কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না by মো. তৌহিদ হোসেন
দুই
বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনাটি দেশে-বিদেশে আলোচিত। নাগরিক নিরাপত্তার
সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্নটিও সামনে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রকাশ
করা হলো সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেনের বিশ্লেষণ দুটি
হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে মনে হচ্ছে, পরিকল্পিত হত্যা। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দুটি
দেশের কিংবা সার্বিকভাবে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন,
সেটি অস্বাভাবিক নয়। যেকোনো দেশ তার নাগরিকদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হবে,
নিরাপত্তা চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে এ ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো ঘটনার
পরপরই যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাদের নাগরিকদের চলাফেরার ওপর যে বিধিনিষেধ
জারি করা হয়েছে, সেটা একটু বেশি বলেই মনে হয়।
এমনকি অস্ট্রেলিয়া তাদের ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত করেছে ইতালির নাগরিক হত্যার আগেই। তাদের কাছে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে কোনো তথ্য থাকলে সেটি বাংলাদেশকে জানাতে পারত। বরং আমরা দেখলাম, তাদের নিরাপত্তা দল এসে এখানে সরেজমিনে সবকিছু দেখে গেছে, তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি প্রমুখের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। এরপরই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড তাদের ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত করার কথা জানিয়ে দেয়।
যেকোনো রাষ্ট্রের দায়িত্ব দেশি-বিদেশি সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়া। সেই সঙ্গে এ কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে যে এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা কেবল বাংলাদেশে ঘটছে না, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ঘটে থাকে। অস্ট্রেলিয়া যেদিন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তাদের ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত করল, সেদিনই সে দেশের পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে দুই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কলেজে ১০ জন নিহত হয় সন্ত্রাসীদের হাতে। তাই বলতে হবে যে সন্ত্রাসের সমস্যাটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা।
এ ধরনের ঘটনার দুটি দিক আছে। একটি কূটনৈতিক, আরেকটি নিরাপত্তাবিষয়ক। নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেটি নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা ভালো বলতে পারবেন।
তবে একজন কূটনীতিক হিসেবে বলতে পারি, দুই বিদেশি নাগরিকের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যতই বেদনাদায়ক হোক, তা সংশ্লিষ্ট দেশ দুটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে বলেই আমার বিশ্বাস। এ দুটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও সতর্কতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবে আশা করা যায়। ইতিমধ্যে কূটনৈতিক এলাকাসহ যেসব জায়গায় বিদেশিরা কাজ করছেন, সেসব এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এরপরও গুলশান-বারিধারা এলাকায়, যেখানে অধিকাংশ কূটনৈতিক স্থাপনা ও কূটনীতিকের বাস, নিরাপত্তা আরও জোরদার করা যেতে পারে। সেখানে সাধারণের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা যাবে না সত্য, তবে নজরদারি বাড়ানো উচিত। নিরাপত্তার দুটি দিক: প্রকৃত বা দৃশ্যমান নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তা পারসেপশন বা ধারণা। সেই ধারণার উন্নয়নে সরকার দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে।
বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা বলি। বিদেশে আমি সবশেষ দায়িত্ব পালন করি দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে। সেখানে আমার বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। তাই বলে কি বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সম্পর্ক খারাপ হয়েছে? এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখতে হবে।
আর নিরাপত্তার ধারণা বা পারসেপশনের কথা বললাম, এর উন্নয়নে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেসব পদক্ষেপ দিয়েছে বা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, সেগুলো সম্পর্কে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবে। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেগুলো নিয়মিত ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করবে।
ঘটনাবলির সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব দেশের বাইরে ছিলেন। তাঁরা দেশে ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রীও বিদেশ থেকে এসে সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই বক্তব্যের আলোকে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিং করতে পারে; যার উদ্দেশ্য হবে বিদেশি কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করা। নিরাপত্তার ব্যাপারে তাঁদের কোনো বাড়তি চাহিদা থাকলে সেটিও পূরণ করা। আমার ধারণা, গত কয়েক দিনে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং না হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কূটনীতিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা বলেছেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিলও করেছে।
নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব প্রধানত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আমাদের প্রত্যাশা, তারা এ ব্যাপারে আরও সক্রিয় হবে, বিভিন্ন বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করবে। অপরাধীরা যাতে দ্রুত গ্রেপ্তার হয়, সে ব্যাপারে তাদের সর্বাত্মক
প্রয়াস নিতে হবে। এর আগে সৌদি কূটনীতিক হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যর্থ হবে না আশা করি।
মো. তৌহিদ হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব।
এমনকি অস্ট্রেলিয়া তাদের ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত করেছে ইতালির নাগরিক হত্যার আগেই। তাদের কাছে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে কোনো তথ্য থাকলে সেটি বাংলাদেশকে জানাতে পারত। বরং আমরা দেখলাম, তাদের নিরাপত্তা দল এসে এখানে সরেজমিনে সবকিছু দেখে গেছে, তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি প্রমুখের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। এরপরই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড তাদের ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত করার কথা জানিয়ে দেয়।
যেকোনো রাষ্ট্রের দায়িত্ব দেশি-বিদেশি সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়া। সেই সঙ্গে এ কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে যে এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা কেবল বাংলাদেশে ঘটছে না, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ঘটে থাকে। অস্ট্রেলিয়া যেদিন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তাদের ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত করল, সেদিনই সে দেশের পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে দুই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কলেজে ১০ জন নিহত হয় সন্ত্রাসীদের হাতে। তাই বলতে হবে যে সন্ত্রাসের সমস্যাটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা।
এ ধরনের ঘটনার দুটি দিক আছে। একটি কূটনৈতিক, আরেকটি নিরাপত্তাবিষয়ক। নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেটি নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা ভালো বলতে পারবেন।
তবে একজন কূটনীতিক হিসেবে বলতে পারি, দুই বিদেশি নাগরিকের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যতই বেদনাদায়ক হোক, তা সংশ্লিষ্ট দেশ দুটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে বলেই আমার বিশ্বাস। এ দুটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও সতর্কতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবে আশা করা যায়। ইতিমধ্যে কূটনৈতিক এলাকাসহ যেসব জায়গায় বিদেশিরা কাজ করছেন, সেসব এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এরপরও গুলশান-বারিধারা এলাকায়, যেখানে অধিকাংশ কূটনৈতিক স্থাপনা ও কূটনীতিকের বাস, নিরাপত্তা আরও জোরদার করা যেতে পারে। সেখানে সাধারণের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা যাবে না সত্য, তবে নজরদারি বাড়ানো উচিত। নিরাপত্তার দুটি দিক: প্রকৃত বা দৃশ্যমান নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তা পারসেপশন বা ধারণা। সেই ধারণার উন্নয়নে সরকার দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে।
বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা বলি। বিদেশে আমি সবশেষ দায়িত্ব পালন করি দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে। সেখানে আমার বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। তাই বলে কি বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সম্পর্ক খারাপ হয়েছে? এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখতে হবে।
আর নিরাপত্তার ধারণা বা পারসেপশনের কথা বললাম, এর উন্নয়নে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেসব পদক্ষেপ দিয়েছে বা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, সেগুলো সম্পর্কে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবে। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেগুলো নিয়মিত ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করবে।
ঘটনাবলির সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব দেশের বাইরে ছিলেন। তাঁরা দেশে ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রীও বিদেশ থেকে এসে সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই বক্তব্যের আলোকে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিং করতে পারে; যার উদ্দেশ্য হবে বিদেশি কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করা। নিরাপত্তার ব্যাপারে তাঁদের কোনো বাড়তি চাহিদা থাকলে সেটিও পূরণ করা। আমার ধারণা, গত কয়েক দিনে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং না হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কূটনীতিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা বলেছেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিলও করেছে।
নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব প্রধানত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আমাদের প্রত্যাশা, তারা এ ব্যাপারে আরও সক্রিয় হবে, বিভিন্ন বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করবে। অপরাধীরা যাতে দ্রুত গ্রেপ্তার হয়, সে ব্যাপারে তাদের সর্বাত্মক
প্রয়াস নিতে হবে। এর আগে সৌদি কূটনীতিক হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যর্থ হবে না আশা করি।
মো. তৌহিদ হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব।
No comments