সরকারি ফাঁদে পাট খাত- কোম্পানীকরণ নয়, ব্যবস্থাপনার গলদ হটান
যে পাট বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী স্বপ্নযাত্রার সহযোগী ছিল, স্বাধীনতার পর কখনোই সেই পাট খাত আশঙ্কামুক্ত হয়নি। এখন আবার ২৬টি সরকারি পাটকল হোল্ডিং কোম্পানি করা নিয়ে অস্থিরতা জন্মেছে। একদিকে লোকসানের ভার, অন্যদিকে বেসরকারীকরণের দুর্নীতি; এই উভয়সংকটে পড়েছে পাট খাত। বিশ্ববাজারে যখন পাটের চাহিদা বাড়ছে, ইউরোপে পলিথিন ব্যাগ উঠে যাচ্ছে, বাংলাদেশেও সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইন প্রণীত হয়েছে, তখন পাটকলগুলোর লোকসানি থাকা অস্বাভাবিক। কোন ভুল নীতি আর কাদের চক্রান্তে এই খাতের বিনাশ ঘটছে, সবার আগে সেটা চিহ্নিত হওয়া দরকার।
লোকসানের অজুহাতে এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী বন্ধ করা হয়েছিল আর এর শ্রমিক পরিবারগুলো হয়ে গিয়েছিল ছন্নছাড়া। এখনো রাষ্ট্রীয় ২৮টি পাটকল লোকসানে ধুঁকছে। লোকসান থেকে বাঁচা এবং শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আর্থিক সহযোগিতা দরকার। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা দেবে না, যদি বিজেএমসিকে হোল্ডিং কোম্পানি করা না হয়।
পাটকল বন্ধ ও বিক্রি করার পরিণাম ভালো হয়নি। আশির দশকে বিশ্বব্যাংকের কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৬২টি পাটকলের মধ্যে ৩৩টি বিক্রি করা হয় এমন লোকদের কাছে, যাঁদের শিল্প চালানোর অভিজ্ঞতাই ছিল না।
১৯৯২ সালে বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা অনুসারে পাট খাত সমন্বয় ঋণ কর্মসূচি (জেএসএসি) হাতে নেওয়া হয়। শিল্প বাঁচাতে নয়, বন্ধ করতে ঋণ দেওয়া হয়। আদমজী বন্ধের বছরই (২০০২) ঘোষিত হয় জাতীয় পাটনীতি। বিপরীতে ২০০৫ সালে ঘোষিত ভারতের পাটনীতির লক্ষ্য ছিল পাটশিল্পে বাংলাদেশকে ছাপিয়ে যাওয়া। পাট খাত চাঙা করায় বিশ্বব্যাংকের ঋণও তারা পায়। ভারত সরকার পাটকল ও পাটচাষিদের প্রতি যতটাই যত্নবান, আমাদের সরকারগুলো ততটাই বিমাতাসুলভ।
পাট খাতের পতনের সব দোষ শ্রমিকের ঘাড়ে চাপানো হয়ে থাকে। পাট মন্ত্রণালয়ের এক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০০৬ সালে লোকসান হওয়া ৪২১ কোটি টাকার মধ্যে শ্রমিক আন্দোলনের দায় মাত্র ৩০ কোটি টাকা; বাকি ৩৯১ কোটি টাকার দায় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের। ভি ভাস্কর ও মুশতাক খানের গবেষণা দেখাচ্ছে, অতিরিক্ত শ্রমিক নয়, পাটকলগুলো ভারাক্রান্ত ছিল মাথাভারী প্রশাসনের চাপে। সদ্যবিদায়ী পাটমন্ত্রীও এক সভায় বলেছেন, সমস্যাটা জুট মিলে নয়, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায়। পাটের গোড়া কৃষকের হাতে থাকলেও এর আগায়, অর্থাৎ সরকারি ব্যবস্থাপনায় পচন ধরেছে।
সুতরাং, তড়িঘড়ি করে হোল্ডিং কোম্পানি করার চেয়ে এই খাতের সার্বিক সংস্কারের পদক্ষেপই জরুরি। আর আশু পদক্ষেপ হিসেবে পাটকলগুলো চালু রাখা এবং শ্রমিকের বকেয়া শোধের ব্যবস্থা অর্থ মন্ত্রণালয়কে করতে হবে। কালোটাকা সাদা করা, ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক লুট করাকে যে অর্থমন্ত্রী ‘মামুলি’ বলেন, তিনি যেন একইভাবে পাটকল এবং এর লাখ লাখ শ্রমিক ও কোটিসংখ্যক কৃষকের স্বার্থকে মামুলি বলে উপেক্ষা না করেন।
লোকসানের অজুহাতে এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী বন্ধ করা হয়েছিল আর এর শ্রমিক পরিবারগুলো হয়ে গিয়েছিল ছন্নছাড়া। এখনো রাষ্ট্রীয় ২৮টি পাটকল লোকসানে ধুঁকছে। লোকসান থেকে বাঁচা এবং শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আর্থিক সহযোগিতা দরকার। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা দেবে না, যদি বিজেএমসিকে হোল্ডিং কোম্পানি করা না হয়।
পাটকল বন্ধ ও বিক্রি করার পরিণাম ভালো হয়নি। আশির দশকে বিশ্বব্যাংকের কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৬২টি পাটকলের মধ্যে ৩৩টি বিক্রি করা হয় এমন লোকদের কাছে, যাঁদের শিল্প চালানোর অভিজ্ঞতাই ছিল না।
১৯৯২ সালে বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা অনুসারে পাট খাত সমন্বয় ঋণ কর্মসূচি (জেএসএসি) হাতে নেওয়া হয়। শিল্প বাঁচাতে নয়, বন্ধ করতে ঋণ দেওয়া হয়। আদমজী বন্ধের বছরই (২০০২) ঘোষিত হয় জাতীয় পাটনীতি। বিপরীতে ২০০৫ সালে ঘোষিত ভারতের পাটনীতির লক্ষ্য ছিল পাটশিল্পে বাংলাদেশকে ছাপিয়ে যাওয়া। পাট খাত চাঙা করায় বিশ্বব্যাংকের ঋণও তারা পায়। ভারত সরকার পাটকল ও পাটচাষিদের প্রতি যতটাই যত্নবান, আমাদের সরকারগুলো ততটাই বিমাতাসুলভ।
পাট খাতের পতনের সব দোষ শ্রমিকের ঘাড়ে চাপানো হয়ে থাকে। পাট মন্ত্রণালয়ের এক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০০৬ সালে লোকসান হওয়া ৪২১ কোটি টাকার মধ্যে শ্রমিক আন্দোলনের দায় মাত্র ৩০ কোটি টাকা; বাকি ৩৯১ কোটি টাকার দায় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের। ভি ভাস্কর ও মুশতাক খানের গবেষণা দেখাচ্ছে, অতিরিক্ত শ্রমিক নয়, পাটকলগুলো ভারাক্রান্ত ছিল মাথাভারী প্রশাসনের চাপে। সদ্যবিদায়ী পাটমন্ত্রীও এক সভায় বলেছেন, সমস্যাটা জুট মিলে নয়, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায়। পাটের গোড়া কৃষকের হাতে থাকলেও এর আগায়, অর্থাৎ সরকারি ব্যবস্থাপনায় পচন ধরেছে।
সুতরাং, তড়িঘড়ি করে হোল্ডিং কোম্পানি করার চেয়ে এই খাতের সার্বিক সংস্কারের পদক্ষেপই জরুরি। আর আশু পদক্ষেপ হিসেবে পাটকলগুলো চালু রাখা এবং শ্রমিকের বকেয়া শোধের ব্যবস্থা অর্থ মন্ত্রণালয়কে করতে হবে। কালোটাকা সাদা করা, ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক লুট করাকে যে অর্থমন্ত্রী ‘মামুলি’ বলেন, তিনি যেন একইভাবে পাটকল এবং এর লাখ লাখ শ্রমিক ও কোটিসংখ্যক কৃষকের স্বার্থকে মামুলি বলে উপেক্ষা না করেন।
No comments