উপজেলা নির্বাচন
সদ্য সমাপ্ত ১১৫টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে আগের তুলনায় বেশি সরকারি দল-ঘেঁষা বলে প্রতীয়মান হয়েছে। গত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে ডিসিরা নিয়োগ পেয়েছিলেন। এবারও ইসি অবোধগম্য কারণে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা ও কারণ ছাড়াই এডিসিদের নিয়োগ দিয়েছে। এই নির্বাচন ক্যাডার যখন ছিল না, তখন আমরা এর সপক্ষে যুক্তি দিয়েছিলাম। এমনকি ইসি ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও সমস্বরে বলেছেন, নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীলতা যত হ্রাস করা যাবে, ততই ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার ধারণাও জনপ্রিয় হয়েছিল। তাই সাধারণ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানেও ইসির সরকারের খাস তালুকের কর্মকর্তা প্রীতি গ্রহণযোগ্য নয়। এটা ঠিক যে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বর্জন করেছিল। সে সময়ে দেশে একটি সহিংস অবস্থাও চলছিল। সে কারণে ভোট গ্রহণ করতে ইসি তার নিজস্ব কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে সরকারের ওপর অধিকতর নির্ভরশীল হওয়ার প্রবণতা দেখিয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজস্ব কর্মকর্তাদের গুরুত্ব না দেওয়ার সম্ভবত অর্থ হলো সরকারের নিয়ন্ত্রণের পথ সুগম রাখা। গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাইসহ নির্বাচনী অনিয়মের আধিক্য এবং ইসির দায়সারা মনোভাব আমাদের হতবাক করেছে। এমনকি তারা সরকারি দলের প্রশ্রয়ে সংঘটিত অনিয়মের লাগাম টানতেও অনীহা প্রকাশ করেছে। ইসি অদ্ভুত যুক্তি দিয়েছে যে তাদের ক্ষমতা অতীব সীমিত।
সব ক্ষমতা নাকি তাদেরই নিয়োগ করা রিটার্নিং ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের। তাদের এই মনোভাব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ভোটকেন্দ্র দখলসহ নানা অপকর্মে উৎসাহ জুগিয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলেছেন যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসি যা যা করা দরকার তাই করতে পারবে। ভারত ও বাংলাদেশের সংবিধান প্রায় একই ভাষায় নির্বাচন কমিশনকে এখতিয়ার দিয়েছে। আর ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টও বলেছেন, প্রচলিত আইনে কোনো নির্দিষ্ট বিধান না থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারবে। অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ইসির দায়সারা মনোভাব নতুন করে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। বিএনপি ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিলে কী হতে পারত কিংবা দলীয় সরকারের অধীনে ভবিষ্যৎ নির্বাচন করার বিষয়ে বর্তমান ইসির সম্ভাব্য ভূমিকা মূল্যায়নের বিষয়টিও এবার নতুন করে সামনে চলে এসেছে। এর দায়দায়িত্ব ইসিকেই নিতে হবে। আমরা আশা করব, পরের দফার নির্বাচনগুলো যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, সে জন্য ইসি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। অন্যথায় ইসি যেমন স্বকীয়তা হারাবে, তেমনি সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি জনগণের অনাস্থাও বাড়বে।
No comments