কাশ্মীরে ৩৭০ ও ৩৫(ক) ধারা বাতিলে সমস্যা কোথায়?
ভারত
শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহার করেছে ভারত সরকার।
এই মুসলিম অধ্যুষিত অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে বহিঃবিশ্বের যোগাযোগ অনির্দিষ্টকালের
জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া পুরো অঞ্চলে বড় আকারে সেনা মোতায়েন করেছে
ভারত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ মিত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার পার্লামেন্টে বলেছেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের একটি ডিক্রিতে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট। এর ফলে গত ৭ দশক ধরে যে স্বায়ত্ব শাসন কাশ্মীর ভোগ করে আসছে, তার অবসান ঘটলো। এই পদক্ষেপের ফলে প্রায় ৭০ লাখ জনসংখ্যার এই রাজ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার পার্লামেন্টে আরেকটি বিল প্রস্তাব করেছে, যেখানে জম্মু ও কাশ্মীরকে দুইটি ‘ইউনিয়ন টেরিটোরি’তে বিভক্ত করা হয়েছে। এর ফলে অঙ্গরাজ্য হিসেবে কাশ্মীরের মর্যাদা আর থাকছে না। এটি এখন সরাসরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জম্মু-কাশ্মীর ইউনিয়ন টেরিটোরিতে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু অঞ্চলও থাকবে।
তবে এটির একটি আইনসভা থাকবে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ লাদাখ, যেখানে বেশ বড় একটি শিয়া জনসংখ্যা রয়েছে, সেটি হবে আরেক ইউনয়ন টেরিটোরি। এতে অবশ্য কোনো আইনসভা থাকবে না।
কিন্তু এই ৩৭০ ধারা কী?
১৯৪৭ সালে যখন উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনের অবসান ঘটে, তখন তৎকালীন রাজাশাসিত অঞ্চল বা প্রিন্সলি স্টেটগুলোকে ভারত বা পাকিস্তানে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কাশ্মীরও এমনই একটি প্রিন্সলি স্টেট ছিল। কিন্তু তৎকালীন রাজা ভারতে যোগ দিলেও, যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে এই অঞ্চলের জন্য কিছু স্বায়ত্ব শাসন দাবি করেন। তারই ফলশ্রুতিতে ভারতের সংবিধানে ৩৭০ ধারা যোগ করা হয়। অর্থাৎ, ৩৭০ ধারার শর্তেই কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়।
১৯৪৯ সালে কার্যকর হওয়া এই ধারা মোতাবেক, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতীয় সংবিধানের আওতার বাইরে থাকবে। এর ফলে অর্থ, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও যোগাযোগ ব্যতীত অন্য সকল বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীর আইনসভা এই রাজ্যের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারে। এই ধারাবলে এই অঞ্চলের জন্য পৃথক একটি সংবিধান, পৃথক পতাকা প্রতিষ্ঠিত হয়। এমনকি এখানকার জমি-জমা ক্রয়ের অধিকার নেই অন্য অঞ্চলের ভারতীয়দের। অর্থাৎ, নাগরিকত্ব ও জমি-জমা ক্রয়ের মতো সংবেদনশীল ইস্যুতেও এই অঞ্চলের মানুষ দেশের অন্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন আইনের আওতাধীন ছিল।
৩৫ক ধারা কী?
১৯৫৪ সালে প্রেসিডেন্টের আদেশে ৩৫ক ধারা যুক্ত হয়। এতে ৩৭০ ধারা অব্যাহত রাখার কথা বলা আছে। এই ধারা অনুযায়ী, কাশ্মীরের স্থানীয় আইনসভা এই অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসী কারা হবেন, তার সংজ্ঞা প্রদানের অধিকার পায়। এতে বলা হয়, বহিরাগতরা এই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস, জমি ক্রয়, স্থানীয় সরকারের চাকরি বা শিক্ষাবৃত্তি পেতে পারবেন না। এমনকি এই অঞ্চলের কোনো নারী বাসিন্দা রাজ্যের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে তিনিও সম্পত্তি ক্রয়ের অধিকার হারাবেন। পরবর্তীতে ওই নারীর সন্তানরাও সেই অধিকার বঞ্চিত ছিলেন।
৩৫(ক) অপরিবর্তিত থাকলেও, ৩৭০ ধারা এই কয়েক দশকে কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। ৩৫(ক) ধারার সমালোচকরা বলেন, এতে পার্লামেন্টের অনুমোদন নেই। পাশাপাশি, এটি নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক।
কেন ৩৭০ ও ৩৫(ক) ধারা বিলুপ্ত হচ্ছে?
শাসক দল অনেকদিন ধরেই ৩৫(ক) ধারাকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে আসছে। গত মাসে একজন জ্যেষ্ঠ বিজেপি নেতা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ওই অঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে মে মাসে ভূমিধস বিজয় পায় বিজেপি। সেই নির্বাচনের প্রচারাভিযান ছিল মারাত্মক রকম বিভেদমূলক। এতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানায় শাসক দল। প্রচারাভিযানেই ৩৭০ ও ৩৫(ক) ধারা বাতিলের অঙ্গীকার ছিল বিজেপির।
এর ফলে কী হবে?
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের ফলে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ এখানে সম্পত্তি ক্রয়ের অধিকার পাবে। স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে। কাশ্মীরীদের আশঙ্কা, এর ফলে এই অঞ্চলের জনতাত্ত্বিক চিত্র একেবারেই পালটে যাবে। মুসলিমরা সংখ্যাগুরু থেকে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে।
এরপর কী ঘটবে?
সংবিধানের ৩৭০ ধারায় অবশ্য বলা আছে, প্রেসিডেন্টের আদেশেই এটি রদ করা যাবে। তবে এই আদেশ অবশ্যই আগে রাজ্যের কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু ১৯৫৭ সালে কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি রদ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা তাই আইনের এই অংশ নিয়ে একেকজন একেক মত দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি বিলুপ্ত হলেও এ ধরণের আদেশ অবশ্যই রাজ্য আইনপ্রণেতাদের অনুমতি নিয়েই করতে হবে। তবে অন্যরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের আদেশই যথেষ্ট। অর্থাৎ শিগগিরই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আইনি ও রাজনৈতিক লড়াই শুরু হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ মিত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার পার্লামেন্টে বলেছেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের একটি ডিক্রিতে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট। এর ফলে গত ৭ দশক ধরে যে স্বায়ত্ব শাসন কাশ্মীর ভোগ করে আসছে, তার অবসান ঘটলো। এই পদক্ষেপের ফলে প্রায় ৭০ লাখ জনসংখ্যার এই রাজ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার পার্লামেন্টে আরেকটি বিল প্রস্তাব করেছে, যেখানে জম্মু ও কাশ্মীরকে দুইটি ‘ইউনিয়ন টেরিটোরি’তে বিভক্ত করা হয়েছে। এর ফলে অঙ্গরাজ্য হিসেবে কাশ্মীরের মর্যাদা আর থাকছে না। এটি এখন সরাসরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জম্মু-কাশ্মীর ইউনিয়ন টেরিটোরিতে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু অঞ্চলও থাকবে।
তবে এটির একটি আইনসভা থাকবে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ লাদাখ, যেখানে বেশ বড় একটি শিয়া জনসংখ্যা রয়েছে, সেটি হবে আরেক ইউনয়ন টেরিটোরি। এতে অবশ্য কোনো আইনসভা থাকবে না।
কিন্তু এই ৩৭০ ধারা কী?
১৯৪৭ সালে যখন উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনের অবসান ঘটে, তখন তৎকালীন রাজাশাসিত অঞ্চল বা প্রিন্সলি স্টেটগুলোকে ভারত বা পাকিস্তানে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কাশ্মীরও এমনই একটি প্রিন্সলি স্টেট ছিল। কিন্তু তৎকালীন রাজা ভারতে যোগ দিলেও, যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে এই অঞ্চলের জন্য কিছু স্বায়ত্ব শাসন দাবি করেন। তারই ফলশ্রুতিতে ভারতের সংবিধানে ৩৭০ ধারা যোগ করা হয়। অর্থাৎ, ৩৭০ ধারার শর্তেই কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়।
১৯৪৯ সালে কার্যকর হওয়া এই ধারা মোতাবেক, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতীয় সংবিধানের আওতার বাইরে থাকবে। এর ফলে অর্থ, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও যোগাযোগ ব্যতীত অন্য সকল বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীর আইনসভা এই রাজ্যের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারে। এই ধারাবলে এই অঞ্চলের জন্য পৃথক একটি সংবিধান, পৃথক পতাকা প্রতিষ্ঠিত হয়। এমনকি এখানকার জমি-জমা ক্রয়ের অধিকার নেই অন্য অঞ্চলের ভারতীয়দের। অর্থাৎ, নাগরিকত্ব ও জমি-জমা ক্রয়ের মতো সংবেদনশীল ইস্যুতেও এই অঞ্চলের মানুষ দেশের অন্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন আইনের আওতাধীন ছিল।
৩৫ক ধারা কী?
১৯৫৪ সালে প্রেসিডেন্টের আদেশে ৩৫ক ধারা যুক্ত হয়। এতে ৩৭০ ধারা অব্যাহত রাখার কথা বলা আছে। এই ধারা অনুযায়ী, কাশ্মীরের স্থানীয় আইনসভা এই অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসী কারা হবেন, তার সংজ্ঞা প্রদানের অধিকার পায়। এতে বলা হয়, বহিরাগতরা এই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস, জমি ক্রয়, স্থানীয় সরকারের চাকরি বা শিক্ষাবৃত্তি পেতে পারবেন না। এমনকি এই অঞ্চলের কোনো নারী বাসিন্দা রাজ্যের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে তিনিও সম্পত্তি ক্রয়ের অধিকার হারাবেন। পরবর্তীতে ওই নারীর সন্তানরাও সেই অধিকার বঞ্চিত ছিলেন।
৩৫(ক) অপরিবর্তিত থাকলেও, ৩৭০ ধারা এই কয়েক দশকে কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। ৩৫(ক) ধারার সমালোচকরা বলেন, এতে পার্লামেন্টের অনুমোদন নেই। পাশাপাশি, এটি নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক।
কেন ৩৭০ ও ৩৫(ক) ধারা বিলুপ্ত হচ্ছে?
শাসক দল অনেকদিন ধরেই ৩৫(ক) ধারাকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে আসছে। গত মাসে একজন জ্যেষ্ঠ বিজেপি নেতা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ওই অঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে মে মাসে ভূমিধস বিজয় পায় বিজেপি। সেই নির্বাচনের প্রচারাভিযান ছিল মারাত্মক রকম বিভেদমূলক। এতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানায় শাসক দল। প্রচারাভিযানেই ৩৭০ ও ৩৫(ক) ধারা বাতিলের অঙ্গীকার ছিল বিজেপির।
এর ফলে কী হবে?
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের ফলে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ এখানে সম্পত্তি ক্রয়ের অধিকার পাবে। স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে। কাশ্মীরীদের আশঙ্কা, এর ফলে এই অঞ্চলের জনতাত্ত্বিক চিত্র একেবারেই পালটে যাবে। মুসলিমরা সংখ্যাগুরু থেকে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে।
এরপর কী ঘটবে?
সংবিধানের ৩৭০ ধারায় অবশ্য বলা আছে, প্রেসিডেন্টের আদেশেই এটি রদ করা যাবে। তবে এই আদেশ অবশ্যই আগে রাজ্যের কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু ১৯৫৭ সালে কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি রদ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা তাই আইনের এই অংশ নিয়ে একেকজন একেক মত দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি বিলুপ্ত হলেও এ ধরণের আদেশ অবশ্যই রাজ্য আইনপ্রণেতাদের অনুমতি নিয়েই করতে হবে। তবে অন্যরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের আদেশই যথেষ্ট। অর্থাৎ শিগগিরই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আইনি ও রাজনৈতিক লড়াই শুরু হবে।
No comments