একইসঙ্গে কি ‘অসমিয়া’ আর ‘বাঙালি’ হওয়া সম্ভব? by ফাহমিদা উর্ণি
ভারতের
আসামে আদি জনগোষ্ঠীর (অসমিয়া) তোপের মুখে আত্মপরিচয়ের স্বাতন্ত্র্য
বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠিত নয় বাঙালিরা। অবৈধ বাংলাদেশি তকমা ঘোচাতে একসময়
নিজেদের ভারতীয় পরিচয়কে সামনে আনার প্রচেষ্টা ছিল তাদের। এবার ‘অসমীয়া
বাঙালি’ নামের নতুন পরিচয়কে ভর করে টিকে থাকার চেষ্টা নিয়েছে তারা। ভারতীয়
সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস বলছে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিদ্বেষ থেকে
বাঁচতে অভিবাসী বাঙালিদের একাংশ আত্মপরিচয়ে ‘অসমীয়’ যুক্ত করে টিকে থাকার
চেষ্টা করছে। তবে সংস্কৃতি-ভাষা আর পরিচয়ের নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী
এই পরিচয়কে বিভ্রান্তিকর মনে করা হচ্ছে। আসামে বাঙালি জনগোষ্ঠীর অভিবাসনের
অতীত ইতিহাসও ওই পরিচয়সূত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে বিভিন্ন আদিবাসী ও জাতিগত গোষ্ঠীর বসবাস।সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে আসামে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে বাঙালিরা। ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর ভারতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের নাগরিকত্বের সুযোগ ছিল না। তবে সম্প্রতি লোকসভায় পাস হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল ২০১৬ অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশকারী অমুসলিমদের (হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, শিখ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ভুক্ত) নাগরিকত্বের বিধান রাখা হয়েছে। বিরোধীরা বলছে, এই আইনটি ১৯৮৫ সালের আসাম অ্যাকর্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ১৯৮৫ সালের আসাম অ্যাকর্ডে বলা হয়েছিল, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে থেকে যারা আসামে বাস করছে, তারাই শুধু নাগরিকত্ব পাবে। সংশোধিত বিল নিয়ে নানা মতবিরোধ বাঙালিদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে চূড়ান্ত উৎকণ্ঠা। সদ্য পাস হওয়া ‘নাগরিকত্ব সংশোধন বিল’কে কেন্দ্র করে পরিচয়ের সংকট সৃষ্টি হয়েছে কারও কারও মধ্যে।
উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদীর রোষানল আসামে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে যে পরিচয়ের সংকট সৃষ্টি করেছে, তা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন বাঙালিরা। এদের একজন বাবলু নন্দী। এ বাঙালি হিন্দু তরুণ হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন ‘আমরা অসমীয়া বাঙালি। শুধু বাঙালি নই আমরা।’
অনেক ভারতীয় নাগরিকের কাছে ‘অসমীয়া বাঙালি’ একটি বিভ্রান্তিকর শব্দ। কারণ, অসমীয়া ও বাঙালি দুটি ভিন্ন কমিউনিটি। তাদের সংস্কৃতি ও ভাষা ভিন্ন, বংশপরিচয় ভিন্ন। তারচেয়েও বড় বিষয় হলো, অসমীয়াদের একটা বড় অংশ আদিবাসী, বাঙালিরা আদিবাসী নয়। এসব আদিবাসীর স্বতন্ত্র জীবনধারা আছে। তাদের কেউ কেউ তথাকথিত সমতলের আদিবাসী। যেমন বোড়োরা। আবার দিমাসাসের মতো যেসব আদিবাসী পাহাড়ে বসবাস করে তাদের ডাকা হয় পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী হিসেবে।
ইতিহাসে নজর ফেরালে দেখা যায়, বাঙালিরা আসামের আদি জনগোষ্ঠী না হলেও তাদের অভিবাসনের সূচনাকালে তাদেরকে ‘বহিরাগত’ বিবেচনা করা যায় না। আসামে বাঙালি অভিবাসনের পুরনো ইতিহাস তাই অভ্যন্তরীণ অভিবাসন প্রক্রিয়ার অংশ ছিল। আহম রাজার কাছ থেকে আসাম ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের অধীনে যাওয়ার পর সেখানে কৃষিজীবী বাঙালিদের আবির্ভাব হতে শুরু করে। সেই সময়ের আসাম ছিল জঙ্গলে পরিপূর্ণ। ১৮৫৫ সালে মেজর জন বাটলার নামের একজন ব্রিটিশ সেনা-কর্মকর্তা আসামকে বর্ণনা করেন ‘মানুষ ও পশুপাখি বিহীন এক নির্জন ভূমি’ হিসেবে। ২০ শতকের শুরুর দিকে, ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী লাখ লাখ বাঙালি আসামে গিয়ে বসত গড়ে। কেবল বাংলা থেকে নয়, উড়িষ্যা ও বিহার থেকেও মানুষ সেখানে গিয়ে বসত গড়তে শুরু করে মাটির উর্বরতার কারণে।
আল জাজিরার গত বছরের জুনের এক প্রতিবেদনে আভাস পাওয়া গেছে, স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত অভিবাসন প্রক্রিয়াই রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কারণে স্থানীয় ও বাঙালি বিভাজনে পর্যবসিত হয়। তারা বলছে, ১৯৩০ সালে সৈয়দ মুহাম্মদ সাদ উল্লাহ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘অধিক ফসল ফলানোর স্বার্থে’ আরও বাঙালি অভিবাসীকে জায়গা দেওয়ার নীতি আসামে আদিবাসী বনাম আউটসাইডার বিভাজনের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে।
আসামে বাঙালি বিদ্বেষের ঐতিহাসিক সূত্র পাওয়া যায় অমলেন্দু গুহ’র ‘প্ল্যান্টার রাজ টু স্বরাজ’ নামক বইতে। সেখান থেকে জানা যায়, ১৯৩১ সালে আসামে আদমশুমারির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন সিএস মুলান। বাঙালি অভিবাসীদেরকে ‘এক আক্রমণকারী ও দখলদার সেনাবাহিনী, একটি ভয়ঙ্কর শিকারী পাখি ও কীটপতঙ্গের’ সঙ্গে তুলনা করতেন। মুলান বাঙালি অভিবাসীদেরকে দেখতেন ‘শকুন’ হিসেবে। তার দাবি ছিল, অভিবাসীরা জমি দখলের জন্য শকুনি দৃষ্টি নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দুই লাখেরই বেশি বাঙালিকে সেসময়কার পূর্ব পাকিস্তানে বিতাড়িত করা হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকানো সংক্রান্ত স্কিমের আওতায় ওই বিতাড়ন প্রক্রিয়া চালানো হয়েছিল। লেখক রিজওয়ানা শামসাদ তার ‘বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টস ইন ইন্ডিয়া: ফরেনার্স, রিফিউজিস অর ইনফিলট্রেটরস?’ বইতে লিখেছেন, বাঙালি বংশোদ্ভূতদেরকে জমি দখলকারী ও বসতি স্থাপনকারী হিসেবে উপস্থাপন করে একটি ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছিল। অসমীয় জাতিগত গোষ্ঠীর মানুষদেরকে উপস্থাপন করা হয়েছিল ‘অরক্ষিত’ হিসেবে।
ভারত-পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার আগে আসামে অভিবাসী হওয়া বাঙালিদের মধ্যে নিজেদের আদিবাসী দাবি করার প্রবণতা আছে। নেলি গ্রামে বসবাস করেন বাঙালি বংশোদ্ভূত সুলেমান কাসিমি। গত বছর আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা ভূমিপুত্র। আমাদেরকে বাংলাদেশি ডাকবেন না। আমরা ভারতীয়।’
অবিভক্ত ভারতের ঐতিহাসিক সূত্র আদিবাসী অসমীয়াদের সঙ্গে অভিবাসীদের সম্পর্কের বরফ গলাতে পারেনি। ১৯৬০-এর দশকে বাংলাকে আসামের অফিসিয়াল ভাষা করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল এলিট হিন্দু বাঙালিরা। পরে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হয় এবং এ প্রচেষ্টা থামিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৮০-এর দশকে আসাম অ্যাকর্ডের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে অবৈধ মুসলিম বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের উচ্ছেদ করতে ছয় বছর ধরে আন্দোলন হয়েছিল। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে তাই সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে, এবার অসমিয়া বাঙালি পরিচয় গ্রহণ করে আত্মপরিচয় বিসর্জন দিতে চাইলেও অসমিয়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বরফ গলবে কিনা।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে বিভিন্ন আদিবাসী ও জাতিগত গোষ্ঠীর বসবাস।সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে আসামে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে বাঙালিরা। ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর ভারতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের নাগরিকত্বের সুযোগ ছিল না। তবে সম্প্রতি লোকসভায় পাস হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল ২০১৬ অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশকারী অমুসলিমদের (হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, শিখ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ভুক্ত) নাগরিকত্বের বিধান রাখা হয়েছে। বিরোধীরা বলছে, এই আইনটি ১৯৮৫ সালের আসাম অ্যাকর্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ১৯৮৫ সালের আসাম অ্যাকর্ডে বলা হয়েছিল, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে থেকে যারা আসামে বাস করছে, তারাই শুধু নাগরিকত্ব পাবে। সংশোধিত বিল নিয়ে নানা মতবিরোধ বাঙালিদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে চূড়ান্ত উৎকণ্ঠা। সদ্য পাস হওয়া ‘নাগরিকত্ব সংশোধন বিল’কে কেন্দ্র করে পরিচয়ের সংকট সৃষ্টি হয়েছে কারও কারও মধ্যে।
উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদীর রোষানল আসামে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে যে পরিচয়ের সংকট সৃষ্টি করেছে, তা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন বাঙালিরা। এদের একজন বাবলু নন্দী। এ বাঙালি হিন্দু তরুণ হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন ‘আমরা অসমীয়া বাঙালি। শুধু বাঙালি নই আমরা।’
অনেক ভারতীয় নাগরিকের কাছে ‘অসমীয়া বাঙালি’ একটি বিভ্রান্তিকর শব্দ। কারণ, অসমীয়া ও বাঙালি দুটি ভিন্ন কমিউনিটি। তাদের সংস্কৃতি ও ভাষা ভিন্ন, বংশপরিচয় ভিন্ন। তারচেয়েও বড় বিষয় হলো, অসমীয়াদের একটা বড় অংশ আদিবাসী, বাঙালিরা আদিবাসী নয়। এসব আদিবাসীর স্বতন্ত্র জীবনধারা আছে। তাদের কেউ কেউ তথাকথিত সমতলের আদিবাসী। যেমন বোড়োরা। আবার দিমাসাসের মতো যেসব আদিবাসী পাহাড়ে বসবাস করে তাদের ডাকা হয় পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী হিসেবে।
ইতিহাসে নজর ফেরালে দেখা যায়, বাঙালিরা আসামের আদি জনগোষ্ঠী না হলেও তাদের অভিবাসনের সূচনাকালে তাদেরকে ‘বহিরাগত’ বিবেচনা করা যায় না। আসামে বাঙালি অভিবাসনের পুরনো ইতিহাস তাই অভ্যন্তরীণ অভিবাসন প্রক্রিয়ার অংশ ছিল। আহম রাজার কাছ থেকে আসাম ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের অধীনে যাওয়ার পর সেখানে কৃষিজীবী বাঙালিদের আবির্ভাব হতে শুরু করে। সেই সময়ের আসাম ছিল জঙ্গলে পরিপূর্ণ। ১৮৫৫ সালে মেজর জন বাটলার নামের একজন ব্রিটিশ সেনা-কর্মকর্তা আসামকে বর্ণনা করেন ‘মানুষ ও পশুপাখি বিহীন এক নির্জন ভূমি’ হিসেবে। ২০ শতকের শুরুর দিকে, ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী লাখ লাখ বাঙালি আসামে গিয়ে বসত গড়ে। কেবল বাংলা থেকে নয়, উড়িষ্যা ও বিহার থেকেও মানুষ সেখানে গিয়ে বসত গড়তে শুরু করে মাটির উর্বরতার কারণে।
আল জাজিরার গত বছরের জুনের এক প্রতিবেদনে আভাস পাওয়া গেছে, স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত অভিবাসন প্রক্রিয়াই রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কারণে স্থানীয় ও বাঙালি বিভাজনে পর্যবসিত হয়। তারা বলছে, ১৯৩০ সালে সৈয়দ মুহাম্মদ সাদ উল্লাহ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘অধিক ফসল ফলানোর স্বার্থে’ আরও বাঙালি অভিবাসীকে জায়গা দেওয়ার নীতি আসামে আদিবাসী বনাম আউটসাইডার বিভাজনের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে।
আসামে বাঙালি বিদ্বেষের ঐতিহাসিক সূত্র পাওয়া যায় অমলেন্দু গুহ’র ‘প্ল্যান্টার রাজ টু স্বরাজ’ নামক বইতে। সেখান থেকে জানা যায়, ১৯৩১ সালে আসামে আদমশুমারির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন সিএস মুলান। বাঙালি অভিবাসীদেরকে ‘এক আক্রমণকারী ও দখলদার সেনাবাহিনী, একটি ভয়ঙ্কর শিকারী পাখি ও কীটপতঙ্গের’ সঙ্গে তুলনা করতেন। মুলান বাঙালি অভিবাসীদেরকে দেখতেন ‘শকুন’ হিসেবে। তার দাবি ছিল, অভিবাসীরা জমি দখলের জন্য শকুনি দৃষ্টি নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দুই লাখেরই বেশি বাঙালিকে সেসময়কার পূর্ব পাকিস্তানে বিতাড়িত করা হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকানো সংক্রান্ত স্কিমের আওতায় ওই বিতাড়ন প্রক্রিয়া চালানো হয়েছিল। লেখক রিজওয়ানা শামসাদ তার ‘বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টস ইন ইন্ডিয়া: ফরেনার্স, রিফিউজিস অর ইনফিলট্রেটরস?’ বইতে লিখেছেন, বাঙালি বংশোদ্ভূতদেরকে জমি দখলকারী ও বসতি স্থাপনকারী হিসেবে উপস্থাপন করে একটি ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছিল। অসমীয় জাতিগত গোষ্ঠীর মানুষদেরকে উপস্থাপন করা হয়েছিল ‘অরক্ষিত’ হিসেবে।
ভারত-পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার আগে আসামে অভিবাসী হওয়া বাঙালিদের মধ্যে নিজেদের আদিবাসী দাবি করার প্রবণতা আছে। নেলি গ্রামে বসবাস করেন বাঙালি বংশোদ্ভূত সুলেমান কাসিমি। গত বছর আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা ভূমিপুত্র। আমাদেরকে বাংলাদেশি ডাকবেন না। আমরা ভারতীয়।’
অবিভক্ত ভারতের ঐতিহাসিক সূত্র আদিবাসী অসমীয়াদের সঙ্গে অভিবাসীদের সম্পর্কের বরফ গলাতে পারেনি। ১৯৬০-এর দশকে বাংলাকে আসামের অফিসিয়াল ভাষা করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল এলিট হিন্দু বাঙালিরা। পরে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হয় এবং এ প্রচেষ্টা থামিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৮০-এর দশকে আসাম অ্যাকর্ডের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে অবৈধ মুসলিম বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের উচ্ছেদ করতে ছয় বছর ধরে আন্দোলন হয়েছিল। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে তাই সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে, এবার অসমিয়া বাঙালি পরিচয় গ্রহণ করে আত্মপরিচয় বিসর্জন দিতে চাইলেও অসমিয়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বরফ গলবে কিনা।
No comments