সাম্রাজ্যবাদীদের কৌশল পরিবর্তন by নুরুল ইসলাম বিএসসি
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এমন এক সময় জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছেন, যখন
আওয়ামী লীগ অস্তিত্বের লড়াইয়ে গাজীপুর নির্বাচনে প্রাণপণ লড়ছে। এর আগেও এই
সাম্রাজ্যবাদীরা পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক নাটক করেছে, যাতে করে সরকারের ভিত
নড়বড়ে হয়। আমরা লক্ষ্য করেছি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেন মজিনা ছয়-সাত মাস
আগেও গ্রামগঞ্জে ঘুরে নানা মন্তব্যসহ এ দেশের ভালোমন্দের দিকগুলো নিয়ে আলাপ
করতেন। রাষ্ট্রদূতের মতামত ছাড়া মার্কিন প্রশাসন কোনো বড় ধরনের সিদ্ধান্ত
নেয়নিÑ এ কথা ধরে নিয়ে বলা যায়, মার্কিনিরা মনে করছেন, এ সরকারের ভবিষ্যৎ
ভালো নয়। মার্কিনিদের কথামতো এই সরকার চলে না। সুতরাং সময় ফুরিয়ে গেছে।
মার্কিনিদের স্বার্থ উদ্ধারে এই সরকার টুলসের কাজ করবে না ভেবেই হঠাৎ করে
জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। মার্কিনিরা যেখানে গেছে, নিজেদের স্বার্থ
ছাড়া এক পাও এগোয়নি। ড. ইউনূসকে নিয়ে মার্কিনিদের গোস্বা। ড. ইউনূসের
ব্যাপারে সরকারকে সম্মত করাতে ব্যর্থ মার্কিনিরা শেষ পর্যন্ত সরকারকে আঘাত
করার মানসে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছে। পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী জিএসপি
সুবিধা স্থগিতের বিষয়ে বেগম জিয়ার একটি চিঠি প্রদর্শন করেছেন। তাহলে আমরা
ধরে নিতে পারি, বিএনপির কাঁধেই ভর করে মার্কিনিরা তাদের স্বার্থ উদ্ধারে
বেগম জিয়াকে ক্ষমতায় দেখতে চায়? বেগম জিয়ার চিঠি ও মার্কিনিদের অ্যাকশন একই
হওয়ার কারণে সন্দেহটা আরও দৃঢ় হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মার্কিন ব্যবসায়ীরা যে
গার্মেন্ট পণ্য কেনে, তা বিশ্বের কোনো দেশ এত সস্তায় দিতে পারার কথা নয়।
গার্মেন্ট মালিকরাও যে খুব বেশি লাভ করেন তাও নয়। যেখানে একটা শার্টের দাম
মার্কিন বাজারে ৫০-৬০ ডলার, সেখানে তারা বাংলাদেশ থেকে ওটা কেনে মাত্র ৩-৪
ডলারে। কত গুণ লাভ করে, চিন্তা করুন। চীন, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ
গার্মেন্ট পণ্য রফতানি করে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও
ভারত। এ দুই দেশ দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলো নিয়ে
বিশ্বে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। উদ্দেশ্য একটাই, বাজার দখল। এই অপপ্রচারের
শিকার বাংলাদেশ। জিএসপি সুবিধা স্থগিত করলেও গার্মেন্ট রফতানিতে খুব একটা
আঁচর পড়ার কথা নয়। বিশ্বে এমন একটি দেশ পাওয়া যাবে না, যেখানে এত সস্তায়
গার্মেন্ট পণ্য পাওয়া যায়। তদুপরি ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে বাংলাদেশ একটি
উৎকৃষ্ট স্থান। যেখানে রফতানি সুবিধাসহ সবরকম সুবিধা বিদ্যমান। সুতরাং
গার্মেন্টে জিএসপি সুবিধা স্থগিত কোনো ব্যাপারই নয়। চীন কি রফতানি করছে না,
বা যেসব দেশ জিএসপি সুবিধা ভোগ করে না, তারা কি রফতানি করছে না? অযথা এটা
নিয়ে মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট না করে আরও নতুন বাজার সৃষ্টি করার প্রয়াস
চালালে ভালো হয়।
অস্ট্রেলিয়ার কেমার্টসহ বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে দেখলাম বাংলাদেশী বস্ত্রে ভর্তি। ক্রেতারাও কিনছেন। হাইকমিশনারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ায় গার্মেন্ট পণ্য রফতানির পরিমাণ ১৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের মার্কেটগুলোকে ধরে রাখতে হবে। এমনিতে আমাদের উৎপাদনের ছোট একটি অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়। মার্কিনিরা যেখানে তাদের কথা শোনা হয় না, সেখানেই নানা কৌশলের আশ্রয় নেয়। মিয়ানমারে এরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কাজ হয়নি। মিয়ানমার সরকারকে এক ইঞ্চিও নড়াতে পারেনি। বরং ভারত ও চীন মিয়ানমারে তাদের অবস্থান একচেটিয়া করেছে। সম্প্রতি কিছু করতে ব্যর্থ হয়ে স্বয়ং ওবামা সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
আমি আবার বলছি, জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। মার্কিনিরা তাদের স্বার্থেই এদেশ থেকে গার্মেন্ট পণ্য কিনবে। এত সস্তা শ্রমিক পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই। তদুপরি মানের দিক থেকেও আমাদের দেশের গার্মেন্ট যে কোনো উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় র্যাংকিংয়ে থাকে। আমাদের গার্মেন্ট কর্মীরা অত্যন্ত দক্ষ। এখান থেকে গার্মেন্ট কর্মী নিতে অনেক দেশের আগ্রহ দেখা গেছে। সুতরাং চিন্তার কোনো কারণ নেই। ক্রেতারা নিশ্চয়ই জিএসপি সুবিধা না পেলেও এদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। টাকাই বড়, বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাত থেকে বায়াররা কোটি কোটি ডলার আয় করেন। কেউ নিজের স্বার্থ ত্যাগ করেন না।
নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য ও কলাম লেখক
অস্ট্রেলিয়ার কেমার্টসহ বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে দেখলাম বাংলাদেশী বস্ত্রে ভর্তি। ক্রেতারাও কিনছেন। হাইকমিশনারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ায় গার্মেন্ট পণ্য রফতানির পরিমাণ ১৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের মার্কেটগুলোকে ধরে রাখতে হবে। এমনিতে আমাদের উৎপাদনের ছোট একটি অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়। মার্কিনিরা যেখানে তাদের কথা শোনা হয় না, সেখানেই নানা কৌশলের আশ্রয় নেয়। মিয়ানমারে এরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কাজ হয়নি। মিয়ানমার সরকারকে এক ইঞ্চিও নড়াতে পারেনি। বরং ভারত ও চীন মিয়ানমারে তাদের অবস্থান একচেটিয়া করেছে। সম্প্রতি কিছু করতে ব্যর্থ হয়ে স্বয়ং ওবামা সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
আমি আবার বলছি, জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। মার্কিনিরা তাদের স্বার্থেই এদেশ থেকে গার্মেন্ট পণ্য কিনবে। এত সস্তা শ্রমিক পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই। তদুপরি মানের দিক থেকেও আমাদের দেশের গার্মেন্ট যে কোনো উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় র্যাংকিংয়ে থাকে। আমাদের গার্মেন্ট কর্মীরা অত্যন্ত দক্ষ। এখান থেকে গার্মেন্ট কর্মী নিতে অনেক দেশের আগ্রহ দেখা গেছে। সুতরাং চিন্তার কোনো কারণ নেই। ক্রেতারা নিশ্চয়ই জিএসপি সুবিধা না পেলেও এদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। টাকাই বড়, বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাত থেকে বায়াররা কোটি কোটি ডলার আয় করেন। কেউ নিজের স্বার্থ ত্যাগ করেন না।
নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য ও কলাম লেখক
No comments