এখনো যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে ওরা by শুভ্র দেব
হঠাৎ
বিকট শব্দ। ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার। ভেসে আসছিল
কান্নার সুর। প্রাণ বাঁচাতে সবার ছোটাছুটি। কে কোথায় যাবে দিশে পাচ্ছিল না।
ট্রাকের ওপর সবাই আপাকে (শেখ হাসিনা) ঘিরে ধরে আছে। চারদিকে শুধু রক্ত আর
রক্ত।
পর পর আরও কয়েকটা বিকট শব্দ হয়। চোখের সামনে পড়ে থাকতে দেখি পরিচিত কিছু মুখ। তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিলো। আর যন্ত্রণার আর্তনাদ। কি করব তখন বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পরে কয়েকজনকে নিয়েই ঢাকা মেডিকেলে চলে যাই। কিন্তু আমার শরীর থেকে যে রক্ত ঝরছিলো সেদিকে আমার খেয়ালই ছিল না। ২০০৪ সালের ২১শে ভয়াল আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী বিটু বিশ্বাস এভাবেই সেদিনের স্মৃতিচারণ করছিলেন। বর্তমানে তিনি একুশে আগস্ট বাংলাদেশ-২০০৪ সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিটু বিশ্বাস মানবজমিনকে বলেন, ওই দিন আসর নামাজ পড়ে আমি বঙ্গবন্ধু এভিনিউর পার্টি অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে দলীয় একটি প্রোগ্রাম ছিল। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আমি ব্যানার ঠিক করছিলাম। ঠিক তখনই শুনতে পেলাম বিকট এক শব্দ। প্রথমে মনে করেছিলাম ককটেল ফুটানো হয়েছে। কিন্তু মূহুর্তের মধ্যে দেখি পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে গেছে। দিক বেদিক যখন সবাই ছোটাছুটি করছিলো তখন এক সংবাদকর্মী আমার কাছে দৌঁড়ে এসে বলে আমাকে বাঁচান। তাকিয়ে দেখি তিনি রক্তাক্ত। এই অবস্থায়ই আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম। পরে তাকে ও আহত লিটন মোল্লাকে নিয়ে আমরা কয়েকজন ঢাকা মেডিকেল যাই। সেখানে গিয়ে মানুষ আর মানুষ। সবাই রক্তাক্ত। হাসপাতালে কোনো সিট মিলছে না। আমি আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি রক্ত ঝরছে। শরীরে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। তখনও বুঝি নাই। কি হয়েছে, কি ফুটেছে। পরের দিন সংবাদপত্রে জানতে পারি ওইটা গ্রেনেড হামলা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে সিট না পাওয়ায় আমাদেরকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। হামলার এত বছর পরেও আমিও অসুস্থ। মাঝে মধ্যে জ্বর আসে। পা অবশ হয়ে যায়। চিকিৎসা নিয়ে ভালই আছি। আপা আমাদের পাশে আছেন। অনেক সুযোগ সুবিধা আমাদেরকে দিচ্ছেন। এখন আমার একটাই আশা যে রায় হয়েছে সেটা যেন কার্যকর হয়।
ভয়াল সেই দিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে আহত লিটন মোল্লা বলেন, ঘটনার দিন যখন নেত্রী বক্তব্য শুরু করেন তখন আমি ট্র্যাকের নিচে সিঁড়ির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বিকট শব্দের সঙ্গেই অন্ধকার হয়ে গেল চারপাশ। নাকে শুধু আসে বারুদের গন্ধ। তারপর আর কিছু বলতে পারি নাই। যখন জ্ঞান ফিরে এল তখন আমি নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করি। শুনেছি ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর আমার অবস্থা দেখে আমাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার ও সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ও বিটু বিশ্বাস আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও কোন সিট পাওয়া যায়নি, তাই শিকদার মেডিকেলে পরে ট্রমা সেন্টারে নেয়া হয়। মুলত ট্রমা সেন্টারেই চিকিৎসা হয়। আমার শরীরের অসংখ্য স্প্লিন্টার ছিল। ট্রমা সেন্টারে অস্ত্রোপচার করে কিছু স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে। এখনও অসংখ্য স্প্লিন্টার শরীরে। যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। মাসের ১৫দিনই অসুস্থ থাকি। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতায় এখনও আমি বেঁচে আছি। চিকিৎসার খরচ, পারিবারিক সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার মত আহতদের অভিভাবক তিনি। লিটন মোল্লা ২১শে আগস্ট বাংলাদেশ-২০০৪ শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
গ্রেনেড হামলায় আহত ও জাতীয় হকার্স লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, নেত্রী জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলার সঙ্গে সঙ্গেই বিকট একটা আওয়াজ হল। তারপর চারদিক ধোঁয়ায় অন্ধকার। একের পর এক বিকট শব্দ হচ্ছে। পুলিশও তখন কাঁদুনে গ্যাস ছুঁড়েছিল। কে কোন দিক দিয়ে পালাবে সেই হুশ কারো ছিল না। মাটিতে তাকিয়ে দেখি রক্তের বন্যা। হানিফ ভাই আমাকে বাঁশি দিতে বললেন। আমি ট্রাকের মঞ্চ থেকে একটু দুরে ছিলাম। তাতেই আমার এক কান নষ্ট হয়ে গেছে। যদি কাছাকাছি থাকতাম হয়তো মরেই যেতাম। ওইদিন সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারাই উপলব্ধি করতে পারবে সেই ভয়াল দৃশ্য। হাতে পায়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্প্লিন্টার আর স্প্লিন্টার। মঞ্চের কাছাকাছি যারা ছিল তাদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে বেশি খারাপ। অস্ত্রপাচার করে অনেকটা বের করা হয়েছে। এখনও অনেকটা আছে। আমার একটা কানও নষ্ট হয়ে গেছে।
মারাত্বকভাবে আহত রাশিদা আক্তার রুমা বলেন, ভয়াল ওই দিনে আমি ট্র্যাক মঞ্চের একপাশে আইভি আন্টির (আইভি রহমান) পাশে ছিলাম। অনুষ্ঠানও প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে কি যেন এসে আঘাত করল। আন্টিসহ অন্য নেত্রীরাও তখন মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে। তারপর আর কিছু বলতে পারি নাই। আমাকে মৃত ভেবে অন্যান্য মরদেহের সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়। হঠাৎ আমার হেচকি দেখে এক নারী সাবের হোসেন চৌধুরীকে বিষয়টি জানান। পরে আমাকে চিকিৎসার জন্য অন্যত্র পাঠানো হয়। শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে রুমা বলেন, স্প্লিন্টারের আঘাতে শরীর থেকে মাংস ঝরে পড়েছিল। পরপর ১৭ বার অস্ত্রপাচার করা হয়েছে। হাজার হাজার স্প্লিন্টার শরীরের। সবটা অস্ত্রপাচার করে বের করা সম্ভব হয়নি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সর্বত্রই স্প্লিন্টার। মাঝেমধ্যে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে অবশ হয়ে পড়ে শরীরের কিছু অংশ। রাত হলেই তীব্র যন্ত্রনা শুরু হয় আর চুলকানি। নারকীয় এই হামলায় জড়িতদের শাস্তি বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছেন বলে রুমা জানান।
পর পর আরও কয়েকটা বিকট শব্দ হয়। চোখের সামনে পড়ে থাকতে দেখি পরিচিত কিছু মুখ। তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিলো। আর যন্ত্রণার আর্তনাদ। কি করব তখন বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পরে কয়েকজনকে নিয়েই ঢাকা মেডিকেলে চলে যাই। কিন্তু আমার শরীর থেকে যে রক্ত ঝরছিলো সেদিকে আমার খেয়ালই ছিল না। ২০০৪ সালের ২১শে ভয়াল আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী বিটু বিশ্বাস এভাবেই সেদিনের স্মৃতিচারণ করছিলেন। বর্তমানে তিনি একুশে আগস্ট বাংলাদেশ-২০০৪ সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিটু বিশ্বাস মানবজমিনকে বলেন, ওই দিন আসর নামাজ পড়ে আমি বঙ্গবন্ধু এভিনিউর পার্টি অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে দলীয় একটি প্রোগ্রাম ছিল। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আমি ব্যানার ঠিক করছিলাম। ঠিক তখনই শুনতে পেলাম বিকট এক শব্দ। প্রথমে মনে করেছিলাম ককটেল ফুটানো হয়েছে। কিন্তু মূহুর্তের মধ্যে দেখি পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে গেছে। দিক বেদিক যখন সবাই ছোটাছুটি করছিলো তখন এক সংবাদকর্মী আমার কাছে দৌঁড়ে এসে বলে আমাকে বাঁচান। তাকিয়ে দেখি তিনি রক্তাক্ত। এই অবস্থায়ই আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম। পরে তাকে ও আহত লিটন মোল্লাকে নিয়ে আমরা কয়েকজন ঢাকা মেডিকেল যাই। সেখানে গিয়ে মানুষ আর মানুষ। সবাই রক্তাক্ত। হাসপাতালে কোনো সিট মিলছে না। আমি আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি রক্ত ঝরছে। শরীরে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। তখনও বুঝি নাই। কি হয়েছে, কি ফুটেছে। পরের দিন সংবাদপত্রে জানতে পারি ওইটা গ্রেনেড হামলা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে সিট না পাওয়ায় আমাদেরকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। হামলার এত বছর পরেও আমিও অসুস্থ। মাঝে মধ্যে জ্বর আসে। পা অবশ হয়ে যায়। চিকিৎসা নিয়ে ভালই আছি। আপা আমাদের পাশে আছেন। অনেক সুযোগ সুবিধা আমাদেরকে দিচ্ছেন। এখন আমার একটাই আশা যে রায় হয়েছে সেটা যেন কার্যকর হয়।
ভয়াল সেই দিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে আহত লিটন মোল্লা বলেন, ঘটনার দিন যখন নেত্রী বক্তব্য শুরু করেন তখন আমি ট্র্যাকের নিচে সিঁড়ির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বিকট শব্দের সঙ্গেই অন্ধকার হয়ে গেল চারপাশ। নাকে শুধু আসে বারুদের গন্ধ। তারপর আর কিছু বলতে পারি নাই। যখন জ্ঞান ফিরে এল তখন আমি নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করি। শুনেছি ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর আমার অবস্থা দেখে আমাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার ও সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ও বিটু বিশ্বাস আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও কোন সিট পাওয়া যায়নি, তাই শিকদার মেডিকেলে পরে ট্রমা সেন্টারে নেয়া হয়। মুলত ট্রমা সেন্টারেই চিকিৎসা হয়। আমার শরীরের অসংখ্য স্প্লিন্টার ছিল। ট্রমা সেন্টারে অস্ত্রোপচার করে কিছু স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে। এখনও অসংখ্য স্প্লিন্টার শরীরে। যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। মাসের ১৫দিনই অসুস্থ থাকি। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতায় এখনও আমি বেঁচে আছি। চিকিৎসার খরচ, পারিবারিক সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার মত আহতদের অভিভাবক তিনি। লিটন মোল্লা ২১শে আগস্ট বাংলাদেশ-২০০৪ শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
গ্রেনেড হামলায় আহত ও জাতীয় হকার্স লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, নেত্রী জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলার সঙ্গে সঙ্গেই বিকট একটা আওয়াজ হল। তারপর চারদিক ধোঁয়ায় অন্ধকার। একের পর এক বিকট শব্দ হচ্ছে। পুলিশও তখন কাঁদুনে গ্যাস ছুঁড়েছিল। কে কোন দিক দিয়ে পালাবে সেই হুশ কারো ছিল না। মাটিতে তাকিয়ে দেখি রক্তের বন্যা। হানিফ ভাই আমাকে বাঁশি দিতে বললেন। আমি ট্রাকের মঞ্চ থেকে একটু দুরে ছিলাম। তাতেই আমার এক কান নষ্ট হয়ে গেছে। যদি কাছাকাছি থাকতাম হয়তো মরেই যেতাম। ওইদিন সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারাই উপলব্ধি করতে পারবে সেই ভয়াল দৃশ্য। হাতে পায়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্প্লিন্টার আর স্প্লিন্টার। মঞ্চের কাছাকাছি যারা ছিল তাদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে বেশি খারাপ। অস্ত্রপাচার করে অনেকটা বের করা হয়েছে। এখনও অনেকটা আছে। আমার একটা কানও নষ্ট হয়ে গেছে।
মারাত্বকভাবে আহত রাশিদা আক্তার রুমা বলেন, ভয়াল ওই দিনে আমি ট্র্যাক মঞ্চের একপাশে আইভি আন্টির (আইভি রহমান) পাশে ছিলাম। অনুষ্ঠানও প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে কি যেন এসে আঘাত করল। আন্টিসহ অন্য নেত্রীরাও তখন মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে। তারপর আর কিছু বলতে পারি নাই। আমাকে মৃত ভেবে অন্যান্য মরদেহের সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়। হঠাৎ আমার হেচকি দেখে এক নারী সাবের হোসেন চৌধুরীকে বিষয়টি জানান। পরে আমাকে চিকিৎসার জন্য অন্যত্র পাঠানো হয়। শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে রুমা বলেন, স্প্লিন্টারের আঘাতে শরীর থেকে মাংস ঝরে পড়েছিল। পরপর ১৭ বার অস্ত্রপাচার করা হয়েছে। হাজার হাজার স্প্লিন্টার শরীরের। সবটা অস্ত্রপাচার করে বের করা সম্ভব হয়নি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সর্বত্রই স্প্লিন্টার। মাঝেমধ্যে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে অবশ হয়ে পড়ে শরীরের কিছু অংশ। রাত হলেই তীব্র যন্ত্রনা শুরু হয় আর চুলকানি। নারকীয় এই হামলায় জড়িতদের শাস্তি বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছেন বলে রুমা জানান।
No comments