ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের আগে ইউক্রেনে রুশ হামলা জোরদার পশ্চিমাদের কীসের বার্তা দেয়?

রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেন আগুনে ঘি ঢাললেন। ক্ষমতা ছাড়ার আগ মুহূর্তে বাইডেনের এমন সিদ্ধান্তে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন যে উত্তেজনা যোগ করেছে তাতে এ বিষয়টিই স্পষ্ট হয়েছে। কে না জানতো যে, ইউক্রেনকে ভারী মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিলে নিজেদের হামলা আরও তীব্র করবে রাশিয়া। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্প আসার আগে বাইডেন প্রশাসনের শেষ সময়ের এমন কাকতালীয় সিদ্ধান্ত মস্কো-কিয়েভের সংঘাতে নতুন উত্তেজনা যোগ করেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, বাইডেনের এমন সিদ্ধান্তের পর রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই জানে না আগামী জানুয়ারিতে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে। কিন্তু এখন যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করছে তা যে ট্রাম্প প্রশাসনে স্থিতাবস্থা তৈরি করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা, ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি কোনো যুদ্ধ চান না।

গত সপ্তাহে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা এখনো জানে না ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কী পরিকল্পনা করছেন। তবে ট্রাম্পের আগাম ঘোষণার উপর ভিত্তি করেই ইউক্রেন নিজেদের সিদ্ধান্তের বাঁক বদল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। আর রাশিয়া চাইছে ইউক্রেনের কুরস্ক অঞ্চলের বেশ কিছু অঞ্চল নিজেদের দখলে রাখতে। এর মাধ্যমে যতটা সম্ভব ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখতে চাইছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনও ট্রাম্পকে নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে। এক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই ইউরোপিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে যোগাযোগ করছে বাইডেন প্রশাসন। তাদের ধারণা হচ্ছে ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলেই ইউক্রেন তাদের ন্যায্য লড়াই থামাতে বাধ্য হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই বাইডেন তার বিগত সময়ের সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে এসে রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত এটিএসিএমএস নামের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। এর পাশাপাশি ইউক্রেনকে ল্যান্ডমাইন ব্যবহারেরও অনুমতি দিয়েছে তার প্রশাসন। এ ছাড়া ইউক্রেনকে কারিগরি সাহায্যের জন্য মার্কিন সামরিক ঠিকাদার পাঠানোর কথাও জানিয়েছেন বাইডেন। যদিও এমন পরিস্থিতিতে বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত গেম-চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে কিনা তা নিয়ে বেশ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা। কেননা, তারা বলছেন বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউক্রেনকে এমন অনুমোদন দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু এখন শেষ সময়ে তার এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের জন্য মঙ্গলজনক হবে কিনা সে বিষয়ে বেশ সন্দেহ তৈরি করেছে। জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে এসেই বাইডেনের এমন সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিতে পারেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তবে এক্ষেত্রে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের দিকটিও মাথায় রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। কেননা, ট্রাম্প প্রশাসনে এবার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে মার্কিন বাণিজ্য খাত। সেক্ষেত্রে ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসলে তিনি এ বিষয়ে বেশ জোর দিতে পারেন বলা ধারণা করা হচ্ছে। বাইডেনের অনুমোদনের পরপরই ইউক্রেনে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে পুতিন। দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের ঠিক আগ মুহূর্তে ইউক্রেনে পুতিনের হামলার মাত্রা বৃদ্ধি পশ্চিমা মিত্রদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.