বিনম্র শ্রদ্ধায় বীর শহীদদের স্মরণ
মহান
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে
মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা
হয়েছে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। নানা
কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বর্ণিল আয়োজনে সারা দেশে পালিত হয়েছে দিবসটি।
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছে লাখো মানুষ। তাদের সবার কণ্ঠে ছিল সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ। ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচির মধ্যে ছিল শ্রদ্ধা নিবেদন, শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ ও আলোচনা সভা। সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোরদের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান। বিকালে বঙ্গভবনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং কূটনীতিকরা অংশ নেন।
সেখানে অতিথিদের নিয়ে ৪৯তম স্বাধীনতা দিবসের কেক কাটেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।
স্বাধীনতা দিবসে সারা দেশে এক সঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। দিবসটি উপলক্ষে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এদিকে গতকাল সকাল থেকে হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রঙ-বেরঙের ফুল নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন সব বয়সের সাধারণ মানুষ। তাদের হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে স্মরণ করেন স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সূর্য সন্তানদের। মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় শহীদদের প্রতি সালাম জানায়।
বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আবারো স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। এরপর বিচারপতিগণ, তিন বাহিনীর প্রধান ও কূটনীতিকরা শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। স্মৃতিসৌধে ভিআইপিদের শ্রদ্ধা জানানোর পর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপরই পতাকা আর ফুল হাতে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। তাদের শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠতে থাকে স্মৃতিসৌধ। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের কারণে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সম্ভব হয়নি। বিএনপি-জামায়াত পরিকল্পিতভাবেই বিভিন্ন সময়ে ২৫শে মার্চ কালো রাতের গণহত্যা নিয়ে মিথ্যাচার করেছে।
সব মিলিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে এবং ’৭৫-পরবর্তী সময়ে যারা বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসেছে তাদের ষড়যন্ত্রের কারণেই আমরা এখনো পর্যন্ত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করতে পারি নি। সকাল সাড়ে ৮টায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশনেত্রীর মুক্তি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, লাখো বীর শহীদদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে আদর্শ, চেতনা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম আজকে সেই চেতনা এবং আদর্শ সম্পূর্ণভাবে ভূ-লুণ্ঠিত হয়েছে। এদিকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, গণতন্ত্রকে শাসন ব্যবস্থা হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দিতে পেরেছি। সংবিধান অনুমোদনসহ অনেক কিছু অর্জন করলেও দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুরোপুরি গড়ে তোলা হয়নি বলে আমরা অনেকগুলো ঘাটতি লক্ষ্য করছি।
আজকে যে গণতন্ত্র, আমরা মনে করি সেখানে অনেক ঘাটতি আছে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিরোধীদলীয় উপনেতা বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলটির নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম প্রমুখ। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পর্যায়ক্রমে ফুল দিয়ে সম্মান জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গণবিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), সাভার প্রেস ক্লাব, আশুলিয়া প্রেস ক্লাব, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, যুবলীগ, যুব ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, মহিলা পরিষদ, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম দলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দলের সদস্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মহান স্বাধীনতা দিবসে বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে স্মৃতিসৌধে আসেন এবং শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
আজকের শিশু আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে-প্রধানমন্ত্রী: দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে শিশু-কিশোরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। আজকের শিশুদের মধ্যেই কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, বড় বড় চাকরি করবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে ভালোবেসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ে তুলবে। স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোর সমাবেশে দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানকারী সকল শিশুর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে তোমাদেরকেই। তোমরাই গড়ে তুলবে আগামী দিনের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন, এই বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ একটি দেশ। আমরাই জাতির পিতার এই স্বপ্ন পূরণ করবো। তিনি শিশুদের দোয়া ও আশীর্বাদ জানিয়ে বলেন, তোমরা বাবা-মা’র কথা শুনবে, শিক্ষকদের কথা শুনবে, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলবে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে- সেটাই আমরা কামনা করি।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, মাদক এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি পুনরুল্লেখ করে বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের হাত থেকে আমরা দেশকে মুক্ত করতে চাই। আমি শিশু-কিশোর, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দসহ সকলকে আহ্বান জানাবো- মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে আমাদের শিশুদের জানাতে হবে এবং এর হাত থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দেশব্যাপী স্কুল পর্যায়ে অনুষ্ঠিত শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক এই তিন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ৯০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন।
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছে লাখো মানুষ। তাদের সবার কণ্ঠে ছিল সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ। ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচির মধ্যে ছিল শ্রদ্ধা নিবেদন, শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ ও আলোচনা সভা। সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোরদের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান। বিকালে বঙ্গভবনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং কূটনীতিকরা অংশ নেন।
সেখানে অতিথিদের নিয়ে ৪৯তম স্বাধীনতা দিবসের কেক কাটেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।
স্বাধীনতা দিবসে সারা দেশে এক সঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। দিবসটি উপলক্ষে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এদিকে গতকাল সকাল থেকে হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রঙ-বেরঙের ফুল নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন সব বয়সের সাধারণ মানুষ। তাদের হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে স্মরণ করেন স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সূর্য সন্তানদের। মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় শহীদদের প্রতি সালাম জানায়।
বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আবারো স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। এরপর বিচারপতিগণ, তিন বাহিনীর প্রধান ও কূটনীতিকরা শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। স্মৃতিসৌধে ভিআইপিদের শ্রদ্ধা জানানোর পর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপরই পতাকা আর ফুল হাতে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। তাদের শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠতে থাকে স্মৃতিসৌধ। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের কারণে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সম্ভব হয়নি। বিএনপি-জামায়াত পরিকল্পিতভাবেই বিভিন্ন সময়ে ২৫শে মার্চ কালো রাতের গণহত্যা নিয়ে মিথ্যাচার করেছে।
সব মিলিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে এবং ’৭৫-পরবর্তী সময়ে যারা বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসেছে তাদের ষড়যন্ত্রের কারণেই আমরা এখনো পর্যন্ত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করতে পারি নি। সকাল সাড়ে ৮টায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশনেত্রীর মুক্তি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, লাখো বীর শহীদদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে আদর্শ, চেতনা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম আজকে সেই চেতনা এবং আদর্শ সম্পূর্ণভাবে ভূ-লুণ্ঠিত হয়েছে। এদিকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, গণতন্ত্রকে শাসন ব্যবস্থা হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দিতে পেরেছি। সংবিধান অনুমোদনসহ অনেক কিছু অর্জন করলেও দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুরোপুরি গড়ে তোলা হয়নি বলে আমরা অনেকগুলো ঘাটতি লক্ষ্য করছি।
আজকে যে গণতন্ত্র, আমরা মনে করি সেখানে অনেক ঘাটতি আছে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিরোধীদলীয় উপনেতা বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলটির নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম প্রমুখ। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পর্যায়ক্রমে ফুল দিয়ে সম্মান জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গণবিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), সাভার প্রেস ক্লাব, আশুলিয়া প্রেস ক্লাব, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, যুবলীগ, যুব ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, মহিলা পরিষদ, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম দলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দলের সদস্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মহান স্বাধীনতা দিবসে বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে স্মৃতিসৌধে আসেন এবং শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
আজকের শিশু আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে-প্রধানমন্ত্রী: দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে শিশু-কিশোরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। আজকের শিশুদের মধ্যেই কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, বড় বড় চাকরি করবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে ভালোবেসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ে তুলবে। স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোর সমাবেশে দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানকারী সকল শিশুর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে তোমাদেরকেই। তোমরাই গড়ে তুলবে আগামী দিনের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন, এই বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ একটি দেশ। আমরাই জাতির পিতার এই স্বপ্ন পূরণ করবো। তিনি শিশুদের দোয়া ও আশীর্বাদ জানিয়ে বলেন, তোমরা বাবা-মা’র কথা শুনবে, শিক্ষকদের কথা শুনবে, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলবে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে- সেটাই আমরা কামনা করি।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, মাদক এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি পুনরুল্লেখ করে বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের হাত থেকে আমরা দেশকে মুক্ত করতে চাই। আমি শিশু-কিশোর, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দসহ সকলকে আহ্বান জানাবো- মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে আমাদের শিশুদের জানাতে হবে এবং এর হাত থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দেশব্যাপী স্কুল পর্যায়ে অনুষ্ঠিত শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক এই তিন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ৯০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন।
No comments