দশম নয়, নবম সংসদ ভেঙেই সংকট সমাধান সম্ভব by ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিরোধী দলের উদ্দেশে বলেছেন, সমঝোতা হলে দশম সংসদ
ভেঙে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। অতি সম্প্রতি তিনি আরও বলেছেন,
‘খালি মাঠ। খেলোয়াড় নেই। তাহলে খালি মাঠে অরক্ষিত গোলমুখে গোল তো হবেই।’
প্রধানমন্ত্রীর অতি কথনের সুনাম আছে। তবে এসব কথার ফাঁকে মাঝে মাঝে সত্যি
প্রকাশ পায়। আনন্দের বিষয় যে, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি কঠিন বাস্তবতাকে
উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এদেশের নব্বই ভাগ মানুষ কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দাবি করেছিল, আজ তা দিবালোকের মতো
পরিষ্কার হয়ে গেছে। অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, দলীয় সরকারের অধীনে দেশে
নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। বাস্তবে
দেখা যাচ্ছে, জনগণের এই ভবিষ্যদ্বাণী শুধু সত্য প্রমাণিত হয়নি, বরং তা
অতিক্রম করে আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোটারবিহীন এবং প্রার্থীবিহীন
একটি প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।
গণতন্ত্রের ইতিহাসে আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি হাস্যাস্পদ, অগ্রহণযোগ্য এবং নজিরবিহীন প্রহসনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সরকার গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের জন্য ভোটযুদ্ধ হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, দশম সংসদে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ১৫৪ আসনে ভোট ছাড়াই সংসদ সদস্যরা জয়লাভ করেছেন। তাই অবশিষ্ট ১৪৬টি আসনের পাতানো নির্বাচন হয়ে পড়েছে অর্থহীন। সে কারণেই সারা দেশে নেই কোনো নির্বাচনী তৎপরতা বা ভোটারদের মধ্যে কোনো প্রাণচাঞ্চল্য। অথচ আমাদের দেশেই অতীতে সব দলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়েছে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ শিক্ষা-দীক্ষায় কিছুটা অনগ্রসর হলেও ভোটের অধিকারের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ও স্পর্শকাতর। দলীয় সরকারের অধীনে আমাদের দেশে এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচন হবে বুঝতে পেরেই দেশের জনগণ ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দুই বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। পূর্বপরিকল্পিত একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের জনগণের এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া দেখে সরকারদলীয় নেতারা লজ্জিত হওয়ার কথা। গণতন্ত্রের প্রতি সামান্য শ্রদ্ধাবোধ থাকলে সরকারদলীয় নেতারা এই প্রহসনের নির্বাচন নিয়ে এত তর্জন-গর্জন করতেন না। বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দল এ প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করায় ১৫৪ আসনে আর কোনো নির্বাচনপ্রত্যাশী ব্যক্তি প্রার্থী হতে যাননি। এমনকি মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। যার জন্য সরকার তাকে অত্যন্ত কদর্যভাবে টানাহেঁচড়া করতে ছাড়েননি। সরকারি এজেন্সির পাহারায় এরশাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তির রহস্য এখনও সবার কাছে অজানা। রাজনীতির বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে এত নাটক, এত জোরজবরদস্তি বিশ্বে নজিরবিহীন। রওশন এরশাদকে জিম্মি করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মাঠে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা জনমনে কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। তারপরও ১৫৪ আসন প্রার্থীশূন্য। ১৮ দল ছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম এবং আ স ম আবদুর রব প্রমুখ নেতার দলসহ নিবন্ধিত বহু দল নির্বাচন বর্জন করছে। তারপরও কোন অদৃশ্য কারণে অবশিষ্ট ১৪৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কোমর বেঁধে নেমেছে, তা দেশ ও বিদেশের পর্যবেক্ষক মহল বিস্ময়ের সঙ্গে অবলোকন করছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশ, অবশিষ্ট ১৪৬টি আসনের অর্ধেকের বেশি আসনে প্রতিযোগিতা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে। বাকি আসনে মহাজোটের অংশীদার কোনো ছোট দল বা অখ্যাত কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, নির্বাচনের মাঠ খেলোয়াড়শূন্য। এই খেলায় নির্বাচন কমিশন নামক রেফারির প্রয়োজন নেই। তারপরও নির্বাচন কমিশন বর্তমান সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে একটি পক্ষের নীলনকশা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সবই করছে। বিরোধী দলের জোরালো দাবি উপেক্ষা করে আরপিও প্রণয়নকালে নির্বাচন সময়ে আইন-শৃংখলা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে বাদ দিয়েছিল, সেই নির্বাচন কমিশন এখন প্রার্থীবিহীন, ভোটারবিহীন ও বিতর্কিত প্রহসনের নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করছে। সরকার গঠনের জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন তা তো ইতোমধ্যে ভোট ছাড়াই অর্জিত হয়েছে। নিজেদের মধ্যে পাতানো, অপ্রয়োজনীয় এবং প্রতিযোগিতাহীন ১৪৬টি আসনে লোকদেখানো প্রহসনের এই নির্বাচন কি আর প্রয়োজন আছে? হয়তো নিয়ম রক্ষার্থে এই খেলার সমাপ্তি ঘটাতে হবে। কিন্তু এই অপ্রয়োজনীয় পাতানো খেলার সমাপ্তি ঘটাতে গিয়ে বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতন, বিরোধী দল দমন ও আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের কফিনে সর্বশেষ পেরেকটি স্থাপনের ঝুঁকি গ্রহণ করা হল।
এ ধরনের একটি পাতানো নির্বাচন যে গ্রহণযোগ্য হবে না তা প্রধানমন্ত্রীর ‘দশম সংসদ ভেঙে দিয়ে একাদশ নির্বাচন’ সংক্রান্ত মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়েছে। দেশের জনগণ যে এই প্রহসনের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আন্তর্জাতিকভাবেও যে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না তাও আগাম জানা গেছে। আসন্ন এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে বাংলাদেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কমনওয়েলথ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যে চীন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করে না, সে দেশের পক্ষ থেকেও তাদের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। এমনকি দেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অন্যদিকে দশম নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বিরোধী দলের লাগাতার আন্দোলনে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত, জননিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন এবং রাষ্ট্রযন্ত্র আজ জনগণের মুখোমুখি। দেশের জনগণ এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। দেশ অগ্রসর হচ্ছে এক অনিশ্চিত অন্ধকার টানেলের পথে। দশম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার থেকে মানুষ মুক্তি চায়।
বিদ্যমান সংকট সমাধানে সমঝোতা হলে দশম সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি সত্যিকারভাবে আন্তরিক হন তাহলে দশম কেন, নবম সংসদ ভেঙে দিয়েই তা সম্ভব। নবম জাতীয় সংসদ এখনও বহাল আছে। ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান নবম সংসদের মেয়াদ রয়েছে। সরকার পক্ষ সংশোধিত সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারার (ক) উপধারা মোতাবেক ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু বর্তমান সংশোধিত সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারার (খ) উপধারায় যে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা সরকার তার নিজস্ব স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নিশ্চুপ রয়েছে। এই উপধারায় উল্লেখ আছে যে, ‘(খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ এই উপধারায় কখন সংসদ ভাঙা যাবে তার কোনো সময়কাল নির্ধারণ করা হয়নি। অর্থাৎ মেয়াদকালে যে কোনো সময় সংসদ ভেঙে দেয়ার বিধান উল্লিখিত উপধারায় রয়েছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে- (খ) উপধারায় যে ‘অন্য কোন কারণ’ উল্লেখ আছে তা তৈরি হয়েছে কিনা? আসন্ন দশম সংসদ নিবাচনে ১৫৪ জন ভোটবিহীন নির্বাচিত হওয়া, অবশিষ্ট ১৪৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের কারণে জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা এবং জাতীয় অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতিসহ বহুবিধ সংকট সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে সংবিধানে ১২৩ (৩) এর (খ) উপধারা প্রয়োগের যথেষ্ট কারণ সৃষ্টি হয়েছে বলে দেশের বিবেকবান মানুষ মনে করেন। এমতাবস্থায় বিদ্যমান নবম সংসদ ভেঙে দিয়ে বর্তমান সংশোধিত সংবিধান মেনেই পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। আসন্ন দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশ যে গভীর সংকটে নিপতিত হয়েছে তা থেকে মুক্তি পেতে হলে, সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে নির্বাচন-সংক্রান্ত একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতার বিকল্প নেই। আজ হোক বা দশম সংসদ নির্বাচনের পরে হোক, বর্তমান সংকটের সমাধান দেশের রাজনীতিবিদদেরই করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য এ ইঙ্গিতই বহন করে। প্রধানমন্ত্রী দশম সংসদ নির্বাচনের পর যদি এই সোনার হরিণ ‘সমঝোতা’ সম্ভব বলে মনে করেন, তাহলে সেই সমঝোতা এখনই হবে না কেন? দেশের অর্থনীতির স্বার্থে, জননিরাপত্তার বিবেচনায় এবং গণতন্ত্র রক্ষায় এখনই কাক্সিক্ষত সমঝোতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। সরকার যেভাবে ভোটারবিহীন ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে, সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনের পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আইন-শৃংখলার উন্নতি সম্ভব নয়।
যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে হলে যে তিনটি বিশেষ শর্ত পালন করতে হয়, তার একটিও পালন করা হচ্ছে না। প্রধান তিনটি শর্ত হল- ক) অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন খ) সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃত দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং গ) ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক নিশ্চিত করা। বলাই বাহুল্য, উপরোক্ত শর্তগুলো আসন্ন নির্বাচনে পূরণ হবে না বলে দশম সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। ১৫৪টি আসনে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণও এই নির্বাচনকে ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সবার প্রশ্ন, কেন এবং কার স্বার্থে আসন্ন অর্থহীন ও অগ্রহণযোগ্য এই নির্বাচন? শুধু ব্যক্তি, দল বা একটি গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল এবং স্পর্শকাতর অর্থনীতির দেশে এত বড় ঝুঁকি গ্রহণ করা কোনো মানদণ্ডেই সমীচীন নয়।
ধরে নেয়া যাক, বর্তমান সরকার তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক ভোটারবিহীন ও প্রার্থীবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল। যে সরকারের প্রতি জনসমর্থন নেই, যে সরকারকে জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি, যে সরকার দেশের নব্বই ভাগ মানুষের প্রত্যাশাকে পদদলিত করে ক্ষমতা দখল করেছে, সেই সরকারের কর্মকাণ্ডকে জনগণ কেন সহযোগিতা ও সমর্থন করবে? কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সরকার সফল হয়েছে বা চলতে পেরেছে এমন নজির কেউ দেখাতে পারবে না। এমন একটি অর্থহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে জনগণের কষ্টে অর্জিত অর্থ ব্যয় হবে, সামরিক বাহিনীসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীকে বিতর্কিত করা হবে এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার, মামলা ও হামলার শিকার হতে হবে। যার ফলে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির অপূরণীয় ক্ষতি হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। একটি অর্থহীন ও প্রহসনের নির্বাচনের জন্য দেশ ও জনগণের এত বড় বহুমাত্রিক ক্ষতি কোনো বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না।
এমতাবস্থায় জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষা, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্রমধারা রক্ষার লক্ষ্যে এখনই রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হয়ে নবম সংসদ ভেঙে দশম সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেই জাতিকে সর্বগ্রাসী সংকট থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে সরকারকেই অগ্রসর হতে হবে, উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং আন্তরিক হতে হবে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
গণতন্ত্রের ইতিহাসে আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি হাস্যাস্পদ, অগ্রহণযোগ্য এবং নজিরবিহীন প্রহসনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সরকার গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের জন্য ভোটযুদ্ধ হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, দশম সংসদে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ১৫৪ আসনে ভোট ছাড়াই সংসদ সদস্যরা জয়লাভ করেছেন। তাই অবশিষ্ট ১৪৬টি আসনের পাতানো নির্বাচন হয়ে পড়েছে অর্থহীন। সে কারণেই সারা দেশে নেই কোনো নির্বাচনী তৎপরতা বা ভোটারদের মধ্যে কোনো প্রাণচাঞ্চল্য। অথচ আমাদের দেশেই অতীতে সব দলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়েছে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ শিক্ষা-দীক্ষায় কিছুটা অনগ্রসর হলেও ভোটের অধিকারের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ও স্পর্শকাতর। দলীয় সরকারের অধীনে আমাদের দেশে এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচন হবে বুঝতে পেরেই দেশের জনগণ ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দুই বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। পূর্বপরিকল্পিত একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের জনগণের এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া দেখে সরকারদলীয় নেতারা লজ্জিত হওয়ার কথা। গণতন্ত্রের প্রতি সামান্য শ্রদ্ধাবোধ থাকলে সরকারদলীয় নেতারা এই প্রহসনের নির্বাচন নিয়ে এত তর্জন-গর্জন করতেন না। বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দল এ প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করায় ১৫৪ আসনে আর কোনো নির্বাচনপ্রত্যাশী ব্যক্তি প্রার্থী হতে যাননি। এমনকি মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। যার জন্য সরকার তাকে অত্যন্ত কদর্যভাবে টানাহেঁচড়া করতে ছাড়েননি। সরকারি এজেন্সির পাহারায় এরশাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তির রহস্য এখনও সবার কাছে অজানা। রাজনীতির বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে এত নাটক, এত জোরজবরদস্তি বিশ্বে নজিরবিহীন। রওশন এরশাদকে জিম্মি করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মাঠে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা জনমনে কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। তারপরও ১৫৪ আসন প্রার্থীশূন্য। ১৮ দল ছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম এবং আ স ম আবদুর রব প্রমুখ নেতার দলসহ নিবন্ধিত বহু দল নির্বাচন বর্জন করছে। তারপরও কোন অদৃশ্য কারণে অবশিষ্ট ১৪৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কোমর বেঁধে নেমেছে, তা দেশ ও বিদেশের পর্যবেক্ষক মহল বিস্ময়ের সঙ্গে অবলোকন করছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশ, অবশিষ্ট ১৪৬টি আসনের অর্ধেকের বেশি আসনে প্রতিযোগিতা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে। বাকি আসনে মহাজোটের অংশীদার কোনো ছোট দল বা অখ্যাত কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, নির্বাচনের মাঠ খেলোয়াড়শূন্য। এই খেলায় নির্বাচন কমিশন নামক রেফারির প্রয়োজন নেই। তারপরও নির্বাচন কমিশন বর্তমান সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে একটি পক্ষের নীলনকশা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সবই করছে। বিরোধী দলের জোরালো দাবি উপেক্ষা করে আরপিও প্রণয়নকালে নির্বাচন সময়ে আইন-শৃংখলা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে বাদ দিয়েছিল, সেই নির্বাচন কমিশন এখন প্রার্থীবিহীন, ভোটারবিহীন ও বিতর্কিত প্রহসনের নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করছে। সরকার গঠনের জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন তা তো ইতোমধ্যে ভোট ছাড়াই অর্জিত হয়েছে। নিজেদের মধ্যে পাতানো, অপ্রয়োজনীয় এবং প্রতিযোগিতাহীন ১৪৬টি আসনে লোকদেখানো প্রহসনের এই নির্বাচন কি আর প্রয়োজন আছে? হয়তো নিয়ম রক্ষার্থে এই খেলার সমাপ্তি ঘটাতে হবে। কিন্তু এই অপ্রয়োজনীয় পাতানো খেলার সমাপ্তি ঘটাতে গিয়ে বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতন, বিরোধী দল দমন ও আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের কফিনে সর্বশেষ পেরেকটি স্থাপনের ঝুঁকি গ্রহণ করা হল।
এ ধরনের একটি পাতানো নির্বাচন যে গ্রহণযোগ্য হবে না তা প্রধানমন্ত্রীর ‘দশম সংসদ ভেঙে দিয়ে একাদশ নির্বাচন’ সংক্রান্ত মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়েছে। দেশের জনগণ যে এই প্রহসনের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আন্তর্জাতিকভাবেও যে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না তাও আগাম জানা গেছে। আসন্ন এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে বাংলাদেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কমনওয়েলথ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যে চীন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করে না, সে দেশের পক্ষ থেকেও তাদের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। এমনকি দেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অন্যদিকে দশম নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বিরোধী দলের লাগাতার আন্দোলনে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত, জননিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন এবং রাষ্ট্রযন্ত্র আজ জনগণের মুখোমুখি। দেশের জনগণ এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। দেশ অগ্রসর হচ্ছে এক অনিশ্চিত অন্ধকার টানেলের পথে। দশম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার থেকে মানুষ মুক্তি চায়।
বিদ্যমান সংকট সমাধানে সমঝোতা হলে দশম সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি সত্যিকারভাবে আন্তরিক হন তাহলে দশম কেন, নবম সংসদ ভেঙে দিয়েই তা সম্ভব। নবম জাতীয় সংসদ এখনও বহাল আছে। ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান নবম সংসদের মেয়াদ রয়েছে। সরকার পক্ষ সংশোধিত সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারার (ক) উপধারা মোতাবেক ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু বর্তমান সংশোধিত সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারার (খ) উপধারায় যে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা সরকার তার নিজস্ব স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নিশ্চুপ রয়েছে। এই উপধারায় উল্লেখ আছে যে, ‘(খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ এই উপধারায় কখন সংসদ ভাঙা যাবে তার কোনো সময়কাল নির্ধারণ করা হয়নি। অর্থাৎ মেয়াদকালে যে কোনো সময় সংসদ ভেঙে দেয়ার বিধান উল্লিখিত উপধারায় রয়েছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে- (খ) উপধারায় যে ‘অন্য কোন কারণ’ উল্লেখ আছে তা তৈরি হয়েছে কিনা? আসন্ন দশম সংসদ নিবাচনে ১৫৪ জন ভোটবিহীন নির্বাচিত হওয়া, অবশিষ্ট ১৪৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের কারণে জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা এবং জাতীয় অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতিসহ বহুবিধ সংকট সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে সংবিধানে ১২৩ (৩) এর (খ) উপধারা প্রয়োগের যথেষ্ট কারণ সৃষ্টি হয়েছে বলে দেশের বিবেকবান মানুষ মনে করেন। এমতাবস্থায় বিদ্যমান নবম সংসদ ভেঙে দিয়ে বর্তমান সংশোধিত সংবিধান মেনেই পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। আসন্ন দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশ যে গভীর সংকটে নিপতিত হয়েছে তা থেকে মুক্তি পেতে হলে, সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে নির্বাচন-সংক্রান্ত একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতার বিকল্প নেই। আজ হোক বা দশম সংসদ নির্বাচনের পরে হোক, বর্তমান সংকটের সমাধান দেশের রাজনীতিবিদদেরই করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য এ ইঙ্গিতই বহন করে। প্রধানমন্ত্রী দশম সংসদ নির্বাচনের পর যদি এই সোনার হরিণ ‘সমঝোতা’ সম্ভব বলে মনে করেন, তাহলে সেই সমঝোতা এখনই হবে না কেন? দেশের অর্থনীতির স্বার্থে, জননিরাপত্তার বিবেচনায় এবং গণতন্ত্র রক্ষায় এখনই কাক্সিক্ষত সমঝোতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। সরকার যেভাবে ভোটারবিহীন ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে, সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনের পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আইন-শৃংখলার উন্নতি সম্ভব নয়।
যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে হলে যে তিনটি বিশেষ শর্ত পালন করতে হয়, তার একটিও পালন করা হচ্ছে না। প্রধান তিনটি শর্ত হল- ক) অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন খ) সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃত দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং গ) ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক নিশ্চিত করা। বলাই বাহুল্য, উপরোক্ত শর্তগুলো আসন্ন নির্বাচনে পূরণ হবে না বলে দশম সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। ১৫৪টি আসনে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণও এই নির্বাচনকে ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সবার প্রশ্ন, কেন এবং কার স্বার্থে আসন্ন অর্থহীন ও অগ্রহণযোগ্য এই নির্বাচন? শুধু ব্যক্তি, দল বা একটি গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল এবং স্পর্শকাতর অর্থনীতির দেশে এত বড় ঝুঁকি গ্রহণ করা কোনো মানদণ্ডেই সমীচীন নয়।
ধরে নেয়া যাক, বর্তমান সরকার তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক ভোটারবিহীন ও প্রার্থীবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল। যে সরকারের প্রতি জনসমর্থন নেই, যে সরকারকে জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি, যে সরকার দেশের নব্বই ভাগ মানুষের প্রত্যাশাকে পদদলিত করে ক্ষমতা দখল করেছে, সেই সরকারের কর্মকাণ্ডকে জনগণ কেন সহযোগিতা ও সমর্থন করবে? কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সরকার সফল হয়েছে বা চলতে পেরেছে এমন নজির কেউ দেখাতে পারবে না। এমন একটি অর্থহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে জনগণের কষ্টে অর্জিত অর্থ ব্যয় হবে, সামরিক বাহিনীসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীকে বিতর্কিত করা হবে এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার, মামলা ও হামলার শিকার হতে হবে। যার ফলে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির অপূরণীয় ক্ষতি হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। একটি অর্থহীন ও প্রহসনের নির্বাচনের জন্য দেশ ও জনগণের এত বড় বহুমাত্রিক ক্ষতি কোনো বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না।
এমতাবস্থায় জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষা, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্রমধারা রক্ষার লক্ষ্যে এখনই রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হয়ে নবম সংসদ ভেঙে দশম সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেই জাতিকে সর্বগ্রাসী সংকট থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে সরকারকেই অগ্রসর হতে হবে, উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং আন্তরিক হতে হবে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
No comments