রাশিয়ানদের চোখে ট্রাম্প হলেন ‘ডার্ক হর্স’

ইউক্রেনে হামলা চালানোর জন্য সেনা নিয়োগের পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাশিয়া। তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধে দেশটির সামরিক বাহিনীতে জনবলে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে সেখানে প্রতিনিয়ত সেনা নিয়োগের বার্তা দেয়া হচ্ছে। মিখাইল নামে এক ব্যক্তি সম্প্রতি রাশিয়ার ‘তেভর’ ভ্রমণ করে এ বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, ‘তেভরে’ প্রথম যে বিষয়টি লক্ষ্য করলাম তা হলো- ‘সেনাবাহিনী’। বিলবোর্ড, ভবনের পাশে, বাসস্টপ ছাড়াও সর্বত্র লক্ষ্য করা গেছে এমন পোস্টার। কালাশনিকভ রাইফেলের সঙ্গে সেনাবাহিনীর  পোস্টারের মাধ্যমে রাশিয়ার জনগণকে দেশপ্রেম ও দেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অন্যভাবে বলতে গেলে, এসব পোস্টার দিয়ে মূলত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে জনসাধারণকে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধে রাশিয়া এখন সেনাবাহিনীতে আরও জনবল নিয়োগের চেষ্টা করছে। রাশিয়ার সাধারণ মানুষ অবশ্য বিশ্বাস করে, তারা বিশেষ কোনো সামরিক মিশনে আছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সর্বক্ষণ এমন বার্তা প্রচারের ফলে জনসাধারণের মধ্যেও ঠিক একইরকম চিন্তা তৈরি হয়েছে। অবশ্য দেশটির অনেক বাসিন্দা চায় দীর্ঘদিনের এ যুদ্ধের ইতি ঘটুক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকও করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে ট্রাম্পের কাছ থেকে কতটুকু আশা করা যায়- এ নিয়ে বিস্তর এক প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ, ‘কালো ঘোড়া’ হিসেবে ট্রাম্পের বিশেষ পরিচিতি আছে। তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিশেষ পরিচিতি আছে তার। মিখাইল বলেন, শহরের চারপাশে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও আপনি যদি তেভরে বসবাস করেন তাহলে আপনার এটা মনে হবে যে, এখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। মিখাইলের ভাষায়- স্থানীয় একজন শিক্ষক আমাকে বললেন, একের পর এক গাড়ি যাচ্ছে এবং দোকানপাট সব খোলা আছে। আমরা মোটেও ঘাবড়ে যাইনি। আমরা কোনো সাইরেন বাজার শব্দ শুনতে পাই না। আমরা কোনো আশ্রয়স্থলে দৌড়ে পালাই না। তবে এমন পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক না- এমনটা মনে করেন অ্যানা। তার জানা কিছু মানুষ আছেন যারা ইউক্রেন যুদ্ধে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেননি। তিনি আরও বলেন, আশা করি এই যুদ্ধ অতি দ্রুত শেষ হবে। এ বিষয়ে অবশ্য ডনাল্ড ট্রাম্পও একই একমত প্রকাশ করেছেন। ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ না জানিয়েই ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।  ট্রাম্পকে ‘কালো ঘোড়া’ বলে মন্তব্য করেন অ্যানা। তিনি বলেন, তেভরে বসবাসকারী কিছু মানুষের সঙ্গে আমার কথা হয়। যারা এখনো তিন বছর ধরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শোনা বুলি আওড়াচ্ছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তিন বছর ধরে এই বার্তাই দেয়া হচ্ছে যে, ইউক্রেনের কোনো এলাকা দখল করছে না রাশিয়া। তারা শুধু রাশিয়ান ও ইউক্রেনে বসবাসকারী রাশিয়ার ভাষাভাষীর মানুষদেরকে রক্ষা করছে। রাশিয়ার অনলাইন নিউ টাইমসের কলামিস্ট আঁন্দ্রে কোলেশনিকভ বলেন, একটি সমাজে মানুষ সবসময় মূল ধারায় থাকতে পছন্দ করে। এখন সেই মূলধারা যদি যুদ্ধের পক্ষে হয় আর টেলিভিশনে বলা হয় ‘আমরা পশ্চিমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছি’ তাহলে গড়পড়তার নাগরিকও ঠিক এমনটাই চিন্তা করবে। এ বিষয়ে তাদের বিস্তারিত চিন্তা না করাটাই স্বাভাবিক। শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠের দলকে সমর্থন করাটাই স্বাভাবিক। এদিকে লারিসা ও তার স্বামী ভ্যালেরি উইলিংলি এই ধারণা পোষণ করেন যে, তারা বিশেষ সামরিক অপারেশনে আছেন। লারিসা আমাকে জানান, আমরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করি রাশিয়া বিজয়ী হবে।

মিখাইল বলেন, ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে আমাদের তথ্য পৌঁছে যায়। তাদের কাছে এমন খবর যায় যে, ক্যামেরাসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখা গেছে।  যদিও তারা আন্তরিক ছিল, তবে আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলো- আমরা কেন সেখানে গিয়েছি। তারা আমাদের ড্রাইভারের কাছ থেকে তথ্য নিলো। আমাদের গাড়ি চেক করা হলো। আমাদের ভ্রমণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবরণ শোনা হলো।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.