বর্তমান আমলে পৌর নির্বাচন by ডক্টর তুহিন মালিক
ডক্টর তুহিন মালিক |
এক.
বর্তমান আমলে নির্বাচনের বড় বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে বিজয়ীর নাম কার্যত ভোটের
আগেই জেনে যাওয়া। হোক না সেটা জাতীয় নির্বাচন বা কোনো উপনির্বাচন। সিটি
করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, এমনকি নিজ দলের কাউন্সিলে পর্যন্ত আগেই
বিজয়ীর নাম অনেকেরই জানা হয়ে যায়। শুধু কি নির্বাচনে? দেশের যতসব পাবলিক
পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও পরীক্ষার আগের রাতেই জানা হয়ে যায় কিভাবে? এমনকি
কোর্ট-কাচারিতে মামলা-মোকদ্দমায় পর্যন্ত মন্ত্রী-নেতারা বলে দিচ্ছেন কে কে
জেলে যাচ্ছে, আর কার কার ফাঁসি হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন হওয়ার অনেক আগেই
সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্জন করার মতো, ১৫৩ আসনে ভোট ছাড়াই সরকার গঠিত হয়ে যায়।
ক্ষমতাসীন দলীয় প্রার্থীর ছাড়া বাকি সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের যত
কলাকৌশল আছে, সবই প্রয়োগ করা হয়। ফাঁকফোক দিয়ে কোনোভাবে বিরোধীদলীয় কেউ পাস
করে বসলে তার বিরুদ্ধে দেয়া হয় এমনকি নাশকতার মামলাও। মামলার কারণে পদ
থেকে বরখাস্ত হতে হলো দুই শতাধিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে। সেই চেয়ারে
বসানো হয় নিজেদের পছন্দমতো লোক। তাই বিরোধী দলের কেউ এখন কোনো নির্র্বাচনে
পাস করা মানেই যেন জেলজীবন আর পদ থেকে বরখাস্ত। তা ছাড়া সরকারের সুবিধামতো
যখন তখন আইন করে যেভাবে খুশি নির্বাচন দেয়ার সুযোগ তো রয়েছেই। সুবিধামতো না
হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায় যেকোনো নির্বাচন। তখন আর আইনের
সময়সীমার সীমাবদ্ধতার প্রয়োজন পড়ে না। আবার বিরোধী পক্ষ নির্বাচনে আসার
ঘোষণা দেয়ামাত্রই দিনক্ষণ নড়চড় করা অসাধ্য হয়ে যায়। সাংবিধানিক
বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে কর্মকর্তারা তখন বীরপুরুষ সেজে বসেন। অথচ এই
বীরপুরুষেরা আবার নির্বাচনের দিন মেরুদণ্ডহীন প্রাণী হয়ে যায়। তবে ৫ শতাংশ
ভোটকে ৪০ শতাংশ বানিয়ে দেয়ার মতো সক্ষমতা কিন্তু ঠিকই ধরে রাখেন। রাজনৈতিক
দলগুলো তাদের যত রকম উপাধিতে ভূষিত করুক না কেন, তাতে কিছু যায় আসে না।
চেয়ার থেকে সোজা দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রমাণ করে বসেন, তাদের মেরুদণ্ড
ঠিকই আছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারুন আর না পারুন, তারা তাদের
নিয়োগকর্তার প্রতি সবসময়ই চরম অনুগত, বিশ্বস্ত ও চিরকৃতজ্ঞ।
দুই. এবার আমাদের নির্বাচন কমিশন অদ্ভুত এক পদ্ধতিতে সারা দেশে পৌরসভা নির্বাচন করতে যাচ্ছে। একই নির্বাচনে মেয়ররা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন। আর কাউন্সিলরেরা করবেন স্বতন্ত্র প্রতীকে। বিশ্বে এটা একটা বিরল ঘটনা বটে। নির্বাচনী সভা সমাবেশের ওপর আরোপ করা হয়েছে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা। এমনকি ঘরে বসেও কেউ সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো সভা করতে পারবে না। এটা তো দেখছি, মাসাল ল’ আমলকেও হার মানিয়ে দিয়েছে। জরুরি অবস্থার সময় দেশে জনসভা, শোভাযাত্রা, পথসভা বা ঘরোয়া মিটিং নিষিদ্ধ থাকে সত্য। কিন্তু দেশে কোনো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি। তবু এখন কেন এগুলোর ওপর এত নিষেধাজ্ঞা? এ অবস্থায় নির্বাচনে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন কি না, তাও সন্দেহ। ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের ভাগ্যেই বা কী লেখা আছে কে জানে? কারণ গত উপজেলা ও সিটি নির্বাচনে বেশির ভাগ এলাকায় সে এজেন্টদের খুঁজেও পাওয়া যায়নি। আর এখন তো অবস্থা আরো উদ্বেগজনক। দলের প্রার্থী থেকে শুরু করে পোলিং ও নির্বাচনী এজেন্টরা বেশিরভাগই এখন জেলে। নির্বাচনী প্রচারণার কর্মী-সমর্থকেরাও শত শত মামলার আসামি। এলাকাতে ঢুকতেই সাহস করছেন না ‘মামলা খাওয়া’ পলাতক কর্মী-সমর্থকেরা। তা ছাড়া প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারদলীয় ক্যাডাররা সার্বক্ষণিক মনিটর করছে বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের। ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত নির্ভয়ে পৌঁছাতে পারাটাই এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন কিংবা ঢাকা সিটি নির্বাচনে বর্তমান ইসি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেনি। তাই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনেও ইসি তাদের চিরাচরিত চরিত্রেই আবির্ভূত হবে। তার প্রমাণ, পৌর নির্বাচন সামান্য পেছানো থেকে শুরু করে বিএনপির কিছু পর্যবেক্ষণ ও দাবি নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টাও করা হয়নি।
তিন. তা হলে প্রশ্ন জাগতে পারে, এ অবস্থায় বিএনপি পৌর নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো কেন? কারণ স্বাভাবিক রাজনীতি করার সুযোগ থেকে প্রায় বঞ্চিত হয়ে থাকা বিএনপির কাছে এই পৌর নির্বাচন দল গোছানো ও প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ এনে দিয়েছে। তারা নিশ্চিত জানে ছক কাটা এই নির্বাচনের বাস্তবতা। তার পরও যেন নির্ধারিত হার মেনে নিয়েই বিএনপি তৃণমূলের নেতৃত্বকে চাঙ্গা করতে এই নির্বাচনের সুযোগটিকে হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। এই সুবাদে মাঠপর্যায়ে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসার সাথে সাথে নেতাকর্মীরা দীর্ঘ দিনের অচলায়তন ভেঙে ধানের শীষ নিয়ে মাঠে নামতে পারবেন। আর নির্বাচনের হারজিত, এ দুটোতেই বিএনপির লাভ। জিতলে প্রমাণিত হবে তাদের প্রবল জনসমর্থন। আর হারলে প্রমাণিত হবে, আওয়ামী আমলে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। দুই ক্ষেত্রেই আন্দোলন করার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করা সম্ভব হতে পারে। সে কারণেই হয়তো বিএনপি প্রথমে বিরোধিতা করলেও পরে এ নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সরকার চেয়েছিল, ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারো বিএনপি যাতে নির্বাচনে না আসে। কিন্তু রাজনীতির পাশা খেলায় লাভ বিএনপিরই হয়েছে বেশি। খুন-গুম-হামলা-হামলায় বির্পযস্ত নেতাকর্মীরা এই সুযোগে ঘুরে দাঁড়ানোর একটি সুযোগই পেয়ে গেলো। বিএনপি জানে, তাদের দলীয় প্রার্থীদের প্রার্থিতা গণহারে বাতিল করে দেয়া হতে পারে। এজন্য এবার তারা বিকল্প প্রার্থীও রেখেছেন। ধানের শীষের মনোনয়ন বাতিল হলে বিকল্প প্রার্থীরা তখন স্বতন্ত্র মার্কা নিয়েই লড়াই করবেন। তা ছাড়া জনগণের কাছে তো এটা স্পষ্ট যে, এই নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হচ্ছে না। কারণ গত নভেম্বর মাসের ৫ তারিখ থেকে বিএনপি-জামায়াতের ‘ঘাঁটি’ হিসাবে পরিচিত ৩২ জেলায় র্যাব-পুলিশ-বিজিবি দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে এই দুই দলের হাজারো নেতাকর্মীকে গণগ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, অভিযানের আগে প্রতিটি জেলার এসপিকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের লিস্ট হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখা সেই তালিকা ধরে বিএনপি-জামায়াত নির্মূল অভিযানে নেমেছে। কোথাও কোথাও ঘরের মা-বোনদের পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক বলে কোমরে দড়ি বেঁধে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। আবার জামিনে মুক্তি মিললেও কারাফটক থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরকার গণগ্রেফতারের পাশাপাশি গণহারে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও চার্জশিট দিয়ে এলাকাছাড়া করে রেখেছে। কোথাও বা বাড়িতে বাড়িতে চলছে পুলিশি অভিযান। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের গ্রেফতার থেকে রক্ষা, তাদের জামিনের সুযোগ থাকা এবং পলাতকদের প্রকাশ্যে এসে ভোট চাওয়ার ব্যবস্থা যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয়, তা যেন ইসির কাছে একটা মামাবাড়ির আবদারের মতো মনে হচ্ছে।
চার. এদিকে বিএনপির পৌর নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে সরকার দেখাতে চাইছে, বিএনপি বর্তমান সরকারকে অবৈধ বললেও তাদের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে;’ কিন্তু বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও সবগুলো স্থানীয় সরকারের নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে। কারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ কোনো সরকারের অধীনে হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু থাকা অবস্থাতেও দলীয় সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হতো। বিএনপি এ ক্ষেত্রে তার কৌশল থেকে এবারো সরে আসেনি। তা ছাড়া স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক কারচুপি হলেও বিএনপি কিন্তু প্রথম দিকে বেশ সফলতাও পেয়েছিল। তাই এবার এই কৌশলের সাথে দলের শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনী মাঠে অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রটা পেয়ে বিএনপি অখুশি হওয়ার কথা নয়। সাথে কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি দল গোছানোর সুযোগও পাওয়া গেল। সরকারের স্বেচ্ছাচারী শাসনে এমনিতেই দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় যেকোনো নির্বাচনেই জনগণ স্বাধীনভাবে ভোটদানের সুযোগ পেলে সরকারের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেবে। পৌর নির্বাচনের মতো স্থানীয়ভাবে একে অন্যকে চেনাজানার এরকম নির্বাচনে সরকার কারচুপি করলে তৃণমূলের জনমত আরো ব্যাপকভাবে সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাবে। এতে নতুন করে গণআন্দোলনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে বিএনপি এটিকে কাজে লাগাতে পারবে কি না, সেটাও কোটি টাকার প্রশ্ন।
পাঁচ. কিন্তু প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ সরকার আসলেই কি স্থানীয় সরকারের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে? কারণ কোনো নির্বাচন না দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে জেলা পরিষদগুলো চালানো হচ্ছে। সরকার যাদের এমপি-মন্ত্রী করতে পারেনি, এমন ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্যই জেলা পরিষদগুলোতে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পত্রিকায় দেখলাম ঢাকার জেলা পরিষদের প্রশাসকের বিরুদ্ধেই ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। অন্য দিকে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনার ব্যাপারেও সরকার সংবিধানের মূল জায়গায় আঘাত হেনেছে। সংবিধানের ৫৯(১) অনুচ্ছেদে স্থানীয় সরকার সম্পর্কে বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার দেয়া হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এতদিন এনিয়ে কিছুই করেনি। তার বদলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের প্রত্যেকটি কাঠামো অকেজো করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জেলে দিয়ে আর গণবরখাস্ত করে নিজেদের লোকজনকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রীদের ওপরে খবরদারির জন্য অনির্বাচিত উপদেষ্টাদের দিয়ে কেন মন্ত্রণালয়গুলো চালানো হচ্ছে? স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট জেলার মন্ত্রী-এমপিদের হাতে এতটা অসহায় কেন? নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন কেন হচ্ছে না? আসলে কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় সরকারের সাথে ক্ষমতার ভাগাভাগি করতে নারাজ। আশঙ্কা হয়, দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতের মুঠোয় পুরোপুরি নিয়ে নেয়ার ক্ষেত্র সৃষ্টি করা হলো।
ছয়. এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় নেতাদের স্ত্রী-শ্যালকদের দেখে বেজায় ক্ষুব্ধ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কোটি টাকার বিনিময়ে মাদারিপুরের কালকিনি পৌরসভায় মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগে গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে গণপদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী। তারপরও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি, কোন্দল, হানাহানিতে শাসক দল চরম বিশৃঙ্খলা। দীর্ঘ দিন ক্ষমতার স্বাদ নেয়া আওয়ামী লীগের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ পৌর নির্বাচনে একক প্রার্থী দেয়া। সারা দেশে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠ দখল করে রেখেছেন। দলের পক্ষ থেকে যতই বলা হচ্ছে, তৃণমূলের নেতারাই মনোনয়ন পাবেন; কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটা উল্টো। স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিদের গুণগ্রাহীদের বাদ দিয়ে তৃণমূলের সুপারিশ কতটা কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে, বলা মুশকিল। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, পৌরসভা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ নির্বাচন করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু আইন সংশোধন করে দলীয় মনোনয়ন আর প্রতীক দিলেই কি এসব হানাহানি আর দলীয় কোন্দল বন্ধ হবে? দল থেকে বহিষ্কার করেও কি বিদ্রোহীদের ঠেকানো সম্ভব? এতে দল আরো বিভক্ত ও দুর্বলই হবে। নির্বাচনী মনোনয়নের দৌড়ে হেরে যাওয়া নেতাকর্মীরা গ্রুপ ও পাল্টা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অসংখ্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্ম দেবেন। তখন দলের ভোটগুলো ভাগ হয়ে যাবে বিভিন্ন জনের মাঝে। দলের প্রার্থীর জন্য তখন পাস করা দূরের কথা, সম্মানজনক ভোট পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ অবস্থায় সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হয়েই বরাবরের মতো কারচুপির আশ্রয় নিয়ে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হতে পারে। এতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়বে। আর সহিংসতার সাথে পাল্লা দিয়ে হু হু করে বেড়ে যাবে নির্বাচনকেন্দ্রিক মামলার সংখ্যাও। যে এলাকায় আওয়ামী লীগের যে গ্র“প বেশি শক্তিশালী, সেখানকার ব্যালট তার হাতে থাকবে। তাদের সামাল দিতে প্রশাসন পড়বে তখন মহাবিপদে। দলের চেইন অব কমান্ডের সাথে সাথে প্রশাসনের কমান্ডও ভেঙে যেতে পারে।র হানাহানিতে পটু আওয়ামী লীগের দলীয় সহিংসতার দায় হয়তো বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে গিয়ে পড়বে। নতুন করে আবারো হবে শত শত মামলা আর চার্জশিট। কেউ জেলে, কেউ পলাতক, কেউবা নির্বাচনের তাণ্ডবের শিকার হতে পারে।
লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
e-mail: drtuhinmalik@hotmail.com
দুই. এবার আমাদের নির্বাচন কমিশন অদ্ভুত এক পদ্ধতিতে সারা দেশে পৌরসভা নির্বাচন করতে যাচ্ছে। একই নির্বাচনে মেয়ররা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন। আর কাউন্সিলরেরা করবেন স্বতন্ত্র প্রতীকে। বিশ্বে এটা একটা বিরল ঘটনা বটে। নির্বাচনী সভা সমাবেশের ওপর আরোপ করা হয়েছে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা। এমনকি ঘরে বসেও কেউ সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো সভা করতে পারবে না। এটা তো দেখছি, মাসাল ল’ আমলকেও হার মানিয়ে দিয়েছে। জরুরি অবস্থার সময় দেশে জনসভা, শোভাযাত্রা, পথসভা বা ঘরোয়া মিটিং নিষিদ্ধ থাকে সত্য। কিন্তু দেশে কোনো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি। তবু এখন কেন এগুলোর ওপর এত নিষেধাজ্ঞা? এ অবস্থায় নির্বাচনে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন কি না, তাও সন্দেহ। ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের ভাগ্যেই বা কী লেখা আছে কে জানে? কারণ গত উপজেলা ও সিটি নির্বাচনে বেশির ভাগ এলাকায় সে এজেন্টদের খুঁজেও পাওয়া যায়নি। আর এখন তো অবস্থা আরো উদ্বেগজনক। দলের প্রার্থী থেকে শুরু করে পোলিং ও নির্বাচনী এজেন্টরা বেশিরভাগই এখন জেলে। নির্বাচনী প্রচারণার কর্মী-সমর্থকেরাও শত শত মামলার আসামি। এলাকাতে ঢুকতেই সাহস করছেন না ‘মামলা খাওয়া’ পলাতক কর্মী-সমর্থকেরা। তা ছাড়া প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারদলীয় ক্যাডাররা সার্বক্ষণিক মনিটর করছে বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের। ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত নির্ভয়ে পৌঁছাতে পারাটাই এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন কিংবা ঢাকা সিটি নির্বাচনে বর্তমান ইসি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেনি। তাই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনেও ইসি তাদের চিরাচরিত চরিত্রেই আবির্ভূত হবে। তার প্রমাণ, পৌর নির্বাচন সামান্য পেছানো থেকে শুরু করে বিএনপির কিছু পর্যবেক্ষণ ও দাবি নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টাও করা হয়নি।
তিন. তা হলে প্রশ্ন জাগতে পারে, এ অবস্থায় বিএনপি পৌর নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো কেন? কারণ স্বাভাবিক রাজনীতি করার সুযোগ থেকে প্রায় বঞ্চিত হয়ে থাকা বিএনপির কাছে এই পৌর নির্বাচন দল গোছানো ও প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ এনে দিয়েছে। তারা নিশ্চিত জানে ছক কাটা এই নির্বাচনের বাস্তবতা। তার পরও যেন নির্ধারিত হার মেনে নিয়েই বিএনপি তৃণমূলের নেতৃত্বকে চাঙ্গা করতে এই নির্বাচনের সুযোগটিকে হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। এই সুবাদে মাঠপর্যায়ে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসার সাথে সাথে নেতাকর্মীরা দীর্ঘ দিনের অচলায়তন ভেঙে ধানের শীষ নিয়ে মাঠে নামতে পারবেন। আর নির্বাচনের হারজিত, এ দুটোতেই বিএনপির লাভ। জিতলে প্রমাণিত হবে তাদের প্রবল জনসমর্থন। আর হারলে প্রমাণিত হবে, আওয়ামী আমলে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। দুই ক্ষেত্রেই আন্দোলন করার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করা সম্ভব হতে পারে। সে কারণেই হয়তো বিএনপি প্রথমে বিরোধিতা করলেও পরে এ নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সরকার চেয়েছিল, ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারো বিএনপি যাতে নির্বাচনে না আসে। কিন্তু রাজনীতির পাশা খেলায় লাভ বিএনপিরই হয়েছে বেশি। খুন-গুম-হামলা-হামলায় বির্পযস্ত নেতাকর্মীরা এই সুযোগে ঘুরে দাঁড়ানোর একটি সুযোগই পেয়ে গেলো। বিএনপি জানে, তাদের দলীয় প্রার্থীদের প্রার্থিতা গণহারে বাতিল করে দেয়া হতে পারে। এজন্য এবার তারা বিকল্প প্রার্থীও রেখেছেন। ধানের শীষের মনোনয়ন বাতিল হলে বিকল্প প্রার্থীরা তখন স্বতন্ত্র মার্কা নিয়েই লড়াই করবেন। তা ছাড়া জনগণের কাছে তো এটা স্পষ্ট যে, এই নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হচ্ছে না। কারণ গত নভেম্বর মাসের ৫ তারিখ থেকে বিএনপি-জামায়াতের ‘ঘাঁটি’ হিসাবে পরিচিত ৩২ জেলায় র্যাব-পুলিশ-বিজিবি দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে এই দুই দলের হাজারো নেতাকর্মীকে গণগ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, অভিযানের আগে প্রতিটি জেলার এসপিকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের লিস্ট হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখা সেই তালিকা ধরে বিএনপি-জামায়াত নির্মূল অভিযানে নেমেছে। কোথাও কোথাও ঘরের মা-বোনদের পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক বলে কোমরে দড়ি বেঁধে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। আবার জামিনে মুক্তি মিললেও কারাফটক থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরকার গণগ্রেফতারের পাশাপাশি গণহারে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও চার্জশিট দিয়ে এলাকাছাড়া করে রেখেছে। কোথাও বা বাড়িতে বাড়িতে চলছে পুলিশি অভিযান। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের গ্রেফতার থেকে রক্ষা, তাদের জামিনের সুযোগ থাকা এবং পলাতকদের প্রকাশ্যে এসে ভোট চাওয়ার ব্যবস্থা যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয়, তা যেন ইসির কাছে একটা মামাবাড়ির আবদারের মতো মনে হচ্ছে।
চার. এদিকে বিএনপির পৌর নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে সরকার দেখাতে চাইছে, বিএনপি বর্তমান সরকারকে অবৈধ বললেও তাদের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে;’ কিন্তু বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও সবগুলো স্থানীয় সরকারের নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে। কারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ কোনো সরকারের অধীনে হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু থাকা অবস্থাতেও দলীয় সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হতো। বিএনপি এ ক্ষেত্রে তার কৌশল থেকে এবারো সরে আসেনি। তা ছাড়া স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক কারচুপি হলেও বিএনপি কিন্তু প্রথম দিকে বেশ সফলতাও পেয়েছিল। তাই এবার এই কৌশলের সাথে দলের শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনী মাঠে অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রটা পেয়ে বিএনপি অখুশি হওয়ার কথা নয়। সাথে কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি দল গোছানোর সুযোগও পাওয়া গেল। সরকারের স্বেচ্ছাচারী শাসনে এমনিতেই দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় যেকোনো নির্বাচনেই জনগণ স্বাধীনভাবে ভোটদানের সুযোগ পেলে সরকারের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেবে। পৌর নির্বাচনের মতো স্থানীয়ভাবে একে অন্যকে চেনাজানার এরকম নির্বাচনে সরকার কারচুপি করলে তৃণমূলের জনমত আরো ব্যাপকভাবে সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাবে। এতে নতুন করে গণআন্দোলনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে বিএনপি এটিকে কাজে লাগাতে পারবে কি না, সেটাও কোটি টাকার প্রশ্ন।
পাঁচ. কিন্তু প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ সরকার আসলেই কি স্থানীয় সরকারের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে? কারণ কোনো নির্বাচন না দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে জেলা পরিষদগুলো চালানো হচ্ছে। সরকার যাদের এমপি-মন্ত্রী করতে পারেনি, এমন ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্যই জেলা পরিষদগুলোতে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পত্রিকায় দেখলাম ঢাকার জেলা পরিষদের প্রশাসকের বিরুদ্ধেই ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। অন্য দিকে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনার ব্যাপারেও সরকার সংবিধানের মূল জায়গায় আঘাত হেনেছে। সংবিধানের ৫৯(১) অনুচ্ছেদে স্থানীয় সরকার সম্পর্কে বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার দেয়া হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এতদিন এনিয়ে কিছুই করেনি। তার বদলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের প্রত্যেকটি কাঠামো অকেজো করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জেলে দিয়ে আর গণবরখাস্ত করে নিজেদের লোকজনকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রীদের ওপরে খবরদারির জন্য অনির্বাচিত উপদেষ্টাদের দিয়ে কেন মন্ত্রণালয়গুলো চালানো হচ্ছে? স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট জেলার মন্ত্রী-এমপিদের হাতে এতটা অসহায় কেন? নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন কেন হচ্ছে না? আসলে কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় সরকারের সাথে ক্ষমতার ভাগাভাগি করতে নারাজ। আশঙ্কা হয়, দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতের মুঠোয় পুরোপুরি নিয়ে নেয়ার ক্ষেত্র সৃষ্টি করা হলো।
ছয়. এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় নেতাদের স্ত্রী-শ্যালকদের দেখে বেজায় ক্ষুব্ধ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কোটি টাকার বিনিময়ে মাদারিপুরের কালকিনি পৌরসভায় মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগে গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে গণপদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী। তারপরও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি, কোন্দল, হানাহানিতে শাসক দল চরম বিশৃঙ্খলা। দীর্ঘ দিন ক্ষমতার স্বাদ নেয়া আওয়ামী লীগের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ পৌর নির্বাচনে একক প্রার্থী দেয়া। সারা দেশে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠ দখল করে রেখেছেন। দলের পক্ষ থেকে যতই বলা হচ্ছে, তৃণমূলের নেতারাই মনোনয়ন পাবেন; কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটা উল্টো। স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিদের গুণগ্রাহীদের বাদ দিয়ে তৃণমূলের সুপারিশ কতটা কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে, বলা মুশকিল। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, পৌরসভা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ নির্বাচন করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু আইন সংশোধন করে দলীয় মনোনয়ন আর প্রতীক দিলেই কি এসব হানাহানি আর দলীয় কোন্দল বন্ধ হবে? দল থেকে বহিষ্কার করেও কি বিদ্রোহীদের ঠেকানো সম্ভব? এতে দল আরো বিভক্ত ও দুর্বলই হবে। নির্বাচনী মনোনয়নের দৌড়ে হেরে যাওয়া নেতাকর্মীরা গ্রুপ ও পাল্টা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অসংখ্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্ম দেবেন। তখন দলের ভোটগুলো ভাগ হয়ে যাবে বিভিন্ন জনের মাঝে। দলের প্রার্থীর জন্য তখন পাস করা দূরের কথা, সম্মানজনক ভোট পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ অবস্থায় সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হয়েই বরাবরের মতো কারচুপির আশ্রয় নিয়ে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হতে পারে। এতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়বে। আর সহিংসতার সাথে পাল্লা দিয়ে হু হু করে বেড়ে যাবে নির্বাচনকেন্দ্রিক মামলার সংখ্যাও। যে এলাকায় আওয়ামী লীগের যে গ্র“প বেশি শক্তিশালী, সেখানকার ব্যালট তার হাতে থাকবে। তাদের সামাল দিতে প্রশাসন পড়বে তখন মহাবিপদে। দলের চেইন অব কমান্ডের সাথে সাথে প্রশাসনের কমান্ডও ভেঙে যেতে পারে।র হানাহানিতে পটু আওয়ামী লীগের দলীয় সহিংসতার দায় হয়তো বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে গিয়ে পড়বে। নতুন করে আবারো হবে শত শত মামলা আর চার্জশিট। কেউ জেলে, কেউ পলাতক, কেউবা নির্বাচনের তাণ্ডবের শিকার হতে পারে।
লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
e-mail: drtuhinmalik@hotmail.com
No comments