পল্লবীর শাহ আলমকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ: অধিকার
পল্লবী থানার পুলিশ সদস্যরাই শাহ আলমকে
গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত অধিকারের এক
তদন্তানুসন্ধান প্রতিবেদনে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ রাত আনুমানিক ৮টা ১৫মিনিটে পল্লবী
থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য শাহ আলমকে (২৮) গুলি করে হত্যা করে। ঘটনাটি ঘটে
পোস্ট অফিস স্ট্রিটের ৭ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর রোডেরে এইচঅ্যান্ডএস পলিথিন
কারখানার সামনে ১/৬ নম্বর প্লটে।
শাহ
আলমের পিতা আলী আকবর মাতা মর্জিনা বেগম। তারা পল্লবীর মিল্কভিটা রোডে
ঝিলপাড় বস্তিতে থাকতেন। শাহআলম একটি ওয়ার্কশপে গাড়ি ধোয়ার কাজ করতেন।
হত্যার আগে তার বিরুদ্ধে কোনো থানায় কোনো অভিযোগ ছিল না বলেও জানা যায়।
হত্যার পরই পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করে। ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ওই মামলা দুটি দায়ের করে পুলিশ। দুটি মামলায়ই তার বয়স দেখানো হয় ৩০ বছর অথচ জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ২৮ বছর।
ঘটনাটির একটি সরেজমিন তদন্তানুসন্ধান করে অধিকার তাদের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এ সময় অধিকার শাহ আলমের আত্মীয় স্বজন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, তার লাশের ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার, মর্গের সহকারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে কথা বলে পুলিশি এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে।
শাহ আলমের স্ত্রী গার্মেন্টস কর্মী উর্মি আক্তার কলি (২০) অধিকারকে জানান, ঘটনার দিন সকাল ৭টায় শাহ আলমকে ঘরে রেখে তিনি কাজে যান। এরপর রাত ৮টায় ফিরে এসে শাহ আলমের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু শেষ রাত অবধি শাহ আলম ফিরে না এলে তিনি তার শ্বশুর আলী আকবর এবং শাশুড়ি মর্জিনা বেগমকে বিষয়টি জানান। তারাও একই বস্তিতে থাকতেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো হদিস বের করতে পারেননি তারা।
পরদিন, ১ জানুয়ারি ২০১৩ আনুমানিক ১২ টায় তার শ্বশুর উর্মির কর্মস্থলে গিয়ে তাকে তার স্বামী শাহ আলমকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে এবং তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে বলে জানায়। এরপর ২ জানুয়ারি তার শ্বশুর তার স্বামীর লাশ মর্গ থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে বলে জানান উর্মি। তিনি তার স্বামীর খুনের ন্যায়বিচার দাবি করেন।
শাহ আলমের বাবা মো. আলী আকবর (৫৫) জানান, ৩১ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১১টা ৩০ মিনিটে তিনি তার ছেলে বউয়ের কাছে আলম বাড়িতে ফিরে আসেনি শুনতে পেয়ে আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিতজনদের কাছে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো হদিস করতে পারেননি।
পরদিন সকাল আনুমানিক ৮ টায় শাহ আলমের এক বন্ধু শামিম আহমেদ তাকে জানান, অপরিচিত এক লোক তাকে মোবাইলে ফোন করে জানিয়েছে আলম ঢাকা মেডিকেল কলেজে আছে এবং একথা বলেই লোকটি লাইন কেটে দেয় এবং ফোন বন্ধ করে রাখে।
এরপর আলী আকবর এবং তার স্ত্রী শামীমকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। হাসপাতালের জীবিত রোগীদের কোনো ওয়ার্ডে শাহ আলমকে না পেয়ে তারা মর্গে খোঁজ করে দেখতে পান তার লাশ মেঝেতে পড়ে আছে। এ সময় তিনি আলমের বাম উরুতে এবং বুকের বাম পাশে একটি করে গুলির জখম দেখতে পান বলে জানান।
লাশ নিতে চাইলে একজন পুলিশ সদস্য তাদেরকে জানান, ময়নাতদন্ত শেষে তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। ডাক্তারের অভাবে সেদিন আর ময়নাতদন্ত হয়নি। পরদিন, ২ জানুয়ারি ময়না তদন্ত শেষে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে পুলিশ তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
লাশ নেয়ার সময় মর্গ সহকারীকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। এরপর লাশ নেয়ার জন্য ১৬০০ টাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন আকবর। অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নেয়ার সময় পল্লবী থানার পুলিশ সদস্যদের দুটি গাড়ি তাদের অ্যাম্বুলেন্সের সাথে সাথে যায়। পুলিশ সদস্যরা তার দাফন-কাফন এবং কবর দেয়া শেষ করা পর্যন্ত উপস্থিত ছিল বলে জানান তিনি।
আকবর অধিকারকে জানান, তিনি খুবই গরীব। ফুটপাথে সবজি বিক্রি করে বস্তিতে থেকে কোনোমতে সংসার চালান। তিনি এ ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করেন এবং তার ছেলের হত্যার ব্যাপারে একটি মামলাও দায়ের করতে চান।
শাহ আলমের ভাতিজি এবং প্রতিবেশি জেসমিন আখতার (১৮) অধিকারকে জানায়, ৩১ ডিসেম্বর বিকাল আনুমানিক ৫টা ৩০ মিনিটে কেউ একজন শাহ আলমকে মোবাইলে ফোন করে কোথাও যেতে বলে। এ সময় আলম ফোনে কথা বলতে বলতেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় বলে জানান জেসমিন।
তিনি পরদিন আনুমানিক ১২টার দিকে আলমের বাবার কাছ থেকে জানতে পারেন, পুলিশ আলমকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। পুলিশই আলমকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন জেসমিন।
পল্লবীর পোস্ট অফিস স্ট্রীটের ৭ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর রোডের চা দোকানদার সাইদুর রহমান (৪৮) অধিকারকে জানায়, ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ৮টার দিকে তিনি তার চায়ের দোকানের পশ্চিম দিক থেকে একটি গুলির আওয়াজ শুনতে পান। এ সময় তিনি সেখানে ৫ পুলিশ সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন।
এরপর তিনি দেখতে পান পুলিশ সদস্যরা এইচঅ্যান্ডএস পলিথিন ফ্যাক্টরির সামনে দাঁড়ানো একটি সাদা মাইক্রোবাসে এক লোককে টেনে তুলে দরজা বন্ধ করে দেয়। লোকজন এগিয়ে গেলে পুলিশ সদস্যরা তাদের থামিয়ে দিয়ে বলে, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তাদের বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে এবং তারা একজনকে আটক করেছে। এ কথা বলেই পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে চলে যায় বলে জানান সাইদুর।
এদিকে, পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. এনামুল হক জানান, ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ টা ৫৫ মিনিটে ওসি আবদুল লতিফ শেখ এক সোর্স থেকে কয়েকজন অচেনা অপরাধী পল্লবীর পোস্ট অফিস স্ট্রিটের ৭ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর রোডের ১/৬ নম্বর প্লটে এক গার্মেন্টস মালিককে হত্যা করার জন্য জড়ো হয়েছে জানতে পেরে তাৎক্ষণিক তাকে তার বাহিনী নিয়ে সেখানে যেতে বলেন। তারা ৮ টা ১৫ মিনিটে সেখানে পৌঁছান।
এনামুল বলেন, ৮ টা ২৫ মিনিটে তিনি তিন যুবককে এইচঅ্যান্ডএস পলিথিন কারখানার দিকে আসতে দেখতে পান এবং তাদের থামতে বলেন। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে এবং বোমা নিক্ষেপ করে। জবাবে পুলিশও গুলি ছুঁড়তে শুরু করলে তারা পালিয়ে যেতে থাকে।
তখন পুলিশ সামনে এগিয়ে গিয়ে একজনকে আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে। এ সময় তার হাতে একটি রিভলবার ধরা ছিল এবং তার পরিচয় জানতে চাইলে আহত যুবক তার নাম শাহ আলম বলে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়, বলেন এনামুল।
এরপর তিনি শাহ আলমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দিয়ে থানায় গিয়ে তার নামে দুটি মামলা দায়ের করেন। অপর দুজনকেও মামলায় আসামি করা হয় বলে জানান তিনি।
পল্লবী থানার এসআই আবদুল আজিজ জানান, শাহ আলমের বিরুদ্ধে এর আগে আর কোনো থানায় কোনো জিডি বা মামলা ছিল না। তবে এসআই এনামুলের করা মামলা দুটো তদন্তাধীন রয়েছে বলে তিনি আর কিছু বলতে অস্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহ আলমের লাশের ময়না তদন্তকারী ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জানান, গুলিতে আহত হওয়ার পরপরই শাহ আলম মারা যায়। তবে এ ব্যাপারে তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
মর্গের অ্যাসিস্টেন্ট সেকেন্দার জানায়, শাহ আলমের বুকের বা দিকে এবং বাম উরুতে গুলির জখম ছিল। শাহ আলমকে দাফনকারী হাফেজ নুরুল্লাহ জানান, গুলির জখমগুলো ছাড়াও তিনি তার বাম চোখের ভ্রুতেও জখম দেখতে পান।
অধিকার তাদের প্রতিবেদনে বলে, বাংলাদেশ সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার ঘোষণা দেয়ার পরও ২০১২ সালে এ ধরনের ৭০টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিনা জবাবদিহিতায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার ফলে আইনশৃঙ্খলা এবং বিচার ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ছে এবং সমাজে এক ধরনের দায়হীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। শাহ আলমের হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ অফিসারদেরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেয়ারও দাবি জানায় অধিকার।
হত্যার পরই পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করে। ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ওই মামলা দুটি দায়ের করে পুলিশ। দুটি মামলায়ই তার বয়স দেখানো হয় ৩০ বছর অথচ জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ২৮ বছর।
ঘটনাটির একটি সরেজমিন তদন্তানুসন্ধান করে অধিকার তাদের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এ সময় অধিকার শাহ আলমের আত্মীয় স্বজন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, তার লাশের ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার, মর্গের সহকারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে কথা বলে পুলিশি এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে।
শাহ আলমের স্ত্রী গার্মেন্টস কর্মী উর্মি আক্তার কলি (২০) অধিকারকে জানান, ঘটনার দিন সকাল ৭টায় শাহ আলমকে ঘরে রেখে তিনি কাজে যান। এরপর রাত ৮টায় ফিরে এসে শাহ আলমের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু শেষ রাত অবধি শাহ আলম ফিরে না এলে তিনি তার শ্বশুর আলী আকবর এবং শাশুড়ি মর্জিনা বেগমকে বিষয়টি জানান। তারাও একই বস্তিতে থাকতেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো হদিস বের করতে পারেননি তারা।
পরদিন, ১ জানুয়ারি ২০১৩ আনুমানিক ১২ টায় তার শ্বশুর উর্মির কর্মস্থলে গিয়ে তাকে তার স্বামী শাহ আলমকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে এবং তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে বলে জানায়। এরপর ২ জানুয়ারি তার শ্বশুর তার স্বামীর লাশ মর্গ থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে বলে জানান উর্মি। তিনি তার স্বামীর খুনের ন্যায়বিচার দাবি করেন।
শাহ আলমের বাবা মো. আলী আকবর (৫৫) জানান, ৩১ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১১টা ৩০ মিনিটে তিনি তার ছেলে বউয়ের কাছে আলম বাড়িতে ফিরে আসেনি শুনতে পেয়ে আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিতজনদের কাছে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো হদিস করতে পারেননি।
পরদিন সকাল আনুমানিক ৮ টায় শাহ আলমের এক বন্ধু শামিম আহমেদ তাকে জানান, অপরিচিত এক লোক তাকে মোবাইলে ফোন করে জানিয়েছে আলম ঢাকা মেডিকেল কলেজে আছে এবং একথা বলেই লোকটি লাইন কেটে দেয় এবং ফোন বন্ধ করে রাখে।
এরপর আলী আকবর এবং তার স্ত্রী শামীমকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। হাসপাতালের জীবিত রোগীদের কোনো ওয়ার্ডে শাহ আলমকে না পেয়ে তারা মর্গে খোঁজ করে দেখতে পান তার লাশ মেঝেতে পড়ে আছে। এ সময় তিনি আলমের বাম উরুতে এবং বুকের বাম পাশে একটি করে গুলির জখম দেখতে পান বলে জানান।
লাশ নিতে চাইলে একজন পুলিশ সদস্য তাদেরকে জানান, ময়নাতদন্ত শেষে তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। ডাক্তারের অভাবে সেদিন আর ময়নাতদন্ত হয়নি। পরদিন, ২ জানুয়ারি ময়না তদন্ত শেষে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে পুলিশ তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
লাশ নেয়ার সময় মর্গ সহকারীকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। এরপর লাশ নেয়ার জন্য ১৬০০ টাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন আকবর। অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নেয়ার সময় পল্লবী থানার পুলিশ সদস্যদের দুটি গাড়ি তাদের অ্যাম্বুলেন্সের সাথে সাথে যায়। পুলিশ সদস্যরা তার দাফন-কাফন এবং কবর দেয়া শেষ করা পর্যন্ত উপস্থিত ছিল বলে জানান তিনি।
আকবর অধিকারকে জানান, তিনি খুবই গরীব। ফুটপাথে সবজি বিক্রি করে বস্তিতে থেকে কোনোমতে সংসার চালান। তিনি এ ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করেন এবং তার ছেলের হত্যার ব্যাপারে একটি মামলাও দায়ের করতে চান।
শাহ আলমের ভাতিজি এবং প্রতিবেশি জেসমিন আখতার (১৮) অধিকারকে জানায়, ৩১ ডিসেম্বর বিকাল আনুমানিক ৫টা ৩০ মিনিটে কেউ একজন শাহ আলমকে মোবাইলে ফোন করে কোথাও যেতে বলে। এ সময় আলম ফোনে কথা বলতে বলতেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় বলে জানান জেসমিন।
তিনি পরদিন আনুমানিক ১২টার দিকে আলমের বাবার কাছ থেকে জানতে পারেন, পুলিশ আলমকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। পুলিশই আলমকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন জেসমিন।
পল্লবীর পোস্ট অফিস স্ট্রীটের ৭ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর রোডের চা দোকানদার সাইদুর রহমান (৪৮) অধিকারকে জানায়, ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ৮টার দিকে তিনি তার চায়ের দোকানের পশ্চিম দিক থেকে একটি গুলির আওয়াজ শুনতে পান। এ সময় তিনি সেখানে ৫ পুলিশ সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন।
এরপর তিনি দেখতে পান পুলিশ সদস্যরা এইচঅ্যান্ডএস পলিথিন ফ্যাক্টরির সামনে দাঁড়ানো একটি সাদা মাইক্রোবাসে এক লোককে টেনে তুলে দরজা বন্ধ করে দেয়। লোকজন এগিয়ে গেলে পুলিশ সদস্যরা তাদের থামিয়ে দিয়ে বলে, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তাদের বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে এবং তারা একজনকে আটক করেছে। এ কথা বলেই পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে চলে যায় বলে জানান সাইদুর।
এদিকে, পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. এনামুল হক জানান, ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ টা ৫৫ মিনিটে ওসি আবদুল লতিফ শেখ এক সোর্স থেকে কয়েকজন অচেনা অপরাধী পল্লবীর পোস্ট অফিস স্ট্রিটের ৭ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর রোডের ১/৬ নম্বর প্লটে এক গার্মেন্টস মালিককে হত্যা করার জন্য জড়ো হয়েছে জানতে পেরে তাৎক্ষণিক তাকে তার বাহিনী নিয়ে সেখানে যেতে বলেন। তারা ৮ টা ১৫ মিনিটে সেখানে পৌঁছান।
এনামুল বলেন, ৮ টা ২৫ মিনিটে তিনি তিন যুবককে এইচঅ্যান্ডএস পলিথিন কারখানার দিকে আসতে দেখতে পান এবং তাদের থামতে বলেন। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে এবং বোমা নিক্ষেপ করে। জবাবে পুলিশও গুলি ছুঁড়তে শুরু করলে তারা পালিয়ে যেতে থাকে।
তখন পুলিশ সামনে এগিয়ে গিয়ে একজনকে আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে। এ সময় তার হাতে একটি রিভলবার ধরা ছিল এবং তার পরিচয় জানতে চাইলে আহত যুবক তার নাম শাহ আলম বলে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়, বলেন এনামুল।
এরপর তিনি শাহ আলমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দিয়ে থানায় গিয়ে তার নামে দুটি মামলা দায়ের করেন। অপর দুজনকেও মামলায় আসামি করা হয় বলে জানান তিনি।
পল্লবী থানার এসআই আবদুল আজিজ জানান, শাহ আলমের বিরুদ্ধে এর আগে আর কোনো থানায় কোনো জিডি বা মামলা ছিল না। তবে এসআই এনামুলের করা মামলা দুটো তদন্তাধীন রয়েছে বলে তিনি আর কিছু বলতে অস্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহ আলমের লাশের ময়না তদন্তকারী ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জানান, গুলিতে আহত হওয়ার পরপরই শাহ আলম মারা যায়। তবে এ ব্যাপারে তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
মর্গের অ্যাসিস্টেন্ট সেকেন্দার জানায়, শাহ আলমের বুকের বা দিকে এবং বাম উরুতে গুলির জখম ছিল। শাহ আলমকে দাফনকারী হাফেজ নুরুল্লাহ জানান, গুলির জখমগুলো ছাড়াও তিনি তার বাম চোখের ভ্রুতেও জখম দেখতে পান।
অধিকার তাদের প্রতিবেদনে বলে, বাংলাদেশ সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার ঘোষণা দেয়ার পরও ২০১২ সালে এ ধরনের ৭০টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিনা জবাবদিহিতায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার ফলে আইনশৃঙ্খলা এবং বিচার ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ছে এবং সমাজে এক ধরনের দায়হীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। শাহ আলমের হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ অফিসারদেরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেয়ারও দাবি জানায় অধিকার।
No comments