পুলিশের নীরবতা, ফের অশান্ত জাফলং by ওয়েছ খছরু

রহস্যময় নীরবতা পুলিশের। এই সুযোগে জাফলং লুটে খাচ্ছে বালু ও পাথরখেকোরা। ৫ই আগস্টের আগে যে সিন্ডিকেট ছিল তারা বিদায় নিয়েছে। এসেছে নতুন সিন্ডিকেট। এখন তাদের দখলেই জাফলং। গণঅভ্যুত্থানের দিন থেকেই লুটের মহোৎসব চলছে। ইতিমধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সাম্প্রতিক সমীক্ষা করে জানিয়েছে; জাফলং কোয়ারি থেকে ১২০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। এ নিয়ে হৈচৈ জাফলং জুড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় আসামি হয়েছেন বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন ও জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরানের পদ স্থগিত করা হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার জাফলংয়ের বর্তমান সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা সিলেট জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সোহেল আহমদ ও যুবলীগ নেতা আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে; বর্তমান দখলদাররা জাফলংয়ে বোমা বেশি লাগিয়ে পাথর লুট করছে। আর এতে বাধা দেয়া হলে নিরীহ মানুষের বাড়িঘরে লুটপাট করা হয়। যারা বাধা দিয়েছে তাদের আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর হিসেবে ‘ট্যাগ’ লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। জাফলংয়ের নয়াবস্তি, কান্দুবস্তি ও জুমবার এলাকার লোকজন জানিয়েছেন; পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা- ইসিএ হিসেবে জাফলং চিহ্নিত। উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেখানে বালু ও পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকের কয়েক বছর পাথর লুটপাট বন্ধ থাকলেও বর্ষা মৌসুমে কোটি কোটি টাকার বালু লুট করা হয়েছে। আর এ লুটপাটে জড়িত ছিল সর্বদলীয় সিন্ডিকেট। ৫ই আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মিছিল থেকে পূর্বের জাফলং সিন্ডিকেটের প্রধান ইমরান হোসেন সুমন ওরফে জামাই সুমন ও তার স্বজনদের বাড়িঘরে লুটপাট করা হয়। এরপর এরা গা-ঢাকা দিয়েছে।

এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, এ ঘটনার পর থেকে অবাধে লুট করা হচ্ছে পাথর ও বালু। প্রতিদিন কোয়ারি এলাকা থেকে ৫-৬ কোটি টাকার বালু ও পাথর লুট করা হচ্ছে। জোরপূর্বক অনেকের জমি দখলে নিয়ে লুটপাট করার কারণে জমির মালিকরা বাধা দিচ্ছেন। আর এতেই বাধছে বিরোধ। আর এই বিরোধকে কেন্দ্র করে জাফলংয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মামলা ও পাল্টা মামলা শুরু হয়েছে। জাফলংয়ে জুমপাড়ে থাকা দুই বস্তি রক্ষার বেড়িবাঁধ ধ্বংস করে কয়েক কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে ট্রাক শ্রমিক নামধারী লাঠিয়াল বাহিনী। পুলিশও তাদের কাছে অসহায়। সশস্ত্র অবস্থায় কোয়ারিতে মহড়া দেয়ার কারণে পুলিশ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নীরব ভূমিকায় রয়েছে। কয়েক দিন আগে নয়াবস্তির মূল সড়কের পাশে পিয়াইন নদীতে অর্ধশতাধিক বোমা মেশিন বসিয়ে পাথর উত্তোলন করছিলেন বর্তমান পাথরখেকো সিন্ডিকেটরা। স্থানীয়রা এ নিয়ে ইউপি মেম্বারের কাছে বিচারপ্রার্থী হলে মেম্বার গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। এরপর পাথরখেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা হামলা চালিয়ে চারটি বাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় কয়েকজন মহিলাকে পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় দু’টি অভিযোগ দায়ের করা হলে পুলিশ একটি মামলা করেছে। বিষয়টিকে মিথ্যা প্রমাণিত করতে পাথরখেকো সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে একটি চাঁদাবাজির অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে জাফলং জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় জাফলংয়ে ফের অভিযান জোরদার করেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জাফলং কোয়ারিতে ৫ ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়েছে যৌথ টাস্কফোর্স। অভিযানের সময় ১০ লাখ ঘনফুট বালু, ২০ হাজার ঘনফুট পাথর, ৫০ ট্রাম ট্রাক, পাঁচ শতাধিক বার্কি নৌকা জব্দ করা হয়।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.