যুদ্ধের বারুদ নেই, রোমাঞ্চের হাতছানি
দুই দলেরই পরিচিত মঞ্চ। একদল এ নিয়ে ছয়বার উঠল এই মঞ্চে, আরেক দল সর্বশেষ পাঁচবারে চারবার। একদল এই মঞ্চে উঠেই খেই হারিয়ে ফেলে, উপলক্ষের চাপে হারিয়ে ফেলে নিজেদের। আরেক দল এই মঞ্চের সঙ্গেও মানিয়ে নিতে জানে। আগের তিনবারের দুবারই উতরে গেছে দারুণ সাফল্যে। একদলের জন্য চ্যালেঞ্জ নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়া, হাতছানি ইতিহাসের। আরেক দলের লক্ষ্য স্রেফ চার বছর আগের উপাখ্যানটিরই পুনরাবৃত্তি। এই হলো আজকের নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা সেমিফাইনাল—নতুন ইতিহাস আর পুনরাবৃত্তির লড়াই!
লড়াই? বিশ্বকাপের আগে হলে এই ‘লড়াই’ শব্দটাই হাসির খোরাক তোলার জন্য যথেষ্ট ছিল। ভারতের কথা না হয় বাদ দেওয়া গেল, বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ আর সমস্যা-জর্জর পাকিস্তানের কাছে নিজ দেশের মাটিতে হার, সেই দল কীভাবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই লড়াই করবে! কিন্তু হাসির খোরাক হচ্ছে না, আজ নিউজিল্যান্ড জিতে গেলেও খুব বেশি লোক অবাক হবে না। বিশ্বকাপ এতটাই বদলে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে!
মাত্রই এই অক্টোবর-নভেম্বরের কথা। কিন্তু এই বিশ্বকাপের দলটার সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত সফরের দলটার এতটাই পার্থক্য যে, মনে হচ্ছে ওই নিউজিল্যান্ড যেন সেই কবেকার কথা! গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে, কোয়ার্টার ফাইনালে স্তম্ভিত করে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। গোটা ক্রিকেট-বিশ্বকেও কি নয়?
তবে এই বিশ্বকাপের নিউজিল্যান্ডকেই তো আবার উড়িয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা, সেটাও মাত্র এক ম্যাচ আগে এবং অন্য দেশের মাটিতে (মুম্বাই)। নিজেদের কন্ডিশনে তো তাহলে আরও সহজে জিতে যাবে শ্রীলঙ্কা! কুমার সাঙ্গাকারা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন, ‘এমন কথা আমরা মাথাতেই আনছি না। এটা বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ম্যাচ, আত্মতুষ্টি বা হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পরিস্থিতি বুঝতে হবে, যেকোনো চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আগের ম্যাচের জয় আমাদের এখানে জেতাবে না। সম্পূর্ণ নতুন ম্যাচ। আমাদের ভালো খেলেই জিততে হবে।’
‘সম্পূর্ণ নতুন ম্যাচ’—সাঙ্গাকারার এই কথাটাই ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচটার কথা তাঁরা মাথাতেই রাখতে চান না। ওই ম্যাচের পরই যেখানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সুখস্মৃতি, তাকাবেনই বা কেন! ভেট্টোরি অবশ্য একেবারেই ভুলে যেতে চান না, সতীর্থদের মনে করিয়ে দিয়েছেন ওই ম্যাচের ভুলগুলো যেন না হয়।
আজ অবশ্য মুম্বাই ম্যাচের চেয়েও চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে ভেট্টোরিদের জন্য। সামনে তিন স্পিনার! এর চেয়েও বড় খবর, ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা খেলা যে উইকেটে হয়েছে, আজকের ম্যাচও হচ্ছে সেখানেই। ভেট্টোরির মতো ভদ্রলোকও যেটা নিয়ে সামান্য ‘আওয়াজ’ তুললেন, ‘আমাদের জানানো হয়েছে ইংল্যান্ড ম্যাচের উইকেটেই সেমিফাইনাল হবে। কাজেই দলেও নিশ্চয়ই ওরা পরিবর্তন আনবে না, তিন স্পিনারই হয়তো থাকবে। টানা দুটো ম্যাচ একই উইকেটে, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মতো ম্যাচ ব্যবহূত উইকেটে হওয়া বিস্ময়কর তো বটেই। আমরা ভেবেছিলাম, নতুন উইকেটে খেলা হওয়াই নিয়ম, কিন্তু সেটা হচ্ছে না।’
তবে ক্রিকেট-বিধাতা হাত বাড়াতে পারেন নিউজিল্যান্ডের দিকে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যা খবর, তাতে আজ মুত্তিয়া মুরালিধরনের খেলার সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি। মুম্বাইয়ে ৪ উইকেট নিয়ে কিউইদের মূল হন্তারক ছিলেন ৩৯ বছরের ‘তরুণই’। কিন্তু ওই ম্যাচ থেকেই আবার বয়ে এনেছেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট। নতুন যোগ হয়েছে হাঁটুর চোট। নিশ্চিত করা যায়নি, তবে কাল কয়েকজন নাকি তাঁকে খুঁড়িয়ে হাঁটতেও দেখেছেন। কোয়ার্টার ফাইনালের আগেও তাঁকে নিয়ে শঙ্কা ছিল। তখন সাঙ্গাকারা জোর দিয়ে বলেছিলেন মুরালি খেলবে এবং খেলেছেনও। কাল সেই সাঙ্গাকারার কণ্ঠেই সংশয়, ‘সংশ্লিষ্ট সবাই ওকে ফিট করে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে ম্যাচের দিন সকালে। ও না খেললেও সমস্যা নেই, আমাদের যথেষ্ট বিকল্প আছে।’ যে ধরনের চোট, অন্য কোনো সময় হলে হয়তো এখনই আনফিট বলে দেওয়া হতো তাঁকে। কিন্তু বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল, হয়ে যেতে পারে মুরালির ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচও। মুরালি যেকোনো মূল্যেই খেলতে চাইবেন। দুই পায়ে ভর দেওয়ার শক্তি থাকলেও মুরালিকে মাঠে নামা থেকে বিরত রাখা কঠিন হবে। আর এই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সেই পরিষ্কার, হাফ-ফিট মুরালিও এখনো অন্য অনেকের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে। ‘ব্যবহূত’ উইকেটে তিন স্পিনার খেলার মানসিক প্রস্তুতি তাই নিয়ে রাখছেন ভেট্টোরিরা।
একই উইকেট নিয়ে ভেট্টোরির বিস্ময় প্রকাশের ঘণ্টা দেড়েক আগেই সাঙ্গাকারার সংবাদ সম্মেলন হয়ে গেছে বলে শ্রীলঙ্কা অধিনায়কের প্রতিক্রিয়াটা জানা গেল না। মোহালিতে ভারত-পাকিস্তানের সেমিফাইনালের মতো যুদ্ধ-যুদ্ধ রবটা এখানে নেই। সাঙ্গাকারাও ভেট্টোরির জবাবে কিছু বললে হয়তো মাঠের বাইরে কিছুটা উত্তাপ ছড়াত।
তবে উত্তাপ না থাকলেও রোমাঞ্চ ঠিকই আছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা দলটি কি পারবে রূপকথার জন্ম দিতে? দীর্ঘদিন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতীক হয়ে থাকা ভেট্টোরি কি পারবেন অধিনায়কত্বের শেষ টুর্নামেন্টে নতুন ইতিহাস গড়তে? উপচে পড়া গ্যালারি, গোটা জাতির প্রত্যাশা—সাঙ্গাকারারা নিজ দেশের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল জিতলে জাতির জন্য এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে! ইতিহাস গড়া, না প্রত্যাশা পূরণ—কোনটির জয় হবে আজ?
লড়াই? বিশ্বকাপের আগে হলে এই ‘লড়াই’ শব্দটাই হাসির খোরাক তোলার জন্য যথেষ্ট ছিল। ভারতের কথা না হয় বাদ দেওয়া গেল, বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ আর সমস্যা-জর্জর পাকিস্তানের কাছে নিজ দেশের মাটিতে হার, সেই দল কীভাবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই লড়াই করবে! কিন্তু হাসির খোরাক হচ্ছে না, আজ নিউজিল্যান্ড জিতে গেলেও খুব বেশি লোক অবাক হবে না। বিশ্বকাপ এতটাই বদলে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে!
মাত্রই এই অক্টোবর-নভেম্বরের কথা। কিন্তু এই বিশ্বকাপের দলটার সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত সফরের দলটার এতটাই পার্থক্য যে, মনে হচ্ছে ওই নিউজিল্যান্ড যেন সেই কবেকার কথা! গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে, কোয়ার্টার ফাইনালে স্তম্ভিত করে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। গোটা ক্রিকেট-বিশ্বকেও কি নয়?
তবে এই বিশ্বকাপের নিউজিল্যান্ডকেই তো আবার উড়িয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা, সেটাও মাত্র এক ম্যাচ আগে এবং অন্য দেশের মাটিতে (মুম্বাই)। নিজেদের কন্ডিশনে তো তাহলে আরও সহজে জিতে যাবে শ্রীলঙ্কা! কুমার সাঙ্গাকারা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন, ‘এমন কথা আমরা মাথাতেই আনছি না। এটা বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ম্যাচ, আত্মতুষ্টি বা হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পরিস্থিতি বুঝতে হবে, যেকোনো চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আগের ম্যাচের জয় আমাদের এখানে জেতাবে না। সম্পূর্ণ নতুন ম্যাচ। আমাদের ভালো খেলেই জিততে হবে।’
‘সম্পূর্ণ নতুন ম্যাচ’—সাঙ্গাকারার এই কথাটাই ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচটার কথা তাঁরা মাথাতেই রাখতে চান না। ওই ম্যাচের পরই যেখানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সুখস্মৃতি, তাকাবেনই বা কেন! ভেট্টোরি অবশ্য একেবারেই ভুলে যেতে চান না, সতীর্থদের মনে করিয়ে দিয়েছেন ওই ম্যাচের ভুলগুলো যেন না হয়।
আজ অবশ্য মুম্বাই ম্যাচের চেয়েও চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে ভেট্টোরিদের জন্য। সামনে তিন স্পিনার! এর চেয়েও বড় খবর, ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা খেলা যে উইকেটে হয়েছে, আজকের ম্যাচও হচ্ছে সেখানেই। ভেট্টোরির মতো ভদ্রলোকও যেটা নিয়ে সামান্য ‘আওয়াজ’ তুললেন, ‘আমাদের জানানো হয়েছে ইংল্যান্ড ম্যাচের উইকেটেই সেমিফাইনাল হবে। কাজেই দলেও নিশ্চয়ই ওরা পরিবর্তন আনবে না, তিন স্পিনারই হয়তো থাকবে। টানা দুটো ম্যাচ একই উইকেটে, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মতো ম্যাচ ব্যবহূত উইকেটে হওয়া বিস্ময়কর তো বটেই। আমরা ভেবেছিলাম, নতুন উইকেটে খেলা হওয়াই নিয়ম, কিন্তু সেটা হচ্ছে না।’
তবে ক্রিকেট-বিধাতা হাত বাড়াতে পারেন নিউজিল্যান্ডের দিকে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যা খবর, তাতে আজ মুত্তিয়া মুরালিধরনের খেলার সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি। মুম্বাইয়ে ৪ উইকেট নিয়ে কিউইদের মূল হন্তারক ছিলেন ৩৯ বছরের ‘তরুণই’। কিন্তু ওই ম্যাচ থেকেই আবার বয়ে এনেছেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট। নতুন যোগ হয়েছে হাঁটুর চোট। নিশ্চিত করা যায়নি, তবে কাল কয়েকজন নাকি তাঁকে খুঁড়িয়ে হাঁটতেও দেখেছেন। কোয়ার্টার ফাইনালের আগেও তাঁকে নিয়ে শঙ্কা ছিল। তখন সাঙ্গাকারা জোর দিয়ে বলেছিলেন মুরালি খেলবে এবং খেলেছেনও। কাল সেই সাঙ্গাকারার কণ্ঠেই সংশয়, ‘সংশ্লিষ্ট সবাই ওকে ফিট করে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে ম্যাচের দিন সকালে। ও না খেললেও সমস্যা নেই, আমাদের যথেষ্ট বিকল্প আছে।’ যে ধরনের চোট, অন্য কোনো সময় হলে হয়তো এখনই আনফিট বলে দেওয়া হতো তাঁকে। কিন্তু বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল, হয়ে যেতে পারে মুরালির ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচও। মুরালি যেকোনো মূল্যেই খেলতে চাইবেন। দুই পায়ে ভর দেওয়ার শক্তি থাকলেও মুরালিকে মাঠে নামা থেকে বিরত রাখা কঠিন হবে। আর এই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সেই পরিষ্কার, হাফ-ফিট মুরালিও এখনো অন্য অনেকের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে। ‘ব্যবহূত’ উইকেটে তিন স্পিনার খেলার মানসিক প্রস্তুতি তাই নিয়ে রাখছেন ভেট্টোরিরা।
একই উইকেট নিয়ে ভেট্টোরির বিস্ময় প্রকাশের ঘণ্টা দেড়েক আগেই সাঙ্গাকারার সংবাদ সম্মেলন হয়ে গেছে বলে শ্রীলঙ্কা অধিনায়কের প্রতিক্রিয়াটা জানা গেল না। মোহালিতে ভারত-পাকিস্তানের সেমিফাইনালের মতো যুদ্ধ-যুদ্ধ রবটা এখানে নেই। সাঙ্গাকারাও ভেট্টোরির জবাবে কিছু বললে হয়তো মাঠের বাইরে কিছুটা উত্তাপ ছড়াত।
তবে উত্তাপ না থাকলেও রোমাঞ্চ ঠিকই আছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা দলটি কি পারবে রূপকথার জন্ম দিতে? দীর্ঘদিন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতীক হয়ে থাকা ভেট্টোরি কি পারবেন অধিনায়কত্বের শেষ টুর্নামেন্টে নতুন ইতিহাস গড়তে? উপচে পড়া গ্যালারি, গোটা জাতির প্রত্যাশা—সাঙ্গাকারারা নিজ দেশের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল জিতলে জাতির জন্য এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে! ইতিহাস গড়া, না প্রত্যাশা পূরণ—কোনটির জয় হবে আজ?
No comments