মোবাইল খরচে লাগাম টানা হচ্ছে by কাজী সোহাগ
মোবাইল
খরচে লাগাম টানছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ইন্টারনেট ও ভয়েস কলের রেট
নির্ধারণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে। এতদিন
মোবাইল অপারেটররা ইচ্ছামতো দাম আদায় করেছেন গ্রাহকদের কাছ থেকে। এতে
গ্রাহকদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক অপারেটরও। এখন থেকে ছোট-বড় সব
অপারেটরদের একই দামে সেবা দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়তি দাম নেয়ার কোনো সুযোগ
থাকছে না। পাশাপাশি অপারেটরদের শত শত অফারেরও প্রয়োজন হবে না বলে জানান
সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে অফ-নেট (এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটর) ও অন-নেট
(একই অপারেটর) নিয়েও চলছে নানা ধরনের অফার। দাম নির্ধারণের পর এসব আর থাকবে
না। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাত-সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের এক
বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর
তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে
ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কোনো দাম বেঁধে দেয়া নেই। ফলে মোবাইল ফোন
অপারেটররা নিজেরা নিজেদের মতো করেই ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণ করছে। এ
প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী এক মাসের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন
করা হবে। এর মাধ্যমে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। তবে এ
ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে একটি কস্ট মডেলিংয়ের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্টরা
জানান, কস্ট মডেলিং পদ্ধতি হলো একটি সেবা দিতে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কত
খরচ হয়, সেটি বের করার পদ্ধতি। সেবার মূল্য নির্ধারণে বিভিন্ন গাণিতিক
সমীকরণ কস্ট মডেলিংয়ে ব্যবহার করা হয়। ভয়েস কলের দাম নির্ধারণে আইটিইউর
একজন পরামর্শক দিয়ে ২০০৮ সালে একটি কস্ট মডেলিং করেছিল বিটিআরসি। সেই মডেল
অনুসারে প্রতি মিনিট ভয়েস কলের সর্বোচ্চ মূল্য ২ টাকা আর সর্বনিম্ন মূল্য
২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমানে মোবাইল ফোন অপারেটরের নিজেদের
গ্রাহকদের (অন-নেট) মধ্যে কথা বলার সর্বনিম্ন খরচ ২৫ পয়সা, অন্য অপারেটরে
(অফ-নেট) ফোন করার সর্বনিম্ন খরচ ৬০ পয়সা। আর যেকোনো মোবাইলে ফোন করার
সর্বোচ্চ খরচ ২ টাকা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গত
বছর অন-নেট ও অফ-নেট কলের মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিল। সে
সময় কল রেটের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সীমা যথাক্রমে ৩৫ পয়সা ও ১ টাকা ৫০ পয়সা
করতে চেয়েছিল। তবে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। বাংলাদেশ
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে
সক্রিয় মোবাইল সংযোগের সংখ্যা সাড়ে ১৪ কোটি। আর ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা ৮
কোটির বেশি। দাম নির্ধারিত না থাকায় মোবাইল ডেটা বিপণনের শুরু থেকেই
অপরেটররা গ্রাহকদের কাছ থেকে নিজেদের ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে। একই পরিমাণ
ডেটার দাম একেক অপারেটরে একেক রকম। শুধু তাই নয়, সেই ইন্টারনেট ব্যবহারের
মেয়াদও ভিন্ন ভিন্ন। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার নানাভাবে দেশের বিভিন্ন
খাতকে ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণ তার সুফলও ভোগ করছে। তবে
ইন্টারনেট ডেটার দাম সাধারণ মানুষের আরো হাতের নাগালে না নেয়া হলে অনেকেই
সেই সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন। এই অবস্থায় ইন্টারনেট ডেটার দাম বেঁধে দেয়ার
সরকারি সিদ্ধান্ত যুগোপযোগী। যত দ্রুত সম্ভব এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা
প্রয়োজন। এর আগে গত বছরের আগস্টে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়।
মোবাইল ফোনের কলরেট বাড়ানো-কমানো নিয়ে তৈরি হয় টানাপড়েন। চলে চিঠি
চালাচালি। ওই সময় কলরেট নিয়ে বিটিআরসির দেয়া প্রস্তাবে সায় দেয়নি ডাক ও
টেলিযোগাযোগ বিভাগ। গ্রাহক স্বার্থের কথা চিন্তা করে বিটিআরসির পাঠানো ফাইল
ফেরত পাঠানো হয়। এ নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির মধ্যে
শুরু হয় ঠান্ডা লড়াই। বিটিআরসির প্রস্তাবে একই অপারেটরে (অন-নেট)
নেটওয়ার্কে ফোন করার সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ পয়সা করার
প্রস্তাব করা হয়। অন্য অপারেটরে (অফ-নেট) ফোন করার সর্বনিম্ন মূল্য ৬০ পয়সা
থেকে কমিয়ে ৪৫ পয়সা আর সর্বোচ্চ কলরেট ২ টাকা থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সা
নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় বিটিআরসি।
No comments