কাশ্মীর: অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের মাধ্যমে বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত কি আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে?
ভারত শাসিত কাশ্মীরকে দেশটির
সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ যে বিশেষ মর্যাদা দিত, তার বিলোপের সিদ্ধান্ত
সংবিধানসম্মত কি-না - তা নিয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো যেতে পারে বলে মনে
করছেন ভারতের সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।
তবে অনেকে আবার মনে করেন গোটা প্রক্রিয়াটা সংবিধান মেনেই সম্পন্ন হয়েছে।
যদিও
এ নিয়ে এখনও কোনও মামলা হয় নি, তবে সরকারও জানে যে তাদের এতবড়
সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন আদালতে যেতেই পারে।
সংবিধান
বিশেষজ্ঞ এজি নুরানি বিবিসিকে বলছিলেন, "এটা সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক
সিদ্ধান্ত। ৩৭০ ধারা আইনী দিকটা পরিষ্কার। কেউ এটার বিলোপ ঘটাতে পারে না।"
"সে
অধিকার রয়েছে একমাত্র জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধান সভার। কিন্তু সে তো ১৯৫৬
সালেই ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এতদিন পরে নরেন্দ্র মোদীর সরকার কীভাবে ওই
ধারা প্রত্যাহার করতে পারে!"
তার কথায়, সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিতভাবেই আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কী সিদ্ধান্ত নেবে - সেটা তারাই ঠিক করবে।
সুপ্রিমকোর্ট কি অনু্চ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের সিদ্ধান্ত খারিজ করতে পারে?
আরেক
সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপ বিবিসিকে জানিয়েছেন, "সুপ্রিম কোর্টে তো
যে কোনও বিষয় নিয়েই আবেদন জানানো যেতে পারে। তবে সেটা আদালতের ওপরেই
নির্ভর করছে যে তারা মামলাটি শুনবে নাকি খারিজ করে দেবে।"
"প্রতিটা ব্যাপারেই আইনী তর্ক-বিতর্ক হতে পারে। আর যিনি চ্যালেঞ্জ জানাতে চান, তিনি ঠিকই কোনও না কোনও রাস্তা খুঁজে নেবেন।"
সংবিধানের
৩৭০ অনুচ্ছেদের বিলোপের ব্যাপারে মি. কাশ্যপের মন্তব্য, "এই ব্যাপারে
রাজনৈতিক মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে গোটা প্রক্রিয়াটা
সংবিধান মেনেই হয়েছে।"
'পুরো প্রক্রিয়াটি সংবিধান মেনে হয়েছে'
কাশ্মীরকে
বিশেষ মর্যাদা দেয়া ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের সিদ্ধান্তকে
অনেকে অসাংবিধানিক বলে দাবি করলেও অনেক বিশেষজ্ঞের দাবি - পুরো
প্রক্রিয়াটিই সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিচালিত হয়েছে।
ভারতের
প্রাক্তন অতিরিক্তি সলিসিটর জেনারেল এবং সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি
বিকাশ সিংও সুভাষ কাশ্যপের মত মনে করেন, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়ে আদালতে
আবেদন জানানো সম্ভব নয়।
তার কথায়, " ৩৭০ আর ৩৫এ অনুচ্ছেদ
প্রত্যাহার করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, সেই পুরো প্রক্রিয়াটাই
সংবিধান মেনেই হয়েছে। আমার মনে হয় না এটাকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে।"
মি. সিংয়ের ব্যাখ্যা, "ওই দুটি অনুচ্ছেদেই অস্থায়ী ব্যবস্থার বিষয়ে বলা ছিল। সরকার সেই অস্থায়ী ধারা দুটি সরিয়ে দিয়েছে।"
"এখন জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের নাগরিকদের সেই সব মৌলিক অধিকার থাকবে যা ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী অন্য সব রাজ্যের নাগরিকদের রয়েছে।"
ভারতের
আরেক প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কে সি কৌশিক অন্যদিকে মনে করেন যে
,৩৭০অনুচ্ছেদ বিলোপের ফলে যারা প্রভাবিত হয়েছেন বলে মনে করছেন, তাদের
সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে আদালতে যাওয়ার।
তিনি বলছিলেন, "এটা খুবই
স্বাভাবিক, যিনি বা যারা এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রভাবিত হয়েছেন, তারা আদালতে
যাবেনই। কোন ব্যক্তি বা সংগঠন কোর্টে আবেদন করবেন, সেটা জানি না, কিন্তু
কেউ না কেউ তো যাবেনই আদালতে।"
"ভারতের সংবিধান সেই অধিকার সবাইকেই
দিয়েছে। কোনও নির্দেশের ফলে কেউ যদি নিজেকে প্রতারিত হয়েছেন মনে করেন,
তাহলে আদালতে যেতেই পারেন তিনি।"
মি. কৌশিক মনে করেন যে, সরকার হয়তো
সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই মনে করছে, কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কীভাবে
কার্যকর করবে, তার দিকে নজর দেওয়া উচিত ছিল।
অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ হওয়া সাংবিধানিকভাবে কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে |
No comments