জঙ্গি হামলার ‘ভুল’ খবর দিলে বিপুল অর্থদণ্ড
জঙ্গি হামলার বিষয়ে ‘ভুল’ প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিপুল পরিমাণ অর্থদণ্ড এবং চাকরিচ্যুতির বিধান রেখে মিসরে নতুন সন্ত্রাসবিরোধী আইন পাস হয়েছে। আইনটিতে সন্ত্রাস দমনে শক্তি প্রয়োগ করলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জন্য বিশেষ সুরক্ষারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খবর এএফপি ও বিবিসির। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি গত রোববার আইনটি অনুমোদন করেন। গত জুন মাসের শেষ দিকে গাড়িবোমা বিস্ফোরণে রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি হিসাম বরকত নিহত হওয়ার পর জঙ্গি দমনে নতুন আইন তৈরির প্রচেষ্টা শুরু হয়। ওই হামলার কয়েক দিন পরেই মিসরের সিনাই উপদ্বীপে সেনাবাহিনীর ওপর ব্যাপক হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই হামলার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে গণমাধ্যমের ওপর ক্ষিপ্ত হয় সেনাবাহিনী। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনগুলোতে বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করা হয়। আর সেনাবাহিনীর পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, হামলার ঘটনায় ২১ সেনাসদস্য নিহত হন আর জঙ্গি নিহত হয় এর কয়েক গুণ বেশি। নতুন আইনে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের বিষয়ে সরকারি তথ্যের বাইরে ‘ভুল’ তথ্য পরিবেশন করলে সর্বনিম্ন দুই লাখ মিসরীয় পাউন্ড থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ পাউন্ড জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন,
সংবাদ প্রকাশে এই বিপুল পরিমাণ অর্থদণ্ডের বিধান রাখার ফলে ছোট ছোট সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর এতে বড় সংবাদপত্রগুলোর জঙ্গিবিরোধী অভিযানের বিষয়ে নিজেদের অনুসন্ধানের কাজে বাধার সৃষ্টি হবে।‘ভুল’ তথ্য প্রকাশ করলে আরও কঠোর ব্যবস্থাও আছে। নতুন আইনের মাধ্যমে আদালতে ‘ভুল’ তথ্য প্রদানকারীকে এক বছর পর্যন্ত পেশা থেকে বহিষ্কার করতে পারবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত সপ্তাহে আইনটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। তাদের অভিমত, এর ফলে সরকারের শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা আরও বাড়বে। একটি দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালেই কেবল এমনটি হয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আয়োজনের অধিকারও বন্ধ হয়ে যাবে এই আইনের ফলে। অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সাঈদ বৌমেদোহা বলেন, ‘এই আইনের মাধ্যমে সব ধরনের বিরোধী মতের টুঁটি চেপে ধরা হবে। মৌলিক মানবাধিকারের ওপর চলবে স্টিমরোলার।’ দুই বছর আগে মিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে সেনাবাহিনী। তৎকালীন সেনাপ্রধান সিসি প্রেসিডেন্ট হন। এরপর থেকে জঙ্গি হামলার পরিমাণও বাড়তে থাকে। ক্ষমতায় আসার পর উগ্র ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে দমননীতি শুরু করে সিসি সরকার। কয়েক শ জঙ্গি নিহত হয়, বন্দী করা হয় হাজার হাজার সদস্যকে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসিসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের বেশ কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
No comments