আলোচনা- ট্রানজিট নিয়ে সবে গবেষণা শুরু by ফারুক মেহেদী

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যে সই হওয়া যৌথ ইশতেহারের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ১২ জানুয়ারি। প্রায় এক বছর পরও ওই ইশতেহারের মূল ইস্যু ট্রানজিট বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই। সবে শুরু হয়েছে গবেষণা, গঠন করা হয়েছে হিসাব-নিকাশ কমিটি। বাস্তবে ঠিক কবে থেকে ট্রানজিট শুরু করা যাবে, তা সরকারের কোনো পর্যায়ের কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।
গত বছর ওই ইশতেহার সই হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতে ট্রানজিট দেওয়া নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়। সরকারি মহলে এমন ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে শিগগিরই শুরু হবে ট্রানজিট। বিষয়টি নিয়ে সরকারের ভেতরে চাঙ্গাভাব আর বিরোধী শিবিরে তুমুল বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। চুক্তির পরই নানা প্রকল্পের নথিপত্র তৈরি শুরু হয়। এ কার্যক্রম তড়িঘড়ি এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে_কোনো গবেষণা, মূল্যায়ন, লাভ-লোকসানের হিসাব-নিকাশ ছাড়াই বাজেটে জারি করা হয় ট্রানজিট বিধিমালা। পরে অবশ্য ভারতের চাপের মুখে তা স্থগিত করা হয়।
ট্রানজিটের লাভ-ক্ষতির পর্যালোচনার দায়িত্ব পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক খাত। তবে এ পর্যালোচনার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতির কথা জানাতে পারেননি এনবিআরের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি গত সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শুল্ক খাতের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কাজ করছেন। এখনো মন্তব্য করার মতো কিছু এগোয়নি। আর কিছুদিন সময় লাগবে।'
ট্রানজিটের সার্বিক পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক ও ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান গত ২৭ ডিসেম্বর কালের কণ্ঠকে বলেন, ট্রানজিটের সার্বিক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে যে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, এর জন্য আরো কিছু সময় লাগবে। তবে ঠিক কত সময় লাগতে পারে, সে ব্যাপারে তিনি সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
ট্রানজিটের অবকাঠামো খাতের গবেষণাপত্র তৈরির দায়িত্ব পাওয়া আন্তর্জাতিক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম রহমতুল্লাহ ট্রানজিটের অগ্রগতির বিষয়ে গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ট্রানজিট দেওয়া হবে এটা চূড়ান্ত। তবে তা হুটহাট সম্ভব নয়। আমরা স্টাডি করছি। আরো সময় লাগবে। এখনো তেমন কিছুই হয়নি। কোন রুটে ট্রানজিট দিলে লাভ হবে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত এক বছরে সরকারই বা কী করেছে তারও হিসাব মেলানো হচ্ছে। তবে অগ্রগতি দৃশ্যমান হতে সময় লাগবে। আমরা শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে বসছি।' ট্রানজিট বাস্তবায়ন দ্রুততর করতে বছরজুড়েই সরকারের শীর্ষ মহল থেকে তৎপরতা ছিল। গত অক্টোবরে শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে এর অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। কোনো প্রস্তুতি ছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে ট্রানজিট বিধিমালাও জারি করা হয়। কিন্তু এর শুল্ক নিয়ে ভারতের আপত্তির মুখে তা স্থগিত করা হয়। অবশেষে গত ডিসেম্বরে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় ট্রানজিটের লাভ-ক্ষতি পর্যালোচনা কমিটি। এ কমিটিকে ট্রানজিটের জন্য সড়ক ও রেলপথ নির্ধারণ, প্রস্তাবিত ট্রানজিট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের করণীয় কাজ নির্ধারণ, ট্রানজিটের সুবিধা বাস্তবায়নের জন্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ, ওই বিনিয়োগে সুবিধাভোগী দেশগুলোর অংশীদারির সম্ভাব্যতা, ট্রানজিট রুটের মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য বাজেট প্রাক্কলন করতে বলা হয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন দেশে ট্রানজিট সুবিধার কারণে বিদ্যমান চার্জ অথবা ফি আদায় পদ্ধতি পর্যালোচনা, ট্রানজিট সুবিধা প্রাপ্তির ফলে ভারতসহ সুবিধাভোগী দেশগুলোর পরিবহন ব্যয় বাবদ সাশ্রয়ের পরিমাণ, ট্রানজিটের লাভ-লোকসান বিশ্লেষণ ও ট্রানজিট সুবিধার বিনিময়ে ভারত ও অন্যান্য সুবিধাভোগী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অনিষ্পন্ন সমস্যাগুলোর দরকষাকষির সম্ভাব্যতা যাচাই করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রথমে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি উপকমিটিকে তাদের নিজ নিজ বিষয়ের প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও কমিটিগুলো তা করতে সক্ষম হয়নি। পরে এ সময়সীমা চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যেও ট্রানজিটের বিস্তারিত প্রতিবেদন সরকারের হাতে আসবে_এমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
ট্রানজিটের গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত অন্য এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, আসলেই ট্রানজিট কবে শুরু হবে তা কোনোভাবেই বলা যাচ্ছে না। ট্রানজিটের আনুষ্ঠানিকতা বলতে গেলে এখনো কাগজে-কলমে। আশুগঞ্জ দিয়ে ত্রিপুরার বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল ট্রানজিটের কথা ছিল গত সেপ্টেম্বরে। সেটা শুরু হয়নি এখনো, সড়ক নির্মাণ বা মেরামতেরও অগ্রগতি নেই। আর অন্যান্য রুটের অবস্থা তো বলাই বাহুল্য। সেগুলো মেরামত, নির্মাণ, ট্রানজিটের জন্য উপযোগী করা, বন্দর উন্নয়ন_এসব গত এক বছর আগে যেমন ছিল, সেরকমই আছে।
========================
ভারতের একতরফা সেচ প্রকল্পঃ বাংলাদেশের আপত্তিতে বিশ্বব্যাংকের সাড়া  আমলাদের যাচ্ছেতাই বিদেশ সফর  সরকারের ব্যর্থতায় হতাশাঃ বিরোধী দলের ব্যর্থতায় বিকল্পের অনুপস্থিতি  ক্ষমতা ও গণতন্ত্র  পানি সংকট পানি বাণিজ্য  ২০১০ সালের অর্থনীতি কেমন গেল  গণতান্ত্রিক বিকাশের পথে বাধা অনেক  কপাটে তালা দিয়ে কেন এই মৃতু্যর আয়োজন  বিজয়ের অর্থনীতি ও সম্ভাবনা  মুক্তিযুদ্ধের বিজয়লক্ষ্মীর মুখোমুখি  একেই কি বলে আমলাতন্ত্র?  আত্মসমর্পণের সেই বিকেল  আমরা তাঁদের ভুলতে পারি না  সংবিধানের অনেক বক্তব্য পারস্পরিক সংঘাতমূলক  পরাশক্তির বিরুদ্ধে এক ‘ভবঘুরের’ স্পর্ধা  আবু সাঈদ চৌধুরীর ভাষণ দেওয়া হলো না  শুভ নববর্ষ ২০১১- দিনে দিনে বর্ষ হলো গত  এরশাদের বিচারে দুই দলেরই আগ্রহ কম  কিশোরদের সাদামাটা ফল  জিপিএ-৫ পেয়েছে আট হাজার ৫২ জন  এরশাদের বিচার হওয়া উচিত  ছোটদের বড় সাফল্য  প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাঃ পাস ৯২%, প্রথম বিভাগ বেশি  বাংলাদেশের বন্ধুঃ জুলিয়ান ফ্রান্সিস  নিষ্ফল উদ্ধার অভিযানঃ দখলচক্রে ২৭ খাল  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ভ টিজিং : জরুরি ভিত্তিতে যা করণীয়  প্রতিশ্রুতির দিন  শোকের মাস, বিজয়ের মাস  চীনা প্রধানমন্ত্রীর পাক-ভারত সফর  দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন মন্তব্য  নতুন প্রজন্ম ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা  খিলক্ষেতে আগুনঃ কয়েলের গুদামে রাতে কাজ হতো ঝুঁকিপূর্ণভাবে  ভারতে বিহার রাজ্যের নির্বাচন  স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে  আমাদের আকাশ থেকে নক্ষত্র কেড়ে নিয়েছিল যারা...  মুক্তির মন্দির সোপান তলে  আবেগ ছেড়ে বুদ্ধির পথই ধরতে হবে  বছর শেষে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ  দুই কোরিয়ার একত্রিকরণ কি সম্ভব


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ ফারুক মেহেদী


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.