৬৫ বন্দীকে মুক্তি দিল আফগান সরকার
যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করে বাগরাম কারাগার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ৬৫ তালেবান সদস্যকে মুক্তি দিয়েছে আফগানিস্তান সরকার। হামিদ কারজাই সরকারের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে বারাক ওবামা প্রশাসন। কারাবন্দীদের মুক্তি দেওয়ার পক্ষে আফগান সরকারের যুক্তি হলো, ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ওই বন্দীরা আফগান বেসামরিক নাগরিক ও ন্যাটো বাহিনীর ওপর হামলার জন্য দায়ী। মার্কিন বাহিনী গত বছর বাগরাম কারাগারের নিয়ন্ত্রণ আফগান সরকারের হাতে ছেড়ে দেয়। আফগান সরকারের কর্মকর্তা আবদুল শুকুর দাদরাস জানান, বাগরাম কারাগার থেকে ৬৫ জন বন্দীকে বৃহস্পতিবার সকালে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সামরিক পুলিশের প্রধান লে. জেনারেল গোলাম ফারুকও বন্দীদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আফগানিস্তানে মার্কিন দূতাবাস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাগরাম কারাগার থেকে ৬৫ বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা সাংঘাতিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আফগান আইনে তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা আফগান সরকারকে অনুরোধ করব, প্রতিটি ব্যক্তির অপরাধ পর্যালোচনা করে দেখা...আফগান সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার দায়ভার আফগান সরকারকেই বহন করতে হবে।’ বাগরাম থেকে গতকালই মুক্তি পাওয়া ১৬ বছর বয়সী কিশোর মুহিবুল্লাহ জানায়, সে এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্দী ছিল।
হেলমান্দ প্রদেশে বাসিন্দা মুহিবুল্লাহ পরিবারের সঙ্গে কৃষিকাজ করত। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই তাকে আটক করা হয়। মুক্তি পাওয়ার পর ক্ষুব্ধ কণ্ঠে মুহিবুল্লাহ বলে, ‘আমাদের সম্পর্কে কেউ কিছু জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেনি। আমি এক বছর মা-বাবাকে ছেড়ে দূরে থাকলাম। কেন? আমার অপরাধ কী?’ এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, বাগরাম থেকে মুক্তি পেলে ওই ব্যক্তিরা আবার ন্যাটো ও আফগান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে পারে। তবে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ওই কারাগারকে ‘তালেবান উৎপাদনের কারখানা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ওই কারাগারে কয়েকজন বন্দীকে এত নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে যে তারা এখন নিজের দেশকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে। মার্কিন আপত্তি উপেক্ষা করে ৬৫ জনকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি আফগান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চলমান তিক্ততাকে আরও তীব্র করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর পর মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে অভিযান চালায়। এর পর থেকেই তালেবানসহ কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে যুক্তরাষ্ট্র। এএফপি ও বিবিসি।
No comments