জামায়াত-শিবিরের স্পর্ধা ও সাংবাদিকের নৈতিকতা প্রসঙ্গ by মাহমুদ মেনন
সোর্স সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যেকোনো পরিস্থিতিতেই সাংবাদিক তার খবরের সোর্সকে
রক্ষা করবে, সেটাই নিয়ম। আর সেই বিশ্বস্ততা থেকেই সোর্স রিপোর্টারকে তথ্য
দিয়ে যাবে।
সাংবাদিকের সংবাদের ক্ষুধা থাকবে। সেই ক্ষুধা
মেটানোর অন্যতম সহায়ক শক্তিই হবে এই সোর্স। সোর্স থেকে আগাম তথ্য পেয়ে বড়
বড় নাশকতা, সম্ভাব্য বড় কোনো দুর্নীতি-কেলেঙ্কারির পথ বন্ধ করে দেওয়াও
সম্ভব। সোর্সের কাছ থেকে তথ্য পেয়েই পদ্মাসেতুর দুর্নীতির ব্যাপারে
প্রতিবেদন তৈরির সুযোগ হয়। সোর্সের খবরেই ধরা পড়ে হলমার্ক কেলেঙ্কারি।
শেয়ারবাজারের রাঘববোয়ালদের জালিয়াতির খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে সোর্সের
বরাতেই।
কিন্তু দেশে সাংবাদিকদের কাছে এ কোন ধারার সোর্স চর্চা চলছে। সহকর্মী সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট রহমান মাসুদের একটি ফেইসবুক নোট এখানে তুলে ধরছি:
“সাধারণত হরতালের ডিউটি আমাকে খুব বেশি করতে হয় না। কিন্তু এই দুই দিন টানা ডিউটি করছি। এতে একটি প্রশ্নের সরাসরি আক্রমণের শিকার হলাম। প্রশ্নকর্তা ও আমি বা আমার মন নামক অদেখা বস্তুটি।
মনোবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম তাই মন নিয়ে মনামনি বা বেশি কষাকষি করি না। বিশ্বাস করি মন খুবই সফট জিনিস, বেশি ডলাডলি বা ঢলাঢলি তার পছন্দ নয়। কিন্তু আজ যখন মন আমাকে নিজেই উস্কে দিয়েছে তখন উত্তর আমাকে খুঁজতেই হবে।
যখন হরতাল ডিউটি করছিলাম, তখন একেকজন সহকর্মীর, যারা এই বিট আগে থেকেই করে আসছেন, কাছে ফোন কল অথবা এসএমএস আসছিলো। ’১৫ মিনিটের মধ্যে ওমুক খানে চলে আসুন ৫টি ককটেল ফোটাবো। অমুক পয়েন্টে আগুন জ্বালাবো। অমুক ভবনের সামনে গাড়িতে আগুন দেব।’
সহকর্মীরা ওই দিকে দৌড়াতে শুরু করেন ছবি আর খবরের সন্ধানে। গিয়ে পৌঁছানোর সাথে সাথে শুরু হয় হরতাল সমর্থক বা সরকার বিরোধীদের নারকীয় তাণ্ডব। আমার সহকর্মীরা, আমি এবং আমরা তা কভার করে চলে আসি। সারাদেশের মানুষের কাছে তা তুলে ধরি। শুরু হয় আতঙ্ক নামক বিষবৃক্ষের বীজতলা তৈরি।
আমার মন আজ জানতে চায় এটা কি সাংবাদিকতার নীতির মধ্যে পড়ে? এটা কি নৈতিকভাবে সমর্থন দেওয়া যায়? আমরা কি (মিডিয়াকর্মী বা সংবাদকর্মী) এই নীতি ভাঙ্গার কথা ভাবব না?”
রহমান মাসুদকে ধন্যবাদ এসব প্রশ্ন তোলার জন্য। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালেই কথা হচ্ছিলো বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। বিষয়টির ভয়াবহতায় উদ্বিগ্ন প্রথিতযশা অভিজ্ঞ এই সাংবাদিক। তার কাছে জানতে চাই, আপনারা কি কখনো এমন পরিস্থিতি দেখেছেন। তেত্রিশ বছরের দীর্ঘ রিপোর্টিং ক্যারিয়ারের এই সাংবাদিক এক কথায় জানিয়ে দিলেন, “না, প্রশ্নই আসে না।”
বুধবার রাতে এ বিষয়ে কথা হচ্ছিলো চ্যানেল আইয়ের বার্তাসম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খানের সঙ্গে। তিনিও দেখলাম বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন। সংবাদমাধ্যমগুলোর কর্তাব্যক্তিরা উদ্বিগ্ন এই নিয়ে যে, কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছি আমরা সবাই!
সংবাদের সূত্র কেউ নষ্ট করতে চায় না। আর সেজন্যই হয়তো কেউ প্রকাশ্যে কথা বলে না। ফলে নাশকতার খবর আগেই জেনে গিয়ে সেখানে সংবাদকর্মী পাঠিয়ে সবচেয়ে ভালো ছবিটি, সবচেয়ে অ্যাকশন ফুটেজ পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এটা নীতিবিবর্জিত। রহমান মাসুদের প্রশ্নের উত্তর এটাই- কোনোভাবেই এটি সাংবাদিকতার নীতিতে পড়ে না।
কিন্তু সাংবাদিক কী করবে? একজন প্রতিবেদক দিনভর ঘুরে বেড়ায় একটি খবরের আশায়। ক্যামেরা কাঁধে ফটো সাংবাদিক বা ভিডিওগ্রাফার ঘুরে বেড়ায় একটি অ্যাকশন ছবি বা ফুটেজের ক্ষুধা নিয়ে।
আর সেই ক্ষুধাকে পুঁজি করেই জামায়াত-শিবিরের এই নতুন চাল। তারা আগুন জ্বালাচ্ছে, গাড়ি পোড়াচ্ছে, ভাঙছে, ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। সবকিছুই করছে সংবাদমাধ্যমের সামনে। সংবাদমাধ্যমকে আগেভাগে জানিয়ে।
আগে পিকেটাররা ভয় পেতো সাংবাদিকদের সামনে কাজটি ঘটলে ধরা পড়ে যাবে। মিডিয়ার চোখ এড়িয়ে দুয়েকটি অঘটন ঘটিয়ে দ্রুত সটকে পড়তো। কিন্তু এখন মিডিয়াকে ডেকে তাদের সামনেই ঘটানো হচ্ছে এসব নাশকতার ঘটনা। বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরই প্রথম এতটা স্পর্ধা দেখাতে পারলো।
মিডিয়াকে এখনই ভাবতে হবে এই স্পর্ধার বিরুদ্ধে করণীয় নিয়ে। এ প্রসঙ্গে বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াত-শিবির এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। সোর্সের মাধ্যমে সাংবাদিক খবর পাবে। তবে সাংবাদিককে সবসময় মনে রাখতে হবে সোর্স যাতে তাকে ব্যবহার করতে না পারে।
বুলবুল বলেন, জামায়াত-শিবিরের উদ্দেশ্যটি ভয়াবহ। তারা প্রথমত এই ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে আতঙ্ক ছড়াতে চায়। এছাড়াও তারা চায় খবর ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের কর্মীদের জানান দিতে কতটা শক্তি তাদের রয়েছে। মিডিয়া যত বেশি বিষয়গুলো কাভার করবে, ততই লাভ জামায়াত শিবিরের। আর সে কারণেই তারা সর্বোচ্চ কাভারেজ নিশ্চিত করতে চায়। আগে থেকে খবর জানিয়ে যদি সাংবাদিকের বেশি উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারে তাতে তাদেরই সুবিধা।
কিন্তু এখানে সাংবাদিকদের একটি নৈতিকতার জায়গা রয়েছে বলে মনে করেন মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, একটি ঘটনা ঘটে গেলে সেটি যত বিস্তারিতভাবে কাভার করা যায় সে চেষ্টা সাংবাদিকের থাকবে। কিন্তু যখন কোনো ঘটনা আমার উপস্থিতির জন্যই সাজানো হবে, কিংবা ঘটানো হবে তখন সাংবাদিকের নৈতিক দায়িত্ব হবে ঘটনাটি যাতে কোনোভাবেই ঘটতে না পারে সেই চেষ্টা করা।
এ ধরনের খবর পেয়ে ছুটে তা কাভার করতে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের দ্বিতীয়বার ভেবে নেওয়ার পরামর্শ দেন মনজুরুল আহসান বুলবুল।
জাহিদ নেওয়াজ খান তার একটি ফেইসবুক নোটে লিখেছেন: প্রি-অ্যানাউন্সড এবং অ্যারেঞ্জড নাশকতা মিডিয়ার কাভার করা উচিত কি না এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। সব মিডিয়াকে একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোথাও নাশকতা হবে, নাশকতাকারী এটা জানানোর পর ওই বোমা মারার, বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা কাভার করার জন্য রিপোর্টার/ ক্যামেরাম্যান পাঠানো হবে নাকি ইগনোর করা হবে। এরকম ঘোষিত নাশকতা যতো কাভার করা হবে, ততোই বাড়বে নাশকতার ঘটনা। গণমাধ্যম সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেবে কি না সেই সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া উচিত। আফটার অল, গণমাধ্যম নাশকতার প্রচার মাধ্যম হতে পারে না; সেটা যেই সরকারে থাকুক অথবা বিরোধীদলে। পাশাপাশি এটাও ভাবা উচিত, মানুষ এখন বুঝতে পারছে মিডিয়াকে জানিয়ে অনেক নাশকতা হচ্ছে। তাই এরকম কোনো ঘটনার পর মানুষ যদি মিডিয়াকে উস্কানির অভিযোগে অভিযুক্ত করে তাহলে তাদের দোষ দেওয়া যাবে না। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেও তাই এরকম অ্যানাউন্সড নাশকতার কাভারেজ থেকে দূরে থাকা উচিত। কয়েকদিন পর টেলিফোন ট্র্যাক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও মিডিয়াকে অভিযুক্ত করতে পারে। সংবাদকর্মীদের এরকম চতুর্মুখী আক্রমণের মুখে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে কি না মিডিয়া ব্যবস্থাপনাকে সেই সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে। শুধুমাত্র মিডিয়াকে জানিয়ে যেসব নাশকতা করা হচ্ছে সেক্ষেত্রে এই বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ রইলো। সভা-সমাবেশ-হরতালে মারামারি-কাটাকাটির ঘটনা এদেশে পুরনো। আমরা চাই বা না চাই, রিস্ক থাকলেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ওইরকম সহিংসতা আরও অনেকদিনই কাভার করতে হবে, হয়তো।”
তবে সাংবাদিককেই নিশ্চিত করতে হবে, জামায়াত-শিবির যাতে তাদের কায়েমী স্বার্থ উদ্ধারে সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করতে না পারে।
কিন্তু দেশে সাংবাদিকদের কাছে এ কোন ধারার সোর্স চর্চা চলছে। সহকর্মী সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট রহমান মাসুদের একটি ফেইসবুক নোট এখানে তুলে ধরছি:
“সাধারণত হরতালের ডিউটি আমাকে খুব বেশি করতে হয় না। কিন্তু এই দুই দিন টানা ডিউটি করছি। এতে একটি প্রশ্নের সরাসরি আক্রমণের শিকার হলাম। প্রশ্নকর্তা ও আমি বা আমার মন নামক অদেখা বস্তুটি।
মনোবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম তাই মন নিয়ে মনামনি বা বেশি কষাকষি করি না। বিশ্বাস করি মন খুবই সফট জিনিস, বেশি ডলাডলি বা ঢলাঢলি তার পছন্দ নয়। কিন্তু আজ যখন মন আমাকে নিজেই উস্কে দিয়েছে তখন উত্তর আমাকে খুঁজতেই হবে।
যখন হরতাল ডিউটি করছিলাম, তখন একেকজন সহকর্মীর, যারা এই বিট আগে থেকেই করে আসছেন, কাছে ফোন কল অথবা এসএমএস আসছিলো। ’১৫ মিনিটের মধ্যে ওমুক খানে চলে আসুন ৫টি ককটেল ফোটাবো। অমুক পয়েন্টে আগুন জ্বালাবো। অমুক ভবনের সামনে গাড়িতে আগুন দেব।’
সহকর্মীরা ওই দিকে দৌড়াতে শুরু করেন ছবি আর খবরের সন্ধানে। গিয়ে পৌঁছানোর সাথে সাথে শুরু হয় হরতাল সমর্থক বা সরকার বিরোধীদের নারকীয় তাণ্ডব। আমার সহকর্মীরা, আমি এবং আমরা তা কভার করে চলে আসি। সারাদেশের মানুষের কাছে তা তুলে ধরি। শুরু হয় আতঙ্ক নামক বিষবৃক্ষের বীজতলা তৈরি।
আমার মন আজ জানতে চায় এটা কি সাংবাদিকতার নীতির মধ্যে পড়ে? এটা কি নৈতিকভাবে সমর্থন দেওয়া যায়? আমরা কি (মিডিয়াকর্মী বা সংবাদকর্মী) এই নীতি ভাঙ্গার কথা ভাবব না?”
রহমান মাসুদকে ধন্যবাদ এসব প্রশ্ন তোলার জন্য। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালেই কথা হচ্ছিলো বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। বিষয়টির ভয়াবহতায় উদ্বিগ্ন প্রথিতযশা অভিজ্ঞ এই সাংবাদিক। তার কাছে জানতে চাই, আপনারা কি কখনো এমন পরিস্থিতি দেখেছেন। তেত্রিশ বছরের দীর্ঘ রিপোর্টিং ক্যারিয়ারের এই সাংবাদিক এক কথায় জানিয়ে দিলেন, “না, প্রশ্নই আসে না।”
বুধবার রাতে এ বিষয়ে কথা হচ্ছিলো চ্যানেল আইয়ের বার্তাসম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খানের সঙ্গে। তিনিও দেখলাম বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন। সংবাদমাধ্যমগুলোর কর্তাব্যক্তিরা উদ্বিগ্ন এই নিয়ে যে, কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছি আমরা সবাই!
সংবাদের সূত্র কেউ নষ্ট করতে চায় না। আর সেজন্যই হয়তো কেউ প্রকাশ্যে কথা বলে না। ফলে নাশকতার খবর আগেই জেনে গিয়ে সেখানে সংবাদকর্মী পাঠিয়ে সবচেয়ে ভালো ছবিটি, সবচেয়ে অ্যাকশন ফুটেজ পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এটা নীতিবিবর্জিত। রহমান মাসুদের প্রশ্নের উত্তর এটাই- কোনোভাবেই এটি সাংবাদিকতার নীতিতে পড়ে না।
কিন্তু সাংবাদিক কী করবে? একজন প্রতিবেদক দিনভর ঘুরে বেড়ায় একটি খবরের আশায়। ক্যামেরা কাঁধে ফটো সাংবাদিক বা ভিডিওগ্রাফার ঘুরে বেড়ায় একটি অ্যাকশন ছবি বা ফুটেজের ক্ষুধা নিয়ে।
আর সেই ক্ষুধাকে পুঁজি করেই জামায়াত-শিবিরের এই নতুন চাল। তারা আগুন জ্বালাচ্ছে, গাড়ি পোড়াচ্ছে, ভাঙছে, ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। সবকিছুই করছে সংবাদমাধ্যমের সামনে। সংবাদমাধ্যমকে আগেভাগে জানিয়ে।
আগে পিকেটাররা ভয় পেতো সাংবাদিকদের সামনে কাজটি ঘটলে ধরা পড়ে যাবে। মিডিয়ার চোখ এড়িয়ে দুয়েকটি অঘটন ঘটিয়ে দ্রুত সটকে পড়তো। কিন্তু এখন মিডিয়াকে ডেকে তাদের সামনেই ঘটানো হচ্ছে এসব নাশকতার ঘটনা। বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরই প্রথম এতটা স্পর্ধা দেখাতে পারলো।
মিডিয়াকে এখনই ভাবতে হবে এই স্পর্ধার বিরুদ্ধে করণীয় নিয়ে। এ প্রসঙ্গে বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াত-শিবির এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। সোর্সের মাধ্যমে সাংবাদিক খবর পাবে। তবে সাংবাদিককে সবসময় মনে রাখতে হবে সোর্স যাতে তাকে ব্যবহার করতে না পারে।
বুলবুল বলেন, জামায়াত-শিবিরের উদ্দেশ্যটি ভয়াবহ। তারা প্রথমত এই ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে আতঙ্ক ছড়াতে চায়। এছাড়াও তারা চায় খবর ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের কর্মীদের জানান দিতে কতটা শক্তি তাদের রয়েছে। মিডিয়া যত বেশি বিষয়গুলো কাভার করবে, ততই লাভ জামায়াত শিবিরের। আর সে কারণেই তারা সর্বোচ্চ কাভারেজ নিশ্চিত করতে চায়। আগে থেকে খবর জানিয়ে যদি সাংবাদিকের বেশি উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারে তাতে তাদেরই সুবিধা।
কিন্তু এখানে সাংবাদিকদের একটি নৈতিকতার জায়গা রয়েছে বলে মনে করেন মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, একটি ঘটনা ঘটে গেলে সেটি যত বিস্তারিতভাবে কাভার করা যায় সে চেষ্টা সাংবাদিকের থাকবে। কিন্তু যখন কোনো ঘটনা আমার উপস্থিতির জন্যই সাজানো হবে, কিংবা ঘটানো হবে তখন সাংবাদিকের নৈতিক দায়িত্ব হবে ঘটনাটি যাতে কোনোভাবেই ঘটতে না পারে সেই চেষ্টা করা।
এ ধরনের খবর পেয়ে ছুটে তা কাভার করতে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের দ্বিতীয়বার ভেবে নেওয়ার পরামর্শ দেন মনজুরুল আহসান বুলবুল।
জাহিদ নেওয়াজ খান তার একটি ফেইসবুক নোটে লিখেছেন: প্রি-অ্যানাউন্সড এবং অ্যারেঞ্জড নাশকতা মিডিয়ার কাভার করা উচিত কি না এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। সব মিডিয়াকে একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোথাও নাশকতা হবে, নাশকতাকারী এটা জানানোর পর ওই বোমা মারার, বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা কাভার করার জন্য রিপোর্টার/ ক্যামেরাম্যান পাঠানো হবে নাকি ইগনোর করা হবে। এরকম ঘোষিত নাশকতা যতো কাভার করা হবে, ততোই বাড়বে নাশকতার ঘটনা। গণমাধ্যম সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেবে কি না সেই সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া উচিত। আফটার অল, গণমাধ্যম নাশকতার প্রচার মাধ্যম হতে পারে না; সেটা যেই সরকারে থাকুক অথবা বিরোধীদলে। পাশাপাশি এটাও ভাবা উচিত, মানুষ এখন বুঝতে পারছে মিডিয়াকে জানিয়ে অনেক নাশকতা হচ্ছে। তাই এরকম কোনো ঘটনার পর মানুষ যদি মিডিয়াকে উস্কানির অভিযোগে অভিযুক্ত করে তাহলে তাদের দোষ দেওয়া যাবে না। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেও তাই এরকম অ্যানাউন্সড নাশকতার কাভারেজ থেকে দূরে থাকা উচিত। কয়েকদিন পর টেলিফোন ট্র্যাক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও মিডিয়াকে অভিযুক্ত করতে পারে। সংবাদকর্মীদের এরকম চতুর্মুখী আক্রমণের মুখে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে কি না মিডিয়া ব্যবস্থাপনাকে সেই সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে। শুধুমাত্র মিডিয়াকে জানিয়ে যেসব নাশকতা করা হচ্ছে সেক্ষেত্রে এই বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ রইলো। সভা-সমাবেশ-হরতালে মারামারি-কাটাকাটির ঘটনা এদেশে পুরনো। আমরা চাই বা না চাই, রিস্ক থাকলেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ওইরকম সহিংসতা আরও অনেকদিনই কাভার করতে হবে, হয়তো।”
তবে সাংবাদিককেই নিশ্চিত করতে হবে, জামায়াত-শিবির যাতে তাদের কায়েমী স্বার্থ উদ্ধারে সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করতে না পারে।
No comments