আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আপস নয় by মযহারুল ইসলাম বাবলা
বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের অন্যতম
নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা। ক্ষমতাপ্রাপ্তির
পরক্ষণে বিচারকাজ শুরু না করার কারণে নানা প্রতিষ্ঠান ও মহলের চাপে
বিলম্বে হলেও বিচারিক কার্যক্রম সরকার হাতে নেয়।
গঠন করে
ট্রাইব্যুনাল। তবে সরকার গঠনের মতো অদক্ষতার নানা দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি
ট্রাইব্যুনালকে কেন্দ্র করে। বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে মন্ত্রী-সাংসদ এবং
দলীয় নেতাদের নানামুখী বেফাঁস কথাবার্তা, যা অনভিপ্রেত কেবল নয়, রীতিমতো
বিচারিক কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার শামিল। দেশবাসীর বহু প্রতীক্ষিত
বিচারকাজ শুরুর পর একে একে মাত্র কয়জনকে বিচারের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা গোলাম আযমকে গ্রেপ্তার করা হয় অনেক পরে। পাঁচ
বছর মেয়াদের সরকারের চার বছরের মাথায় বিচারের রায় ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয়
রায়ে কসাইখ্যাত কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার কারণে জনমনে
শঙ্কা ও সন্দেহের উদ্বেগে তরুণরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে এবং গঠিত হয়
গণজাগরণ মঞ্চ। জনদাবিতে সরকার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ আইনে
সংশোধনী এনে পাস করতে বাধ্য হয়। এতে জনরোষ কিছুটা প্রশমিত হয়। আপিল
নিষ্পত্তির মেয়াদ ষাট দিন নির্ধারিত অথচ আপিলের চূড়ান্ত বিষয় এখনো
নিষ্পত্তির ধারেকাছেও দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে নানা জটিলতার কথা প্রচারিত
হচ্ছে। অ্যাপিলেট ডিভিশনের কয়েকজন বিচারকের নিষ্ক্রিয়তার কথাও শোনা যাচ্ছে।
পৃথিবীর কোথাও যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধীদের আপিলের সুযোগ নেই। অথচ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক মামলার রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষের আপিলের অধিকার দেওয়া হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ না রাখার মতো অর্বাচীন ব্যবস্থাটি সরকারের অদক্ষতারই উজ্জ্বল প্রমাণ; যদিও কাদের মোল্লার রায়ের পর সেই ভুল সংশোধন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সরকারের দায়সারা মনোভাব নানাভাবে ফুটে উঠেছে। তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা-সন্দেহ ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ক্ষমতায় থাকাবস্থায় প্রতিটি সরকারই জনবিচ্ছিন্ন বলেই জন-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে এসেছে। বর্তমান সরকারও তার ব্যতিক্রম নয়।
প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশের পর দ্বিতীয় রায়ে কসাইখ্যাত কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তৃতীয় রায়ে সাঈদীর ফাঁসি, চতুর্থ রায়ে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশের পর ঘাতকদের শিরোমণি ৯১ বছর বয়সী গোলাম আযমকে দেওয়া হয়েছে ৯০ বছরের কারাদণ্ড। আদালত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সামগ্রিক পর্যালোচনা এবং আইনি প্রমাণে তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের বিষয় রায়ে উল্লেখ করলেও বয়স এবং অসুস্থ বিবেচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে হাস্যকর এবং তামাশার ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এই অনভিপ্রেত রায়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। অপরাধীর বয়স বিবেচনারও সামান্য সুযোগ মানবতাবিরোধীদের ক্ষেত্রে থাকার কথা নয়। তাঁর ঘৃণিত অপরাধগুলোর মানদণ্ডে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি আইনি ক্ষেত্রে যেমন অপরিহার্য- তেমনি দেশবাসীর প্রত্যাশার সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তির স্থলে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রায়ে তাঁর বয়সের বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের বিচারের রায়ে বয়স বিবেচনার দৃষ্টান্ত তেমন নেই। আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী পর্যন্ত আদালতে তাঁর বয়সের প্রসঙ্গে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।
প্রসিকিউশনের দুজন আইনজীবী এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের কথা টিভি মিডিয়ায় বলেছেন বটে। তবে সরকারের আইনমন্ত্রী, আইন প্রতিমন্ত্রী, দলীয় মুখপাত্র হানিফ এবং সবশেষে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সে ক্ষেত্রে এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিল করার নৈতিক অধিকার এরই মধ্যে হারিয়েছে বললে কি ভুল হবে? দুজন আইনজীবী সরকারের নিয়োজিত। কাজেই তাঁরা আপিলের কথা বলেছেন, কিন্তু সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই তা নির্ভর করছে। আইনজীবীদের অধিকার-এখতিয়ার সে ক্ষেত্রে থাকবে না বা থাকার সুযোগও নেই।
যাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল আলবদর, আলশামস, রাজাকার তথা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী অঙ্লিারি ফোর্স। যারা কেবল মুক্তিযুদ্ধকে বানচাল নয়, নির্বিচারে গণহত্যা-ধর্ষণসহ নানা অপকীর্তিতে মেতে ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস। যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা গোলাম আযমের ফাঁসি না হওয়া এবং সরকারের সন্তুষ্টি কি প্রমাণ করে না, পর্দার অন্তরালে অন্য খেলা চলছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ক্ষমতার রাজনীতির আত্মঘাতী খেলা বর্তমান সরকারের জন্য কবর রচনার শামিল হবে। যে জনগণ নিরঙ্কুশ সমর্থন বর্তমান সরকারকে দিয়েছে- তা প্রত্যাখ্যান করার অধিকারও নিশ্চয় তাদের রয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব-নৈরাজ্য দেশজুড়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে। এ তাণ্ডবে নিরপরাধ পথচারী, গাড়ি যাত্রী, গাড়িচালক, রিকশাচালকসহ অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে। অথচ সরকার শক্ত হাতে তাদের দমনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কথার ফুলঝুরিতে পারঙ্গম মন্ত্রিপরিষদ ও সরকার, অথচ নিরপরাধ জনগণকে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না। পুলিশি অভিযানে জামায়াতের নেতাদের গ্রেপ্তার ঠেকাতে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার প্রকাশ্য ভূমিকার সংবাদ ছবিসহ দৈনিকে ছাপা হয়েছে। সেসব নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এসব কিসের আলামত?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তামাশার অধিকার নিশ্চয়ই কারো নেই। মহাজোটের শরিকসহ খোদ দলীয় নেতাদের অনেকে গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় রায় প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কেবিনেটের সদস্যরা রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আপিলের পথ বন্ধ করার চূড়ান্ত পাঁয়তারা করছে।
আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শনের নানা ঘটনা আমরা অতীতে এবং বর্তমান সরকারের শাসনামলেও প্রত্যক্ষ করেছি।
আমরা আশাবাদী হতে চাই, বিশ্বাস করতে চাই। বর্তমান সরকার তাদের মেয়াদকালেই যুদ্ধাপরাধীদের রায় ও শাস্তি নিশ্চিত করে জাতির কলঙ্কমোচনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেবে। ভোট ও ক্ষমতার রাজনীতির পাশাখেলা পরিত্যাগ করে জন-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার প্রতি সম্মান দেখিয়ে, ত্রিশ লাখ বীর শহীদের আত্মদান এবং সহস্র নারীর সম্ভ্রম হারানোর দায় থেকে জাতিকে মুক্তি দেবে। বিচার ও আইনের শাসন গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় যুগান্তকারী পদক্ষেপরূপেই বিবেচিত হবে। দেশবাসীর সে প্রত্যাশা পূরণে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলেই বিশ্বাস করতে চাই।
লেখক : অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পৃথিবীর কোথাও যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধীদের আপিলের সুযোগ নেই। অথচ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক মামলার রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষের আপিলের অধিকার দেওয়া হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ না রাখার মতো অর্বাচীন ব্যবস্থাটি সরকারের অদক্ষতারই উজ্জ্বল প্রমাণ; যদিও কাদের মোল্লার রায়ের পর সেই ভুল সংশোধন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সরকারের দায়সারা মনোভাব নানাভাবে ফুটে উঠেছে। তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা-সন্দেহ ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ক্ষমতায় থাকাবস্থায় প্রতিটি সরকারই জনবিচ্ছিন্ন বলেই জন-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে এসেছে। বর্তমান সরকারও তার ব্যতিক্রম নয়।
প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশের পর দ্বিতীয় রায়ে কসাইখ্যাত কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তৃতীয় রায়ে সাঈদীর ফাঁসি, চতুর্থ রায়ে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশের পর ঘাতকদের শিরোমণি ৯১ বছর বয়সী গোলাম আযমকে দেওয়া হয়েছে ৯০ বছরের কারাদণ্ড। আদালত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সামগ্রিক পর্যালোচনা এবং আইনি প্রমাণে তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের বিষয় রায়ে উল্লেখ করলেও বয়স এবং অসুস্থ বিবেচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে হাস্যকর এবং তামাশার ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এই অনভিপ্রেত রায়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। অপরাধীর বয়স বিবেচনারও সামান্য সুযোগ মানবতাবিরোধীদের ক্ষেত্রে থাকার কথা নয়। তাঁর ঘৃণিত অপরাধগুলোর মানদণ্ডে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি আইনি ক্ষেত্রে যেমন অপরিহার্য- তেমনি দেশবাসীর প্রত্যাশার সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তির স্থলে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রায়ে তাঁর বয়সের বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের বিচারের রায়ে বয়স বিবেচনার দৃষ্টান্ত তেমন নেই। আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী পর্যন্ত আদালতে তাঁর বয়সের প্রসঙ্গে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।
প্রসিকিউশনের দুজন আইনজীবী এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের কথা টিভি মিডিয়ায় বলেছেন বটে। তবে সরকারের আইনমন্ত্রী, আইন প্রতিমন্ত্রী, দলীয় মুখপাত্র হানিফ এবং সবশেষে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সে ক্ষেত্রে এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিল করার নৈতিক অধিকার এরই মধ্যে হারিয়েছে বললে কি ভুল হবে? দুজন আইনজীবী সরকারের নিয়োজিত। কাজেই তাঁরা আপিলের কথা বলেছেন, কিন্তু সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই তা নির্ভর করছে। আইনজীবীদের অধিকার-এখতিয়ার সে ক্ষেত্রে থাকবে না বা থাকার সুযোগও নেই।
যাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল আলবদর, আলশামস, রাজাকার তথা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী অঙ্লিারি ফোর্স। যারা কেবল মুক্তিযুদ্ধকে বানচাল নয়, নির্বিচারে গণহত্যা-ধর্ষণসহ নানা অপকীর্তিতে মেতে ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস। যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা গোলাম আযমের ফাঁসি না হওয়া এবং সরকারের সন্তুষ্টি কি প্রমাণ করে না, পর্দার অন্তরালে অন্য খেলা চলছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ক্ষমতার রাজনীতির আত্মঘাতী খেলা বর্তমান সরকারের জন্য কবর রচনার শামিল হবে। যে জনগণ নিরঙ্কুশ সমর্থন বর্তমান সরকারকে দিয়েছে- তা প্রত্যাখ্যান করার অধিকারও নিশ্চয় তাদের রয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব-নৈরাজ্য দেশজুড়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে। এ তাণ্ডবে নিরপরাধ পথচারী, গাড়ি যাত্রী, গাড়িচালক, রিকশাচালকসহ অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে। অথচ সরকার শক্ত হাতে তাদের দমনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কথার ফুলঝুরিতে পারঙ্গম মন্ত্রিপরিষদ ও সরকার, অথচ নিরপরাধ জনগণকে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না। পুলিশি অভিযানে জামায়াতের নেতাদের গ্রেপ্তার ঠেকাতে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার প্রকাশ্য ভূমিকার সংবাদ ছবিসহ দৈনিকে ছাপা হয়েছে। সেসব নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এসব কিসের আলামত?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তামাশার অধিকার নিশ্চয়ই কারো নেই। মহাজোটের শরিকসহ খোদ দলীয় নেতাদের অনেকে গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় রায় প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কেবিনেটের সদস্যরা রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আপিলের পথ বন্ধ করার চূড়ান্ত পাঁয়তারা করছে।
আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শনের নানা ঘটনা আমরা অতীতে এবং বর্তমান সরকারের শাসনামলেও প্রত্যক্ষ করেছি।
আমরা আশাবাদী হতে চাই, বিশ্বাস করতে চাই। বর্তমান সরকার তাদের মেয়াদকালেই যুদ্ধাপরাধীদের রায় ও শাস্তি নিশ্চিত করে জাতির কলঙ্কমোচনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেবে। ভোট ও ক্ষমতার রাজনীতির পাশাখেলা পরিত্যাগ করে জন-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার প্রতি সম্মান দেখিয়ে, ত্রিশ লাখ বীর শহীদের আত্মদান এবং সহস্র নারীর সম্ভ্রম হারানোর দায় থেকে জাতিকে মুক্তি দেবে। বিচার ও আইনের শাসন গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় যুগান্তকারী পদক্ষেপরূপেই বিবেচিত হবে। দেশবাসীর সে প্রত্যাশা পূরণে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলেই বিশ্বাস করতে চাই।
লেখক : অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
No comments