জাবি ভিসির পদত্যাগই সমাধান by ড. শমছুল আলম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি
তুমুল আন্দোলন করছে। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির
বাধার মুখে গত ২১ জুন কর্তৃপক্ষ আহূত বার্ষিক সিনেট অধিবেশন পণ্ড হয়ে যায়।
উপাচার্যের আহবানে কিছুসংখ্যক সিনেট সদস্য ক্যাম্পাসে এসেছিলেন, কিন্তু
উপাচার্য তাদের নিয়ে সিনেট হলে প্রবেশ করতে পারেননি। এর আগে অধ্যাপক ড.
শরীফ এনামুল কবির উপাচার্য থাকাকালীন তৎকালীন শিক্ষক সমিতি অনুরূপ কর্মসূচি
পালন করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। ধারণা করি, দেশবাসী ওই সব আন্দোলনের
ঘটনাপ্রবাহ ভুলে যায়নি। অনেকের মনে হওয়া স্বাভাবিক, জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কী ঘটনা ঘটছে যে, কয়েক মাস পরপরই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে? উপাচার্য এখানে এমন কী কাজ করেন যে
তাকে সরিয়ে দিতে হবে? যারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, তাদের
কাছে এমন জিজ্ঞাসা স্বাভাবিক। আসলে এটা তো সত্য যে, একজন মানুষ ভালো কী
মন্দ, সে সম্পর্কে তার ঘরের মানুষ ও প্রতিবেশী ভালো বলতে পারেন। আমরা যারা এ
বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত, তারা নিশ্চয়ই ভালো বলতে পারি কোন উপাচার্য কেমন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের দায়িত্বহীন আচরণ এবং গোঁয়ার প্রকৃতির স্বভাবের জন্য ক্যাম্পাসে এখন অশান্তি ও অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার তিনি বিচার করেননি। ২০১২ সালের ১ ও ২ আগস্ট তার ভুল এবং ২০১৩ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি একজন ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ করে সংগঠিত নজিরবিহীন ভাংচুর, শিক্ষকদের গালাগাল দেয়া এবং আবাসিক এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির ঘটনার তিনি কোনো বিচার করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক, সামাজিক, একাডেমিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তিনি ভেঙে ফেলেছেন। একজন উপাচার্যের কাজ কী? একজন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণাকে এগিয়ে নেয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। তিনি নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষীয় সভা যেমন সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল এবং অন্যান্য শিক্ষা-গবেষণা সংশ্লিষ্ট পর্ষদের সভা করবেন। অনুষদ ও বিভাগগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখবেন। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের এসব দিকে কোনো খেয়াল নেই।
আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতি একাÍতা প্রকাশ করতে তিনি লাখ টাকারও বেশি ব্যয় করে বিজয় র্যালি নামে একটি শোভাযাত্রা নিয়ে স্মৃতিসৌধে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছেন। ডিসেম্বরে তিন লাখ টাকার অধিক ব্যয়ে বিজয় কনসার্ট করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম ফেলে রেখে তিনি দিনের পর দিন অনুষ্ঠানের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট ঘাটতির বিপরীতে তিনি একের পর এক অনুষ্ঠানের নামে টাকা অপচয় করে চলেছেন। টাকার অপ্রতুলতার জন্য শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ মোট বাজেটের এক শতাংশেরও কম। তিনি এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে নতুন কোনো থোক বরাদ্দ আনতে পারেননি। মাসিক ছাত্রবৃত্তি মাত্র ১২৫ টাকা। এ অবস্থার মধ্যেও তিনি অনুষ্ঠানের মতো অবস্তুগত খাতে ব্যয় করে চলছেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি বৃদ্ধি পায় শিক্ষা ও গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড দিয়ে। বিভাগগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমের অগ্রগতি ও তদারক কাজ এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। নিয়মিত একাডেমিক কাউন্সিল সভা এখন আর অনুষ্ঠিত হয় না। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি শিক্ষকদের আন্দোলন দমাতে আদালত এবং জলকামানের আয়োজন করেন। দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের মধ্যেই তিনি শিক্ষা সংকুচিত করেছেন। সাবেক উপাচার্য হলগুলোর আবাসিক সিটের বাইরেও অল্প পরিমাণ হলেও ছাত্রছাত্রী ভর্তি করিয়েছেন। সেখানে বর্তমান উপাচার্য মানসম্পন্ন শিক্ষার কথা বলে চারশর অধিক সিট কমিয়েছেন। এ কথা অনেকেই জানেন, বর্তমানে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র তিনিই নির্বাচিত উপাচার্য। কিন্তু অনেকেরই জানা নেই যে, তিনি মেয়াদ উত্তীর্ণ সিনেট সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ৩৩ ভোটের মধ্যে ১৩টি ছিল সিঙ্গেল ভোট। উপাচার্য প্যানলের জন্য একটি করে তিনজনকে পর্যন্ত ভোট দেয়া যায়Ñ এমন বিধান থাকলেও ধারণা করা হয় যে, সরকার মনোনীত সিনেট সদস্যরা শুধু অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে সিঙ্গেল ভোট দিয়েছেন। অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র বা শিক্ষক ছিলেন না, এটা তার সমস্যা বা অপরাধ নয়। সমস্যা হলো তার আচরণ, মানসিকতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে উদাসীনতা। আচরণের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। দীর্ঘ সময় ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরস্পরের সামাজিক সম্পর্ক, ভ্রাতৃত্ববোধ, পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ তিনি হƒদয়ঙ্গম করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নির্ধারিত বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টিকে তিনি জরুরি বলেছেন। এই জরুরি সম্পর্কে আমাদের কারও দ্বিমত নেই। কিন্তু বেশি জরুরি এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানো। আমাদের সবার সম্মানকে সমুন্নত রাখা আরও জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের উপাচার্যের পদ ত্যাগ করা উচিত।
ড. শামছুল আলম : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের দায়িত্বহীন আচরণ এবং গোঁয়ার প্রকৃতির স্বভাবের জন্য ক্যাম্পাসে এখন অশান্তি ও অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার তিনি বিচার করেননি। ২০১২ সালের ১ ও ২ আগস্ট তার ভুল এবং ২০১৩ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি একজন ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ করে সংগঠিত নজিরবিহীন ভাংচুর, শিক্ষকদের গালাগাল দেয়া এবং আবাসিক এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির ঘটনার তিনি কোনো বিচার করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক, সামাজিক, একাডেমিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তিনি ভেঙে ফেলেছেন। একজন উপাচার্যের কাজ কী? একজন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণাকে এগিয়ে নেয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। তিনি নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষীয় সভা যেমন সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল এবং অন্যান্য শিক্ষা-গবেষণা সংশ্লিষ্ট পর্ষদের সভা করবেন। অনুষদ ও বিভাগগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখবেন। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের এসব দিকে কোনো খেয়াল নেই।
আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতি একাÍতা প্রকাশ করতে তিনি লাখ টাকারও বেশি ব্যয় করে বিজয় র্যালি নামে একটি শোভাযাত্রা নিয়ে স্মৃতিসৌধে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছেন। ডিসেম্বরে তিন লাখ টাকার অধিক ব্যয়ে বিজয় কনসার্ট করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম ফেলে রেখে তিনি দিনের পর দিন অনুষ্ঠানের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট ঘাটতির বিপরীতে তিনি একের পর এক অনুষ্ঠানের নামে টাকা অপচয় করে চলেছেন। টাকার অপ্রতুলতার জন্য শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ মোট বাজেটের এক শতাংশেরও কম। তিনি এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে নতুন কোনো থোক বরাদ্দ আনতে পারেননি। মাসিক ছাত্রবৃত্তি মাত্র ১২৫ টাকা। এ অবস্থার মধ্যেও তিনি অনুষ্ঠানের মতো অবস্তুগত খাতে ব্যয় করে চলছেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি বৃদ্ধি পায় শিক্ষা ও গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড দিয়ে। বিভাগগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমের অগ্রগতি ও তদারক কাজ এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। নিয়মিত একাডেমিক কাউন্সিল সভা এখন আর অনুষ্ঠিত হয় না। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি শিক্ষকদের আন্দোলন দমাতে আদালত এবং জলকামানের আয়োজন করেন। দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের মধ্যেই তিনি শিক্ষা সংকুচিত করেছেন। সাবেক উপাচার্য হলগুলোর আবাসিক সিটের বাইরেও অল্প পরিমাণ হলেও ছাত্রছাত্রী ভর্তি করিয়েছেন। সেখানে বর্তমান উপাচার্য মানসম্পন্ন শিক্ষার কথা বলে চারশর অধিক সিট কমিয়েছেন। এ কথা অনেকেই জানেন, বর্তমানে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র তিনিই নির্বাচিত উপাচার্য। কিন্তু অনেকেরই জানা নেই যে, তিনি মেয়াদ উত্তীর্ণ সিনেট সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ৩৩ ভোটের মধ্যে ১৩টি ছিল সিঙ্গেল ভোট। উপাচার্য প্যানলের জন্য একটি করে তিনজনকে পর্যন্ত ভোট দেয়া যায়Ñ এমন বিধান থাকলেও ধারণা করা হয় যে, সরকার মনোনীত সিনেট সদস্যরা শুধু অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে সিঙ্গেল ভোট দিয়েছেন। অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র বা শিক্ষক ছিলেন না, এটা তার সমস্যা বা অপরাধ নয়। সমস্যা হলো তার আচরণ, মানসিকতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে উদাসীনতা। আচরণের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। দীর্ঘ সময় ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরস্পরের সামাজিক সম্পর্ক, ভ্রাতৃত্ববোধ, পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ তিনি হƒদয়ঙ্গম করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নির্ধারিত বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টিকে তিনি জরুরি বলেছেন। এই জরুরি সম্পর্কে আমাদের কারও দ্বিমত নেই। কিন্তু বেশি জরুরি এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানো। আমাদের সবার সম্মানকে সমুন্নত রাখা আরও জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের উপাচার্যের পদ ত্যাগ করা উচিত।
ড. শামছুল আলম : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
No comments