তহবিল শূন্য করে গেছেন প্রশাসকেরা by শরিফুজ্জামান
তহবিল শূন্য, কোথা থেকে টাকা আসবে জানা নেই। কিন্তু আগাম উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা খরচের বিষয়টি নিশ্চিত করে গেছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকজন প্রশাসক। এই প্রক্রিয়ায় আর্থিক অনিয়ম, বিশেষ করে আগাম কমিশন লেনদেন হওয়ার যোগসূত্র পাচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দায়দেনায় ডুবে থাকার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, টাকা না থাকলেও আগাম প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় সরকারের এই বিশাল প্রতিষ্ঠানটি পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। এই সিটি করপোরেশনে প্রশাসকদের সময় প্রায় ২০০ কোটি টাকার আগাম প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে একজন প্রশাসকের সময়েই রাস্তাঘাটসহ উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার।
এই আগাম প্রকল্প নেওয়ার সূত্র ধরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসকদের সময়ে আর্থিক অনিয়ম হওয়ার তথ্য-প্রমাণ খোঁজার দাবি ওঠে। একই সঙ্গে দুই সিটি করপোরেশনে আয় অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। প্রশাসকেরা দায়িত্ব নেওয়ার আগে সর্বশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময়কালও বাদ যাচ্ছে না এই খোঁজাখুঁজি থেকে।
গত ২২ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রতি কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার সময় ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, স্থায়ী কমিটির গত বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের ওপর একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, সেখানে অনেক বিষয়ে লক্ষ্য অর্জন হয়নি। এরপর ঢাকা দক্ষিণের বিষয়েও অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গগুলো তুলে ধরেন কমিটির কয়েকজন সদস্য। কমিটির পরামর্শে স্থানীয় সরকার বিভাগ এসব কমিটি করেছে।
দুই সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করে জানা যায়, তদন্ত কমিটিগুলোর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে করপোরেশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সর্বশেষ সভা হয় গত ১৬ জুন। কমিটির সুপারিশ আনুষ্ঠানিকভাবে আসার আগেই ২২ জুন তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এতে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম চিহ্নিত করতে বলা হয়। এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, দুই সিটিতে অনিয়ম বেড়ে যাওয়া ও আয় কমে যাওয়ার বিষয়গুলো মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, তহবিলে টাকা না থাকলেও প্রকল্প নেওয়া এবং সেই টাকার দায় এখনকার সিটি প্রশাসনের ওপর চেপে বসা।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দুই সিটি করপোরেশনে দুর্নীতি ও অনিয়ম যে হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এগুলো চিহ্নিত করাও কঠিন কাজ নয়। কিন্তু এখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টি মুখ্য। কারণ, এসব দুর্নীতির সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্র রয়েছে। প্রশাসকদের মধ্যে কেউ কেউ যেমন জড়িত ছিলেন, তেমনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ঠিকাদারেরাও ছিলেন এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে।
দৃষ্টান্ত হিসেবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, সাবেক প্রশাসক খলিলুর রহমান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় পড়েছেন নীলক্ষেতের একটি মার্কেট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু এর পেছনে এক তরুণ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা আছেন, যিনি হয়তো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবেন। কারণ, কাগজে-কলমে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারসচিব জানান, প্রশাসনিক তদন্ত করে যেসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে, তা স্থায়ী কমিটিকে জানানো হবে। এরপর প্রশাসনিক ব্যবস্থা বা প্রয়োজনে দুদককে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।
প্রশাসকদের অনিয়ম তদন্তে কমিটি: দুই সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৪ জন প্রশাসক। ঢাকা দক্ষিণে প্রশাসক ছিলেন খলিলুর রহমান, জিল্লার রহমান, নজরুল ইসলাম, নজমুল ইসলাম, মো. আলমগীর, ইব্রাহিম হোসেন খান ও শওকত মোস্তফা। ঢাকা উত্তরে প্রশাসকদের মধ্যে ছিলেন খোরশেদ আলম চৌধুরী, শাহজাহান আলী মোল্লা, মো. রেজা খান, মো. আক্তার হোসেন ভূঁইয়া, ফারুক জলিল, রাখাল চন্দ্র বর্মণ প্রমুখ।
গত প্রায় আড়াই বছরে এসব প্রশাসক দায়িত্ব পালনের সময় কী ধরনের অনিয়ম হয়েছে, তা তদন্ত করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে বেশ কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। এসব তথ্য পাওয়ার পর তাঁরা দুই করপোরেশনে যাবেন বলে কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অনিয়ম হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সেখানে দায়িত্ব পাওয়া বেশির ভাগ প্রশাসকের বিরুদ্ধে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ আছে। ওই সিটিতে তহবিল না থাকলেও প্রায় ২০০ কোটি টাকার আগাম প্রকল্প নেওয়া হয়। এমনকি কাজ না করে বিল নেওয়া, রাস্তা ঠিক থাকলেও খারাপ দেখিয়ে প্রকল্প নেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে, যেগুলো খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি সূত্র জানায়, অপরিকল্পিত ও অস্বচ্ছ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়ার কারণে গত জানুয়ারিতে মন্ত্রণালয় থেকে এই সিটি করপোরেশনকে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে বলা হয়েছিল।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণে প্রশাসক বা প্রকৌশলীদের অনেকেই কমিশন হিসেবে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। এরপর রাজনৈতিক প্রভাবশালী ঠিকাদার কাজ করা ও বিল আদায়ের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ঠিকাদারদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন শ কোটি টাকা। নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর ৭০ কোটি টাকা দিতে পেরেছেন। বাকি টাকা এখন পর্যন্ত পাওনা রয়েছে। কোথা থেকে এই টাকা শোধ করা হবে, তা মেয়র সাঈদ খোকনও জানেন না।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মো. জিল্লার রহমান প্রশাসক থাকার সময় প্রায় ১৫০ কোটি টাকার আগাম প্রকল্প নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের দৃষ্টি এখন ওই সব প্রকল্প ঘিরে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এসব প্রকল্প নিয়ে একটি চক্র আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ও সাবেক প্রশাসক জিল্লার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টি বা অন্যান্য কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট নির্মাণে প্রকৌশলীরা প্রকল্প নিয়ে এসেছেন। আমি কাউকে প্রকল্প তৈরি করতে বলিনি। কাউকে দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ দিতে লিখিত বা মৌখিক নির্দেশ দিইনি। আর কয়টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবং কত টাকার সংশ্লিষ্টতা, তা এত দিন পর মনে নেই।’
প্রকল্প গ্রহণ করা কোনো অপরাধ নয় উল্লেখ করে জিল্লার রহমান বলেন, তবে তহবিলের সংকট থাকলে প্রকল্প গ্রহণ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।
ওই সিটিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার আগাম প্রকল্প নেওয়া হয় অন্য প্রশাসকদের সময়ে। এর মধ্যে ইব্রাহিম হোসেন খানের সময়ে বেশ কয়েকটি আগ্রাম প্রকল্প নেওয়া হয়। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ চলার সময় রাস্তাঘাট খারাপ হওয়ায় সেখানে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আগাম ও জরুরি খরচ হয়েছে কয়েকজন প্রশাসকের সময়ে।
উত্তর সিটিতে অবশ্য আগাম প্রকল্প নেওয়ার অভিযোগ কম। সেখানে লুটপাট হয়েছে মার্কেট বরাদ্দ, সিটি করপোরেশনের জায়গা বরাদ্দ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্ব চুক্তি করে সিটি করপোরেশনকে ঠকিয়ে কমিশন নেওয়ার মাধ্যমে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন সাবেক প্রশাসক বলেন, তাঁরা ১৮০ দিনের জন্য সেখানে গেছেন। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনে প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও পদস্থ কিছু কর্মকর্তা মিলে যে চক্র আগে থেকে তৈরি হয়ে ছিল, সেখানে এই স্বল্প সময়ে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া, যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, তার সঙ্গে সরকারি দল বা এর অঙ্গসংগঠনের প্রভাবশালী কিছু নেতা জড়িত ছিলেন।
স্থানীয় সরকারসচিব বলেন, যেভাবেই অনিয়ম হোক, তার তথ্য-প্রমাণ থাকবে এবং আছে। সময়সাপেক্ষ হলেও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা কঠিন বিষয় নয়।
আয়ের লক্ষ্য অর্জন না হওয়ায় তদন্ত কমিটি: কয়েক বছর ধরেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে কর আদায়ের লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না। বিশেষ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বিষয়টি তদন্তের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব পরিমল কুমার দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার সময় ২০ কার্যদিবস।
প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, উত্তর সিটি করপোরেশনে যে টাকা আদায় হওয়ার কথা, তার অর্ধেক আদায় হয়েছে। আর দক্ষিণে মোট লক্ষ্যের এক-তৃতীয়াংশ আদায় হয়েছে।
জানতে চাইলে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণের যে আয়, তা দিয়ে নগর ভবনের ব্যয়, বেতন-ভাতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও নির্দিষ্ট খরচগুলো মেটানো সম্ভব। কিন্তু উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করার মতো তহবিল নেই। তাই জরুরি প্রয়োজনে উন্নয়নকাজ করতে গেলেও ঘাটতি পড়বে। আর বাড়তি খরচ করলে তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবেই।
দুই সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, প্রশাসকদের সময়ে সিটি করপোরেশনের স্থায়ী আয়ের পথগুলো দিন দিন সংকুচিত হয়েছে। বেশির ভাগ মার্কেটের ভাড়াই নিয়মিত তহবিলে জমা হয় না। কয়েক শ মামলা রয়েছে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। এসব মামলার মাধ্যমে নিয়মিত আয় আটকে গেছে।
আবার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় যেসব ভবন বা স্থাপনা হয়েছে, সেখানেও সিটি করপোরেশনকে ঠকানোর অভিযোগ রয়েছে।
গত ১৬ জুন সংসদীয় কমিটির সভায় কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটিতে বাজার ইজারার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮৮ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১৯৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ লাখ, এক টাকাও আদায় হয়নি।
সভাপতি আরও বলেন, নগর অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ১৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এ কাজের মাত্র ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না।
খোকার সময়ে অনিয়ম তদন্তে কমিটি: সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময়কালে যেসব অনিয়ম হয়েছে, সেগুলো তদন্তে কমিটি হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেনের নেতৃত্বে। আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সাদেক হোসেন খোকার সময়ে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। তদন্তকাজ কিছু শেষ হয়েছে, কিছু আটকে আছে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় ২০০৭ সালে। এরপর আট বছর কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০১১ সালের নভেম্বরে ঢাকা সিটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। তখন থেকে দুই সিটিতে নির্বাচিত মেয়রের পরিবর্তে সরকার-নিয়োজিত প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে উত্তর সিটিতে আনিসুল হক ও দক্ষিণ সিটিতে সাঈদ খোকন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দায়দেনায় ডুবে থাকার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, টাকা না থাকলেও আগাম প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় সরকারের এই বিশাল প্রতিষ্ঠানটি পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। এই সিটি করপোরেশনে প্রশাসকদের সময় প্রায় ২০০ কোটি টাকার আগাম প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে একজন প্রশাসকের সময়েই রাস্তাঘাটসহ উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার।
এই আগাম প্রকল্প নেওয়ার সূত্র ধরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসকদের সময়ে আর্থিক অনিয়ম হওয়ার তথ্য-প্রমাণ খোঁজার দাবি ওঠে। একই সঙ্গে দুই সিটি করপোরেশনে আয় অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। প্রশাসকেরা দায়িত্ব নেওয়ার আগে সর্বশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময়কালও বাদ যাচ্ছে না এই খোঁজাখুঁজি থেকে।
গত ২২ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রতি কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার সময় ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, স্থায়ী কমিটির গত বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের ওপর একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, সেখানে অনেক বিষয়ে লক্ষ্য অর্জন হয়নি। এরপর ঢাকা দক্ষিণের বিষয়েও অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গগুলো তুলে ধরেন কমিটির কয়েকজন সদস্য। কমিটির পরামর্শে স্থানীয় সরকার বিভাগ এসব কমিটি করেছে।
দুই সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করে জানা যায়, তদন্ত কমিটিগুলোর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে করপোরেশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সর্বশেষ সভা হয় গত ১৬ জুন। কমিটির সুপারিশ আনুষ্ঠানিকভাবে আসার আগেই ২২ জুন তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এতে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম চিহ্নিত করতে বলা হয়। এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, দুই সিটিতে অনিয়ম বেড়ে যাওয়া ও আয় কমে যাওয়ার বিষয়গুলো মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, তহবিলে টাকা না থাকলেও প্রকল্প নেওয়া এবং সেই টাকার দায় এখনকার সিটি প্রশাসনের ওপর চেপে বসা।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দুই সিটি করপোরেশনে দুর্নীতি ও অনিয়ম যে হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এগুলো চিহ্নিত করাও কঠিন কাজ নয়। কিন্তু এখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টি মুখ্য। কারণ, এসব দুর্নীতির সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্র রয়েছে। প্রশাসকদের মধ্যে কেউ কেউ যেমন জড়িত ছিলেন, তেমনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ঠিকাদারেরাও ছিলেন এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে।
দৃষ্টান্ত হিসেবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, সাবেক প্রশাসক খলিলুর রহমান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় পড়েছেন নীলক্ষেতের একটি মার্কেট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু এর পেছনে এক তরুণ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা আছেন, যিনি হয়তো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবেন। কারণ, কাগজে-কলমে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারসচিব জানান, প্রশাসনিক তদন্ত করে যেসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে, তা স্থায়ী কমিটিকে জানানো হবে। এরপর প্রশাসনিক ব্যবস্থা বা প্রয়োজনে দুদককে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।
প্রশাসকদের অনিয়ম তদন্তে কমিটি: দুই সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৪ জন প্রশাসক। ঢাকা দক্ষিণে প্রশাসক ছিলেন খলিলুর রহমান, জিল্লার রহমান, নজরুল ইসলাম, নজমুল ইসলাম, মো. আলমগীর, ইব্রাহিম হোসেন খান ও শওকত মোস্তফা। ঢাকা উত্তরে প্রশাসকদের মধ্যে ছিলেন খোরশেদ আলম চৌধুরী, শাহজাহান আলী মোল্লা, মো. রেজা খান, মো. আক্তার হোসেন ভূঁইয়া, ফারুক জলিল, রাখাল চন্দ্র বর্মণ প্রমুখ।
গত প্রায় আড়াই বছরে এসব প্রশাসক দায়িত্ব পালনের সময় কী ধরনের অনিয়ম হয়েছে, তা তদন্ত করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে বেশ কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। এসব তথ্য পাওয়ার পর তাঁরা দুই করপোরেশনে যাবেন বলে কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অনিয়ম হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সেখানে দায়িত্ব পাওয়া বেশির ভাগ প্রশাসকের বিরুদ্ধে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ আছে। ওই সিটিতে তহবিল না থাকলেও প্রায় ২০০ কোটি টাকার আগাম প্রকল্প নেওয়া হয়। এমনকি কাজ না করে বিল নেওয়া, রাস্তা ঠিক থাকলেও খারাপ দেখিয়ে প্রকল্প নেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে, যেগুলো খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি সূত্র জানায়, অপরিকল্পিত ও অস্বচ্ছ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়ার কারণে গত জানুয়ারিতে মন্ত্রণালয় থেকে এই সিটি করপোরেশনকে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে বলা হয়েছিল।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণে প্রশাসক বা প্রকৌশলীদের অনেকেই কমিশন হিসেবে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। এরপর রাজনৈতিক প্রভাবশালী ঠিকাদার কাজ করা ও বিল আদায়ের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ঠিকাদারদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন শ কোটি টাকা। নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর ৭০ কোটি টাকা দিতে পেরেছেন। বাকি টাকা এখন পর্যন্ত পাওনা রয়েছে। কোথা থেকে এই টাকা শোধ করা হবে, তা মেয়র সাঈদ খোকনও জানেন না।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মো. জিল্লার রহমান প্রশাসক থাকার সময় প্রায় ১৫০ কোটি টাকার আগাম প্রকল্প নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের দৃষ্টি এখন ওই সব প্রকল্প ঘিরে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এসব প্রকল্প নিয়ে একটি চক্র আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ও সাবেক প্রশাসক জিল্লার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টি বা অন্যান্য কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট নির্মাণে প্রকৌশলীরা প্রকল্প নিয়ে এসেছেন। আমি কাউকে প্রকল্প তৈরি করতে বলিনি। কাউকে দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ দিতে লিখিত বা মৌখিক নির্দেশ দিইনি। আর কয়টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবং কত টাকার সংশ্লিষ্টতা, তা এত দিন পর মনে নেই।’
প্রকল্প গ্রহণ করা কোনো অপরাধ নয় উল্লেখ করে জিল্লার রহমান বলেন, তবে তহবিলের সংকট থাকলে প্রকল্প গ্রহণ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।
ওই সিটিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার আগাম প্রকল্প নেওয়া হয় অন্য প্রশাসকদের সময়ে। এর মধ্যে ইব্রাহিম হোসেন খানের সময়ে বেশ কয়েকটি আগ্রাম প্রকল্প নেওয়া হয়। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ চলার সময় রাস্তাঘাট খারাপ হওয়ায় সেখানে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আগাম ও জরুরি খরচ হয়েছে কয়েকজন প্রশাসকের সময়ে।
উত্তর সিটিতে অবশ্য আগাম প্রকল্প নেওয়ার অভিযোগ কম। সেখানে লুটপাট হয়েছে মার্কেট বরাদ্দ, সিটি করপোরেশনের জায়গা বরাদ্দ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্ব চুক্তি করে সিটি করপোরেশনকে ঠকিয়ে কমিশন নেওয়ার মাধ্যমে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন সাবেক প্রশাসক বলেন, তাঁরা ১৮০ দিনের জন্য সেখানে গেছেন। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনে প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও পদস্থ কিছু কর্মকর্তা মিলে যে চক্র আগে থেকে তৈরি হয়ে ছিল, সেখানে এই স্বল্প সময়ে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া, যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, তার সঙ্গে সরকারি দল বা এর অঙ্গসংগঠনের প্রভাবশালী কিছু নেতা জড়িত ছিলেন।
স্থানীয় সরকারসচিব বলেন, যেভাবেই অনিয়ম হোক, তার তথ্য-প্রমাণ থাকবে এবং আছে। সময়সাপেক্ষ হলেও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা কঠিন বিষয় নয়।
আয়ের লক্ষ্য অর্জন না হওয়ায় তদন্ত কমিটি: কয়েক বছর ধরেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে কর আদায়ের লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না। বিশেষ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বিষয়টি তদন্তের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব পরিমল কুমার দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার সময় ২০ কার্যদিবস।
প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, উত্তর সিটি করপোরেশনে যে টাকা আদায় হওয়ার কথা, তার অর্ধেক আদায় হয়েছে। আর দক্ষিণে মোট লক্ষ্যের এক-তৃতীয়াংশ আদায় হয়েছে।
জানতে চাইলে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণের যে আয়, তা দিয়ে নগর ভবনের ব্যয়, বেতন-ভাতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও নির্দিষ্ট খরচগুলো মেটানো সম্ভব। কিন্তু উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করার মতো তহবিল নেই। তাই জরুরি প্রয়োজনে উন্নয়নকাজ করতে গেলেও ঘাটতি পড়বে। আর বাড়তি খরচ করলে তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবেই।
দুই সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, প্রশাসকদের সময়ে সিটি করপোরেশনের স্থায়ী আয়ের পথগুলো দিন দিন সংকুচিত হয়েছে। বেশির ভাগ মার্কেটের ভাড়াই নিয়মিত তহবিলে জমা হয় না। কয়েক শ মামলা রয়েছে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। এসব মামলার মাধ্যমে নিয়মিত আয় আটকে গেছে।
আবার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় যেসব ভবন বা স্থাপনা হয়েছে, সেখানেও সিটি করপোরেশনকে ঠকানোর অভিযোগ রয়েছে।
গত ১৬ জুন সংসদীয় কমিটির সভায় কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটিতে বাজার ইজারার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮৮ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১৯৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ লাখ, এক টাকাও আদায় হয়নি।
সভাপতি আরও বলেন, নগর অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ১৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এ কাজের মাত্র ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না।
খোকার সময়ে অনিয়ম তদন্তে কমিটি: সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময়কালে যেসব অনিয়ম হয়েছে, সেগুলো তদন্তে কমিটি হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেনের নেতৃত্বে। আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সাদেক হোসেন খোকার সময়ে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। তদন্তকাজ কিছু শেষ হয়েছে, কিছু আটকে আছে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় ২০০৭ সালে। এরপর আট বছর কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০১১ সালের নভেম্বরে ঢাকা সিটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। তখন থেকে দুই সিটিতে নির্বাচিত মেয়রের পরিবর্তে সরকার-নিয়োজিত প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে উত্তর সিটিতে আনিসুল হক ও দক্ষিণ সিটিতে সাঈদ খোকন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
No comments