সারাদেশে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা, নগরজুড়ে দুর্ভোগ-আজ শেষ হচ্ছে কাভার্ডভ্যান ধর্মঘট
সারাদেশে পণ্য পরিবহনে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। বাজারে বেড়েছে কাঁচামালসহ নিত্যপণ্যের দাম। পণ্যবাহী পরিবহনে ডাকাতি, পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধসহ ১৪ দফা দাবিতে বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। আজ ভোর ছয়টা থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা আছে।
ঢাকা জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীজুড়ে চরম পরিবহন সঙ্কটে ভুগতে হয়েছে নগরবাসীকে। পুলিশের সঙ্গে অটোরিক্সা শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে। এতে আহত হয়েছে ২০ জনের বেশি। এছাড়াও গত দুই দিনে শ্রমিকরা প্রায় এক হাজার অটোরিক্সা ভাংচুরের অভিযোগ করেছে সিএনজি অটোরিক্সা মালিক সমিতি।
শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, সমাবেশ করার সময় শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। সমাবেশে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধেও হামলার অভিযোগ করেন ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলছেন, দাবি না মানলে ধর্মঘট চলবে। ১০ দফা দাবিতে বুধবার থেকে অটোরিক্সা ধর্মঘট শুরু হয়।
ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্মঘটের কারণে সারাদেশে প্রায় ৮০ হাজার ট্রাক কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দাবি না মানলে ঈদের পর কঠের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
নগরজুড়ে দুর্ভোগ
অটোরিক্সা বন্ধ থাকায় রাজধানীতে গণপরিবহন সঙ্কট দেখা দেয়। বাদুড়ঝোলা হয়ে বাসে চলতে দেখা গেছে যাত্রীদের। আন্দোলনের মুখে ট্যাক্সি ও মিশুক চলাচল কম দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার যারা রিক্সায় চলেছেন তাদের গুনতে হয়েছে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া। সব মিলিয়ে প্রথম দিনের মতো ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও নাগরিক দুর্ভোগ চরমে ওঠে। তাছাড়া দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষ করে অফিসগামী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বেশি দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। কমলাপুর, সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী, সদরঘাট বাস, লঞ্চ টার্মিনালসহ রেলস্টেশনে কোন অটোরিক্সা চোখে পড়েনি। দু’য়েকটি চোখে পড়লেও ভাড়া তিনগুণের বেশি। আতঙ্কিত অবস্থায় দু’য়েকজন চালককে অটোরিক্সা চালাতে দেখা গেছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেমসহ বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে অটোরিক্সা না থাকায় রোগী আনানেয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে বাসায় ফিরেছেন।
বিকেলে রাজধানীর চিত্র ছিল আরেকটু ভিন্ন। বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহনের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঘরমুখো মানুষ। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্মঘট সমাধানের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। কমলাপুর, মতিঝিল, টিকাটুলি, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, বাড্ডা, গুলশান-১ ও ২, বনানী, গুলিস্তান, বাংলাবাজার, রায়সাহেববাজার, শাহবাগ, পল্টন, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, আসাদগেট, কলেজগেট, টেকনিক্যাল, মিরপুর-১ ও ১০ নম্বর গোল চত্বরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
শ্রমিক সমাবেশ অটোরিক্সা
ভাংচুর পুলিশী ধাওয়া
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সিএনজি চালিত অটোরিক্সাচালক ও শ্রমিকদের সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। পুলিশ ধাওয়া করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে একজন আহত হয়েছেন।
এছাড়া সমাবেশে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীর পল্টন এলাকায় গাড়ি ভাংচুর করেছে সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ ৪ জনকে আটক করেছে। ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অটোরিক্সা চালক ও শ্রমিকদের ডাকে চলমান ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে এ ঘটনা ঘটে।
সমাবেশ করতে অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা একটি মিছিলসহ প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। এ সময় পুলিশ তাদের সমাবেশ করতে বাধা দেয়। সিএনজি চালক-শ্রমিকরা বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় সিএনজি চালকদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জও করে।
পুলিশের লাঠিচার্জে ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে পড়ে। হানিফ খোকনকে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অপরদিকে পুলিশ অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক চাঁন মিয়াকে আটক করে গাড়িতে তুলে নেয়। ১৫ মিনিট তাকে আটকে রাখার পর তাকে ছেড়ে দেয়।
এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক শহিদ চৌধুরী বলেন, আমরা কারও ওপর লাঠিচার্জ করিনি। প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করার মতো কোন জায়গা খালি নেই। সেজন্য তাদের চলে যেতে বলেছি। এ সময় নিজেদের ধাক্কাধাক্কিতে একজন পড়ে গিয়ে আহত হন। কাউকে আমরা আটক করেও রাখিনি।
এদিকে ছত্রভঙ্গ অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের উল্টোদিকের সড়কে তাৎক্ষণিক এক প্রতিবাদ সভা করেন। সভায় অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সরদার মোঃ সোবহান ও ঢাকা জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল হক বক্তব্য রাখেন। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পল্টন মোড়ে গেলে বিক্ষুব্ধ সিএনজি চালকরা গাড়ি ভাংচুর করে। গাড়ি ভাংচুর করার সময় পুলিশ হাতেনাতে আক্তার হোসেন (৩০), নাজমুল হোসেন (৩০), আবুল কালাম আজাদ (৩৫) ও নজরুল ইসলামকে (৩৫) আটক করে।
ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন অভিযোগ করে জনকণ্ঠকে বলেন, কর্মসূচী বানচাল করতে অটোরিক্সা মালিকরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আমাদের ওপর হামলা চালায়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হামলায় সাতজন আহত হওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক অটোরিক্সা শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচী চলবে বলেও জানান এই শ্রমিক নেতা।
ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম ভুলু শ্রমিক ইউনিয়নের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করে জনকণ্ঠকে বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মী অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের দুই দিনে প্রায় এক হাজার অটোরিক্সা ভাংচুর করেছে। তারা অনেক মালিক ও চালকের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানে তিনি সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।
শেষ হচ্ছে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট
আজ ভোর ছয়টায় শেষ হচ্ছে বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের দেশব্যাপী আহূত ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট। বুধবার থেকে ধর্মঘট শুরু হয়। ঐক্য পরিষদ নেতাদের দাবি সারাদেশে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ। ধর্মঘট চলাকালে দেশের কোন প্রান্ত থেকে পণ্য পরিবহন করা হয়নি। এই সুযোগে বাজারে বেড়েছে কাঁচামালসহ নিত্যপণ্যের দাম।
১৪ দফা দাবি দাওয়ার মধ্যে রয়েছে, মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাইসহ শ্রমিক হত্যা বন্ধ করা, পুলিশের চাঁদাবাজি ও সার্জেন্টদের হয়রানিসহ মামলা বন্ধ করা, মোটরযান অধ্যাদেশে মামলা না করা, ঢাকা মহানগরে দিনের বেলায় ছোট গাড়িসহ পিকআপ প্রবেশের অনুমতি দেয়া, নিয়মতান্ত্রিকভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া, রেকারের নামে পুলিশের হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধ প্রভৃতি।
বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী জনকণ্ঠকে জানান, আমরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে ধর্মঘট আহ্বান করেছি। কিন্তু আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও সরকারে পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে আলোচনার কোন প্রস্তাব আসেনি। তবে আমরা শুনেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে মহাসড়কে পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধসহ ডাকাতি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে দাবিদাওয়া পূরণ হয় তাহলে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
আগামীকাল ভোর ছয়টায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে রুস্তম আলী বলেন, দাবি পূরণ না হলে ঈদের পর জেলার নেতাদের ডেকে বৃহৎ কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। সরকারের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাদের দাবিদাওয়া যৌক্তিক বা সত্য হলে তা পূরণে যথাযথ ব্যবস্থা নিন।
শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, সমাবেশ করার সময় শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। সমাবেশে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধেও হামলার অভিযোগ করেন ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলছেন, দাবি না মানলে ধর্মঘট চলবে। ১০ দফা দাবিতে বুধবার থেকে অটোরিক্সা ধর্মঘট শুরু হয়।
ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্মঘটের কারণে সারাদেশে প্রায় ৮০ হাজার ট্রাক কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দাবি না মানলে ঈদের পর কঠের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
নগরজুড়ে দুর্ভোগ
অটোরিক্সা বন্ধ থাকায় রাজধানীতে গণপরিবহন সঙ্কট দেখা দেয়। বাদুড়ঝোলা হয়ে বাসে চলতে দেখা গেছে যাত্রীদের। আন্দোলনের মুখে ট্যাক্সি ও মিশুক চলাচল কম দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার যারা রিক্সায় চলেছেন তাদের গুনতে হয়েছে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া। সব মিলিয়ে প্রথম দিনের মতো ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও নাগরিক দুর্ভোগ চরমে ওঠে। তাছাড়া দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষ করে অফিসগামী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বেশি দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। কমলাপুর, সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী, সদরঘাট বাস, লঞ্চ টার্মিনালসহ রেলস্টেশনে কোন অটোরিক্সা চোখে পড়েনি। দু’য়েকটি চোখে পড়লেও ভাড়া তিনগুণের বেশি। আতঙ্কিত অবস্থায় দু’য়েকজন চালককে অটোরিক্সা চালাতে দেখা গেছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেমসহ বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে অটোরিক্সা না থাকায় রোগী আনানেয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে বাসায় ফিরেছেন।
বিকেলে রাজধানীর চিত্র ছিল আরেকটু ভিন্ন। বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহনের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঘরমুখো মানুষ। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্মঘট সমাধানের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। কমলাপুর, মতিঝিল, টিকাটুলি, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, বাড্ডা, গুলশান-১ ও ২, বনানী, গুলিস্তান, বাংলাবাজার, রায়সাহেববাজার, শাহবাগ, পল্টন, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, আসাদগেট, কলেজগেট, টেকনিক্যাল, মিরপুর-১ ও ১০ নম্বর গোল চত্বরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
শ্রমিক সমাবেশ অটোরিক্সা
ভাংচুর পুলিশী ধাওয়া
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সিএনজি চালিত অটোরিক্সাচালক ও শ্রমিকদের সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। পুলিশ ধাওয়া করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে একজন আহত হয়েছেন।
এছাড়া সমাবেশে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীর পল্টন এলাকায় গাড়ি ভাংচুর করেছে সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ ৪ জনকে আটক করেছে। ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অটোরিক্সা চালক ও শ্রমিকদের ডাকে চলমান ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে এ ঘটনা ঘটে।
সমাবেশ করতে অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা একটি মিছিলসহ প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। এ সময় পুলিশ তাদের সমাবেশ করতে বাধা দেয়। সিএনজি চালক-শ্রমিকরা বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় সিএনজি চালকদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জও করে।
পুলিশের লাঠিচার্জে ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে পড়ে। হানিফ খোকনকে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অপরদিকে পুলিশ অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক চাঁন মিয়াকে আটক করে গাড়িতে তুলে নেয়। ১৫ মিনিট তাকে আটকে রাখার পর তাকে ছেড়ে দেয়।
এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক শহিদ চৌধুরী বলেন, আমরা কারও ওপর লাঠিচার্জ করিনি। প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করার মতো কোন জায়গা খালি নেই। সেজন্য তাদের চলে যেতে বলেছি। এ সময় নিজেদের ধাক্কাধাক্কিতে একজন পড়ে গিয়ে আহত হন। কাউকে আমরা আটক করেও রাখিনি।
এদিকে ছত্রভঙ্গ অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের উল্টোদিকের সড়কে তাৎক্ষণিক এক প্রতিবাদ সভা করেন। সভায় অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সরদার মোঃ সোবহান ও ঢাকা জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল হক বক্তব্য রাখেন। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পল্টন মোড়ে গেলে বিক্ষুব্ধ সিএনজি চালকরা গাড়ি ভাংচুর করে। গাড়ি ভাংচুর করার সময় পুলিশ হাতেনাতে আক্তার হোসেন (৩০), নাজমুল হোসেন (৩০), আবুল কালাম আজাদ (৩৫) ও নজরুল ইসলামকে (৩৫) আটক করে।
ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন অভিযোগ করে জনকণ্ঠকে বলেন, কর্মসূচী বানচাল করতে অটোরিক্সা মালিকরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আমাদের ওপর হামলা চালায়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হামলায় সাতজন আহত হওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক অটোরিক্সা শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচী চলবে বলেও জানান এই শ্রমিক নেতা।
ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম ভুলু শ্রমিক ইউনিয়নের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করে জনকণ্ঠকে বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মী অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের দুই দিনে প্রায় এক হাজার অটোরিক্সা ভাংচুর করেছে। তারা অনেক মালিক ও চালকের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানে তিনি সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।
শেষ হচ্ছে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট
আজ ভোর ছয়টায় শেষ হচ্ছে বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের দেশব্যাপী আহূত ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট। বুধবার থেকে ধর্মঘট শুরু হয়। ঐক্য পরিষদ নেতাদের দাবি সারাদেশে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ। ধর্মঘট চলাকালে দেশের কোন প্রান্ত থেকে পণ্য পরিবহন করা হয়নি। এই সুযোগে বাজারে বেড়েছে কাঁচামালসহ নিত্যপণ্যের দাম।
১৪ দফা দাবি দাওয়ার মধ্যে রয়েছে, মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাইসহ শ্রমিক হত্যা বন্ধ করা, পুলিশের চাঁদাবাজি ও সার্জেন্টদের হয়রানিসহ মামলা বন্ধ করা, মোটরযান অধ্যাদেশে মামলা না করা, ঢাকা মহানগরে দিনের বেলায় ছোট গাড়িসহ পিকআপ প্রবেশের অনুমতি দেয়া, নিয়মতান্ত্রিকভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া, রেকারের নামে পুলিশের হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধ প্রভৃতি।
বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী জনকণ্ঠকে জানান, আমরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে ধর্মঘট আহ্বান করেছি। কিন্তু আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও সরকারে পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে আলোচনার কোন প্রস্তাব আসেনি। তবে আমরা শুনেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে মহাসড়কে পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধসহ ডাকাতি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে দাবিদাওয়া পূরণ হয় তাহলে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
আগামীকাল ভোর ছয়টায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে রুস্তম আলী বলেন, দাবি পূরণ না হলে ঈদের পর জেলার নেতাদের ডেকে বৃহৎ কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। সরকারের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাদের দাবিদাওয়া যৌক্তিক বা সত্য হলে তা পূরণে যথাযথ ব্যবস্থা নিন।
No comments