ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার ‘সশস্ত্র আগ্রাসন’
ইউক্রেনের সরকার গতকাল শুক্রবার অভিযোগ করেছে, তাদের ক্রিমিয়া অঞ্চলে ‘সশস্ত্র আগ্রাসন’ চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির নৌবাহিনী ক্রিমিয়ার দুটি বিমানবন্দর দখল করে নিয়েছিল। তবে পুনরায় বিমানবন্দর দুটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেনের বাহিনী। এই অবস্থায় দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় নিশ্চয়তা দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন সরকার। এদিকে ইউক্রেনে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ গতকাল শুক্রবার রাশিয়ার এক শহরে সংবাদ সম্মেলনে নিজের দেশের জন্য লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেন। প্রায় তিন মাসের গণ-আন্দোলনের মুখে গত সপ্তাহে পালিয়ে যাওয়ার পর এই প্রথম ইয়ানুকোভিচ প্রকাশ্যে কথা বললেন। তিনি দাবি করেন, তিনি ক্ষমতাচ্যুত নন। জীবন রক্ষার স্বার্থে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
তবে দেশের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করবেন তিনি। ইউক্রেনের বর্তমান পার্লামেন্ট ‘অসাংবিধানিক’ বলেও মন্তব্য করেন ইয়ানুকোভিচ। ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানায়, তাদের স্বায়ত্তশাসিত ক্রিমিয়ার আকাশে গতকাল ১০টিরও বেশি রুশ সামরিক হেলিকপ্টার চক্কর দেয়। রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রিমিয়ার বিমানবন্দর দখলের অভিযোগ এবং এরপর রাশিয়ারই একটি শহর থেকে ইয়ানুকোভিচের সংবাদ সম্মেলনের ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্ব ও মস্কোর মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরসেন আভাকভ অভিযোগ করেন, রুশ নৌবাহিনী গত বৃহস্পতিবার রাতে ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপোল বিমানবন্দর অবরোধ করে এবং অন্য একটি বিমানবন্দরেও ঢুকে পড়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরসেন তাঁর ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যা ঘটছে, একে আমি রুশ বাহিনীর সশস্ত্র আগ্রাসন এবং দখলদারিত্ব বলেই মনে করি।’ তবে বিমানবন্দর দুটি পুনরায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেন ইউক্রেন সরকার। ইউক্রেন সরকার আরও জানায়, গতকাল দক্ষিণ-পশ্চিম ক্রিমিয়ার সিমফারোপোল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও অস্ত্রধারীরা দখল করে। আগের দিন রাশিয়াপন্থী অস্ত্রধারীরা ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট ও কয়েকটি সরকারি দপ্তর দখল করে সেখানে রাশিয়ার পতাকা উত্তোলন করে। তবে ক্রিমিয়ার বিমানবন্দর দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছে রুশ নৌবাহিনী। কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌঘাঁটি সি ফ্লিটের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা ইন্টারফেক্সের এক খবরে বলা হয়, বিমানবন্দর দখল তো দূরে থাক, তাঁদের নৌঘাঁটির কোনো ইউনিট বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসরই হয়নি। গত সপ্তাহে ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়।
রুশ ভাষাভাষীদের অধ্যুষিত ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট ভবন, সরকারি দপ্তর ও সর্বশেষ দুটি বিমানবন্দর দখলের ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি লিথুয়ানিয়া বলেছে, আগামী অধিবেশনে ক্রিমিয়ার-সংকট বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। পশ্চিমা বিশ্ব ক্রিমিয়ার ঘটনাবলিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রীকে মার্কিন সমর্থন: যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী আর্সেনি ইয়াতসেনইউকের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার কথা বলে তাঁর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। দেশটির নতুন নেতারা রাশিয়ার প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এমন অঙ্গীকার ব্যক্ত করল। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাইডেন আবারও ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন, কিয়েভের প্রতি পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখবে ওয়াশিংটন। এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্স।
No comments