লিবিয়ায় এনামুলের টর্চার সেল: ‘টাকা দিলেই মেলে মুক্তি’
সুনামগঞ্জের
দিরাই উপজেলার টুকদিরাই গ্রামের বাসিন্দা আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী
এনামুলের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্নে ভূমধ্যসাগরে ডুবে প্রাণ
গেল মাহবুবের। নিঃস্ব হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছে অনেক পরিবার। লিবিয়ায় রয়েছে
এনামুলের টর্চারসেল। পাচারকারীদের সেখানে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।
দেশে পরিবারের লোকজনকে বলা হয় তাদের সন্তান মাফিয়ার কবলে পড়েছে। এনামুলকে
টাকা দিলেই মাফিয়ার কবল থেকে মেলে মুক্তি। এভাবেই ধাপে ধাপে টাকা দিতে হয়
তাকে। নৌকা চালক থেকে আঙুল ফুলে কোটিপতি হওয়া এনামুলের ক্ষমতার কাছে
ভুক্তভোগীরা অসহায়। তার বিরুদ্ধে থানা পুলিশে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয় না।
তিউনিশিয়ায় সাগরে মাহবুব নিখোঁজের পর থেকে গা-ঢাকা দিয়েছে এনামুল।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার টুক দিরাই গ্রামের হাজী আবদুল ওয়াহেদ মিয়ার পুত্র
এনামুল হক ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। হঠাৎ করে ঢাকা,
সিলেট আসা যাওয়া করে এলাকার যুবসমাজকে ইউরোপ পাঠানোর স্বপ্ন দেখিয়ে মানব
পাচার শুরু করে। স্বপ্নের ইউরোপ পাড়ি দিতে গিয়ে লাখ লাখ টাকা নিয়ে এনামুলে
শরণাপন্ন হয়েছেন এলাকার অনেকেই। দীর্ঘদিন অবৈধভাবে মানাব পাচার করে কোটি
কোটি টাকা হাতিয়ে নেন এনামুল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ পাড়ি দিলেও অনেকের
সলিল সমাধি হয়েছে সাগরেই। কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে লিবিয়া থেকে দেশে ফিরছেন
কেউবা জেল খেটেছে। গত ৯ই মে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে
সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর সদরের চণ্ডিপুর গ্রামের মাহবুবুল করিম কনু (২৫) মিয়া
নিখোঁজের পর দালাল এনামুল হককে নিয়ে এলাকায় আলোচনার ঝড় ওঠে। এরপর থেকে
এনামুলকে এলাকায় আসতেও দেখছেন না কেউ। তবে এনামুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে
যোগাযোগ করা হলে তিনি বলছেন, এসব কাজে তিনি এখন নেই, তার বিরুদ্ধে কোনো
অভিযোগও নেই, মামলা হয়েছিল, তাও শেষ করা হয়েছে, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার
সুবিধার্তে এখন কিছুদিন ধরে সিলেট থাকছেন। জানা গেছে, গত রমজান মাসে দালাল
এনামুলের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে বাড়ি
ত্যাগ করে নিখোঁজ হওয়া মাহবুবুল করিমসহ কয়েকজন। এর মধ্যে লুৎফুর রহমান
নামের একজন ৮ মাস শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করে লিবিয়াস্থ বাংলাদেশ
দূতাবাসের লেবার কাউন্সিলির আশরাফুল আলমের মাধ্যমে দেশে ফিরেন। এরপর গত ১৬ই
জানুয়ারি সুনামগঞ্জ মানব পাচার প্রতিরোধ দমন ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক
দালাল চক্রের সদস্য এনামুলসহ ৩ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন উপজেলার
রাজানগর ইউনিয়নের আনোয়ারপুর গ্রামের হাজী আবদুল মালেকের ছেলে ভুক্তভোগী
লুৎফুর রহমান। স্থানীয়রা জানান, আন্তর্জাতিক দালাল চক্রের সদস্য টুক দিরাই
গ্রামের জনৈক এনামুল হকের মাধ্যমে উপজেলার অনেকেই স্বপ্নের ইউরোপে পাড়ি
দিতে লিবিয়ায় অবস্থান করছেন। তাদের অভিভাবকরা অনেকেই চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
ভুক্তভোগী লুৎফুর রহমানের স্ত্রী দিলারা বেগম জানান, গত ৬ই রমজান আমার
স্বামী লুৎফুর রহমান ও নিখোঁজ ছবুর মিয়ার ছেলে মাহবুবুলসহ ওরা ৫ জন
এনামুলের মাধ্যমে টাকা-পয়সা দিয়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন, কিন্তু বাড়ি
থেকে বের হওয়ার পর সব কিছু পাল্টে যায়, নির্যাতনের শিকার হয়ে টাকা-পয়সা শেষ
করে বাড়িতে আসেন আমার স্বামী এবং চলতি বছরের ১৬ই জানুয়ারি সুনামগঞ্জে মানব
পাচার প্রতিরোধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয়
দিরাইয়ের এনামুলসহ হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের কালিয়া ভাঙ্গা গ্রামের মৃত দরছ
মিয়ার পুত্র তৈমুর রহমান ও মামুনুর রশিদকে। চণ্ডিপুর গ্রামের মশাহিদ মিয়া
জানান, এনামুল বহু মানুষকে ইউরোপের কথা বলে বিদেশ পাচার করেছে, আমার
ভাতিজাকে ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে পাসপোর্ট ও এক লাখ টাকা নেয় সে, পাসপোর্ট
ফেরত দিলেও টাকা ফেরত দেয়নি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক
রাহাত মিয়া জানান, এনামুল হককে ৪ লাখ টাকা দিয়ে আমার ভাতিজা জুয়েল লিবিয়া
যায়, এরপর ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে এবং মাফিয়ার কথা বলে মোট ১১ লাখ টাকা
এনামুলের মাধ্যমে দেয়া হয়, সে এখন লিবিয়া আছে।
এ ছাড়াও পৌর সদরের মাদানী মহল্লার কাউছার, শাখাওয়াত, উপজেলা রোডের খসরুল হকসহ অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন বলেন, এনামুলের সঙ্গে ইতালি যাওয়ার জন্য ৮ লাখ টাকায় কণ্টাক্ট হয়। লিবিয়ায় পৌঁছার পরই আমাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু হয়। বলা হয় বাড়িতে ফোন করে বল টাকা দেয়ার জন্য। এভাবে ১৬ লাখ টাকা দেয়ার পরও আমরা ইতালি পৌঁছতে পারিনি। পরে এনামুলের সিন্ডিকেট থেকে পালিয়ে অন্য মাধ্যমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা ইতালি পৌঁছেছি। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দিরাই সার্কেল বেলায়েত হোসেন শিকদার জানান, এনামুল একজন দালাল চক্রের সদস্য, তার বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ হয়েছিল, আমি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছি, এরপর শুনেছি মানব পাচার প্রতিরোধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে, এরপর নাকি আদালতে মামলা আপস করা হয়েছে।
এ ছাড়াও পৌর সদরের মাদানী মহল্লার কাউছার, শাখাওয়াত, উপজেলা রোডের খসরুল হকসহ অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন বলেন, এনামুলের সঙ্গে ইতালি যাওয়ার জন্য ৮ লাখ টাকায় কণ্টাক্ট হয়। লিবিয়ায় পৌঁছার পরই আমাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু হয়। বলা হয় বাড়িতে ফোন করে বল টাকা দেয়ার জন্য। এভাবে ১৬ লাখ টাকা দেয়ার পরও আমরা ইতালি পৌঁছতে পারিনি। পরে এনামুলের সিন্ডিকেট থেকে পালিয়ে অন্য মাধ্যমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা ইতালি পৌঁছেছি। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দিরাই সার্কেল বেলায়েত হোসেন শিকদার জানান, এনামুল একজন দালাল চক্রের সদস্য, তার বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ হয়েছিল, আমি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছি, এরপর শুনেছি মানব পাচার প্রতিরোধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে, এরপর নাকি আদালতে মামলা আপস করা হয়েছে।
No comments