‘সামান্য ক্ষতি’ ও ‘দুই বিঘা জমি’
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক
রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের চাকরিচ্যুতি এবং তা নিয়ে সংসদে আলোচনার
প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামালের মাধ্যমে ডা.
জুবাইদা রহমান এ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কায়সার কামাল স্বাক্ষরিত প্রতিবাদ
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত দুই-একদিনের ঘটনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘সামান্য
ক্ষতি’ ও ‘দুই বিঘা জমি’ পদ্য দু’টির কিছু পঙ্ক্তি মনে পড়ে যায়। প্রচণ্ড
ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গের কাছে ক্ষুদ্র ক্ষমতার অপরিসীম ক্ষতিও সামান্য মনে
হয়। ডা. জুবাইদা রহমান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ও দেশনেত্রী বেগম
খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ। তিনি মরহুম রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের কন্যা।
কিন্তু এসব কিছুর পরও তার পরিচয় তিনি একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, একজন
দায়িত্বশীল স্ত্রী ও মা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও একটি ক্ষুদ্র পরিচয়-
মেডিকেল অফিসার হিসেবে সরকারি চাকরিটি। এই অরাজনৈতিক ও মেধাবী নারীর
চাকরিচ্যুতিতে সংসদ সদস্যরা কি হাস্যরস খুঁজে পেলেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছি
না। একই সঙ্গে এই অতি সামান্য ও অনুভূতিপ্রবণ একান্তই ব্যক্তি পর্যায়ের
একটি সংবাদ মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেনই বা সংসদে ঘোষণা দিতে গেলেন- তার
কারণ উদঘাটন করতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হবে বুঝতে পারছি। কারণ অনেক সময়
পরিবারের অন্য সদস্যরাও বহুক্ষেত্রেই জানতেই পারেন না একই পরিবারে কেউ যখন
চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়। অন্তত ঢাকঢোল পিটিয়ে, সংসদে ঘোষণা করে কখনওই তা
প্রচার করা হয় না। ডা. জুবাইদা রহমান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট এমডি
(কার্ডিওলোজি) কোর্সের ৩য় পর্বে অধ্যায়নরত অবস্থায় মারাত্মকভাবে অসুস্থ
স্বামীর উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয় কর্তৃক
যথাযথ প্রক্রিয়ায় ছুটি (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্মারক
নম্বর পার-৫/ছুটি-১৭/শিক্ষা/২০০৮/১১২৮, তারিখঃ ০৩.১১.২০০৮) গ্রহণ করে
যুক্তরাজ্য গমন করেন। নির্ধারিত ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরকারি নিয়ম
মেনে তিনি পুনরায় ছুটির আবেদন করলে মন্ত্রণালয় পুনরায় তিন মাসের জন্য ছুটি
মঞ্জুর করে। উল্লেখ্য, তিনি বিনা বেতনে বহিঃবাংলাদেশ ছুটি ভোগ করছেন বিধায়
বিদেশে থাকাকালে সরকারি কোষাগার থেকে কোন বেতন-ভাতা গ্রহণ করেননি। স্বামীর
অসুস্থতা নিরাময় না হওয়ায় মানবিক দিক বিবেচনা করে পুনরায় বহিঃবাংলাদেশ ছুটি
প্রদানের জন্য তিনি যথানিয়মে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু এ
ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কোন জবাব দেয়নি। এরপরও কয়েক দফা একই কারণে ছুটির মেয়াদ
বৃদ্ধির জন্য আবেদন করলেও মন্ত্রণালয় কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আত্মপক্ষ
সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়ে এবং আইন অনুসরণ না করেই তাকে চাকরিচ্যুত করা
হয়েছে। সরকারি চাকরি হতে কোন সরকারি কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হলে তা সংসদে
কোন মন্ত্রী উপস্থাপন করেন না। শুধু ড. জুবাইদা রহমানের ক্ষেত্রেই তা করা
হয়েছে। দেশ-বিদেশে তাকে ও তার পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ঘৃণ্য
উদ্দেশ্যে এ কাজ করা হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্যই এ কাজ
করা হয়েছে বলে মনে হয়। ডা. জুবাইদা সব সময় নিজেকে রাজনীতির বাইরে রেখে একজন
চিকিৎসক হিসেবে দেশের মানুষকে উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। রাজনৈতিক
পরিমণ্ডলে তার কোন বিচরণ নেই। এমতাবস্থায় শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের
জন্য সংসদে একজন সরকারি কর্মকর্তার বরখাস্তের বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসির
অবতারণা কতটা যৌক্তিক হয়েছে তা বিবেচনার দাবি রাখে। ডা. জুবাইদাকে চাকরি
হতে অব্যাহতি প্রদানের বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করে এবং তা নিয়ে সংসদে
হাস্যরসের অবতারণা করে দেশের একজন নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে
আমরা মনে করি। একই সঙ্গে সংসদে বিষয়টি আলোচনা করে দেশের একজন নারীর
সম্মানের প্রতি চরম অবমাননা করা হয়েছে কিনা তা-ও বিবেচনার দাবি রাখে।
No comments