বের হওয়ার আগে অভি বলেছিল- মা তোমার জন্য পুত্রবধূ আনতে যাচ্ছি by রুদ্র মিজান
‘সরি
মা, আমাকে মাফ করে দিও। আমি তোমাকে আর জ্বালাবো না।’ দু’দিন আগে মাকে
জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলেছিল হাসপাতালের শয্যায় থাকা সানজিদ হাসান অভি। অজানা
আশঙ্কায় মা নূরজাহান বেগমের বুকটা কেঁপে উঠেছিল তখন। অশ্রুসিক্ত হয় দু’চোখ।
তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কেন বাবা, তুমিতো কোন অপরাধ করনি। তুমি সরি বলছো
কেন? তুমিতো অনেক ভাল ছেলে। তোমাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। তুমি অনেক বড়
আইনজীবী হবে। কোন চিন্তা করো না, শিগগিরই সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু তার আর
সুস্থ হয়ে ওঠা হয়নি। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে বুধবার রাত ১টায় না
ফেরার দেশে চলে গেছে কবি নজরুল সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর এই ছাত্র। গত
১৪ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় বঙ্গবাজার এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয় সে। ওই
রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ককটেল বিস্ফোরণে তার
বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায়। মাথা, মুখে, গলায় ক্ষত চিহ্নের সৃষ্টি হয়। অভির মা
নূরজাহান বেগম জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর প্রায়ই অস্বাভাকি আচরণ করতো অভি।
হাঁটার মতো শক্তি নেই তার। তবু বিছানা থেকে উঠে হাঁটতে চাইতো। সে নিজেই
খুলে ফেলেছিল গালের সেলাই। বাধ্য হয়ে চিকিৎসকরা তার দু’হাত বেঁধে চিকিৎসা
সেবা দিচ্ছিলেন। ওই অবস্থাতেই অভি বলতো, মা যন্ত্রণায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
আমাকে পানি দাও। কখনো কখনো প্রবলভাবে মায়ের আদর চাইতো সে। বলতো, মা- আমাকে
চুমু দাও। আমাকে জড়িয়ে ধরো। আমার খুব খারাপ লাগছে। পৃথিবীতে এতো কষ্ট কেন
মা, আমাকে ওরা মারলো কেন, আমি কি অপরাধ করেছি? নির্বাক নূরজাহান বেগম কোন
জবাব দিতে পারতেন না। চোখ দিয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়তো তার। বৃহস্পতিবার অভির
লাশ নিতে এসে ঢামেক হাসপাতাল মর্গের পাশে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নূরজাহান
বেগম। তিনি বলেন, অভির স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সে আইনজীবী হবে। সিদ্ধ ডিম
বিক্রেতা অভির পিতা দেলোয়ার হোসেন অনেক কষ্টে ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন।
কিন্তু তাদের সকল স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তদের ছোড়া একটি ককটেল। ককটেল
বিস্ফোরণে আহত হওয়ার দিন নূরজাহান বেগমের মনটা কেন যেন ছটফট করছিল। সেদিন
দুপুরে তিনি কিছুই খাননি। অভি বলেছিল, মা তুমি খাচ্ছো না কেন? ভাত খেতে না
চাইলে রুটি খাও, আমি ভাত খাবো। ওইদিন বাসা থেকে বের হওয়ার আগে দুষ্টুমি করে
সে বলেছিল, মা- তোমার জন্য পুত্রবধূ আনতে যাচ্ছি।
নূরজাহান বলেছিলেন, বাবা কি বলো এইসব? দুষ্টুমি করলাম- জানিয়ে অভি বলেছিল, তোমার জন্য গ্রামের একটা মেয়েকে বউ বানাবো। যেন তোমার অনেক যত্ন করে। আমার লেখাপড়া শেষ হলে তোমাকে কোন কষ্ট করতে দেবো না। তোমার কোন অভাব থাকবে না। নূরজাহান বেগম বলেন, আমাকে স্বপ্ন দেখানো ছেলেটা এখন কোথায় গেল। আমরা গরিব মানুষ। খেয়ে না খেয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। সেই ছেলেকে ওরা মেরে ফেললো কেন? আমার ছেলেকে কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে? স্বজনরা জানান, ককটেল বিস্ফোরণে অভি আহত হওয়ার এক সপ্তাহ আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় আহত হন তার পিতা দেলোয়ার হোসেন। তিন মাস আগে প্রসবজনিত কারণে সন্তান রেখে মারা যায় অভির বোন সালমা। বৃহস্পতিবার ছেলের লাশ দেখতে হাসপাতালে গিয়ে আর্তনাদ করেন তিনি। দেলোয়ার হোসেন বলেন, পিতা হয়ে ছেলের ক্ষতবিক্ষত মরা মুখ আমাকে দেখতে হলো। আমি এক হতভাগা পিতা। অভির খালু হৃদয় হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে এই অবস্থা চলতে পারে না। এভাবে চললে আরও অনেক অভিকে জীবন দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা সংলাপে বসুন। আপনারা সমাধান করুন। আর কোন অভি যেন এভাবে মারা না যায়। আমাদের শান্তিতে বাঁচতে দিন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান অভি রমনা রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৩.৭৩ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। তার সহপাঠী বন্ধু শোভন জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কোচিং শেষ করে বাংলাবাজারের ১০ নং কুঞ্জ বাবু লেনের বাসায় যাচ্ছিল অভি ও মুহাম্মদ সজীব। ফুলবাড়ীয়া রোডের এনেক্স ভবনের সামনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া ককটেলে তারা দু’জনেই আহত হয়। তবে সজীবের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার অভির মৃত্যুর খবর পেয়ে কলেজের শিক্ষক, সহপাঠীরা ভিড় করেন ঢামেক হাসপাতালের মর্গে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় কবি নজরুল সরকারি কলেজে। নিহতের লাশ তার প্রিয় ক্যাম্পাসে পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের জন্ম হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন তার শিক্ষক ও সহপাঠীরা। কলেজ ক্যাম্পাসে নিহতের প্রথম নামাজে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার আটপাড়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়। স্বজনরা জানান, দেলোয়ার হোসেন ও নূরজাহান বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে অভি ছিল মেজো। এখন দেড় বছরের সানজুই তাদের একমাত্র আদরের ধন। অভির মা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক পরিচ্ছন্ন কর্মী। এছাড়া তিনি মহিলা লীগের ঢাকা মহানগরের একজন সদস্য।
নূরজাহান বলেছিলেন, বাবা কি বলো এইসব? দুষ্টুমি করলাম- জানিয়ে অভি বলেছিল, তোমার জন্য গ্রামের একটা মেয়েকে বউ বানাবো। যেন তোমার অনেক যত্ন করে। আমার লেখাপড়া শেষ হলে তোমাকে কোন কষ্ট করতে দেবো না। তোমার কোন অভাব থাকবে না। নূরজাহান বেগম বলেন, আমাকে স্বপ্ন দেখানো ছেলেটা এখন কোথায় গেল। আমরা গরিব মানুষ। খেয়ে না খেয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। সেই ছেলেকে ওরা মেরে ফেললো কেন? আমার ছেলেকে কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে? স্বজনরা জানান, ককটেল বিস্ফোরণে অভি আহত হওয়ার এক সপ্তাহ আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় আহত হন তার পিতা দেলোয়ার হোসেন। তিন মাস আগে প্রসবজনিত কারণে সন্তান রেখে মারা যায় অভির বোন সালমা। বৃহস্পতিবার ছেলের লাশ দেখতে হাসপাতালে গিয়ে আর্তনাদ করেন তিনি। দেলোয়ার হোসেন বলেন, পিতা হয়ে ছেলের ক্ষতবিক্ষত মরা মুখ আমাকে দেখতে হলো। আমি এক হতভাগা পিতা। অভির খালু হৃদয় হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে এই অবস্থা চলতে পারে না। এভাবে চললে আরও অনেক অভিকে জীবন দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা সংলাপে বসুন। আপনারা সমাধান করুন। আর কোন অভি যেন এভাবে মারা না যায়। আমাদের শান্তিতে বাঁচতে দিন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান অভি রমনা রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৩.৭৩ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। তার সহপাঠী বন্ধু শোভন জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কোচিং শেষ করে বাংলাবাজারের ১০ নং কুঞ্জ বাবু লেনের বাসায় যাচ্ছিল অভি ও মুহাম্মদ সজীব। ফুলবাড়ীয়া রোডের এনেক্স ভবনের সামনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া ককটেলে তারা দু’জনেই আহত হয়। তবে সজীবের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার অভির মৃত্যুর খবর পেয়ে কলেজের শিক্ষক, সহপাঠীরা ভিড় করেন ঢামেক হাসপাতালের মর্গে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় কবি নজরুল সরকারি কলেজে। নিহতের লাশ তার প্রিয় ক্যাম্পাসে পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের জন্ম হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন তার শিক্ষক ও সহপাঠীরা। কলেজ ক্যাম্পাসে নিহতের প্রথম নামাজে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার আটপাড়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়। স্বজনরা জানান, দেলোয়ার হোসেন ও নূরজাহান বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে অভি ছিল মেজো। এখন দেড় বছরের সানজুই তাদের একমাত্র আদরের ধন। অভির মা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক পরিচ্ছন্ন কর্মী। এছাড়া তিনি মহিলা লীগের ঢাকা মহানগরের একজন সদস্য।
No comments