অটোচালকদের অবরোধ, সংঘর্ষ

ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশের প্রতিবাদে রাজধানীর জুরাইন এলাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন ব্যাটারিচালিত  রিকশাচালকরা। গতকাল সকাল ১১টায় জুরাইন রেল গেইট এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন তারা। তাদের বোঝাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া দেয় বিক্ষুব্ধ রিকশাচালকরা। দিনভর রেলগেট অবরোধ করে রাখায় ঢাকা থেকে নারয়ণগঞ্জ ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের রেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

গত ১৯শে নভেম্বর দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন অটোরিকশা চালকরা। হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, জুরাইনসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বৃহস্পতিবার দিনভর বিক্ষোভের পর শুক্রবারও রাজধানীর জুরাইন এলাকার রাস্তায় নেমে আসেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা। সকাল ১১টায় জুরাইন বাজার এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ’ অটোরিকশা চালক। এ সময় এলাকাটির যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১২টার দিকে এলাকাটিতে আসা পুলিশের গাড়ি ঘিরেও বিক্ষোভ করে অটোরিকশা চালকরা। তাদের তোপের মুখে পুলিশ ভ্যান নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরপর জুরাইন রেলগেটে গিয়ে রেললাইনে অবস্থান নিয়ে রেল চলাচল বন্ধ করে দেয় অটোরিকশা চালকরা। তাদেরকে বোঝাতে গেলে পুলিশ সদস্যদেরকেও ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয় তারা। উভয় গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুরো এলাকায় দিনভর আতঙ্ক বিরাজ করে। সাধারণ মানুষ তাদের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। চার ঘণ্টা যাবৎ রেললাইন অবরোধের জেরে জুরাইন রেলস্টেশনে আটকে পড়ে নারায়ণগঞ্জ কমিউটার। অন্যদিকে অবরোধের কারণে কমলাপুরের শহরতলী স্টেশনে আটকা পড়ে খুলনাগামী নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেন। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকাল ৩টায় অটোরিকশা চালকরা রাস্তা ছেড়ে দিলে সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। চালু করা হয় ট্রেন চলাচলও। বিক্ষোভে যোগ  দেয়া মো. হাসান নামে এক রিকশাচালক বলেন, আমরা কেউ ঋণ নিয়ে একেক জন এই রিকশা কিনেছি। কেউ মহাজনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে রিকশা চালাই। সকলেই আমরা পেটের দায়ে এই অটোরিকশা নিয়ে বের হই। কিন্তু রিকশা নিয়ে সড়কে উঠলেই আমাদের ব্যাটারি খুলে নিয়ে নেয়া হয়। তার কেটে দেয়া হয়। কখনো কখনো রাস্তার উপরে রিকশা উল্টো করে রেখে দেয়া হয়। আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা। এরপর এখন পুরোপুরি আমাদের এই অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই রিকশা যদি চালাতে না পারি তাহলে আমরা খাবো কী? বউ-বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো? তাই আমাদের দাবি আমাদের এই অটোরিকশা চলাচল যেনো বন্ধ করা না হয়। জুয়েল নামে আরেক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক বলেন, আমরা তো চুরি-ছিনতাই করছি না। আমরা তো কারোর কাছে হাত পাতছি না। চেয়ে খাচ্ছি না। আমরা কাজ করে খাই। আর আমাদের এই রুটি-রুজি যার মাধ্যমে আসে সেই অটোরিকশাই বন্ধ করে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। আমাদের পেটে লাথি মারা হচ্ছে। আমরা এই ঘোষণা কখনোই মানি না। দুইদিন পর না খেয়ে মরে যাওয়ার চেয়ে নিজের দাবি নিয়ে রাস্তায় মরে যাওয়া ভালো। তাই হয় আমাদের রিকশা চালাতে দিতে হবে; না হয় আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।  

এদিকে ট্রেন চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে কমলাপুর স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, জুরাইনে রেললাইন অবরোধের কারণে শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জুরাইন রেলস্টেশনে নারায়ণগঞ্জ কমিউটার আটকা পড়ে। একই কারণে খুলনাগামী নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেনটি কমলাপুরের শহরতলি স্টেশন থেকে ছেড়ে যেতে পারেনি। এতে করে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনাগামী ছাড়াও ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের রেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা পর বিকাল ৩টা থেকে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়।  

বিক্ষোভের বিষয়ে জুরাইন এলাকায় দায়িত্ব পালন করা শ্যামপুর থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুন নাহার বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা জুরাইন এলাকায় রেললাইন দখল করে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। তারা রেললাইনে অবস্থান নিয়ে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে বিকাল তিনটায় তারা রাস্তা ছেড়ে দেয়।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.