অনিয়ম তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি সুজনের: ২১৩ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট
একাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা অনিয়মের তথ্য উপস্থাপন করেছে নাগরিক সংগঠন
সুশাসনের জন্য নাগরিক। এসব অনিয়মের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ
সংশ্লিষ্টদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল
কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। নির্বাচনের কেন্দ্র ভিত্তিক ফল
বিশ্লেষণ করে সুজন জানিয়েছে, ওই নির্বাচনে ৩০০টি আসনের ৪০ হাজার ১৫৫টি
ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। আর ৯৯
শতাংশ ভোট পড়েছে ১২৭টি কেন্দ্রে, ৯৮ শতাংশ ভোট পড়েছে ২০৪ কেন্দ্রে, ৯৭
শতাংশ ভোট পড়েছে ৩৫৮ কেন্দ্রে এবং ৯৬ শতাংশ ভোট পড়েছে ৫১৬ ভোটকেন্দ্রে।
এছাড়া ৭৫টি নির্বাচনী এলাকায় ৫৮৭টি কেন্দ্রের সব ভোট পড়েছে বিজয়ী প্রার্থীর
প্রতীকে। গত ৯ জুলাই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ
রিপোর্ট তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা এ রিপোর্ট
পর্যালোচনা করে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে এক শ’ বছরে যেখানে একটা কেন্দ্রে এক শ’ পার্সেন্ট ভোট হয় না, সেখানে আমাদের দুই শ’র বেশি কেন্দ্রে এক শ’ পার্সেন্টের বেশি ভোট হয়েছে।
প্রায় ৬শ’ কেন্দ্রে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি দলের প্রার্থী একটা ভোটও পাননি- এটাতো চরম অসদাচরণ।
সংবাদ সম্মেলনে ‘লিখিত বক্তব্য’র কপি দেখিয়ে তিনি বলেন, এটা প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাপ্ত অভিযোগ হিসেবে মনে হতে পারে। সাংবিধানিক পদে পদাতিক ব্যক্তির ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের কাছে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২ ধারা অনুসারে সরাসরি প্রাপ্ত অভিযোগ বা অন্য কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্টের যদি মনে হয় এই অসদাচরণ সংক্রান্ত অভিযোগ বা তথ্য কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, যৌক্তিকতা আছে সে ব্যাপারে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থাৎ যার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হবে কি হবে না সেটা অনুসন্ধান, বিচার করার জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে পারেন।
শাহদীন মালিক বলেন, প্রধান বিচারপতি, জৈষ্ঠ্যতা অনুসারে পদ অনুযায়ী দ্বিতীয় এবং তৃতীয় এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি অসাদাচরণের জন্য পদে থাকবেন কি থাকবেন না সেজন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে পারেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কিভাবে কাজ করবে এ বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সুজনের সংবাদ সম্মেলনে যে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত তথ্য। এটার ব্যাপারে সরকার বলতে পারবে না যে এই তথ্যের উৎস নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।
হাস্যরস করে তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘায়ু লাভের একটা সুযোগ পাওয়া গেছে। সরকারের অনেক বড় বড় মন্ত্রীদের এলাকায় ১শ’ ভাগ ভোট পড়েছে। তার মানে তাদের ওই কেন্দ্রে যারা ভোটার ছিলো তারা কেউ মারা যাননি। দীর্ঘায়ূ লাভ করতে চাইলে ওই সব কেন্দ্রের এলাকায় গিয়ে বসবাস করতে হবে। তাতে মারা যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে!
তিনি বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে ভোটাভুটির বয়স ১০০ বছরের বেশি না। ৭০’র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টিও এক শ’ ভাগ ভোট পায়নি। আমরা বোধ হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টিকেও ছাড়িয়ে গেছি। এই নির্বাচন, এর বাস্তবভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণের পর ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’ তা পাগল ছাড়া কেউ দাবি করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উচ্চ আদালতে নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা সম্পর্কে শাহদীন মালিক বলেন, আমি জড়িত না একটির সঙ্গেও। তবে শুনেছি ৭৪-৭৫টি আসনে নির্বাচনী অনিয়মের বিষয়ে মামলা হয়েছে। ইলেকশন মামলার আইনজীবীদের আমি বলতে চাই, সাক্ষী হাজির করার দরকার নেই, কেন্দ্র ভিত্তিক রেজাল্ট বিচারপতিকে দেখান। বলেন, এই কেন্দ্রে আমার দলের প্রার্থী একটা ভোটও পায়নি, অপর দলের প্রার্থী এক শ’ ভাগ ভোট পেয়েছে। এখানে এক শ’ ভাগ ভোট পড়েছে। কেন্দ্র ভিত্তিক রেজাল্ট দেখালে নির্বাচনে যে কারচুপি হয়েছে সেটা আইনগতভাবে প্রমাণ করার জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু দরকার নেই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সোজামিলের নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করে বিশিষ্ট কলামনিস্ট গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নির্বাচনের ফলাফল নিয়েও অতীতে অনেক রকম গোঁজামিল আমরা দেখেছি। কিন্তু এবারের নির্বাচন কমিশন গোঁজামিলে না গিয়ে তারা একেবারে সোজামিলে চলে গিয়েছে। সোজামিলের বিষয়টি হচ্ছে শতভাগ। শতভাগের চেয়ে সোজামিল আর হয় না। অতীতে আমরা গোঁজামিল দেখেছি, এবার দেখলাম সোজামিল।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং নির্বাচনের প্রতি মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের রাস্তা রুদ্ধ হয়ে গেলে তা কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক নির্বাচন। এ নির্বাচনকে আমরা অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলতে পারি না। এটাকে বলতে হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ অসাদাচরণ। এই কারচুপির নির্বাচন আয়োজনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেন আর কোনো নির্বাচন না হয়। কারচুপির নির্বাচনের কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মানের অবনতি ঘটেছে। সাধারণ মানুষ নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। নির্বাচন কমিশন যে তথ্য দিয়েছে তাতে নূন্যতম কোনো সততা নেই। তারা নির্বাচন করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে। সংবাদ সম্মেলনে সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান সুচনা বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবেদনে যা আছে: সংবাদ সম্মেলনে ফল বিশ্লেষণের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার। এতে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ৩০০টি আসনের ৪০ হাজার ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন হয়েছে তারমধ্যে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এটা ইতিহাসে এই প্রথম ঘটেছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছিল এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বনিম্ন ভোট গ্রহণ হলেও সেখানে ভোট পড়েছিল ৪০ দশমিক ০৪ ভাগ। এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১২৭ কেন্দ্রে, ৯৮ শতাংশ ভোট পড়েছে ২০৪টি ভোটকেন্দ্রে, ৯৭ শতাংশ ভোট পড়েছে ৩৫৮ ভোটকেন্দ্রে এবং ৯৬ শতাংশ ভোট পড়েছে ৫১৬ ভোটকেন্দ্রে। মোটের উপর দেখা যায় ৯৬ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে ১ হাজার ৪১৮টি কেন্দ্রে। এছাড়াও ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ৬,৪৮৪ টি ভোটকেন্দ্রে, ৮০ থেকে ৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১৫,৭১৯টি ভোটকেন্দ্রে, ৭০ থেকে ৭৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১০ হাজার ৭৩টি ভোটকেন্দ্রে। এ নির্বাচনে ২০ থেকে ৩৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ৩০১টি কেন্দ্রে, ১০ থেকে ১৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ২০টি কেন্দ্রে এবং ১০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে ১১টি ভোটকেন্দ্রে।
এতে বলা হয়, নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দলের ধানের শীষ প্রতীকের ভোটের তফাৎ আকাশ-পাতাল। ইতিপূর্বে কোনো নির্বাচনে এমন পার্থক্য দেখা যায়নি। এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বৈধ ভোটের সংখ্যা ৬ কোটি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ৬৬ ভোট তথা ৭৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেখানে ধানের শীষ প্রতীকে বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ কোটি ৯ লাখ ৯১ হাজার ২৩১ ভোট তথা ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর লাঙ্গল প্রতীকে ভোট সংখ্যা ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯২০ ভোট। যা মোট ভোটের ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শতভাগ ভোট পড়া কেন্দ্রসমূহের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে সব থেকে বেশি এবং বরিশাল বিভাগে সব থেকে কম কেন্দ্র। চট্টগ্রামের ২৫টি আসনের আওতাভুক্ত ৫৩টি ভোটকেন্দ্রে এবং বরিশালের ২টি আসনের ৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এছাড়া রংপুর বিভাগের ১৪টি আসনের আওতাভুক্ত ৫২টি কেন্দ্রে, ঢাকা বিভাগের ২১টি আসনের আওতাভুক্ত ৩২টি কেন্দ্রে, রাজশাহী বিভাগের ১৫টি আসনের আওতাভুক্ত ২৯টি কেন্দ্রে, ময়মনসিংহ বিভাগের ১২টি আসনের আওতাভুক্ত ২৩টি কেন্দ্রে, সিলেট বিভাগের ১০টি আসনের আওতাভুক্ত ১৭টি কেন্দ্রে, খুলনা বিভাগের ৪টি আসনের আওতাভুক্ত ৪টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। অন্যদিকে ২১৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৮১টি তথা ৮৪ দশমিক ৯৭ শতাংশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী ৯০ জন সংসদ সদস্য, ২১টি আসনে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ জাতীয় পার্টি থেকে বিজয়ী ১০ জন সংসদ সদস্য এবং ৮টি তথা ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে বিজয়ী ১ জন সংসদ সদস্য বিজয়ী হয়েছেন।
এছাড়া ৭৫টি আসনের ৫৮৭টি কেন্দ্রের শতভাগ বৈধ ভোট শুধুমাত্র একজন করে প্রার্থী পেয়েছেন। অন্য কোনো প্রার্থী ১ ভোটও পাননি। এই ৫৮৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৮৬ টিতে ৯৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ সকল ভোট পেয়েছেন নৌকা প্রতীকের এবং ১টি কেন্দ্রের ০ দশমিক ১৭শতাংশ সকল ভোট পেয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী। এই ৭৫টি আসনের ৭৪টিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এবং ১টিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। যে আসনের (মাগুরা-২) আওতাভূক্ত একটি ভোটকেন্দ্রে সকল ভোট ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন, সেখানেও জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
রিপোর্টে বলা হয়, অতীতের ৪টি নির্বাচনে যে সকল আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে সেসব আসনে এই নির্বাচনে বিএনপ্থির ভোট প্রাপ্তির হার এতই কমেছে যে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ১৮টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিল না। বাকী ১৬টি আসনের মধ্যে ১৪টি আসনেই বিএনপির ভোট কমেছে। এসব আসনে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ৫৫ দশমিক ৬৭ ভাগ ভোট পেলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট পেয়েছে ২ দশমিক ০২ শতাংশ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাতিল ভোটের সংখ্যাও বেড়েছে। ৩০০টি আসনে গড়ে বাতিল ভোটের শতকরা হার ১ দশমিক ০৬ শতাংশ। ৩৪২টি কেন্দ্রে ১১ থেকে ৬১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি ৪ হাজার ৭৯৫টি কেন্দ্রে কোনো ভোটই বাতিল হয়নি। সর্বোচ্চ ৬১ ভাগ ভোট বাতিল হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের ্তুনোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়্থ ভোটকেন্দ্রে। শতভাগ ভোট পড়া ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে বাতিল ভোটের হার ছিল ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
সাধারণ ব্যালট পেপারে এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের মধ্যেও তারতাম্য দেখা যায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৬টি নির্বাচনী এলাকায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়। এই ৬টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬২ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে চট্টগ্রাম-৯ আসনে এবং সবচেয়ে কম ৪৩ দশমিক ০৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ঢাকা-১৩ আসনে। ৬টি আসনে ইভিএম-এ ভোট পড়ার গড় ছিল ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ইভিএমে সবচেয়ে কম ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে রংপুর-৩ আসনের দি মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এবং সবচেয়ে বেশি ৮৯ দশমিক ১৪ ভাগ ভোট পড়েছে চট্টগ্রাম-৯ আসনের আব্দুল বারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে।
এসব আসনে নৌকা প্রতীকের ভোট প্রাপ্তির গড় ৭৬ দশমিক ৮৬ ভাগ হলেও ইভিএম-এ ৫৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। একইভাবে সকল আসনে ধানের শীষ প্রতীকের ভোট প্রাপ্তির গড় ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। জাতীয় গড়ের তুলনায় ইভিএমে নৌকা প্রতীকে ভোট ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম এবং ধানের শীষে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি ভোট পড়েছে। ইভিএমে ভোটপড়ার হার কেন কম, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের তাদের কেন্দ্রভিত্তিক প্রকাশিত ফলাফলে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া নেই।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে এক শ’ বছরে যেখানে একটা কেন্দ্রে এক শ’ পার্সেন্ট ভোট হয় না, সেখানে আমাদের দুই শ’র বেশি কেন্দ্রে এক শ’ পার্সেন্টের বেশি ভোট হয়েছে।
প্রায় ৬শ’ কেন্দ্রে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি দলের প্রার্থী একটা ভোটও পাননি- এটাতো চরম অসদাচরণ।
সংবাদ সম্মেলনে ‘লিখিত বক্তব্য’র কপি দেখিয়ে তিনি বলেন, এটা প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাপ্ত অভিযোগ হিসেবে মনে হতে পারে। সাংবিধানিক পদে পদাতিক ব্যক্তির ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের কাছে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২ ধারা অনুসারে সরাসরি প্রাপ্ত অভিযোগ বা অন্য কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্টের যদি মনে হয় এই অসদাচরণ সংক্রান্ত অভিযোগ বা তথ্য কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, যৌক্তিকতা আছে সে ব্যাপারে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থাৎ যার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হবে কি হবে না সেটা অনুসন্ধান, বিচার করার জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে পারেন।
শাহদীন মালিক বলেন, প্রধান বিচারপতি, জৈষ্ঠ্যতা অনুসারে পদ অনুযায়ী দ্বিতীয় এবং তৃতীয় এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি অসাদাচরণের জন্য পদে থাকবেন কি থাকবেন না সেজন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে পারেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কিভাবে কাজ করবে এ বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সুজনের সংবাদ সম্মেলনে যে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত তথ্য। এটার ব্যাপারে সরকার বলতে পারবে না যে এই তথ্যের উৎস নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।
হাস্যরস করে তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘায়ু লাভের একটা সুযোগ পাওয়া গেছে। সরকারের অনেক বড় বড় মন্ত্রীদের এলাকায় ১শ’ ভাগ ভোট পড়েছে। তার মানে তাদের ওই কেন্দ্রে যারা ভোটার ছিলো তারা কেউ মারা যাননি। দীর্ঘায়ূ লাভ করতে চাইলে ওই সব কেন্দ্রের এলাকায় গিয়ে বসবাস করতে হবে। তাতে মারা যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে!
তিনি বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে ভোটাভুটির বয়স ১০০ বছরের বেশি না। ৭০’র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টিও এক শ’ ভাগ ভোট পায়নি। আমরা বোধ হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টিকেও ছাড়িয়ে গেছি। এই নির্বাচন, এর বাস্তবভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণের পর ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’ তা পাগল ছাড়া কেউ দাবি করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উচ্চ আদালতে নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা সম্পর্কে শাহদীন মালিক বলেন, আমি জড়িত না একটির সঙ্গেও। তবে শুনেছি ৭৪-৭৫টি আসনে নির্বাচনী অনিয়মের বিষয়ে মামলা হয়েছে। ইলেকশন মামলার আইনজীবীদের আমি বলতে চাই, সাক্ষী হাজির করার দরকার নেই, কেন্দ্র ভিত্তিক রেজাল্ট বিচারপতিকে দেখান। বলেন, এই কেন্দ্রে আমার দলের প্রার্থী একটা ভোটও পায়নি, অপর দলের প্রার্থী এক শ’ ভাগ ভোট পেয়েছে। এখানে এক শ’ ভাগ ভোট পড়েছে। কেন্দ্র ভিত্তিক রেজাল্ট দেখালে নির্বাচনে যে কারচুপি হয়েছে সেটা আইনগতভাবে প্রমাণ করার জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু দরকার নেই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সোজামিলের নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করে বিশিষ্ট কলামনিস্ট গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নির্বাচনের ফলাফল নিয়েও অতীতে অনেক রকম গোঁজামিল আমরা দেখেছি। কিন্তু এবারের নির্বাচন কমিশন গোঁজামিলে না গিয়ে তারা একেবারে সোজামিলে চলে গিয়েছে। সোজামিলের বিষয়টি হচ্ছে শতভাগ। শতভাগের চেয়ে সোজামিল আর হয় না। অতীতে আমরা গোঁজামিল দেখেছি, এবার দেখলাম সোজামিল।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং নির্বাচনের প্রতি মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের রাস্তা রুদ্ধ হয়ে গেলে তা কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক নির্বাচন। এ নির্বাচনকে আমরা অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলতে পারি না। এটাকে বলতে হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ অসাদাচরণ। এই কারচুপির নির্বাচন আয়োজনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেন আর কোনো নির্বাচন না হয়। কারচুপির নির্বাচনের কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মানের অবনতি ঘটেছে। সাধারণ মানুষ নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। নির্বাচন কমিশন যে তথ্য দিয়েছে তাতে নূন্যতম কোনো সততা নেই। তারা নির্বাচন করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে। সংবাদ সম্মেলনে সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান সুচনা বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবেদনে যা আছে: সংবাদ সম্মেলনে ফল বিশ্লেষণের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার। এতে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ৩০০টি আসনের ৪০ হাজার ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন হয়েছে তারমধ্যে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এটা ইতিহাসে এই প্রথম ঘটেছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছিল এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বনিম্ন ভোট গ্রহণ হলেও সেখানে ভোট পড়েছিল ৪০ দশমিক ০৪ ভাগ। এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১২৭ কেন্দ্রে, ৯৮ শতাংশ ভোট পড়েছে ২০৪টি ভোটকেন্দ্রে, ৯৭ শতাংশ ভোট পড়েছে ৩৫৮ ভোটকেন্দ্রে এবং ৯৬ শতাংশ ভোট পড়েছে ৫১৬ ভোটকেন্দ্রে। মোটের উপর দেখা যায় ৯৬ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে ১ হাজার ৪১৮টি কেন্দ্রে। এছাড়াও ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ৬,৪৮৪ টি ভোটকেন্দ্রে, ৮০ থেকে ৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১৫,৭১৯টি ভোটকেন্দ্রে, ৭০ থেকে ৭৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১০ হাজার ৭৩টি ভোটকেন্দ্রে। এ নির্বাচনে ২০ থেকে ৩৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ৩০১টি কেন্দ্রে, ১০ থেকে ১৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ২০টি কেন্দ্রে এবং ১০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে ১১টি ভোটকেন্দ্রে।
এতে বলা হয়, নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দলের ধানের শীষ প্রতীকের ভোটের তফাৎ আকাশ-পাতাল। ইতিপূর্বে কোনো নির্বাচনে এমন পার্থক্য দেখা যায়নি। এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বৈধ ভোটের সংখ্যা ৬ কোটি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ৬৬ ভোট তথা ৭৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেখানে ধানের শীষ প্রতীকে বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ কোটি ৯ লাখ ৯১ হাজার ২৩১ ভোট তথা ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর লাঙ্গল প্রতীকে ভোট সংখ্যা ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯২০ ভোট। যা মোট ভোটের ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শতভাগ ভোট পড়া কেন্দ্রসমূহের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে সব থেকে বেশি এবং বরিশাল বিভাগে সব থেকে কম কেন্দ্র। চট্টগ্রামের ২৫টি আসনের আওতাভুক্ত ৫৩টি ভোটকেন্দ্রে এবং বরিশালের ২টি আসনের ৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এছাড়া রংপুর বিভাগের ১৪টি আসনের আওতাভুক্ত ৫২টি কেন্দ্রে, ঢাকা বিভাগের ২১টি আসনের আওতাভুক্ত ৩২টি কেন্দ্রে, রাজশাহী বিভাগের ১৫টি আসনের আওতাভুক্ত ২৯টি কেন্দ্রে, ময়মনসিংহ বিভাগের ১২টি আসনের আওতাভুক্ত ২৩টি কেন্দ্রে, সিলেট বিভাগের ১০টি আসনের আওতাভুক্ত ১৭টি কেন্দ্রে, খুলনা বিভাগের ৪টি আসনের আওতাভুক্ত ৪টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। অন্যদিকে ২১৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৮১টি তথা ৮৪ দশমিক ৯৭ শতাংশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী ৯০ জন সংসদ সদস্য, ২১টি আসনে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ জাতীয় পার্টি থেকে বিজয়ী ১০ জন সংসদ সদস্য এবং ৮টি তথা ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে বিজয়ী ১ জন সংসদ সদস্য বিজয়ী হয়েছেন।
এছাড়া ৭৫টি আসনের ৫৮৭টি কেন্দ্রের শতভাগ বৈধ ভোট শুধুমাত্র একজন করে প্রার্থী পেয়েছেন। অন্য কোনো প্রার্থী ১ ভোটও পাননি। এই ৫৮৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৮৬ টিতে ৯৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ সকল ভোট পেয়েছেন নৌকা প্রতীকের এবং ১টি কেন্দ্রের ০ দশমিক ১৭শতাংশ সকল ভোট পেয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী। এই ৭৫টি আসনের ৭৪টিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এবং ১টিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। যে আসনের (মাগুরা-২) আওতাভূক্ত একটি ভোটকেন্দ্রে সকল ভোট ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন, সেখানেও জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
রিপোর্টে বলা হয়, অতীতের ৪টি নির্বাচনে যে সকল আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে সেসব আসনে এই নির্বাচনে বিএনপ্থির ভোট প্রাপ্তির হার এতই কমেছে যে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ১৮টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিল না। বাকী ১৬টি আসনের মধ্যে ১৪টি আসনেই বিএনপির ভোট কমেছে। এসব আসনে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ৫৫ দশমিক ৬৭ ভাগ ভোট পেলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট পেয়েছে ২ দশমিক ০২ শতাংশ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাতিল ভোটের সংখ্যাও বেড়েছে। ৩০০টি আসনে গড়ে বাতিল ভোটের শতকরা হার ১ দশমিক ০৬ শতাংশ। ৩৪২টি কেন্দ্রে ১১ থেকে ৬১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি ৪ হাজার ৭৯৫টি কেন্দ্রে কোনো ভোটই বাতিল হয়নি। সর্বোচ্চ ৬১ ভাগ ভোট বাতিল হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের ্তুনোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়্থ ভোটকেন্দ্রে। শতভাগ ভোট পড়া ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে বাতিল ভোটের হার ছিল ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
সাধারণ ব্যালট পেপারে এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের মধ্যেও তারতাম্য দেখা যায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৬টি নির্বাচনী এলাকায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়। এই ৬টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬২ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে চট্টগ্রাম-৯ আসনে এবং সবচেয়ে কম ৪৩ দশমিক ০৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ঢাকা-১৩ আসনে। ৬টি আসনে ইভিএম-এ ভোট পড়ার গড় ছিল ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ইভিএমে সবচেয়ে কম ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে রংপুর-৩ আসনের দি মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এবং সবচেয়ে বেশি ৮৯ দশমিক ১৪ ভাগ ভোট পড়েছে চট্টগ্রাম-৯ আসনের আব্দুল বারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে।
এসব আসনে নৌকা প্রতীকের ভোট প্রাপ্তির গড় ৭৬ দশমিক ৮৬ ভাগ হলেও ইভিএম-এ ৫৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। একইভাবে সকল আসনে ধানের শীষ প্রতীকের ভোট প্রাপ্তির গড় ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। জাতীয় গড়ের তুলনায় ইভিএমে নৌকা প্রতীকে ভোট ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম এবং ধানের শীষে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি ভোট পড়েছে। ইভিএমে ভোটপড়ার হার কেন কম, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের তাদের কেন্দ্রভিত্তিক প্রকাশিত ফলাফলে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া নেই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার নিয়ে সুজন-এর সংবাদ সম্মেলন |
No comments