অনলাইন থেকে-গান্ধী ও ম্যান্ডেলা
পঁচানব্বইতম জন্মদিন পার করলেন নেলসন
ম্যান্ডেলা। আমরা ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা নিয়ে খতিয়ে দেখতে পারি। দুটি বড়
ঘটনার সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে থাকবে : ১৯৬১ সালের সশস্ত্র সংগ্রামে আফ্রিকান
ন্যাশনাল কংগ্রেস এবং ১৯৯৪ সালে সংখ্যালঘু
শ্বেতাঙ্গদের
শাসন থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে অ-বর্ণবাদী সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনে রূপদান করা।
পরের বিষয়টির কারণে তাঁকে গান্ধীর সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু আগের
বিষয়টিও যে সচেতনতার মধ্য দিয়ে নীতি গ্রহণ করা হয়, তাও ছিল প্রকৃতপক্ষে
গান্ধীর দ্বারা অনুপ্রাণিত।
১৯১২ সালে যখন এএনসি প্রতিষ্ঠা পায় তখন গান্ধী ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। তিনি তখন ভারতীয়দের ইউরোপীয়দের মতো সমান অধিকার আদায়ে সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন। কিছু সফলতাও এসেছিল। মনে রাখতে হবে, গান্ধী কিন্তু বর্ণবাদ বা কালোদের প্রশ্নে আন্দোলন করেননি। অন্যায়ভাবে পরিশ্রমী ভারতীয়দের গড়পড়তা শ্রমবিমুখ এবং 'ন্যাংটা' কালো হিসেবে দেখা হয়েছে। তিনি সাদা ও কালোদের বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি, শুধু প্রশ্ন ছিল ভারতীয়দের শ্বেতাঙ্গদের বদলে কৃষ্ণাঙ্গদের মতো বিবেচনা করা নিয়ে। তথাপি বিকাশমান এএনসি গান্ধীর টিপিক্যাল অহিংস কৌশলকেই অবলম্বন করেছে।
পরবর্তী সময়ে তিনি ভারতে নেতৃত্ব দিয়ে বড় লক্ষ্য অর্জন করেছিলেন। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় উপনিবেশ ভারতে স্বশাসন এবং পূর্ণ স্বাধীনতা এনেছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর আন্দোলন এতটা বড় উচ্চ পর্যায়ের ছিল না। তাঁর আন্দোলনটি ছিল ছোট একটি সংখ্যালঘু ভারতীয় সম্প্রদায়ের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, যা ব্রিটিশ প্রশাসনে খুব প্রভাব ফেলেনি।
ভারতীয়দের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছিল অহিংস। কিন্তু তাই বলে তিনি যে সম্পূর্ণরূপে সহিংসতার বাইরে ছিলেন, তা নয়। তিনি বয়ার যুদ্ধে (১৮৯৯-১৯০২) এবং দ্বিতীয় জুলু যুদ্ধে (১৯০৬) অংশগ্রহণ করেছেন স্বেচ্ছাসেবক স্ট্রেচারবাহক হিসেবে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতীয়দের রিক্রুট করেছিলেন। তিনি বোকার মতো হিসাব কষেছিলেন যে তিনি সহযোগিতা করলে ব্রিটিশ শাসকরা বিনিময়ে তাঁকে রাজনৈতিক ছাড় দেবে।
ম্যান্ডেলার ক্ষেত্রে আমরা দেখি সশস্ত্র সংগ্রাম ও অহিংস রাজনৈতিক অর্জনের একটি সমন্বয় রয়েছে। ১৯৬১ সালে এএনসি দেখল, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রাম কেবল ব্যর্থতাই ডেকে আনছে। কালোরা ব্রিটিশ শাসনের অধীনে স্বশাসনের চেয়ে অনেক মন্দ অবস্থায় চলে গেছে। গান্ধীবাদীরা হয়তো বিশ্লেষণ করবেন এএনসি অপর্যাপ্ত অহিংস পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এটি বোধগম্য যে এএনসি এটিকে ব্যর্থ পথ হিসেবেই দেখেছে।
গান্ধীর মতোই ম্যান্ডেলার বেলায় একটি সূক্ষ্ম বিচারের বিষয় রয়েছে। আমাদের স্মরণে এই দুজনই অহিংস ক্ষমতার পালাবদলের ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন; কিন্তু প্রয়োজনে তাঁরা সশস্ত্র সংঘাতেও অংশ নিয়েছেন।
লেখক : ড. কোয়েনরাড এলস্ট। ভারতীয় ইতিহাস বিশেষজ্ঞ। মহাত্মা গান্ধীর ভূমিকা বইয়ের লেখা। আউটলুক থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
১৯১২ সালে যখন এএনসি প্রতিষ্ঠা পায় তখন গান্ধী ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। তিনি তখন ভারতীয়দের ইউরোপীয়দের মতো সমান অধিকার আদায়ে সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন। কিছু সফলতাও এসেছিল। মনে রাখতে হবে, গান্ধী কিন্তু বর্ণবাদ বা কালোদের প্রশ্নে আন্দোলন করেননি। অন্যায়ভাবে পরিশ্রমী ভারতীয়দের গড়পড়তা শ্রমবিমুখ এবং 'ন্যাংটা' কালো হিসেবে দেখা হয়েছে। তিনি সাদা ও কালোদের বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি, শুধু প্রশ্ন ছিল ভারতীয়দের শ্বেতাঙ্গদের বদলে কৃষ্ণাঙ্গদের মতো বিবেচনা করা নিয়ে। তথাপি বিকাশমান এএনসি গান্ধীর টিপিক্যাল অহিংস কৌশলকেই অবলম্বন করেছে।
পরবর্তী সময়ে তিনি ভারতে নেতৃত্ব দিয়ে বড় লক্ষ্য অর্জন করেছিলেন। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় উপনিবেশ ভারতে স্বশাসন এবং পূর্ণ স্বাধীনতা এনেছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর আন্দোলন এতটা বড় উচ্চ পর্যায়ের ছিল না। তাঁর আন্দোলনটি ছিল ছোট একটি সংখ্যালঘু ভারতীয় সম্প্রদায়ের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, যা ব্রিটিশ প্রশাসনে খুব প্রভাব ফেলেনি।
ভারতীয়দের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছিল অহিংস। কিন্তু তাই বলে তিনি যে সম্পূর্ণরূপে সহিংসতার বাইরে ছিলেন, তা নয়। তিনি বয়ার যুদ্ধে (১৮৯৯-১৯০২) এবং দ্বিতীয় জুলু যুদ্ধে (১৯০৬) অংশগ্রহণ করেছেন স্বেচ্ছাসেবক স্ট্রেচারবাহক হিসেবে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতীয়দের রিক্রুট করেছিলেন। তিনি বোকার মতো হিসাব কষেছিলেন যে তিনি সহযোগিতা করলে ব্রিটিশ শাসকরা বিনিময়ে তাঁকে রাজনৈতিক ছাড় দেবে।
ম্যান্ডেলার ক্ষেত্রে আমরা দেখি সশস্ত্র সংগ্রাম ও অহিংস রাজনৈতিক অর্জনের একটি সমন্বয় রয়েছে। ১৯৬১ সালে এএনসি দেখল, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রাম কেবল ব্যর্থতাই ডেকে আনছে। কালোরা ব্রিটিশ শাসনের অধীনে স্বশাসনের চেয়ে অনেক মন্দ অবস্থায় চলে গেছে। গান্ধীবাদীরা হয়তো বিশ্লেষণ করবেন এএনসি অপর্যাপ্ত অহিংস পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এটি বোধগম্য যে এএনসি এটিকে ব্যর্থ পথ হিসেবেই দেখেছে।
গান্ধীর মতোই ম্যান্ডেলার বেলায় একটি সূক্ষ্ম বিচারের বিষয় রয়েছে। আমাদের স্মরণে এই দুজনই অহিংস ক্ষমতার পালাবদলের ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন; কিন্তু প্রয়োজনে তাঁরা সশস্ত্র সংঘাতেও অংশ নিয়েছেন।
লেখক : ড. কোয়েনরাড এলস্ট। ভারতীয় ইতিহাস বিশেষজ্ঞ। মহাত্মা গান্ধীর ভূমিকা বইয়ের লেখা। আউটলুক থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments