বিদেশী বিনিয়োগ তলানিতে- এক মাসে নিবন্ধন কমেছে ৯০ ভাগ by আশরাফুল ইসলাম
চলমান
রাজনৈতিক সঙ্কটে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগও তলানিতে ঠেকে
গেছে। বিনিয়োগ বোর্ডের হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধনের
হার কমেছে ৯০ ভাগ। এ হিসাব গত জানুয়ারি মাসের। ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাব
এখনো আসেনি। তবে বিনিয়োগ বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের
অবস্থা আরো খারাপ। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সঙ্কট দ্রুত না কাটলে কাক্সিত
বিনিয়োগ অর্জন করা সম্ভব হবে না। এতে অর্থনীতি পিছিয়ে পড়বে এবং জিডিপি
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
বিনিয়োগ বোর্ডের শতভাগ বিদেশী ও যৌথ বিনিয়োগে নিবন্ধিত শিল্পসংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে সাড়ে ৪২ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছিল। কিন্তু এক মাসের ব্যবধানে জানুয়ারিতে এসে তা নেমে গেছে চার কোটি ডলারে। শুধু বিনিয়োগই কমেনি, নিবন্ধিত শিল্পের সংখ্যাও কমে গেছে। গত জানুয়ারিতে বিদেশী শিল্প নিবন্ধিত হয়েছে ৯টি, যেখানে আগের মাসে ছিল ১৫টি। বিনিয়োগ ও নিবন্ধিত শিল্পের পাশাপাশি প্রস্তাবিত কর্মসংস্থানও কমে গেছে। গত ডিসেম্বরে বিদেশী শিল্পের মাধ্যমে নিবন্ধিত কর্মসংস্থান ছিল এক হাজার ৪২২ জনের। কিন্তু জানুয়ারিতে তা নেমেছে ৮৮৯ জনে। বিদেশী শিল্পের মাধ্যমে প্রস্তাবিত কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পে কর্মসংস্থানও কমে গেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জানুয়ারিতে স্থানীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে নিবন্ধিত কর্মসংস্থান হয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৮ জনের, ডিসেম্বরে ছিল ১৭ হাজার ৩৫১ জনের। সামগ্রিকভাবে জানুয়ারিতে ডিসেম্বরের চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মসংস্থান কমেছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাই বিনিয়োগে আসছেন না, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কথা তো ভাবাই যাবে না। তাদের মতে, এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো এখন মহাবিপাকে পড়েছে। তারা রেমিট্যান্স আনছেন, তার বিনিময়ে টাকা দেয়া হচ্ছে; কিন্তু বিনিয়োগ না থাকায়, তা তারা কাজে লাগাতে পারছেন না। আবার এ বৈদেশিক মুদ্রা তারা ধরেও রাখতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী দিন শেষে তারা মোট মূলধনের ১৫ ভাগের সমপরিমাণের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা হাতে রাখতে পারবে না। বেশি থাকলে হয় তাকে মুদ্রাবাজারের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে, অন্যথায় তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হবে। তা-না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরিমানা গুনতে হয়। কিন্তু বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা না থাকায় তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসছে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে স্থানীয় মুদ্রা না দিয়ে ছয় মাস মেয়াদি সরকারি বিল ধরিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংক নগদে ডলার কিনে ছয় মাসের বাকিতে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। এতে তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে চলছে। দ্বিতীয়ত, তারা যে আমানত নিচ্ছেন, তা বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। ফলে বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তহবিল। এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে সরকারের ঋণের জোগান দিচ্ছে। এখান থেকে কিছু কাগুজে মুনাফা পাচ্ছে, যা দিয়ে তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের একটি অংশ উঠে আসছে। ব্যাংকারদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে ব্যাংকে বেসরকারি বিনিয়োগ শূন্য হয়ে যাবে, যা দেশের জন্য মোটেও কল্যাণকর হবে না।
সার্বিক বিনিয়োগবিষয়ে অর্থনীতিবিদেরা জানিয়েছেন, গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে বিরোধী দল টানা আন্দোলন করে আসছে। সরকারও এ বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিদেশীরা কেন, দেশীয়ও কোনো উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করবেন নাÑ এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা অর্থনীতিকে যে তলানিতে নিয়ে যাচ্ছে, তা প্রায় অবধারিত হয়ে গেছে। সঙ্কট দ্রুত কাটানোই একমাত্র সমাধান বলে তারা মনে করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এই অবস্থা নিঃসন্দেহে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে হয়েছে। তিনি জানান, এমনিতেই দেশের রেগুলেটরি বডিগুলোর (নিয়ন্ত্রক সংস্থা) অদক্ষতা ও তাদের নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে না দেয়ার কারণে অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ ও বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এমনিতেই আস্থার সঙ্কটে ছিলেন, এর ওপর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ পরিস্থিতি আরো খারাপ অবস্থানে এসেছে। আর এটা অব্যাহত থাকলে দেশে কাক্সিত হারে কর্মসংস্থান হবে না, বেড়ে যাবে বেকারত্বের হার। এ থেকে উত্তরণের জন্য এখনই সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
বিনিয়োগ বোর্ডের শতভাগ বিদেশী ও যৌথ বিনিয়োগে নিবন্ধিত শিল্পসংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে সাড়ে ৪২ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছিল। কিন্তু এক মাসের ব্যবধানে জানুয়ারিতে এসে তা নেমে গেছে চার কোটি ডলারে। শুধু বিনিয়োগই কমেনি, নিবন্ধিত শিল্পের সংখ্যাও কমে গেছে। গত জানুয়ারিতে বিদেশী শিল্প নিবন্ধিত হয়েছে ৯টি, যেখানে আগের মাসে ছিল ১৫টি। বিনিয়োগ ও নিবন্ধিত শিল্পের পাশাপাশি প্রস্তাবিত কর্মসংস্থানও কমে গেছে। গত ডিসেম্বরে বিদেশী শিল্পের মাধ্যমে নিবন্ধিত কর্মসংস্থান ছিল এক হাজার ৪২২ জনের। কিন্তু জানুয়ারিতে তা নেমেছে ৮৮৯ জনে। বিদেশী শিল্পের মাধ্যমে প্রস্তাবিত কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পে কর্মসংস্থানও কমে গেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জানুয়ারিতে স্থানীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে নিবন্ধিত কর্মসংস্থান হয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৮ জনের, ডিসেম্বরে ছিল ১৭ হাজার ৩৫১ জনের। সামগ্রিকভাবে জানুয়ারিতে ডিসেম্বরের চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মসংস্থান কমেছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাই বিনিয়োগে আসছেন না, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কথা তো ভাবাই যাবে না। তাদের মতে, এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো এখন মহাবিপাকে পড়েছে। তারা রেমিট্যান্স আনছেন, তার বিনিময়ে টাকা দেয়া হচ্ছে; কিন্তু বিনিয়োগ না থাকায়, তা তারা কাজে লাগাতে পারছেন না। আবার এ বৈদেশিক মুদ্রা তারা ধরেও রাখতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী দিন শেষে তারা মোট মূলধনের ১৫ ভাগের সমপরিমাণের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা হাতে রাখতে পারবে না। বেশি থাকলে হয় তাকে মুদ্রাবাজারের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে, অন্যথায় তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হবে। তা-না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরিমানা গুনতে হয়। কিন্তু বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা না থাকায় তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসছে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে স্থানীয় মুদ্রা না দিয়ে ছয় মাস মেয়াদি সরকারি বিল ধরিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংক নগদে ডলার কিনে ছয় মাসের বাকিতে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। এতে তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে চলছে। দ্বিতীয়ত, তারা যে আমানত নিচ্ছেন, তা বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। ফলে বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তহবিল। এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে সরকারের ঋণের জোগান দিচ্ছে। এখান থেকে কিছু কাগুজে মুনাফা পাচ্ছে, যা দিয়ে তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের একটি অংশ উঠে আসছে। ব্যাংকারদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে ব্যাংকে বেসরকারি বিনিয়োগ শূন্য হয়ে যাবে, যা দেশের জন্য মোটেও কল্যাণকর হবে না।
সার্বিক বিনিয়োগবিষয়ে অর্থনীতিবিদেরা জানিয়েছেন, গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে বিরোধী দল টানা আন্দোলন করে আসছে। সরকারও এ বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিদেশীরা কেন, দেশীয়ও কোনো উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করবেন নাÑ এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা অর্থনীতিকে যে তলানিতে নিয়ে যাচ্ছে, তা প্রায় অবধারিত হয়ে গেছে। সঙ্কট দ্রুত কাটানোই একমাত্র সমাধান বলে তারা মনে করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এই অবস্থা নিঃসন্দেহে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে হয়েছে। তিনি জানান, এমনিতেই দেশের রেগুলেটরি বডিগুলোর (নিয়ন্ত্রক সংস্থা) অদক্ষতা ও তাদের নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে না দেয়ার কারণে অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ ও বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এমনিতেই আস্থার সঙ্কটে ছিলেন, এর ওপর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ পরিস্থিতি আরো খারাপ অবস্থানে এসেছে। আর এটা অব্যাহত থাকলে দেশে কাক্সিত হারে কর্মসংস্থান হবে না, বেড়ে যাবে বেকারত্বের হার। এ থেকে উত্তরণের জন্য এখনই সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
No comments