমার হঠাৎ করেই এই শিরোনাম প্রসঙ্গে নিবন্ধ লেখার সাধ জাগল-
গত শুক্রবার জুমার নামাজে মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবের বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি অন্যান্য দিনের মতো দ্বীন-দুনিয়ার কথা না বলে বাংলাদেশের পুলিশপ্রধানের প্রশংসা করছিলেন। তার বক্তব্যের ধরন ও প্রকৃতি দেখে উপস্থিত মুসল্লিরা উসখুস করছিলেন, আবার কেউ বা মুখটিপে হাসছিলেন। ইমাম সাহেব পুলিশপ্রধানের শিখিয়ে দেয়া জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য হয়তো ভালোমতো রপ্ত করতে পারেননি অথবা সেই বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইসলামের নীতি ও আদর্শ বর্ণনা করে একটি বক্তব্য পরিবেশন করতে পারেননি। ফলে একটি জগাখিচুড়ি মার্কা খুতবা শুনে উপস্থিত সবাই মহাবিরক্ত হয়ে ওঠেন এবং নামাজের পর ইমাম ও তার মদদদাতাদের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে যাচ্ছেতাই বলতে বলতে মসজিদ ত্যাগ করেন। এই ঘটনার কয়েক দিন আগে আমি পত্রিকায় দেখেছিলাম, বাংলাদেশের পুলিশপ্রধান বেশ কিছুসংখ্যক আলেম-ওলামা, ইমাম ও খতিবকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে লম্বা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি দেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে আলেম-ওলামাদের সহযোগিতা চেয়েছেন এবং অনুরোধ করেছেন জুমার নামাজের খুতবায় জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে মুসলমানদের করণীয় বিষয়াদি সম্পর্কে বক্তব্য রাখার জন্য।
স্বাভাবিক ও সরল দৃষ্টিতে যদি উপর্যুক্ত ঘটনা মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে আপাতদৃষ্টিতে কোনো ত্রুটি বা অসামঞ্জস্য ধরা পড়বে না। কিন্তু জঙ্গি হামলা যেহেতু একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক বিষয়, সেহেতু বিষয়টি নিয়ে সাধারণ সরলীকরণ করলে মারাত্মক ভুল হবে। পশ্চিমা বিশ্বের মতো দেশের বর্তমান প্রশাসন ভাবছে না কেন জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে অথবা শক্তি প্রয়োগ ব্যতিরেকে কী করে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা যায়! তারা পশ্চিমাদের মতোই জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য ইসলাম ধর্ম এবং সেই ধর্মের অনুসারীদের দায়ী করে যাচ্ছেন। মুসলমানদের দুর্ভাগ্য যে, দেশে-বিদেশে তাদের এমন কোনো নেতা বা পীর নেই, যিনি জ্ঞানগরিমা, চেহারা-চরিত্রে এবং মন-মানসে সর্বজনশ্রদ্ধেয় এবং সর্বজন মান্য হতে পারেন। অশিক্ষা-কুশিক্ষা, ধর্মান্ধতা, চরিত্রহীন লাম্পট্য, দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং ভোগবিলাস কিছু নেতাকে এমনভাবে গ্রাস করেছে, যার বিনিময়ে আইজি সাহেবের মতো প্রশাসনিক ব্যক্তিরা আলেম-ওলামাগণকে নিজ দফতরে ডেকে নিয়ে নানা পরামর্শ, আদেশ-উপদেশ দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।
আইজি সাহেবের দফতরে কারা গিয়েছিলেন তা আমার জানা নেই। তবে এ কথা নিশ্চিত যে, তারা বিভিন্ন কারণে প্রশাসনের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছেন এবং আইজির দফতরের চা-বিস্কুট আপ্যায়ন লাভ করে নিজেদের ধন্য মনে করেছেন। অন্য দিকে, আইজি সাহেবও তাদের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পেরেছিলেন, এদেরকে অনেক কিছু বলা সম্ভব। অথচ নিয়ম মোতাবেক ঘটনা হওয়ার কথা উল্টো। আইজির যদি কোনো বক্তব্য থাকে তাহলে তার উচিত ছিল বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদের খতিবের সাথে দেখা করা। পুলিশপ্রধান যদি তার সহযোগী কর্মকর্তাদের নিয়ে বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তেন এবং নামাজ শেষে হুজুরের খাস কামরায় সাক্ষাৎ করে নিজেদের কথা বলতেন, তবে প্রেক্ষিতটি সর্বাঙ্গীণ সুন্দর দেখাত। পুলিশপ্রধানের কথা শোনার পর খতিব মহোদয় যদি দেশের শীর্ষ আলেম-ওলামাগণকে জাতীয় মসজিদে দাওয়াত দিতেন, তবে সরকার দেশের মসজিদ-মাদরাসাগুলো থেকে অধিকতর সাহায্য-সহযোগিতা পেত।
গত এক বছরে সরকার জঙ্গি দমনের জন্য যা করছে তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে তারাই ভালো বলতে পারবেন। জনগণ তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কী ভাবছে, এমন কোনো প্রশ্ন যদি তারা করত কিংবা জনগণের মনোভাবের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করত তাহলে তারা বুঝত, জনগণ তাদেরকে একটুও বিশ্বাস করে না। জনগণ মনে করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারকে খুশি করার জন্য প্রায়ই নাটকীয় সব ঘটনা ঘটায়। নিজেদের কর্মকে নিয়োগকর্তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা, নিয়োগকর্তার শত্রুদের নির্বিচারে এবং অমানবিকভাবে নির্মূল করা এবং তাদের বন্ধুদের ধনে-জনে-মনে বেড়ে উঠতে সাহায্য করাকে নিজেদের ধ্যানজ্ঞান বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় কর্মচারীরা যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে বলেই দেশবাসী বিশ্বাস করে। কর্মচারীদের বিশ্বাস এবং আস্থা এতটাই সুদৃঢ় ও বদ্ধমূল যে, তারা মনে করে- তারা যা বলবে, যা করবে, যা করতে বলবে তার সবগুলোই জনগণ মানবে, বিশ্বাস করবে এবং মুখ বন্ধ করে কোনো প্রশ্ন তো করবেই না- এমনকি মনে মনে অথবা স্বপ্নেও বিপরীত কিছু স্থান দেবে না।
গত দুই বছরে আমরা দেখলাম- দেশের সব নাশকতা, অনাসৃষ্টি, জঙ্গি তৎপরতা করছে বিএনপি-জামায়াতের লোক। এরপর দেখলাম, সব কিছু করছে হরকাতুল জেহাদ। পরবর্তীকালে বেশ কিছুদিন শুনলাম আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের নাম। তাদেরকে হটিয়ে দিয়ে মাঠ দখল করল আইএস। সরকার জোরগলায় বলল, দেশে আইএস মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আইএসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আখ্যা দিয়ে সরকারদলীয় কুশীলবেরা বক্তৃতা, বিবৃতি, টকশো এবং টিভি সাক্ষাৎকারে কথার ফুলঝুরি ছোটালেন। এরপর আবার গতি পরিবর্তিত হলো। বলা হলো, দেশের প্রধান বিরোধী দলের প্রবাসী নেতৃবৃন্দ এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা বিদেশী হত্যাসহ সব অপকর্ম করছে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য। এভাবে কিছু দিন চলার পর রাষ্ট্রীয় কর্তারা পুনরায় জনগণের রুচিতে পরিবর্তন এবং ভিন্ন স্বাদ সংযোজনের চেষ্টা করল। প্রথমত, দেশবাসীকে হুকুম করা হলো এ কথা বিশ্বাস করার জন্য যে, এ দেশে কোনো আইএস নেই। দ্বিতীয়ত, বর্তমানের সব জঙ্গি তৎপরতা যে জেএমবি নামে একটি কুখ্যাত সংগঠন চালাচ্ছে, সে ব্যাপারে শতভাগ আস্থা রাখার পরিবেশ দৃশ্যপটে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হলো।
সাম্প্রতিক সময়ে বাঙালির মন ও মানসিকতা আনুগত্য, ধৈর্য, নীরব থাকা, সব কিছু মেনে নেয়া এবং সব কিছু ভুলে যাওয়ার যে মাত্রা প্রদর্শন করছে, তা এ দেশ তো বটেই সারা দুনিয়ার পথে-প্রান্তরে কোনো কালে দেখা যায়নি। আমাদের সমাজের মধ্যে যে নবতর গৃহপালিত উচ্ছিষ্টভোগী শ্রেণীটির সৃষ্টি হয়েছে, তাদের ভাবসাব এবং কথাবার্তা শুনে বোবা ইতর প্রাণীরা পর্যন্ত লজ্জায় মরে যেতে চাচ্ছে। সমাজের সব পেশা, সব শ্রেণী, সব বর্ণ এবং সব ধর্ম একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে গৃহপালিত হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। ফলে সরকারি লোকজন এদেরকে কতটুকু মূল্যায়ন করবে তা বোঝার জন্য খুব বেশি জ্ঞানী হওয়ার দরকার পড়বে না। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। কারণ, ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে হাজারো উদাহরণ দেখা যাবে যেখানে রাজনীতি, রাষ্ট্রক্ষমতা ও সিংহাসন আলেম-ওলামাগণের কদমবুচি করেছে।
আব্বাসীয় খিলাফতের ক্রান্তিকালে বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী রহ: বাগদাদে বসবাস করতেন। ওই সময়ের খলিফারা বিভিন্ন কারণে মারাত্মক নীতিভ্রষ্টতায় ভুগছিলেন। তাদের দুর্নীতি, ক্ষমতার দম্ভ, ভোগবিলাস, ধনসম্পদের আধিক্য এবং অত্যাচার করার ক্ষমতার সাথে বর্তমানকালের কোনো কিছুই তুলনীয় নয়। তারপরও শাসকেরা কোনো ওলি আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে উচ্চবাচ্য তো দূরের কথা, আড়ালে-আবডালেও বিরূপ মন্তব্য করতে সাহস পেতেন না। বাগদাদের খলিফা স্বয়ং বড়পীরের সাথে দেখা করতে এসে তার অনুমতি না পেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন। খলিফা অনেক চেষ্টা করে রাজকোষ থেকে একটি পয়সাও বড়পীরের মক্তবের জন্য বরাদ্দ দিতে পারেননি।
পাক ভারতে হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া জীবিত ছিলেন তখন দিল্লির সিংহাসনে অনেক নামজাদা সুলতান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। গিয়াস উদ্দিন বলবান, কুতুব উদ্দিন মুবারক শাহ, আলাউদ্দিন খলজি, মালিক কাফুর ও গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের হুঙ্কারে প্রকাশ্য রাজদরবারে অনেক উজির-নাজির পায়খানা-প্রস্রাব করে দিতেন।
এসব ভয়ঙ্কর শাসকগণকে খাজা সাহেব কোনো দিন স্বীকৃতি দেননি, উল্টো নানা কটুবাক্যে প্রকাশ্যে সমালোচনা করতেন। অন্য দিকে শাসকগণও কোনো দিন খাজা সাহেবকে দরবারে ডেকে পাঠানো তো দূরের কথা, নিজেরা যে খাজার খানকা শরিফ মেহরুলিতে উপস্থিত হবেনÑ এমন বুকের পাটা তাদের ছিল না। ব্রিটিশ ভারতে দেওবন্দ মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা রশিদ আহম্মদ গাঙ্গুহী কিংবা মাওলানা আশরাফ আলী খান থানভীবে শাসককুল কতটা ভয় ও সমীহ করে চলতেন, তা সমসাময়িককালের ইতিহাস থেকে জানা যায়। অন্য দিকে, মাওলানা শিবলী নোমানীর কথা বলতে গিয়ে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে যে, তার মুরিদগণের মধ্যে দুইজন ছিলেন ভারতীয় কংগ্রেসের সর্বকালের কিংবদন্তি দুই সভাপতি। প্রথমজন হলেন মহাত্মা গান্ধী এবং দ্বিতীয়জনের নাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। অন্য দিকে খাজা মইনউদ্দিন চিশতী রহ:-এর কথা না হয় বাদই দিলাম। কারণ, গত প্রায় সাড়ে ৮০০ বছরের ইতিহাসে পৃথিবীর কোনো সিংহাসনের মালিক খাজা সাহেবের দরবারে জুতা পায়ে দিয়ে ঢুকতে সাহস পাননি।
বাংলাদেশে যদি এমন আলেম থাকতেন, যার দরবারে পুলিশপ্রধানকে ঢুকতে হলে অনেক মেহনতের প্রয়োজন পড়ত এবং তিনি সেসব মেহনত করে যখন কাঁচুমাচু হয়ে আলেমের দরবারে দাঁড়িয়ে থাকতেন, তখন মুসলমানদের নেতা স্মিতহাস্যে আইজিকে জিজ্ঞেস করতেন- ‘বাবা, ঠিকমতো নামাজ পড়েন কি না? ছেলে-সন্তানদের নামাজ পড়তে বাধ্য করেন কি না এবং আপনার অধীনস্থদের মসজিদে যেতে বাধ্য করেন কি না? আগে আপনার লোকজনকে নামাজ পড়তে মসজিদে পাঠান এবং নিজে যান- দেখবেন মসজিদকে ঘিরে জঙ্গি হামলার যে আশঙ্কা করছেন তা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। খুতবায় জঙ্গিবিরোধী কথা বলা লাগবে না- দ্বীনের কথা বললেই হবে। কারণ, দ্বীন পালনকারীরা জঙ্গি হয় না।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য
No comments