কাশ্মীর স্থানীয়দের জন্য নিরাপদ নয়
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgWKw8rBAw_afvhElqc4THH9BpNbMLFoDpy5OmgvGSln2kKAgtB7DRv3QVsSvH6DV-fBHAlbIwRdenHYczWCL-foX0wjvrVZsCDbyJOSERpL4S-j1fAxSBfnp77eCueVh6vL-0AAjW9GAM/s400/ksmr.jpg)
কাশ্মীরের
শ্রীনগরে তার বাড়ির ওপর দিয়ে প্রথম যখন জঙ্গি বিমান উড়ে যাচ্ছিল, তার
কিছুক্ষণ পর ৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইউসুফ জানতে পারেন, খারাপ কিছু ঘটতে
যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ১০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের একটি স্কুলে গণিত
পড়ান মোহাম্মদ ইউসুফ। মাথার ওপরে জঙ্গি বিমানের গর্জন এর আগে কখনও তিনি
শোনেননি বলে জানান। রাজধানী শ্রীনগরে গত সপ্তাহের আগে যুদ্ধবিমানের এমন
গর্জন নিকটাতীতে শোনা যায়নি।
জঙ্গি বিমানের গর্জন যখন ইউসুফের কানে আসে, তখন রাত সোয়া ৩টার বেশি বাজে। তখনও কেউ জানতেন না যে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারত-পাকিস্তান পরস্পরের ভ‚মিতে বিমান হামলা চালাতে যাচ্ছে। ইউসুফ বলেন,জঙ্গি বিমানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে আতঙ্কিত হয়ে সবাই ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসি।
এই-ই হচ্ছে শ্রীনগরের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। পরমাণু শক্তিধর ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতার মাঝখানে তাদের অবস্থান।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সেনা অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর একটি হচ্ছে কাশ্মীর। পাহাড়েঘেরা এই ছোট্ট উপত্যকাটিতে প্রায় সাত লাখ ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে।
সশস্ত্র পুলিশের বিপুল অবস্থান সত্তে¡ও বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য হচ্ছে কাশ্মীর। ডাল লেকের চোখ জুড়ানো দৃশ্য ও ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে সেখানে। ৪০০ বছরের পুরনো মোগল আমলের পরীমহল দেখতে পর্যটকরা ছুটে যান কাশ্মীরে। কিন্তু পরীর নিবাসখ্যাত এই গার্ডেনেও ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর একটি ছোট্ট ক্যাম্প বসানো রয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় হামলার পর কাশ্মীরে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে।
ঝিলাম নদে যাত্রী পারাপার করেন আবদুল কারিম কালু। সতিনি বলেন, বাস্তবিকভাবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। সংঘাতের কারণে কাশ্মীরের লোকজনের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক কাজ করছে।
কালু সবসময় নিজের দুই নাতনির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। তিনি বলেন, যারা সকালে রুটি-রুজির সন্ধানে ঘর থেকে বের হন, সন্ধ্যায় তারা জীবিত ফিরতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
কাশ্মীরের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এক দোকানির সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বিচলিত বোধ করেন। কীভাবে পাক-ভারত সংঘাত তার ব্যবসা ধ্বংস করে দিয়েছে, সে কথা জানান ২৫ বছর বয়সী যুবক আবিদ খাপড়া।
কথা বলার সময় তার ভেতর খুবই আবেগ দেখা গেছে। বেদনার সঙ্গে তিনি বলেন, দিনে দিনে আমরা হতাশ হয়ে পড়ছি। অর্থনৈতিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে। এভাবেই খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের।
শ্রীনগরে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে দাঙ্গা পুলিশ। ১৪ ফেব্রুয়ারির হামলার পর থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় অভিযান চলছে। কাজেই পুলিশের বাধায় নিজের দোকানে যেতে পারেন না আবিদ খাপড়া। এতে তার আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, যখনই আমি বাইরে বের হই, দেখি দাঙ্গা পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমি হয়রানির শিকার হই। দোকানে যেতে পারি না।
আবিদ বলেন, ভারতের কোথাও গেলে সেনাবাহিনী আপনাকে সহায়তা করবে। কিন্তু এখানে একজন সেনার কাছে অপরিচিত জায়গার ঠিকানা জিজ্ঞাসা করতেও সাহস পাবেন না। সেনাসদস্যরা যদি খারাপ কিছুও করে, তবে সে জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হয় না।
একটি ক্যাফেতে খেতে গিয়ে পছন্দের খাবার পাননি ২২ বছর বয়স্কা চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আবরু জান। তিনি বলেন, পুলওয়ামায় হামলার পর ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর আচরণে পরিবর্তন চলে এসেছে। সেনাসদস্যরা আমাদের তাদের শত্রু মনে করছে।
আবরু জান বলেন, একজন কাশ্মীরি হিসেবে স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যদের বেদনা আমি বুঝতে পারি। আমরা সবাই কাউকে না কাউকে হারিয়েছি। আমাদের গ্রামে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। বন্দুকের গুলিতে তরুণদের আহত হতে দেখেছি।
বাইরে বের হলেই সশস্ত্র পুলিশের মুখোমুখি হতে হয় বলেও জানান এ মেডিকেলছাত্রী। বললেন, এখানে অনেক বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। এখানে বহু সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতির এতই অবনতি ঘটেছে যে, কাশ্মীরিদের জন্য কাশ্মীর কোনো নিরাপদ বাসস্থান নয়।
‘পুলওয়ামার আগে মনে হয়েছিল, পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটছে। স্বাভাবিক না হলেও চলাফেরা করা যেত। কিন্তু বর্তমানে পাকিস্তান ও ভারত সংঘাতের দিকে চলে গেছে। আর সেই সংঘাতের মাঝে রয়েছে কাশ্মীর।’
ঘাসে ঢাকা নদীর তীরে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলেন ২১ বছর বয়সী কম্পিউটার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবরার। তার একটি ভালো চাকরি আছে। কাজেই তিনি কিছুটা আশাবাদী মানুষ।
তার পরও তিনি বলেন, আতঙ্কে শহরে সপ্তাহখানেক রাতে ঘুমাতে পারিনি। শ্রীনগরের রাস্তায় এই প্রথমবারের মতো আমি উত্তেজনা টের পেলাম। আমরা খুবই হতাশ। বাড়িতে নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছি না।’
এই কম্পিউটার প্রকৌশলী বলেন, এখানে কারও ভবিষ্যৎ নেই। কোনো শিশু, নারী-পুরুষ কিংবা বৃদ্ধ। কেউ নিরাপদ নয়; এমনকি এখানকার কোনো বাড়িতেও কারও নিরাপত্তা নেই। সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট অনলাইন।
জঙ্গি বিমানের গর্জন যখন ইউসুফের কানে আসে, তখন রাত সোয়া ৩টার বেশি বাজে। তখনও কেউ জানতেন না যে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারত-পাকিস্তান পরস্পরের ভ‚মিতে বিমান হামলা চালাতে যাচ্ছে। ইউসুফ বলেন,জঙ্গি বিমানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে আতঙ্কিত হয়ে সবাই ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসি।
এই-ই হচ্ছে শ্রীনগরের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। পরমাণু শক্তিধর ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতার মাঝখানে তাদের অবস্থান।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সেনা অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর একটি হচ্ছে কাশ্মীর। পাহাড়েঘেরা এই ছোট্ট উপত্যকাটিতে প্রায় সাত লাখ ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে।
সশস্ত্র পুলিশের বিপুল অবস্থান সত্তে¡ও বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য হচ্ছে কাশ্মীর। ডাল লেকের চোখ জুড়ানো দৃশ্য ও ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে সেখানে। ৪০০ বছরের পুরনো মোগল আমলের পরীমহল দেখতে পর্যটকরা ছুটে যান কাশ্মীরে। কিন্তু পরীর নিবাসখ্যাত এই গার্ডেনেও ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর একটি ছোট্ট ক্যাম্প বসানো রয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় হামলার পর কাশ্মীরে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে।
ঝিলাম নদে যাত্রী পারাপার করেন আবদুল কারিম কালু। সতিনি বলেন, বাস্তবিকভাবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। সংঘাতের কারণে কাশ্মীরের লোকজনের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক কাজ করছে।
কালু সবসময় নিজের দুই নাতনির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। তিনি বলেন, যারা সকালে রুটি-রুজির সন্ধানে ঘর থেকে বের হন, সন্ধ্যায় তারা জীবিত ফিরতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
কাশ্মীরের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এক দোকানির সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বিচলিত বোধ করেন। কীভাবে পাক-ভারত সংঘাত তার ব্যবসা ধ্বংস করে দিয়েছে, সে কথা জানান ২৫ বছর বয়সী যুবক আবিদ খাপড়া।
কথা বলার সময় তার ভেতর খুবই আবেগ দেখা গেছে। বেদনার সঙ্গে তিনি বলেন, দিনে দিনে আমরা হতাশ হয়ে পড়ছি। অর্থনৈতিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে। এভাবেই খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের।
শ্রীনগরে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে দাঙ্গা পুলিশ। ১৪ ফেব্রুয়ারির হামলার পর থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় অভিযান চলছে। কাজেই পুলিশের বাধায় নিজের দোকানে যেতে পারেন না আবিদ খাপড়া। এতে তার আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, যখনই আমি বাইরে বের হই, দেখি দাঙ্গা পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমি হয়রানির শিকার হই। দোকানে যেতে পারি না।
আবিদ বলেন, ভারতের কোথাও গেলে সেনাবাহিনী আপনাকে সহায়তা করবে। কিন্তু এখানে একজন সেনার কাছে অপরিচিত জায়গার ঠিকানা জিজ্ঞাসা করতেও সাহস পাবেন না। সেনাসদস্যরা যদি খারাপ কিছুও করে, তবে সে জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হয় না।
একটি ক্যাফেতে খেতে গিয়ে পছন্দের খাবার পাননি ২২ বছর বয়স্কা চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আবরু জান। তিনি বলেন, পুলওয়ামায় হামলার পর ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর আচরণে পরিবর্তন চলে এসেছে। সেনাসদস্যরা আমাদের তাদের শত্রু মনে করছে।
আবরু জান বলেন, একজন কাশ্মীরি হিসেবে স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যদের বেদনা আমি বুঝতে পারি। আমরা সবাই কাউকে না কাউকে হারিয়েছি। আমাদের গ্রামে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। বন্দুকের গুলিতে তরুণদের আহত হতে দেখেছি।
বাইরে বের হলেই সশস্ত্র পুলিশের মুখোমুখি হতে হয় বলেও জানান এ মেডিকেলছাত্রী। বললেন, এখানে অনেক বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। এখানে বহু সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতির এতই অবনতি ঘটেছে যে, কাশ্মীরিদের জন্য কাশ্মীর কোনো নিরাপদ বাসস্থান নয়।
‘পুলওয়ামার আগে মনে হয়েছিল, পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটছে। স্বাভাবিক না হলেও চলাফেরা করা যেত। কিন্তু বর্তমানে পাকিস্তান ও ভারত সংঘাতের দিকে চলে গেছে। আর সেই সংঘাতের মাঝে রয়েছে কাশ্মীর।’
ঘাসে ঢাকা নদীর তীরে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলেন ২১ বছর বয়সী কম্পিউটার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবরার। তার একটি ভালো চাকরি আছে। কাজেই তিনি কিছুটা আশাবাদী মানুষ।
তার পরও তিনি বলেন, আতঙ্কে শহরে সপ্তাহখানেক রাতে ঘুমাতে পারিনি। শ্রীনগরের রাস্তায় এই প্রথমবারের মতো আমি উত্তেজনা টের পেলাম। আমরা খুবই হতাশ। বাড়িতে নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছি না।’
এই কম্পিউটার প্রকৌশলী বলেন, এখানে কারও ভবিষ্যৎ নেই। কোনো শিশু, নারী-পুরুষ কিংবা বৃদ্ধ। কেউ নিরাপদ নয়; এমনকি এখানকার কোনো বাড়িতেও কারও নিরাপত্তা নেই। সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট অনলাইন।
No comments