স্মৃতির চালচিত্র by ইব্রাহিম ফাত্তাহ
আমাদের জীবনের এমন কিছু কিছু সময় আছে,
এমন কিছু মুহূর্ত এসেছে যা ভুলে যাওয়ার নয়। শৈশব তেমনই এক অনন্য কাল।
এরপর সময়ের সিঁড়ি বেয়ে বয়সের হাত ধরে যৌবন আসে, ভালো লাগা থেকে আসে
ভালোবাসা। তারপর ঘরবাঁধা, সংসার, কোল আলো করে সন্তানের আগমন। মানবজীবনের
নানা স্তর ধরে মানুষ হেঁটে যায় তার পরিণতির দিকে। নানা সময়ের ভালো লাগা
বিষয় নিয়ে গ্যালারির ভেতর একেকটি গল্প বেঁধেছেন তরুণ এক ভাস্কর।
বাঁধনহারা শৈশবের উচ্ছলতা, বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা, কাজ, মানুষে মানুষে
সম্পর্ক, প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা, কখনো একাকিত্ব এসব নিয়ে চলমান জীবনের
গল্প নির্মাণ করেছেন ভাস্কর ফারজানা ইসলাম মিল্কী। ‘জীবনের ছন্দ-২’
শিরোনামে তাঁর দ্বিতীয় একক ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে এ-গল্পের নানা চরিত্র ও
পরিবেশ তুলে ধরেছেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, কুড়ি বছর আগে এই লা
গ্যালারিতেই ফারজানা ইসলামের প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী হয়েছিল।
প্রদর্শনী হলজুড়ে সাকল্যে ঊনত্রিশটি ভাস্কর্য স্থান পেয়েছিল। নানা উচ্চতার সাদা রং করা বাক্সের ওপরের জমিনে নানা কায়দায় ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বচ্ছ কাচের ওপর মডেলগুলো রাখায় স্থির জলের আবহ এসেছে। এতে অন্য এক মাত্রা তৈরি হয়েছে।
তরুণ এই ভাস্করের শিল্পীজীবনের সূচনা শৈশবে যশোর চারুপীঠ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন ১৯৯৬ সালে। চারুকলার বার্ষিক প্রদর্শনীতে ভাস্কর্য মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, গ্যালারি টোন ও শিল্পাঙ্গন আয়োজিত প্রদর্শনীতে পুরস্কৃত হয়ে তিনি কলারসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য চারুকলা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন।
ভাস্কর ফারজানার আদর্শ বরেণ্য ভাস্কর নভেরা আহমেদ। নভেরার সৃজনধ্যানের প্রতি তাঁর অনুরাগ শিল্পীজীবনের সূচনা থেকে। চারুপীঠে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন ভাস্কর মাহাবুব জামাল শামিমকে। এরপর ঢাকার চারুকলায় ভর্তি হয়ে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন বরেণ্য ভাস্কর ও শিল্পী আবদুর রাজ্জাক, হামিদুজ্জামান খান, লালা রুখ সেলিম প্রমুখকে। এই কৃতী শিক্ষকদের কাছে শিখে নিজের মানস পুষ্ট হয়েছে তিনি।
ভাস্কর ফারজানা চারপাশের মানুষের বিচিত্র অবয়ব ও দেহকাঠামোর দিকে তাকান, নানা পরিবেশে তাদের কর্মকা-কে প্রত্যক্ষ করেন। তাঁর শিক্ষক ভাস্কর লালা রুখ সেলিমের বয়ানে – ‘ফারজানার ভাস্কর্যগুলো গল্প বলে মানুষ ও তার সম্পর্ক নিয়ে। তাঁর সৃজন উপস্থাপনাকে ঠিক নাটকীয় বলা যাবে না, বরং সেগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ের অভিব্যক্তি বা গল্পের ভাবব্যঞ্জক বলাই যথার্থ। এসব বিষয়কে আমরা অবলোকন করি ও স্মৃতিতে ধারণ করি।’ এমনই এক সুন্দর মুহূর্ত ফুটে উঠেছে – তাঁর গড়া এক বালিকার চাকা চালানোর গতিশীল অভিব্যক্তিতে, নৃত্যরত শিল্পীদের গতিময় ছন্দে।
নিত্যকার জীবনপ্রবাহের সাধারণ কিছু ঘটনার চুম্বক সময়টাকে ভাস্কর্যে তুলে ধরেন ফারজানা। সৃজনের ক্ষেত্রে তাঁর পছন্দের পদ্ধতি হচ্ছে মডেলিং। মডেলিংয়ের মাধ্যমে অবয়ব গড়েপিটে অভিব্যক্তি তুলে ধরেন তিনি। বিংশ শতকের আধুনিক ভাস্কর্যের অবয়বিক অভিব্যক্তি এই ভাস্করের খুব পছন্দের। তিনি পস্নাস্টিক বা অ্যালুমিনিয়ামকে গলিয়ে মানুষের নানারকম অবয়ব ও দেহকাঠামো গড়েন। এগুলোর শরীর, মাথা, হাত ও পা এসবের উপস্থাপনার ধরনেই নানারকম অভিব্যক্তি তৈরি হয়। আবার এসব ফিগরকে কেন্দ্র করে ভাস্কর এমন পরিবেশ তৈরি করেন, যাতে ওই অভিব্যক্তি আরো যথার্থ হয়ে ওঠে।
প্রকৃতির প্রতীক হিসেবে তিনি গাছের অংশবিশেষ দেখান কিংবা মানুষ-নির্মিত বাড়ির কাঠামো, বেঞ্চ ও চেয়ারে তাঁর সৃজিত এক বা একাধিক মডেল স্থাপন করেন। যেমন প্রাচীন এক বাড়ির কাঠামোর সামনে এক নারীরূপী মডেলকে স্থাপন করে এই কাজটির শিরোনাম দিয়েছেন ‘অপেক্ষা’। আরাধ্য ও প্রবল আকাঙিক্ষতের জন্য এই অপেক্ষা। এ নিয়ে সাহিত্য ও সংগীতে অনেক কালজয়ী রচনা ও সংগীত আছে। এই নামে তাঁর আরেকটি ভাস্কর্যে আমরা দেখি এক বৃক্ষকাঠামোর সামনে দাঁড়ানো নারীর অবয়ব। তেমনি এক বেঞ্চে নানা অভিব্যক্তির তিনটি ফিগর নিয়ে যে গঠন তৈরি করেছেন ভাস্কর, তার নাম দিয়েছেন ‘আড্ডা’।
‘দম্পতি’ একটি প্রিয় বিষয় ফারজানার। একই শিরোনামে তিনি অনেক ভাস্কর্য গড়েছেন। এ শিরোনামের প্রথম কাজটিতে আমরা দেখি যেন উদ্যানের এক বেঞ্চে বসে থাকা অভিমানী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তার মান ভাঙানোর চেষ্টা করছেন স্বামী। এ নামের দ্বিতীয়টিতে গাছে বাঁধা দোলনায় বসা স্ত্রী। তাকে দোল দিতে স্বামী তার পেছনে দাঁড়ানো। ‘বন্ধু’ শিরোনামে লম্বা দুটি ফিগর গড়েছেন, যেন তারা এক হয়ে পথ চলছেন। ভেলায় চড়ে নদীপথ পাড়ি দিচ্ছেন তিনজন যাত্রী দুজন মাল্লা। এটি দেখে ছান্দসিক কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘দূরপাল্লা’ কবিতার কথা মনে পড়ে যায়! এমনতর অনেক গল্প এই প্রদর্শনী জুড়ে। ৫ এপ্রিল শুরু হয়ে এ-প্রদর্শনী শেষ হয় গত ১৯ এপ্রিল শুক্রবার।
প্রদর্শনী হলজুড়ে সাকল্যে ঊনত্রিশটি ভাস্কর্য স্থান পেয়েছিল। নানা উচ্চতার সাদা রং করা বাক্সের ওপরের জমিনে নানা কায়দায় ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বচ্ছ কাচের ওপর মডেলগুলো রাখায় স্থির জলের আবহ এসেছে। এতে অন্য এক মাত্রা তৈরি হয়েছে।
তরুণ এই ভাস্করের শিল্পীজীবনের সূচনা শৈশবে যশোর চারুপীঠ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন ১৯৯৬ সালে। চারুকলার বার্ষিক প্রদর্শনীতে ভাস্কর্য মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, গ্যালারি টোন ও শিল্পাঙ্গন আয়োজিত প্রদর্শনীতে পুরস্কৃত হয়ে তিনি কলারসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য চারুকলা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন।
ভাস্কর ফারজানার আদর্শ বরেণ্য ভাস্কর নভেরা আহমেদ। নভেরার সৃজনধ্যানের প্রতি তাঁর অনুরাগ শিল্পীজীবনের সূচনা থেকে। চারুপীঠে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন ভাস্কর মাহাবুব জামাল শামিমকে। এরপর ঢাকার চারুকলায় ভর্তি হয়ে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন বরেণ্য ভাস্কর ও শিল্পী আবদুর রাজ্জাক, হামিদুজ্জামান খান, লালা রুখ সেলিম প্রমুখকে। এই কৃতী শিক্ষকদের কাছে শিখে নিজের মানস পুষ্ট হয়েছে তিনি।
ভাস্কর ফারজানা চারপাশের মানুষের বিচিত্র অবয়ব ও দেহকাঠামোর দিকে তাকান, নানা পরিবেশে তাদের কর্মকা-কে প্রত্যক্ষ করেন। তাঁর শিক্ষক ভাস্কর লালা রুখ সেলিমের বয়ানে – ‘ফারজানার ভাস্কর্যগুলো গল্প বলে মানুষ ও তার সম্পর্ক নিয়ে। তাঁর সৃজন উপস্থাপনাকে ঠিক নাটকীয় বলা যাবে না, বরং সেগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ের অভিব্যক্তি বা গল্পের ভাবব্যঞ্জক বলাই যথার্থ। এসব বিষয়কে আমরা অবলোকন করি ও স্মৃতিতে ধারণ করি।’ এমনই এক সুন্দর মুহূর্ত ফুটে উঠেছে – তাঁর গড়া এক বালিকার চাকা চালানোর গতিশীল অভিব্যক্তিতে, নৃত্যরত শিল্পীদের গতিময় ছন্দে।
নিত্যকার জীবনপ্রবাহের সাধারণ কিছু ঘটনার চুম্বক সময়টাকে ভাস্কর্যে তুলে ধরেন ফারজানা। সৃজনের ক্ষেত্রে তাঁর পছন্দের পদ্ধতি হচ্ছে মডেলিং। মডেলিংয়ের মাধ্যমে অবয়ব গড়েপিটে অভিব্যক্তি তুলে ধরেন তিনি। বিংশ শতকের আধুনিক ভাস্কর্যের অবয়বিক অভিব্যক্তি এই ভাস্করের খুব পছন্দের। তিনি পস্নাস্টিক বা অ্যালুমিনিয়ামকে গলিয়ে মানুষের নানারকম অবয়ব ও দেহকাঠামো গড়েন। এগুলোর শরীর, মাথা, হাত ও পা এসবের উপস্থাপনার ধরনেই নানারকম অভিব্যক্তি তৈরি হয়। আবার এসব ফিগরকে কেন্দ্র করে ভাস্কর এমন পরিবেশ তৈরি করেন, যাতে ওই অভিব্যক্তি আরো যথার্থ হয়ে ওঠে।
প্রকৃতির প্রতীক হিসেবে তিনি গাছের অংশবিশেষ দেখান কিংবা মানুষ-নির্মিত বাড়ির কাঠামো, বেঞ্চ ও চেয়ারে তাঁর সৃজিত এক বা একাধিক মডেল স্থাপন করেন। যেমন প্রাচীন এক বাড়ির কাঠামোর সামনে এক নারীরূপী মডেলকে স্থাপন করে এই কাজটির শিরোনাম দিয়েছেন ‘অপেক্ষা’। আরাধ্য ও প্রবল আকাঙিক্ষতের জন্য এই অপেক্ষা। এ নিয়ে সাহিত্য ও সংগীতে অনেক কালজয়ী রচনা ও সংগীত আছে। এই নামে তাঁর আরেকটি ভাস্কর্যে আমরা দেখি এক বৃক্ষকাঠামোর সামনে দাঁড়ানো নারীর অবয়ব। তেমনি এক বেঞ্চে নানা অভিব্যক্তির তিনটি ফিগর নিয়ে যে গঠন তৈরি করেছেন ভাস্কর, তার নাম দিয়েছেন ‘আড্ডা’।
‘দম্পতি’ একটি প্রিয় বিষয় ফারজানার। একই শিরোনামে তিনি অনেক ভাস্কর্য গড়েছেন। এ শিরোনামের প্রথম কাজটিতে আমরা দেখি যেন উদ্যানের এক বেঞ্চে বসে থাকা অভিমানী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তার মান ভাঙানোর চেষ্টা করছেন স্বামী। এ নামের দ্বিতীয়টিতে গাছে বাঁধা দোলনায় বসা স্ত্রী। তাকে দোল দিতে স্বামী তার পেছনে দাঁড়ানো। ‘বন্ধু’ শিরোনামে লম্বা দুটি ফিগর গড়েছেন, যেন তারা এক হয়ে পথ চলছেন। ভেলায় চড়ে নদীপথ পাড়ি দিচ্ছেন তিনজন যাত্রী দুজন মাল্লা। এটি দেখে ছান্দসিক কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘দূরপাল্লা’ কবিতার কথা মনে পড়ে যায়! এমনতর অনেক গল্প এই প্রদর্শনী জুড়ে। ৫ এপ্রিল শুরু হয়ে এ-প্রদর্শনী শেষ হয় গত ১৯ এপ্রিল শুক্রবার।
No comments