ইংল্যান্ডের অপেক্ষার অবসান

৪৫ মিনিট অপেক্ষায় রাখল সিডনির আকাশ। বিরক্তি বাড়িয়ে দিল স্মিথ-সিডলের ৮৬ রানের জুটি। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ অবশেষে এল কাল খেলা শুরুর ঠিক ১ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট পর। যে ক্ষণটাকে পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ৬৮ দিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় পা রেখেছিলেন স্ট্রাউসরা। ২৪ বছর ধরে যে ক্ষণটির অপেক্ষায় ইংল্যান্ড। ক্রিস ট্রেমলেটের বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বল মাইকেল বিয়ারের ব্যাট ছুঁয়ে ভেঙে দিল স্টাম্প। অ্যাশেজ ইংল্যান্ডের, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে!
এবার ‘স্প্রিঙ্কলার’ হলো না, দেখা যায়নি নতুন কোনো আনন্দনৃত্যও। তবে কাঁধে কাঁধ, কাঁধে হাত মিলিয়ে একসঙ্গে লাফাল-ঝাঁপাল পুরো ইংল্যান্ড দল। যেন বুঝিয়ে দিল স্বপ্নপূরণে কতটা একতাবদ্ধ ছিল এই দল। হঠাৎ কয়েকজনের মনে পড়ে গেল, দীর্ঘদিনের এক সঙ্গীর এটাই যে শেষ টেস্ট। সবাই জড়িয়ে ধরলেন পল কলিংউডকে। ‘পলি’ অভিনন্দন পেলেন প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারদের কাছ থেকেও। কলিংউডের চোখে টলমল করছে পানি, কিন্তু মুখের হাসিই বলে দিচ্ছে বিদায়টা কতটা আনন্দময় হলো!
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জিতবে, ইংল্যান্ড জিতবে বড়জোর একটা ম্যাচ—প্রায় বছর বিশেক ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী লড়াইটার চিত্র ছিল এই। ২০০৫ সালে দেশের মাটিতে জিতে অ্যাশেজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফিরিয়ে এনেছিল মাইকেল ভনের ইংল্যান্ড। কিন্তু পরের দুটো সিরিজে আবার দেখা গেল যারা স্বাগতিক, জয় তাদের। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আগের সিরিজেই ইংল্যান্ডের ৫-০ হোয়াইটওয়াশ হওয়াটা একটা বড় ক্ষত। অ্যাশেজকে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চেহারায় ফিরিয়ে আনায় তাই একরকম বৃত্তপূরণই করল স্ট্রাউসের দল। যে যন্ত্রণা তারা দীর্ঘদিন পেয়ে আসছে, এবার পারল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সেটি ফিরিয়ে দিতে।
মুগ্ধ, অভিভূত স্ট্রাউস এই অর্জনকে বলছেন বিশেষ কিছু, ‘একটা দলের এতজন ক্রিকেটার যখন একসঙ্গে পারফর্ম করতে শুরু করে, তখন সেই দলকে থামানো মুশকিল। নিশ্চিতভাবেই অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জয় দারুণ এক অর্জন। এই অর্জন এটাও প্রমাণ করছে, একজন অধিনায়ক ততটাই ভালো, যতটা ভালো তাঁর দল। খেলা ছাড়ার পর যখন ক্যারিয়ারের দিকে ফিরে তাকাব, নিশ্চিতভাবে এটাকেই মনে হবে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বিশেষ মুহূর্ত।’
স্ট্রাউসরা একটা বড় অর্জন মানতে পারেন ক্লার্কের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়াকেও, ‘ইংল্যান্ডের কাছ থেকে আমাদের শেখার আছে শতভাগ। শুধু ব্যাটিং-বোলিং নয়, পাঁচ টেস্টে মাঠেও ওরা ছিল অসাধারণ।’
ভস্মাধারের রেপ্লিকা আর ক্রিস্টাল ট্রফি স্ট্রাউস পেলেন তাঁর সাবেক অধিনায়ক ভনের হাত থেকে। উত্তরসূরিদের সাফল্যে হয়তো কিছুটা ঘুচল নিজেদের না পারার ব্যর্থতাও। ৮ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় ৬৩৩ রান করেও পেতে হয়েছিল ৪-১-এ হারের যন্ত্রণা। এবার ৭৬৬ রান করে সিরিজ-সেরার কম্পটন-মিলার মেডেলটা কুককে পেতে দেখে হয়তো ভনের ব্যক্তিগত কষ্টেও একটা সান্ত্বনার প্রলেপ পড়ল। পুরস্কারের মঞ্চে থাকা আরেকজন, গ্লেন ম্যাকগ্রার হয়তো মনে পড়ছিল চার বছর আগের সিডনির কথা। শেষ বলে উইকেট নিয়ে ইংলিশদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন, আর এবার! ম্যাকগ্রার দৃষ্টিতে কেমন যেন অনিশ্চয়তা, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের সামনেও নয় কি?
 পতন
১৯৫৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের পর এই প্রথম ৫ ম্যাচ সিরিজে তিনবার ইনিংসে হারল কোনো দল, অস্ট্রেলিয়ার নিজেদের ইতিহাসে প্রথম।

No comments

Powered by Blogger.