নাজিব রাজাকের দুর্নীতির ৯টি ডকুমেন্ট প্রকাশ
প্রধানমন্ত্রী
নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে প্রায় ৭০ কোটি ডলার দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তোলপাড়
চলছে মালয়েশিয়ায়। এরই মধ্যে আর্থিক ওই দুর্নীতির কমপক্ষে ৯টি ডকুমেন্ট
প্রকাশ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট
জার্নাল। বলা হচ্ছে, ১এমডিবি তহবিল থেকে নাজিব রাজাকের ব্যক্তিগত তহবিলে
স্থানান্তর হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি ডলার। এ অভিযোগে গতকাল মালয়েশিয়া সরকার
কমপক্ষে ছয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে এসব
অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ওই অর্থ স্থানান্তরের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
মালয়েশিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল গনি পাতাইল, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর
জেতি আকতার আজিজ, পুলিশ মহাপরিদর্শক খালিদ আবু বকার ও মালয়েশিয়ার দুর্নীতি
বিরোধী কমিশনের প্রধান আবু কাশিম মোহাম্মদ একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে
তারা বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুটি ব্যাংকের ১৭টি অ্যাকাউন্টের
ডকুমেন্ট নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চলমান তদন্তে সহায়তার জন্য তা করা হয়েছে। তবে
তারা ওই ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টধারীর নাম প্রকাশ করে নি। উল্লেখ্য,
২০০৯ সালে কৌশলগত উন্নয়ন বিষয়ে একটি তহবিল গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী নাজিব
রাজাক। এর উদ্দেশ্য ছিল নতুন নতুন শিল্প কারখানার উন্নয়ন ও রাজধানী
কুয়ালালামপুরকে বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। এ তহবিলের
নাম দেয়া হয়েছিল ‘ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ’ (১এমডিবি)। এ তহবিলের
শতভাগ মালিকানা ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আবার প্রধান
প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। এ সংস্থা থেকে ঋণ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এখানে
রয়েছে ১১০০ কোটি ডলার। এ তহবিলের সমালোচকদের মধ্যে রয়েছেন নাজিব রাজাকের
ক্ষমতাসীন দলের কিছু সদস্য। অভিযোগ করা হয়েছে, ওই তহবিল ঋণ নিয়েছে খুব বেশি
অঙ্কের। তবে এ ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। এরই মধ্যে ওয়াল স্ট্রিট
জার্নাল রিপোর্ট করেছে যে, এই তহবিলের প্রায় ৭০ কোটি ডলার স্থানান্তরিত
হয়েছে নাজিবের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এর স্বপক্ষে তারা বেশকিছু
ডকুমেন্ট প্রকাশ করেছে। এ কারণে, প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের আইনজীবী ওয়াল
স্ট্রিট জার্নালের প্রকাশক ডো জোনসের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি
নিচ্ছেন। এ জন্য তিনি নিউ ইয়র্কভিত্তিক আইনজীবীদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করছেন।
সেখানে পত্রিকাটির প্রকাশকের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করা হবে। নাজিব
রাজাকের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বলেছেন, ডো জোনসের কাছে চিঠি দেয়ার আগে আমরা আইনগত
পদক্ষেপ সম্পন্ন করছি। গত শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল একটি রিপোর্ট
প্রকাশ করে এক তদন্তকারীকে উদ্ধৃত করে। তবে ওই তদন্তকারীর নাম তারা প্রকাশ
করে নি। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ১এমডিবি তহবিলের ৭০ কোটি ডলার স্থানান্তর
হয়েছে নাজিব রাজাকের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এরপরই তারা গতকাল একটি
রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘গভর্নমেন্ট ডকুমেন্টস ফ্রম প্রোব অব নাজিব রাজাক’
শিরোনামের প্রতিবেদন। এতে তারা কথিত এ দুর্নীতির স্বপক্ষে ডকুমেন্টগুলো
প্রকাশ করে। বলা হয়, এগুলো তারা পেয়েছে মালয়েশিয়ান সরকারের তদন্ত থেকে। এতে
দেখা যায়, ২০১৩ সালের মার্চ, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর ও ২০১৫ সালের
ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে নাজিবের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে অর্থ
জমা হয়েছে। আরেকটি ডকুমেন্ট বলছে, ২০১৪ সালের ২০শে জানুয়ারি নাজিবের ব্যাংক
অ্যাকাউন্টের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে একটি চিঠি। কিছু ডকুমেন্টে এএম
ইসলামিক ব্যাংক বেরহাদ-এর অ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে পাঁচটি অঙ্ক। এই পাঁচটি
অঙ্ক নাজিব রাজাকের অ্যাকাউন্ট নম্বরের সঙ্গে মিলে যায়। গতকাল এর আগে
দুর্নীতি তদন্তের জন্য গঠন করা হয়েছে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স। ওই কমিটি এক
বিবৃতিতে বলেছে, এই তহবিলের অর্থ স্থানান্তরের সঙ্গে যুক্ত এমন ছয়টি
ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। তবে নাজিব রাজাক তার বিরুদ্ধে আনীত
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নাজিবের অফিস থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
দেশের অর্থনীতির ওপর আস্থা খর্ব করতে, সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ও
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে সুনির্দিষ্ট
কিছু মানুষ সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে ওই সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি কারা
বিবৃতিতে তার কিছুই বলা হয় নি। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির
মোহাম্মদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে বিব্রতকর অবস্থায় নিয়ে যাওয়া
হয় নি তার সময়ে। গতকাল তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক দেশকে
বিব্রতকর এক অবস্থায় নিয়ে গেছেন। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমান
অভিযোগ করেছেন যে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে কথা বলে দেশকে বিব্রতকর অবস্থায়
নিয়ে গেছেন মাহাথির মোহাম্মদ। এর জবাবে মাহাথির বলেন, আনিফাহ’র জানা উচিত
যে, ১এমডিবি দুর্নীতির কথা বিশ্বজুড়ে পরিচিত বিষয়। এর পরিবর্তে আনিফাহ’র
লজ্জা পাওয়া উচিত ছিল। কারণ, বিদেশী বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে দেখিয়েছেন যে
মালয়েশিয়ায় দুর্নীতি হচ্ছে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় যে ১০টি
দেশে তার মধ্যে অন্যতম মালয়েশিয়া। আনিফাহ এ বিষয়ে বিব্রত হন না।
No comments