দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয় না, গুঞ্জরিত হয় - সময়ের প্রতিবিম্ব by এবিএম মূসা
রাজনীতিবিদ মানেই সব দুর্নীতিবাজ। তদুপরি যদি তিনি মন্ত্রী হন অথবা অতীতে কোনো সময়ে মন্ত্রী হয়ে থাকেন, তাহলে তো কথাই নেই। তাঁর দুর্নীতি নিয়ে গুজব ও রটনা ছড়িয়ে পড়ে, সত্য ও মিথ্যা অভিযোগ আলোচিত হয়। রাজনীতিতে দুর্নীতি নিয়ে জনমনে এমন ধারণা সৃষ্টির জন্য বিশেষ মহলের প্রচারণা শুরু হয় ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানিদের দোসর মোসলেম লীগের পরাজয়ের পর। প্রথমে দুর্নীতির সঙ্গে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ সংযুক্ত করে যুক্তফ্রন্টকে তথা পূর্ববঙ্গবাসীকে দ্বিধাবিভক্ত করা হলো। অতঃপর রাজনীতিবিদ প্রধানত মন্ত্রীদের জেলে পুরে তত্কালীন পূর্ব বাংলায় পশ্চিমা গভর্নর জেনারেলের শাসন চাপিয়ে দেওয়া হলো। কয়েক বছরের মধ্যেই অবশ্য জনগণের রাজনীতি—যার ভাবার্থ হলো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা—পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তারপর ১৯৫৮ সালে এল সামরিক স্বৈরতন্ত্র। গণতান্ত্রিক শাসনকে স্থানচ্যুত করে সামরিক শাসন কায়েম করলেন রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা, নেপথ্যে জেনারেল আইয়ুব খান। ক্ষমতায় এসেই জেনারেল আইয়ুব খান বুঝলেন, সেনাশাসন কায়েম করতে হলে জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে উচ্ছেদ করতে হবে। এরই প্রথম পদক্ষেপ হবে, রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন, তাঁদের প্রতি জনগণের বিদ্বেষ সৃষ্টি। সেই ইচ্ছার প্রতিফলনে তিনি রাজনীতিবিদদের ঢালাওভাবে দুর্নীতিবাজ অভিহিত করে রাজনীতির সামনের কাতারের ব্যক্তি-মন্ত্রীদের ও গড়পড়তা সব রাজনীতিবিদকে নির্বাসনে পাঠানোর জন্য একটি ফরমান জারি করলেন—পাবলিক রিপ্রেজেনটেটিভ অফিসারস ডিসকোয়ালিফিকেশনস অ্যাক্ট। জনপ্রতিনিধিত্ব করার অধিকার হরণ করার জন্য এ আইনে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো। অধিকাংশকে সামরিক আদালত জেলে পাঠালেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের অনেকেই সামরিক শাসকের দাবড়ানিতে তথাকথিত সব দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে অবসরে গেলেন। অল্প কয়েকজন আদালতে লড়াই করে অভিযোগ খণ্ডনের সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, হামিদুল হক চৌধুরী, মিয়া মমতাজ দোলতানা, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ। অবশ্য সামরিক ক্যাঙারু কোর্ট তাঁদের বক্তব্য আমলে নেননি। আইয়ুবি স্বৈরশাসনের অবসানের পর স্বৈরশাসকের দেওয়া ‘দুর্নীতির লেবাস’টি জনগণই ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল।
রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে মন্ত্রী, নেতা-নেত্রীপর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের গায়ে দুর্নীতির কলঙ্ক লেপনের আইয়ুবি পন্থা অনুসরণ করলেন স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান। পরবর্তী সময়ে জেনারেল এরশাদ সেই প্রয়াস অধিকতর সুসম্পন্ন করলেন। তবে পাকিস্তান আমলের চেয়েও দুর্নীতিবাজের ছাপটি পুরো গায়ে সেঁটে দেওয়ার ক্ষেত্রে জিয়া-এরশাদ কতিপয় রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী-জননেতাকে শুধু একটি লেবাস পরালেন না, অনেককে দুর্নীতিবাজ বানানোর ব্যবস্থাটিও পাকাপোক্ত করলেন। জিয়া বলেই দিলেন, ‘আই শ্যাল মেইক পলিটিকস ডিফিকাল্ট।’ রাজনীতি কঠিন করার প্রথম পদক্ষেপে রাজনীতিবিদদের কলঙ্কিত করার জন্য দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে জেলে পাঠালেন। বস্তুত তাঁর কথিত বাক্যের অনুচ্চারিত অংশটি ছিল ‘বাই মেকিং পলিটিশিয়ানস করাপ্ট তাদের মনে অর্থবিত্তের লোভ সঞ্চারিত করব’, যাতে গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি জনগণ বীতশ্রদ্ধ হয়ে সামরিক শাসনকে পূতঃপবিত্র মনে করবে।
সাম্প্রতিক দুই বছরের প্রচ্ছন্ন সামরিক শাসকগোষ্ঠী ও তাদের আজ্ঞাবহ উপদেষ্টা পরিষদ অতীতের শাসকদের কূটনীতিই পুরোপুরি প্রয়োগ করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। সব স্বৈরশাসকের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার এবংবিধ অপচেষ্টা ব্যর্থ হলেও তাঁরা গণতন্ত্র ও জনপ্রতিনিধিত্বমূলক শাসনপদ্ধতির কতিপয় অপূরণীয় ক্ষতি করে গেলেন, যার দায় জাতিকে এখনো বহন করতে হচ্ছে। প্রথমত, কতিপয় রাজনীতিবিদকে সত্যি দুর্নীতিবাজ বানিয়ে সমাজ, প্রশাসন, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকিয়ে দিয়ে গেলেন। দ্বিতীয়ত, রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে যাঁরা কোনো না কোনো সময়ে সরকারে বা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে জনমনে সন্দেহের বীজ বপন করে গেলেন। মন্ত্রী তথা জনপ্রতিনিধি হলেই দুর্নীতি করে অথবা দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেয়, এমন গুজব ও গুঞ্জন ছড়িয়ে দিলেন। জেনারেল জিয়া ‘পলিটিকস মেইড ডিফিকাল্ট’ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য ‘মানি আর মাসল’, অর্থ ও পেশিশক্তিকে রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে ঢুকিয়ে দিলেন। তাঁর সময়ই তরুণ ও ছাত্রসমাজ দুর্নীতির প্রথম দীক্ষাটি পেয়েছিল। সেই দীক্ষা কালক্রমে মোক্ষলাভ করেছে। সরকারের উচ্চপদে আসীন আমলারাও সেই দুর্নীতির ঘূর্ণাবর্তে পুরোপুরি ডুবে গেলেন। তৃতীয়ত, রাজনীতিবিদেরা দুর্নীতিগ্রস্ত হলেন শুধু তা নয়, অর্থ আর পেশিশক্তির অধিকারীরা জনগণের রাজনীতি কবজা করে ‘দুর্নীতির’ ফাঁক ডোবালেন।
ক্ষমতার রাজনীতি ও দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে দীর্ঘ ভূমিকাটি দিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি সাম্প্রতিক বক্তব্য আলোচনার জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দিন আগে সামরিক স্টাফ কলেজের অনুষ্ঠানে বলেছেন, গত এক বছরে তাঁর কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে বাহ্যত দ্বিমতের অবকাশ নেই। তবে তাঁর বক্তব্য ব্যাখ্যাসাপেক্ষ, মানে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আলোচিত হওয়া প্রয়োজন। ভাবতে হচ্ছে, কেন অভিযোগ শোনা যায়নি বললেন, সরাসরি দুর্নীতি ‘করেননি’ বলতে পারতেন। দুর্নীতির অভিযোগ মন্ত্রীবিশেষ নয়, সরকারের বিরুদ্ধে শোনা যায়, এই প্রেক্ষাপটে প্রথমে আরও জানতে হবে, দুর্নীতির সংজ্ঞা কী। এক. শব্দটি কোনো না কোনো সময় কি শুধু আক্ষরিক অর্থে অথবা বিশেষ তথ্য প্রদানে ব্যবহূত হয়? অথবা দুর্নীতির ব্যাপক পরিচয় রয়েছে। বিভিন্ন পন্থায় অনেক কর্ম সাধিত হয়, যা সরাসরি সাধারণ অর্থে মন্ত্রীর দুর্নীতি বলা যায় না, কারণ কালের পরিক্রমায়ও দুর্নীতির সংজ্ঞা রূপ ও জনমনের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। একসময়, মানে আমাদের কিশোর ও যৌবনকালে, চার-পাঁচ দশক আগে সরকারে ও সমাজে দুর্নীতি বলতে শুধু ‘ঘুষ নেওয়া’ তথা অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেন বোঝাত। অমুক দুর্নীতিবাজ, শুনলে বুঝতাম লোকটি ঘুষ খায়। কৌতুকি ভাষায় বলা হতো, ‘বাঁ হাতের লেনদেন করে। বেতন ছাড়াও তার উপরি আছে।’ ঘুষ না বলে বকশিশ বলতেন সরকারি দপ্তরে ফাইল হাতে নিয়ে পিয়ন-চাপরাশির মন্থর গতিকে দ্রুতগতি করার জন্য। সেই ফাইলটি ওপরে উঠতে থাকলে বকশিশ হয়ে যেত ঘুষ।
এসব সামান্য অর্থের লেনদেন ‘দুর্নীতি’ হলেও স্বল্পমাত্রায় হতো, তাই স্বাভাবিক বলে আমজনতা মেনে নিত। কিন্তু সর্বোচ্চ স্তরে যখন এই লেনদেনের অঙ্ক বিশাল থেকে বিশালতর হতে থাকল, তখন বলা হতো ‘দুর্নীতি’। রাষ্ট্রীয় ও সরকারের কর্মকাণ্ডে যখন বিভিন্ন পন্থায় সরকার ও মন্ত্রীদের কর্মকাণ্ডের নিয়ামক হলো, তখনই দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিল। উপরিউক্ত পর্যালোচনার প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শতভাগ মেনে নিয়ে বলব, আমাদের বর্তমান মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সাধারণভাবে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ নেই, তবে একটি কিন্তু আছে। উচ্চপর্যায়ের ক্ষমতাধর ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কেউ সরাসরি অভিযোগ করছেন না বটে, তাঁদের নিজেদের অথবা মন্ত্রণালয়ের কোনো কোনো কর্মকাণ্ড নিয়ে গুজব ও গুঞ্জরণ আছে। সব গুজব ও গুঞ্জরণের উত্পত্তিস্থল তাঁদের অদক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে রহস্যজনক অনিচ্ছা বা ব্যর্থতা। যেমন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারি ব্যবস্থা নিতে অপারগতাকে ভোক্তারা ‘দুর্নীতি-প্রভাবিত’ বলে মনে করে। টেন্ডারবাজ-চাঁদাবাজ, বৃক্ষনিধনকারী, নদী-জমি দখলকারীদের উচ্ছেদে গড়িমসি দেখে জনগণ বলে, ‘ডালমে কুছ কালা।’ এই কালো ডালের ভেতরই লুক্কায়িত আছে ‘দুর্নীতির’ গুজব। এসব গুজব-গুঞ্জরণ অভিযোগ আকারে উত্থাপন বা প্রকাশ করা যায় না বলেই দুর্নীতি ‘নাই’ বলা যায়।
দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা মন্ত্রিসভার বৈঠক করে হয় না, অথবা নির্দিষ্ট কোনো মন্ত্রীর দুর্নীতি উচ্চপর্যায়ে আলোচিত হয় না। সেসব নিয়ে সচিবালয়ের করিডরে অথবা হাট-বাজারের চায়ের দোকানে রসাল আলাপ হয়। অপরদিকে জনগণ দুর্নীতির অভিযোগে যখন সোচ্চার হয়, তখন শুধু কোনো মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আনে না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) দুর্নীতিবাজ ছাপ মারতে কয়েকজন বিশেষ মন্ত্রী নয়, সরকারের সব পদক্ষেপ, নীতিনির্ধারণ, সার্বিক কর্মকাণ্ডকে বিবেচনায় আনে। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতির সঙ্গে যখন প্রভাবশালী অথবা সরকারের কর্মকাণ্ডের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রকের দুর্নীতির বিষয়টির সংশ্লিষ্টতা ঘটে, তখন দুর্নীতির দায় এককভাবে সরকারপ্রধান ও সামগ্রিকভাবে সরকারকে নিতে হয়। জটিল বক্তব্যটি সহজ করার জন্য তারেক রহমান প্রসঙ্গটি আলোচনা করব। বিএনপির ক্ষমতায় থাকাকালে তারেক রহমান প্রকৃত অর্থে কী দুর্নীতি করেছেন অথবা করেছেন কি না, তা জানার জন্য সর্বমহল তথ্যপ্রমাণ অথবা ‘অভিযোগ’ প্রকাশের অপেক্ষা করেননি। সর্বত্র মুখে মুখে আলোচিত হয়েছে, সর্বত্র ও সর্বক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে প্রচারিত হয়েছে। তারেক রহমান আর হাওয়া ভবন সমার্থক হয়ে যে বিগত নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি ঘটিয়েছিল, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সাধারণভাবে বিএনপির মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এক-এগারোর আগে কেউ ‘অভিযোগ প্রকাশ’ করেননি। অথচ এখন বিএনপির শীর্ষ মহলও এত দিনে এই সত্যটি অনুধাবন করেছেন। তাই দুই দিন আগে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘বিএনপির নতুন কার্যালয় “হাওয়া ভবন” হবে না।’ অর্থাত্ তাঁরাও মেনে নিয়েছেন, দুর্নীতি এবং হাওয়া ভবন ও এর অধিবাসী ছিল সমার্থক।
বিএনপি সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ যে দুর্নীতিবাজ ছিলেন না তা নয়। গণমাধ্যমেও তাঁদের দুর্নীতির অনেক কাহিনি প্রকাশিত হয়েছে। তবে দলের নজিরবিহীন নির্বাচনী বিপর্যয়ের জন্য সরকারের চেয়ে, মন্ত্রীদের দুর্নীতির কাহিনির চেয়েও দলীয় পাতিনেতা ও মাস্তানদের কীর্তিকলাপকেই অধিকতর দায়ী করা হতো। এই উদাহরণের ভিত্তিতেই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনার মন্ত্রীদের কারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির সরাসরি অভিযোগ আছে কি না, সে বক্তব্য বর্তমান পরিস্থিতিতে গুরুত্ব বহন করে না। দলীয় নেতা-পাতিনেতা ও মাস্তানদের দুর্বৃত্তায়নও দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে এবং এর দায়ভার মন্ত্রী ও সরকারকে বহন করতে হয়।
পূর্বোক্ত একটি বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে আলোচনার ইতি টানছি। দ্রব্যমূল্য রোধে ব্যর্থতা, এক বছরেও বিদ্যুত্ পরিস্থিতির উন্নয়নে স্থবিরতা, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, নদী-জমি দখল, বনায়ন ধ্বংস রোধে আন্তরিক প্রচেষ্টার অভাব, ইত্যাকার দৃশ্যমান ঘটনাবলির কারণ খুঁজতে সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের মতো অনুসন্ধানী হয় না। তারা সরকারের মন্ত্রীদের ব্যর্থতা, এমনকি রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তার জন্য সরকার তথা মন্ত্রীদের কারও না কারও কোনো না কোনো ধরনের ‘দুর্নীতি’ খুঁজে বেড়ায়। এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা গুঞ্জরিত হয়, ‘অভিযোগ’ প্রকাশ পায় না।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
তারপর ১৯৫৮ সালে এল সামরিক স্বৈরতন্ত্র। গণতান্ত্রিক শাসনকে স্থানচ্যুত করে সামরিক শাসন কায়েম করলেন রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা, নেপথ্যে জেনারেল আইয়ুব খান। ক্ষমতায় এসেই জেনারেল আইয়ুব খান বুঝলেন, সেনাশাসন কায়েম করতে হলে জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে উচ্ছেদ করতে হবে। এরই প্রথম পদক্ষেপ হবে, রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন, তাঁদের প্রতি জনগণের বিদ্বেষ সৃষ্টি। সেই ইচ্ছার প্রতিফলনে তিনি রাজনীতিবিদদের ঢালাওভাবে দুর্নীতিবাজ অভিহিত করে রাজনীতির সামনের কাতারের ব্যক্তি-মন্ত্রীদের ও গড়পড়তা সব রাজনীতিবিদকে নির্বাসনে পাঠানোর জন্য একটি ফরমান জারি করলেন—পাবলিক রিপ্রেজেনটেটিভ অফিসারস ডিসকোয়ালিফিকেশনস অ্যাক্ট। জনপ্রতিনিধিত্ব করার অধিকার হরণ করার জন্য এ আইনে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো। অধিকাংশকে সামরিক আদালত জেলে পাঠালেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের অনেকেই সামরিক শাসকের দাবড়ানিতে তথাকথিত সব দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে অবসরে গেলেন। অল্প কয়েকজন আদালতে লড়াই করে অভিযোগ খণ্ডনের সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, হামিদুল হক চৌধুরী, মিয়া মমতাজ দোলতানা, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ। অবশ্য সামরিক ক্যাঙারু কোর্ট তাঁদের বক্তব্য আমলে নেননি। আইয়ুবি স্বৈরশাসনের অবসানের পর স্বৈরশাসকের দেওয়া ‘দুর্নীতির লেবাস’টি জনগণই ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল।
রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে মন্ত্রী, নেতা-নেত্রীপর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের গায়ে দুর্নীতির কলঙ্ক লেপনের আইয়ুবি পন্থা অনুসরণ করলেন স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান। পরবর্তী সময়ে জেনারেল এরশাদ সেই প্রয়াস অধিকতর সুসম্পন্ন করলেন। তবে পাকিস্তান আমলের চেয়েও দুর্নীতিবাজের ছাপটি পুরো গায়ে সেঁটে দেওয়ার ক্ষেত্রে জিয়া-এরশাদ কতিপয় রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী-জননেতাকে শুধু একটি লেবাস পরালেন না, অনেককে দুর্নীতিবাজ বানানোর ব্যবস্থাটিও পাকাপোক্ত করলেন। জিয়া বলেই দিলেন, ‘আই শ্যাল মেইক পলিটিকস ডিফিকাল্ট।’ রাজনীতি কঠিন করার প্রথম পদক্ষেপে রাজনীতিবিদদের কলঙ্কিত করার জন্য দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে জেলে পাঠালেন। বস্তুত তাঁর কথিত বাক্যের অনুচ্চারিত অংশটি ছিল ‘বাই মেকিং পলিটিশিয়ানস করাপ্ট তাদের মনে অর্থবিত্তের লোভ সঞ্চারিত করব’, যাতে গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি জনগণ বীতশ্রদ্ধ হয়ে সামরিক শাসনকে পূতঃপবিত্র মনে করবে।
সাম্প্রতিক দুই বছরের প্রচ্ছন্ন সামরিক শাসকগোষ্ঠী ও তাদের আজ্ঞাবহ উপদেষ্টা পরিষদ অতীতের শাসকদের কূটনীতিই পুরোপুরি প্রয়োগ করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। সব স্বৈরশাসকের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার এবংবিধ অপচেষ্টা ব্যর্থ হলেও তাঁরা গণতন্ত্র ও জনপ্রতিনিধিত্বমূলক শাসনপদ্ধতির কতিপয় অপূরণীয় ক্ষতি করে গেলেন, যার দায় জাতিকে এখনো বহন করতে হচ্ছে। প্রথমত, কতিপয় রাজনীতিবিদকে সত্যি দুর্নীতিবাজ বানিয়ে সমাজ, প্রশাসন, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকিয়ে দিয়ে গেলেন। দ্বিতীয়ত, রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে যাঁরা কোনো না কোনো সময়ে সরকারে বা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে জনমনে সন্দেহের বীজ বপন করে গেলেন। মন্ত্রী তথা জনপ্রতিনিধি হলেই দুর্নীতি করে অথবা দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেয়, এমন গুজব ও গুঞ্জন ছড়িয়ে দিলেন। জেনারেল জিয়া ‘পলিটিকস মেইড ডিফিকাল্ট’ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য ‘মানি আর মাসল’, অর্থ ও পেশিশক্তিকে রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে ঢুকিয়ে দিলেন। তাঁর সময়ই তরুণ ও ছাত্রসমাজ দুর্নীতির প্রথম দীক্ষাটি পেয়েছিল। সেই দীক্ষা কালক্রমে মোক্ষলাভ করেছে। সরকারের উচ্চপদে আসীন আমলারাও সেই দুর্নীতির ঘূর্ণাবর্তে পুরোপুরি ডুবে গেলেন। তৃতীয়ত, রাজনীতিবিদেরা দুর্নীতিগ্রস্ত হলেন শুধু তা নয়, অর্থ আর পেশিশক্তির অধিকারীরা জনগণের রাজনীতি কবজা করে ‘দুর্নীতির’ ফাঁক ডোবালেন।
ক্ষমতার রাজনীতি ও দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে দীর্ঘ ভূমিকাটি দিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি সাম্প্রতিক বক্তব্য আলোচনার জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দিন আগে সামরিক স্টাফ কলেজের অনুষ্ঠানে বলেছেন, গত এক বছরে তাঁর কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে বাহ্যত দ্বিমতের অবকাশ নেই। তবে তাঁর বক্তব্য ব্যাখ্যাসাপেক্ষ, মানে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আলোচিত হওয়া প্রয়োজন। ভাবতে হচ্ছে, কেন অভিযোগ শোনা যায়নি বললেন, সরাসরি দুর্নীতি ‘করেননি’ বলতে পারতেন। দুর্নীতির অভিযোগ মন্ত্রীবিশেষ নয়, সরকারের বিরুদ্ধে শোনা যায়, এই প্রেক্ষাপটে প্রথমে আরও জানতে হবে, দুর্নীতির সংজ্ঞা কী। এক. শব্দটি কোনো না কোনো সময় কি শুধু আক্ষরিক অর্থে অথবা বিশেষ তথ্য প্রদানে ব্যবহূত হয়? অথবা দুর্নীতির ব্যাপক পরিচয় রয়েছে। বিভিন্ন পন্থায় অনেক কর্ম সাধিত হয়, যা সরাসরি সাধারণ অর্থে মন্ত্রীর দুর্নীতি বলা যায় না, কারণ কালের পরিক্রমায়ও দুর্নীতির সংজ্ঞা রূপ ও জনমনের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। একসময়, মানে আমাদের কিশোর ও যৌবনকালে, চার-পাঁচ দশক আগে সরকারে ও সমাজে দুর্নীতি বলতে শুধু ‘ঘুষ নেওয়া’ তথা অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেন বোঝাত। অমুক দুর্নীতিবাজ, শুনলে বুঝতাম লোকটি ঘুষ খায়। কৌতুকি ভাষায় বলা হতো, ‘বাঁ হাতের লেনদেন করে। বেতন ছাড়াও তার উপরি আছে।’ ঘুষ না বলে বকশিশ বলতেন সরকারি দপ্তরে ফাইল হাতে নিয়ে পিয়ন-চাপরাশির মন্থর গতিকে দ্রুতগতি করার জন্য। সেই ফাইলটি ওপরে উঠতে থাকলে বকশিশ হয়ে যেত ঘুষ।
এসব সামান্য অর্থের লেনদেন ‘দুর্নীতি’ হলেও স্বল্পমাত্রায় হতো, তাই স্বাভাবিক বলে আমজনতা মেনে নিত। কিন্তু সর্বোচ্চ স্তরে যখন এই লেনদেনের অঙ্ক বিশাল থেকে বিশালতর হতে থাকল, তখন বলা হতো ‘দুর্নীতি’। রাষ্ট্রীয় ও সরকারের কর্মকাণ্ডে যখন বিভিন্ন পন্থায় সরকার ও মন্ত্রীদের কর্মকাণ্ডের নিয়ামক হলো, তখনই দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিল। উপরিউক্ত পর্যালোচনার প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শতভাগ মেনে নিয়ে বলব, আমাদের বর্তমান মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সাধারণভাবে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ নেই, তবে একটি কিন্তু আছে। উচ্চপর্যায়ের ক্ষমতাধর ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কেউ সরাসরি অভিযোগ করছেন না বটে, তাঁদের নিজেদের অথবা মন্ত্রণালয়ের কোনো কোনো কর্মকাণ্ড নিয়ে গুজব ও গুঞ্জরণ আছে। সব গুজব ও গুঞ্জরণের উত্পত্তিস্থল তাঁদের অদক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে রহস্যজনক অনিচ্ছা বা ব্যর্থতা। যেমন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারি ব্যবস্থা নিতে অপারগতাকে ভোক্তারা ‘দুর্নীতি-প্রভাবিত’ বলে মনে করে। টেন্ডারবাজ-চাঁদাবাজ, বৃক্ষনিধনকারী, নদী-জমি দখলকারীদের উচ্ছেদে গড়িমসি দেখে জনগণ বলে, ‘ডালমে কুছ কালা।’ এই কালো ডালের ভেতরই লুক্কায়িত আছে ‘দুর্নীতির’ গুজব। এসব গুজব-গুঞ্জরণ অভিযোগ আকারে উত্থাপন বা প্রকাশ করা যায় না বলেই দুর্নীতি ‘নাই’ বলা যায়।
দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা মন্ত্রিসভার বৈঠক করে হয় না, অথবা নির্দিষ্ট কোনো মন্ত্রীর দুর্নীতি উচ্চপর্যায়ে আলোচিত হয় না। সেসব নিয়ে সচিবালয়ের করিডরে অথবা হাট-বাজারের চায়ের দোকানে রসাল আলাপ হয়। অপরদিকে জনগণ দুর্নীতির অভিযোগে যখন সোচ্চার হয়, তখন শুধু কোনো মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আনে না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) দুর্নীতিবাজ ছাপ মারতে কয়েকজন বিশেষ মন্ত্রী নয়, সরকারের সব পদক্ষেপ, নীতিনির্ধারণ, সার্বিক কর্মকাণ্ডকে বিবেচনায় আনে। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতির সঙ্গে যখন প্রভাবশালী অথবা সরকারের কর্মকাণ্ডের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রকের দুর্নীতির বিষয়টির সংশ্লিষ্টতা ঘটে, তখন দুর্নীতির দায় এককভাবে সরকারপ্রধান ও সামগ্রিকভাবে সরকারকে নিতে হয়। জটিল বক্তব্যটি সহজ করার জন্য তারেক রহমান প্রসঙ্গটি আলোচনা করব। বিএনপির ক্ষমতায় থাকাকালে তারেক রহমান প্রকৃত অর্থে কী দুর্নীতি করেছেন অথবা করেছেন কি না, তা জানার জন্য সর্বমহল তথ্যপ্রমাণ অথবা ‘অভিযোগ’ প্রকাশের অপেক্ষা করেননি। সর্বত্র মুখে মুখে আলোচিত হয়েছে, সর্বত্র ও সর্বক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে প্রচারিত হয়েছে। তারেক রহমান আর হাওয়া ভবন সমার্থক হয়ে যে বিগত নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি ঘটিয়েছিল, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সাধারণভাবে বিএনপির মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এক-এগারোর আগে কেউ ‘অভিযোগ প্রকাশ’ করেননি। অথচ এখন বিএনপির শীর্ষ মহলও এত দিনে এই সত্যটি অনুধাবন করেছেন। তাই দুই দিন আগে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘বিএনপির নতুন কার্যালয় “হাওয়া ভবন” হবে না।’ অর্থাত্ তাঁরাও মেনে নিয়েছেন, দুর্নীতি এবং হাওয়া ভবন ও এর অধিবাসী ছিল সমার্থক।
বিএনপি সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ যে দুর্নীতিবাজ ছিলেন না তা নয়। গণমাধ্যমেও তাঁদের দুর্নীতির অনেক কাহিনি প্রকাশিত হয়েছে। তবে দলের নজিরবিহীন নির্বাচনী বিপর্যয়ের জন্য সরকারের চেয়ে, মন্ত্রীদের দুর্নীতির কাহিনির চেয়েও দলীয় পাতিনেতা ও মাস্তানদের কীর্তিকলাপকেই অধিকতর দায়ী করা হতো। এই উদাহরণের ভিত্তিতেই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনার মন্ত্রীদের কারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির সরাসরি অভিযোগ আছে কি না, সে বক্তব্য বর্তমান পরিস্থিতিতে গুরুত্ব বহন করে না। দলীয় নেতা-পাতিনেতা ও মাস্তানদের দুর্বৃত্তায়নও দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে এবং এর দায়ভার মন্ত্রী ও সরকারকে বহন করতে হয়।
পূর্বোক্ত একটি বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে আলোচনার ইতি টানছি। দ্রব্যমূল্য রোধে ব্যর্থতা, এক বছরেও বিদ্যুত্ পরিস্থিতির উন্নয়নে স্থবিরতা, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, নদী-জমি দখল, বনায়ন ধ্বংস রোধে আন্তরিক প্রচেষ্টার অভাব, ইত্যাকার দৃশ্যমান ঘটনাবলির কারণ খুঁজতে সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের মতো অনুসন্ধানী হয় না। তারা সরকারের মন্ত্রীদের ব্যর্থতা, এমনকি রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তার জন্য সরকার তথা মন্ত্রীদের কারও না কারও কোনো না কোনো ধরনের ‘দুর্নীতি’ খুঁজে বেড়ায়। এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা গুঞ্জরিত হয়, ‘অভিযোগ’ প্রকাশ পায় না।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
No comments