৮ মাস পর চিঠি পৌঁছালো স্পিকারের দপ্তরে
অবশেষে
দীর্ঘ আট মাস পর সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে
বহিষ্কারের বিষয়টি অবহিত করে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল মঙ্গলবার চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্পিকার ড. শিরীন
শারমিন চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য
পদের বিষয়ে আইন দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নৌকা প্রতীক নিয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসন
থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বর্তমান সরকারের ডাক,
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। গত ২৯শে সেপ্টেম্বর
নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে তিনি মহানবী (সা.), হজ ও তাবলীগ নিয়ে অবমাননাকর
বক্তব্য দিলে তা নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ব্যাপক সমালোচনা ও
বিক্ষোভের মুখে তাকে গত ১২ই অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ ও পরে আওয়ামী লীগের
প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৪শে অক্টোবর তার
দলের সাধারণ সদস্য পদও খারিজ করা হয়। দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে
স্পিকারের কাছে আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠি দীর্ঘ ৮ মাস পর গত ৫ই জুলাই সংসদ
সচিবালয়ে পৌঁছায়। এদিকে দল থেকে বহিষ্কারের চিঠি সংসদে পৌঁছানোর পর লতিফ
সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ থাকবে কি না তা নিয়ে বিতর্ক জোরদার হয়েছে। অতীতের
নজির অনুযায়ী তার সংসদ সদস্যপদ বাতিলের সুযোগ নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের
বিদ্যমান আইনের বিধান অনুযায়ী তার সদস্যপদ বাতিল হবে। এ বিষয়ে ডেপুটি
স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া জানান, বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে
পারে, কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার হলে কারও সংসদ সদস্যপদ যাবে না। এ ক্ষেত্রে
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রযোগ্য হবে না। অতীতে তেমন রেকর্ড নেই। সংসদ
সচিবালয় সূত্র জানায়, এর আগে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে অষ্টম জাতীয় সংসদে
বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা
হয়েছিল। তার সংসদ সদস্য থাকবে কি না- বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তখন
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবু হেনার সদস্য পদ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত
দেন তৎকালীন স্পিকার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার। একইভাবে আওয়ামী লীগ
নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে।
সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি
বহিষ্কার করলেও তার সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকে। তবে দল থেকে বহিষ্কার হলে
সংসদ সদস্যপদ বাতিল হবে বলে দাবি করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ
ছহুল হোসাইন। তিনি বলেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দলীয় সিদ্ধান্ত
অমান্য করেছেন বলেই আওয়ামী লীগ তাকে বহিষ্কার করেছে। দল চাইলে তার সংসদ
সদস্যপদ বাতিল হবে। কারণ তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত
হতে পারতেন না। তিনি আরও বলেন, সংসদ সচিবালয়ে পাঠানো আওয়ামী লীগের চিঠি
স্পিকার নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন। নির্বাচন কমিশন তার বিষয়ে চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নিবে। এ বিষয়ে সংসদের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে স্পিকার বলেন, আইন
দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের চিঠিটি নির্বাচন
কমিশনে পাঠানো হবে। কমিশন তার বিষয়ে করণীয় ঠিক করবে। কমিশনের নির্দেশনা
পেলে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে সংসদ সচিবালয়। উল্লেখ্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে
আঘাত দেয়ার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী
বিরুদ্ধে প্রায় দুই ডজন মামলা হয়। বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলগুলোর আন্দোলনের
হুমকি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার মুখে ২০১৪ সালের ২৩শে নভেম্বর
রাতে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। পরদিন তিনি আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে
কারাগারে পাঠান। গত ২৯শে জুন উচ্চ আদালতের জামিনে তিনি মুক্তি পান।
No comments