মসনদ ছাড়লেন আম আদমির নেতা
তিনি কথা দিয়েছিলেন, জন লোকপাল বিল পাস করাতে না পারলে পদত্যাগ করবেন। কথা রাখলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বিল পাস করানো তো দূরের কথা, বিল পেশ করতে ব্যর্থ হয়ে মাত্র ৪৮ দিন ক্ষমতায় থেকে দিল্লির মসনদ ছেড়ে দিলেন আম আদমি পার্টির (এএপি) মুখ্যমন্ত্রী। জন লোকপাল বিল উত্থাপন নিয়ে গতকাল দিনভর উত্তাল ছিল দিল্লি বিধানসভা। পরে সন্ধ্যায় এএপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ইস্তফার ঘোষণা দেন কেজরিওয়াল।
এর ফলে দিল্লি বিধানসভায় বিকল্প সরকার গঠনের সম্ভাবনা এখন প্রায় রইলই না। লোকসভার নির্বাচনের সঙ্গেই এখন দিল্লির বিধানসভার ভোট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তত দিন দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি থাকবে। কেজরিওয়ালের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর কংগ্রেস থেকে বলা হচ্ছে, এএপি সরকারের ওপর থেকে তারা সমর্থন প্রত্যাহার করেনি, বরং কেজরিওয়াল সরকার চালাতে ব্যর্থ হয়ে জন লোকপাল বিলকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সরে দাঁড়ালেন। একই অভিমত বিজেপির। দুই দলই বলছে, তারা জন লোকপালের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু আইন ও প্রথার বাইরে গিয়ে তাঁরা বিল পাস করানোর শরিক হতে পারবে না। জন লোকপাল বিলকে কেন্দ্র করে দিল্লিতে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট যে সৃষ্টি হতে চলেছে, তার স্পষ্ট আভাস মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই বিল পাস না হলে তিনি সরকার ভেঙে দেবেন। শুক্রবার দিনভর নাটকীয়তার পর বিরোধীদের আপত্তি উপেক্ষা করে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জন লোকপাল বিলটি বিধানসভায় পেশ করার দাবি জানালেও শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে দেখা যায়, অধিকাংশই বিল পেশের বিরুদ্ধে। স্পিকারও বিল পেশ হয়নি বলে রুলিং দেন। এই বিলকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে শুক্রবার সকালেই স্পিকার এম এস ধীরকে চিঠি লেখেন দিল্লির উপরাজ্যপাল নাজিব জং।
চিঠিতে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় অনুমতি যেহেতু নেওয়া হয়নি, সেহেতু বিলটি অসাংবিধানিক। সভার শুরুতেই সেই চিঠি পাঠের জন্য বিজেপি ও কংগ্রেস একযোগে দাবি জানাতে থাকে। সভা মুলতবি করে দিয়ে স্পিকার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। আধঘণ্টা পর সভা শুরু হলে স্পিকার চিঠিটি পাঠ করেন। এএপি সেই চিঠি নিয়ে আলোচনার দাবি জানাতে থাকেন। সেই গোলমালের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বিলটি পেশ করেছেন বলে দাবি জানান। সভাও দ্বিতীয়বারের জন্য মুলতবি করে দেওয়া হয়। আধঘণ্টা পর আবার সভা শুরু হলে বিল পেশ ও বিলসংক্রান্ত আইনি জটিলতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিল উত্থাপিত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে স্পিকার সদস্যদের মত জানতে চান। ২৭ জন বিলের পক্ষে থাকলেও ৪২ জন বিরোধী আপত্তি জানানোয় বিলটি উত্থাপনই হয়নি বলে স্পিকার রুলিং দেন। এর পরেই সাসপেন্স শুরু। তীব্র গোলমালের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন, ইস্তফাই একমাত্র পথ। কংগ্রেস ও বিজেপিকে তিনি শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির কৃপাধন্য বলে অভিযুক্ত করেন। বলেন, আম্বানিদের কাছ থেকে এই দুই দলই টাকা পায়। সেই আম্বানির বিরুদ্ধে তাঁর সরকার মামলা করেছে বলে দুই দল জোট বেঁধে বিলের বিরোধিতা করছে। এটাই যে সরকারের শেষ দিন, তাও বুঝিয়ে দেন। তারপর দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি দলীয় অফিসের বারান্দা থেকে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। ভাষণে দিল্লির উপরাজ্যপালকেও তিনি আম্বানির কাছের লোক বলে অভিহিত করেন।
No comments