মৃত্যু আসন্ন, বুঝতে পেরেছিলেন মহাত্মা?
নাথুরাম গডসের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসনবিরোধী অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধী। মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই কি তিনি তাঁর আশু পরিণতি টের পেয়েছিলেন? দিল্লির বিড়লা হাউসে বাপুর (ভক্তরা মহাত্মা গান্ধীকে এই নামে সম্বোধন করতেন, যার অর্থ পিতা) জীবনের শেষ ৪৮ ঘণ্টায় এমন বেশকিছু অদ্ভুত নজির ছিল। ওই সময় তিনি কাছের ও প্রিয় মানুষদের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন, তিনি হয়তো তাঁদের মাঝে বেশি দিন নেই। নতুন একটি বইয়ে এমন দাবি করা হয়েছে। বইটির নাম মাই এক্সপেরিমেন্ট উইদ গান্ধী। প্রমোদ কাপুরের লেখা এই বইয়ে মহাত্মার জীবনের এমন সব ঘটনার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে, যে সম্পর্কে মানুষ খুব কমই জানে।
বইয়ে বলা হয়, ১৯৪৮ সালের ২৯ জানুয়ারি বিকেলে (হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আগের দিন) গান্ধীজির কাছে আসে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় গৃহহারা একদল বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। তারা অভিযোগ তোলে, তাদের ক্ষয়ক্ষতির জন্য গান্ধীই দায়ী। তাঁকে লক্ষ্য করে তারা বলে, ‘আপনি আমাদের শেষ করে দিয়েছেন। এখন আমাদের পরিত্রাণ দিন; আপনি তল্পিতল্পা নিয়ে হিমালয়ে চলে যান।’ সন্ধ্যায় তিনি তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী নাতনি মানুবিনকে বলেন, ‘ওই মানুষগুলোর করুণ কণ্ঠ ছিল ঈশ্বরের কণ্ঠের মতো। এটিকে তোমার ও আমার মৃত্যুর পরোয়ানা মনে করো।’ ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মাথায় গান্ধীর কাছে আসেন ইন্দিরা, চার বছর বয়সী রাজীব গান্ধী; সঙ্গে জওহরলাল নেহরুর বোন হুথি সিং। গান্ধীর পায়ের ওপর কিছু ফুল রাখেন রাজীব।
তখন তিনি কৌতুকের সুরে রাজীবকে তিরস্কার করে বলেন, ‘তোমরা এটি করবে না। কারণ, কেবল মৃত ব্যক্তির পায়ের কাছে মানুষ ফুল রাখে।’ ৩০ জানুয়ারি সম্ভবত মৃত্যুর চিন্তা ঘিরে ধরেছিল গান্ধীকে। এদিন তিনি অন্তত দুবার নিজের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনেছিলেন। কাশি বাড়লে তাঁকে পেনিসিলিন বড়ি সেবন করতে বলা হলে গান্ধী বলেন, ‘আমি যদি অসুখে মারা যাই...তোমরা বাড়ির ছাদে উঠে চিৎকার করে বলবে, আমি ভুয়া মহাত্মা ছিলাম। ...আর যদি কোনো বিস্ফোরণ ঘটে বা কেউ আমাকে গুলি করে এবং কোনো আক্ষেপ না থাকে, তাহলে তোমরা বলবে, আমি ছিলাম সত্যিকারের মহাত্মা।’ সকালের নাশতা একাই তিনি গোসলখানার দিকে যাচ্ছিলেন। অথচ মানুবিনকে ছাড়া গান্ধী কোথাও যাননি। মানুবিন জানতে চাইলে জবাবে রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তির কথা উল্লেখ করে গান্ধী বলেন, ‘একলা চলো, একলা চলো।’ আশ্চর্যজনক-ভাবে তাই হয়েছিল। গান্ধী প্রার্থনা সভার দিকে একাই হেঁটে যাচ্ছিলেন। সেটাই ছিল তাঁর জীবনের শেষ একলা চলা। টাইমস অব ইন্ডিয়া।
No comments