ভারতে জোরাতালির উন্নয়ন চেহারা ঢাকতে পারছে না মোদির প্রচারণা যন্ত্র by এমি কাজমিন
সম্প্রতি
অনুষ্ঠিত ভারতের সাধারণ নির্বাচনে আগে ভারতীয়দের কাছে একটা বার্তা জোয়ারের
ঢেউয়ের মতো পৌঁছানো হয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার
ভারতীয় জনতা পার্টি পাঁচ বছরের স্বল্প সময়ে ভারতকে সমৃদ্ধশালী ও শক্তিধর
দেশ হিসেবে উন্নীত করেছে।
স্বল্পজীবী ‘নমো’ টেলিভিশন চ্যানেলে মোদির বক্তৃতা এবং তার অর্জনের বিভিন্ন তথ্য দিনরাত প্রচার করা হয়েছে। বিজেপি কল সেন্টারগুলো থেকে ২০০ মিলিয়নের বেশি নতুন গ্যাস সিলিন্ডার গ্রহীতা, টয়লেট এবং অন্যান্য সুবিধাভোগীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে মোদির উদারতা সম্পর্কে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে যে, ফেব্রুয়ারিতে ভারত মিসাইল হামলা করে ৩০০ পাকিস্তানী সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। আত্মঘাতী হামলায় ৪৪ ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহতের বদলা হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়েছে।
এরপর প্রথমবারের মতো যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের টার্গেট করে একটা আকর্ষণীয় র্যাপ ভিডিও তৈরি করা হয়েছে, যেখানে পশ্চিমা পোশাক পড়া ড্যান্সাররা ভারতের অসামান্য রূপান্তরকে উদযাপন করছেন। ড্যান্সাররা তাদের র্যাপে বলছেন যে, মোদি হলো ‘একমাত্র: এক এবং একমাত্র ব্যক্তি যে সবকিছু করেছে”।
কিন্তু গত মাসে মোদির পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর এই ঘোর কেটে যাওয়ায় ভারতীয়রা এখন বিপর্যস্ত অর্থনীতি, সামাজিক ও পরিবেশগত কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। জনগণের মানসিকতার এই বদলটাকে খারাপ ধরনের হ্যাঙওভারের সাথে তুলনা করা যায়। এক রাতে উদযাপনের সময় মদ্যপানের কারণে যারা বাস্তবতাটা বেমালুম ভুলে ছিল।
মোদির সমর্থকরা এখনও তার ভূমিধস বিজয় এবং শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান উদযাপন অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যেই খবর আসতে শুরু করেছে যে, ২০১৯ সালের প্রথম কোয়ার্টারে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে ৫.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। পাঁচ বছরের মধ্যে এই হার সবচেয়ে কম। ২০১৮ সালের শেষ কোয়ার্টারেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৬ শতাংশ।
নয়াদিল্লী অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শ্রম রিপোর্টটিও প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, ১৫-২৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠির ১৮ শতাংশই এখনও বেকার। বেশ কয়েক মাস আগেই এই তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু কর্মকর্তারা সেটাকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। রিপোর্ট প্রকাশে বিলম্বের প্রতিবাদে ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্স কমিশনের সদস্যরা পদত্যাগও করেছেন, কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার পর, জরিপটি শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করা হলো।
এটাই একমাত্র নতুন প্রকাশিত তথ্য নয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারত ও পাকিস্তানী বিমান যখন পাল্টাপাল্টি হামলায় ব্যস্ত ছিল, তখন কাশ্মীরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ছয় বিমান সেনা নিহত হয়। সে সময় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল যে এই বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু সাম্প্রতিককালে স্থানীয় মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারতীয় মিসাইলের আঘাতেই ওই হেলিকপ্টারটি ভূপাতিত হয়েছিল। সরকার বিব্রত হতে পারে বলে ঘটনাটি সে সময় চেপে যাওয়া হয়েছিল।
এদিকে, ভারতের বাতিলপ্রায় সামরিক সরঞ্জামাদির আধুনিকায়ন যে কতটা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে, সাম্প্রতিক আরেক ঘটনায় সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। ৩ জুন ওড়ার ৩০ মিনিট পরেই বিধ্বস্ত হয় বিমান বাহিনীর পরিবহন বিমান আন্তনভ এএন-৩২ এবং বিমানের ১৩ বিমান সেনার সবাই নিহত হয়। আটদিন ধরে ব্যাপক সামরিক অনুসন্ধানের পর অবশেষে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
কিন্তু মোদির বিজয়ের পর সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি সম্ভবত বিহারে লিচুপ্রধান এলাকায় ১৫০ শিশুর মৃত্যু। অ্যাকিউট এন্সিফ্যালাইটিস সিনড্রমে তারা মারা গেছে, যেটাকে ব্রেইন ফিভারও বলা হয়ে থাকে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুরা অতিমাত্রায় লিচু খাওয়ার কারণে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন। গ্রামিণ এলাকার অপুষ্টির কদর্য চিত্র ফুটে ওঠার পাশাপাশি এই মৃত্যুর ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে যে ভারতের সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা কতটা করুণ, যেখানে ডাক্তার, নার্স, সরঞ্জাম ও ওষুধ – সবকিছুরই প্রচণ্ড অভাব রয়েছে।
এদিকে, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চেন্নাই – যেটা ভারতের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর – সেই শহর পানিশূণ্য হয়ে পড়েছে। কয়েক বছর ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের কারণে শহরের জলাধারগুলো শুকিয়ে গেছে। ট্যাঙ্কারগুলো থেকে সামান্য পানি পাওয়ার জন্য শহরের অধিবাসী ও ব্যবসায়ীদের ঘন্টার পর ঘন্টার অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
যে জাতি এই ধারণায় বুদ হয়ে আছে যে একজন শক্তিধর, আত্মবিশ্বাসী নেতার অধীনে তারা বিশ্বের দরবারে জায়গা করে নিচ্ছে, তাদের বিভ্রম দূর করার জন্য এই ঘটনাগুলো যথেষ্ট। জনগণকে বিভ্রান্ত করার ব্যাপারে মোদি যে একজন ওস্তাদ, সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, কারণ তিনি শত শত মিলিয়ন ভারতীয়কে নিজের সততা, উদ্দেশ্য ও অর্জন সম্পর্কে প্ররোচিত করতে পেরেছেন। কিন্তু এখন যখন বাস্তবতাগুলো উঠে আসতে শুরু করেছে, তখন বোঝা যাচ্ছে যে বহু কিছু করা এখনও বাকি রয়ে গেছে।
স্বল্পজীবী ‘নমো’ টেলিভিশন চ্যানেলে মোদির বক্তৃতা এবং তার অর্জনের বিভিন্ন তথ্য দিনরাত প্রচার করা হয়েছে। বিজেপি কল সেন্টারগুলো থেকে ২০০ মিলিয়নের বেশি নতুন গ্যাস সিলিন্ডার গ্রহীতা, টয়লেট এবং অন্যান্য সুবিধাভোগীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে মোদির উদারতা সম্পর্কে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে যে, ফেব্রুয়ারিতে ভারত মিসাইল হামলা করে ৩০০ পাকিস্তানী সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। আত্মঘাতী হামলায় ৪৪ ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহতের বদলা হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়েছে।
এরপর প্রথমবারের মতো যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের টার্গেট করে একটা আকর্ষণীয় র্যাপ ভিডিও তৈরি করা হয়েছে, যেখানে পশ্চিমা পোশাক পড়া ড্যান্সাররা ভারতের অসামান্য রূপান্তরকে উদযাপন করছেন। ড্যান্সাররা তাদের র্যাপে বলছেন যে, মোদি হলো ‘একমাত্র: এক এবং একমাত্র ব্যক্তি যে সবকিছু করেছে”।
কিন্তু গত মাসে মোদির পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর এই ঘোর কেটে যাওয়ায় ভারতীয়রা এখন বিপর্যস্ত অর্থনীতি, সামাজিক ও পরিবেশগত কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। জনগণের মানসিকতার এই বদলটাকে খারাপ ধরনের হ্যাঙওভারের সাথে তুলনা করা যায়। এক রাতে উদযাপনের সময় মদ্যপানের কারণে যারা বাস্তবতাটা বেমালুম ভুলে ছিল।
মোদির সমর্থকরা এখনও তার ভূমিধস বিজয় এবং শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান উদযাপন অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যেই খবর আসতে শুরু করেছে যে, ২০১৯ সালের প্রথম কোয়ার্টারে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে ৫.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। পাঁচ বছরের মধ্যে এই হার সবচেয়ে কম। ২০১৮ সালের শেষ কোয়ার্টারেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৬ শতাংশ।
নয়াদিল্লী অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শ্রম রিপোর্টটিও প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, ১৫-২৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠির ১৮ শতাংশই এখনও বেকার। বেশ কয়েক মাস আগেই এই তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু কর্মকর্তারা সেটাকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। রিপোর্ট প্রকাশে বিলম্বের প্রতিবাদে ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্স কমিশনের সদস্যরা পদত্যাগও করেছেন, কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার পর, জরিপটি শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করা হলো।
এটাই একমাত্র নতুন প্রকাশিত তথ্য নয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারত ও পাকিস্তানী বিমান যখন পাল্টাপাল্টি হামলায় ব্যস্ত ছিল, তখন কাশ্মীরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ছয় বিমান সেনা নিহত হয়। সে সময় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল যে এই বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু সাম্প্রতিককালে স্থানীয় মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারতীয় মিসাইলের আঘাতেই ওই হেলিকপ্টারটি ভূপাতিত হয়েছিল। সরকার বিব্রত হতে পারে বলে ঘটনাটি সে সময় চেপে যাওয়া হয়েছিল।
এদিকে, ভারতের বাতিলপ্রায় সামরিক সরঞ্জামাদির আধুনিকায়ন যে কতটা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে, সাম্প্রতিক আরেক ঘটনায় সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। ৩ জুন ওড়ার ৩০ মিনিট পরেই বিধ্বস্ত হয় বিমান বাহিনীর পরিবহন বিমান আন্তনভ এএন-৩২ এবং বিমানের ১৩ বিমান সেনার সবাই নিহত হয়। আটদিন ধরে ব্যাপক সামরিক অনুসন্ধানের পর অবশেষে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
কিন্তু মোদির বিজয়ের পর সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি সম্ভবত বিহারে লিচুপ্রধান এলাকায় ১৫০ শিশুর মৃত্যু। অ্যাকিউট এন্সিফ্যালাইটিস সিনড্রমে তারা মারা গেছে, যেটাকে ব্রেইন ফিভারও বলা হয়ে থাকে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুরা অতিমাত্রায় লিচু খাওয়ার কারণে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন। গ্রামিণ এলাকার অপুষ্টির কদর্য চিত্র ফুটে ওঠার পাশাপাশি এই মৃত্যুর ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে যে ভারতের সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা কতটা করুণ, যেখানে ডাক্তার, নার্স, সরঞ্জাম ও ওষুধ – সবকিছুরই প্রচণ্ড অভাব রয়েছে।
এদিকে, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চেন্নাই – যেটা ভারতের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর – সেই শহর পানিশূণ্য হয়ে পড়েছে। কয়েক বছর ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের কারণে শহরের জলাধারগুলো শুকিয়ে গেছে। ট্যাঙ্কারগুলো থেকে সামান্য পানি পাওয়ার জন্য শহরের অধিবাসী ও ব্যবসায়ীদের ঘন্টার পর ঘন্টার অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
যে জাতি এই ধারণায় বুদ হয়ে আছে যে একজন শক্তিধর, আত্মবিশ্বাসী নেতার অধীনে তারা বিশ্বের দরবারে জায়গা করে নিচ্ছে, তাদের বিভ্রম দূর করার জন্য এই ঘটনাগুলো যথেষ্ট। জনগণকে বিভ্রান্ত করার ব্যাপারে মোদি যে একজন ওস্তাদ, সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, কারণ তিনি শত শত মিলিয়ন ভারতীয়কে নিজের সততা, উদ্দেশ্য ও অর্জন সম্পর্কে প্ররোচিত করতে পেরেছেন। কিন্তু এখন যখন বাস্তবতাগুলো উঠে আসতে শুরু করেছে, তখন বোঝা যাচ্ছে যে বহু কিছু করা এখনও বাকি রয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রচারণার একটি ভিডিও থেকে নেয়া স্থিরচিত্র |
No comments