বিশ্ব আবহাওয়া বনাম বাংলাদেশ পরিবেশ by এবিএম মূসা
মালদ্বীপ সরকার গিয়েছিল ভারত মহাসাগরের তলদেশে, নেপাল সরকার উঠেছিল হিমালয়ের চূড়ায়। বিশ্বের ছোট-বড় বাকি প্রায় সব দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান গিয়েছিলেন কোপেনহেগেনে। মালদ্বীপের মন্ত্রিসভার সমুদ্র-তলদেশে ডুব দেওয়া আর নেপালের মন্ত্রীদের পর্বতারোহণ এবং কোপ মহাসম্মেলনের একটিই উদ্দেশ্য ছিল। বিশ্ব জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে জনজীবনের যে চরম ক্ষতি হবে, এ সম্পর্কে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ, অন্তত একটি হইচই সৃষ্টি করা। সামগ্রিক ক্ষতির সাধারণ বিশ্লেষণ হচ্ছে, মালদ্বীপ অচিরেই পানির নিচে তলিয়ে যাবে। নেপাল হিমালয়ের বরফ-গলা পানির নিচে ডুবে যাবে। অন্য অনেক দেশ জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাবে, অথবা বর্তমানে বিলীন আটলান্টা দেশটির অনুসরণে মহাবিশ্বকে একটি মহাসাগরে পরিণত করবে। মালদ্বীপ ও নেপালের অভূতপূর্ব কর্মসূচিতে বিশ্বে কতখানি সাড়া পড়েছিল বোঝা যায়নি। তবে কোপেনহেগেন সম্মেলনে সমবেত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা ‘শেষের সেদিন ভয়ংকর’ বলে অনেক দিকনির্দেশক না হলেও ‘মূল্যবান’ বক্তব্য দিয়েছেন। যেসব দেশকে পরিবেশ বিপণ্ন করে ভবিষ্যতে পৃথিবী ধ্বংসের জন্য দায়ী করা হচ্ছে, সেখান থেকেও লক্ষাধিক প্রতিবাদকারী তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে সম্মেলনের বাইরে জড়ো হয়েছিল।
কোপেনহেগেন সম্মেলন তথা জলবায়ু পরিবর্তন, উচ্চ পরিমণ্ডলে উষ্ণায়ন, কার্বন নামের একটি পদার্থের নিঃসরণ ইত্যাকার জটিল বিষয়াদি নিয়ে যে মহা হইচই হয়ে গেল, তা নিয়ে পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ উদ্বেগজনক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কিন্তু আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সেসবের গুরুত্ব কতখানি বুঝেছেন, তা বলতে পারব না। তবে আমি নিজে কোপেনহেগেন থেকে বিশেষ সংবাদদাতাদের প্রতিবেদন আর রাষ্ট্রপ্রধানদের শলাপরামর্শ ও গলাবাজির খবরগুলো পড়ে বিশ্ব সম্মেলনটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব স্বল্পমাত্রায় অনুধাবন করার কোশেশ করেছি। মূল উদ্দেশ্যটি পুরোপুরি বুঝিনি, তবে একটুখানি খটকা লেগেছে, এর মধ্যে টাকা-পয়সার বিষয়টি কেন উঁকি মেরেছে। উষ্ণায়ন আর হিমমণ্ডল সৃষ্টির জন্য ‘উন্নত’ দেশগুলোকে দু-চার পয়সা নয়, দুই হাজার কোটি টাকা জরিমানা করে তহবিল গঠন ও লেনদেনের বিষয়টিও বুঝতে চেয়েছি। কারণ, সম্মেলনের কার্যসূচিতে বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণের কুফলের চেয়ে ক্ষতিপূরণ অধিকতর গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সম্মেলন শেষের সিদ্ধান্ত থেকে এমনটি মনে হয়েছে, কারণ ভাবছি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যা হারাবে, টাকা দিয়ে কি তার সব পাওয়া যাবে? রাজনৈতিক বক্তব্যও আমাকে বিভ্রান্ত করেছে।
আশির দশকে বিশ্বপরিবেশ নিয়ে সবার মনে প্রাথমিক দুশ্চিন্তা অথবা চিন্তাভাবনার সঞ্চার করেছিল ‘গ্রিনহাউস’ আন্দোলন। তাদের মূল বক্তব্য ছিল উন্নত দেশগুলোর শিল্পায়ন, এমনকি সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় অথবা বিলাসসামগ্রী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ-টেলিভিশন এমনকি যন্ত্রচালিত যানবাহনের গ্যাস নিঃসরণ বিশ্বপরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহজ কথায়, তারা বিশ্বকে জানাতে চেয়েছে, গ্যাস নিঃসরণ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে একটি প্রতিবন্ধকতার বলয় সৃষ্টি করছে। এ বলয়ের কারণে পৃথিবী বরফের নিচে চাপা পড়বে। কারণ, সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছানোর পথে একটি আস্তরণ পড়বে। এটি ছিল পরিবেশ ধ্বংস নিয়ে সাধারণ ধারণা। গ্রিনহাউস আন্দোলন পরে রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। কালক্রমে গ্যাস নিঃসরণের বিরুদ্ধে তাদের জোরদার আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং কার্যক্রম পুরোপুরি না হলেও অনেকখানি বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য ইউরোপের কয়েকটি দেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণেই গ্রিন পার্টি এখনো একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল।
গ্রিনহাউস আন্দোলনের এত বছর পর আচম্বিতে গ্যাস নিঃসরণের বৈশ্বিক উষ্ণতার দুশ্চিন্তাটি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আবহাওয়া পরিবর্তনে ভয়ংকর পরিস্থিতি উদ্ভবের আশঙ্কা, ভীতি ও দুশ্চিন্তা সাম্প্রতিককালে পরিবেশ-সম্পর্কীয় বিচিত্র সব কারণে এত বিস্তৃতি লাভ করেছে। আমাদের পরিবেশজনিত বর্তমানের নিজস্ব দুর্ভাবনা ভিন্ন ধরনের সমস্যা, যা আমাদেরই সৃষ্ট। আমাদের নীতিনির্ধারক মহারথিরা কোপেনহেগেনে আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে মহা দুর্ভাবনা প্রকাশ করেছেন। নিজ দেশের পরিবেশ ধ্বংস নিয়ে তাঁরা কতখানি উদ্বিগ্ন, নিজ দেশের পরিবেশ সংরক্ষণে কতখানি আন্তরিক? এ কারণে বিশ্ব পরিমণ্ডলে ভয়ংকর পরিস্থিতি আর স্বদেশে পরিবেশ ধ্বংস, এই দুইয়ের মধ্যে কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, এই ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। আগেই বলেছি, বাংলাদেশে পরিবেশ ধ্বংসের আশঙ্কাটি দেশেরই স্বার্থান্বেষী ও তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের সৃষ্টি। বিশ্ব নিয়ে দুুশ্চিন্তার বৃহত্তর পরিধির তুলনায় আমাদের দেশের জনগণের কাছে নিজেদের সংকটের গুরুত্ব অধিকতর। তা কি কোপ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী আমাদের নেতারা বোঝেন? বুঝলেও কতখানি গুরুত্ব দিচ্ছেন?
উল্লেখ্য, বিশ্বের সব বিজ্ঞ, স্বল্প বৃহত্ শক্তিমান ব্যক্তি কোপেনহেগেনে একত্র হয়ে দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। একটি হচ্ছে, বৃহত্ দেশের শিল্পায়নের পরিধি সংকুচিত করতে হবে। দুই. যেহেতু তাদের শিল্পায়ন দুনিয়ার বাকি সব, এমনকি তাদের নিজেদের দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও বিশ্ব ভূপরিমণ্ডলের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ হয়েছে, সে জন্য তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এরই মধ্যে এ দুটি বিষয় বিশ্বগ্রাসী সমস্যাবলির রাজনৈতিক নাকি অর্থনৈতিক পরিধির অন্তর্ভুক্ত, তা নিয়েও কোপেনহেগেনে ধুমধাড়াক্কা আলোচনা হয়েছে। কী অদ্ভুত ব্যাপার, বিশ্ববায়ুতে ক্ষতিকর প্রভাবটি প্রথম দিকে গণমানুষের অস্তিত্ব সংকটের প্রেক্ষাপটে বিবেচনায় এসেছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে দেখা গেল, এটি অর্থনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য আলোচ্য বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, কী আর করা যাবে, এখন ক্ষতিপূরণ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। সেই ভাবনাই হবে গরিব দেশগুলোর জন্য অধিকতর লাভজনক। সুতরাং ভবিষ্যতে ক্ষতির মাত্রা বাড়লে ক্ষতিপূরণের অঙ্কের পরিমাণ বাড়বে কি না, তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কে কত পাবে, তা নিয়েই মজাদার দরকষাকষির শেষ খবর পড়ে বেশ মজাই পেয়েছি। তদুপরি আমরা, মানে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সুতরাং সর্ববৃহত্ অঙ্কটি পেতে হবে, এই সত্যটি সম্মেলনে অনেকেই মোটামুটি মেনে নিয়েছেন। তাই পাওয়ার অঙ্কটি ৭০০ কোটি টাকা কিংবা অনেক বেশি বলে নির্ধারিত হতে পারে। বুঝতে পারছি, এখন থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি দেশগুলো কোপেনহেগেন থেকে এ প্রাপ্তি নিয়েই দিন গুনতে থাকবে। গোনা শেষ হওয়ার আগে পৃথিবী ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে। যাক না, নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতা দেখার কেউ থাকবে না।
এ তো গেল অর্থনৈতিক আর পরিবেশগত সমস্যা। সর্বশেষ খবরটিই সবচেয়ে আকর্ষণীয়, যা শনিবারের প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে। প্রথম পৃষ্ঠার খবরটি হচ্ছে, ‘কোনো চুক্তি নয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে শেষ হতে চলেছে কোপ-১৫, কোপেনহেগেন সম্মেলন।’ পড়ে মাথা চুলকাচ্ছিলাম, কথা হচ্ছিল আলো-বাতাস নিয়ে, মধ্যিখানে টাকা-পয়সার ফয়সালা নিয়ে দরকষাকষি চলেছে। তাতে বুঝলাম শেষ পর্যন্ত রাজনীতি এল কোত্থেকে! সম্মেলনে ১৯৩টি রাষ্ট্রের পরিবেশবিদ আর অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের আওতামুক্ত হয়ে বিশ্ব জলবায়ু পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের হাতে চলে গেল? তবে অবাক হইনি, আমরাও তো নিজের দেশের পরিবেশ সমস্যা শেষ পর্যন্ত দলীয়, স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় ক্ষমতার রাজনীতির পঙ্কিল পানিতে ডুবিয়েছি। এ জন্যই আমাদের বন-পাহাড়, জঙ্গল-জলাশয় আর নদী-নালা ধ্বংসের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন দেশীয় রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাধরেরা ও তাদের স্বার্থের ভাগিদারেরা। হয়তো এরই পাল্টা ব্যবস্থায়, আমাদের এখন জলবায়ু-সংশ্লিষ্ট বিশ্ব তহবিল নিয়ে ভাবতে হবে। দূষিত পদার্থ নির্গমন বন্ধ হবে, নাকি কমিয়ে আনা হবে, তা নির্ধারিত না হলেও জাতিসংঘ ঘোষিত জলবায়ু তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত ও ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে বেশির ভাগ রাষ্ট্র একমত হয়েছে।’ পত্রিকার পাতায় শেষ খবরটি পড়ে আশ্বস্ত হয়েছি। কোপেনহেগেন থেকে আমরা আর কিছু না-ই পাই, হয়তো প্রচুর টাকা-পয়সা পাব। কত, ৭০০ কোটি নাকি আরও বেশি? তার পরের ভাবনা, (১) এই টাকা দিয়ে আমরা কী করব? (২) বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়, নিজ দেশের পরিবেশ রক্ষা নিয়ে তাদের যে দুর্দশা ভোগ করতে হয়, তা লাঘবে এই অর্থ ব্যবহূত হবে কি?
অভাজনের ওপরের প্রশ্নগুলোর মাজেজা হচ্ছে, কখন সারা বিশ্ব রসাতলে যাবে, তা নিয়ে কোপে যাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, নিজ দেশের তলিয়ে যাওয়ার, সিডরে উড়ে যাওয়ার, বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার ব্যাপারে উঁচুমহলে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা কী ভাবছেন, তা জানতে ইচ্ছে করছে। ঢাকা শহর যে এখনি বছরের অর্ধেক সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকে, নদীমাতৃক বাংলাদেশ যে মরুভূমির দেশ হবে, তা কি শুধু বিশ্ব আবহাওয়া উষ্ণায়নের কারণে? এ প্রশ্নের জবাব কোপেনহেগেন সম্মেলনে যোগদানকারী আমাদের সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে দাবি করা কি অন্যায় হবে? অপ্রাসঙ্গিক হলেও একটি কৌতুককর বক্তব্যে রসবোদ্ধা পাঠকদের সমীপে পেশ করছি। বিশ্বনেতাদের দুশ্চিন্তা হলো, প্রথমত বরফ গলছে এবং এ কারণে সব মহাসমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, ব্যাপক শিল্পায়নের কারণে কার্বন নামের একটি বায়বীয় পদার্থ আবহাওয়ার উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে। রসালো বক্তব্য হচ্ছে, দ্বিতীয়টি নিয়ে আমাদের কোনো দায়দায়িত্ব বা দুশ্চিন্তা নেই। দেশের প্রায় সব শিল্প আমরা নিজেরাই এরই মধ্যে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি, আমাদের অন্তত কার্বন নিয়ে দুুশ্চিন্তা নেই।
আবারও বলছি, উপরিউক্ত দুটি জটিল বিষয় নিয়ে পণ্ডিত ব্যক্তিরা যখন মাথায় মাথা ঠেকিয়ে নিষ্কৃতির উপায় খুঁজছেন, তখন আমরা বঙ্গোপসাগর-তীরের বেড়িবাঁধের গাছ কাটছি, উপকূল অঞ্চলের বন ধ্বংস করছি। এ কি বিশ্ব পরিবেশ সমস্যা, নাকি আমাদের নিজেদের দুশ্চিন্তা? বলাবাহুল্য, আমাদের বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীকে অবশ্য কোপেনহেগেনে এ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করেনি। নেপালের মন্ত্রীরা যখন হিমালয়ে উঠে বরফ-গলা বন্ধ করা নিয়ে নজিরবিহীন বৈঠক করছেন, আমরা তখন বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ আর বালু নদী ভরাট করছি। নদীর স্রোত বন্ধ করে, জলাশয় ভরাট করে জমি-বাড়ি, কল-কারখানা, ব্যবসা প্রসারিত করছি। মালদ্বীপের মতো ক্ষুদ্র দ্বীপগুলো পানিতে ডুবে যাবে—তা নিয়ে আলোচনা করতে যাঁরা কোপেনহেগেনে গেছেন, তাঁদের উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা নিজ দেশে হুমকিধমকিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। যাঁরা বিশ্বপরিবেশ ধ্বংস বন্ধের উপায় নির্ধারণে সুদূর কোপেনহেগেনে গেছেন, তাঁরা কি ঘর হতে শুধু দু পা ফেলিয়া আশুলিয়া, বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ে, সীতাকুণ্ডু অথবা হাতিয়া গিয়েছিলেন?
জানি, উপরিউক্ত ‘অবান্তর’ প্রশ্নগুলো ওপরের মহলের অনেককে ক্ষুব্ধ করবে। এমনিতেই তাঁরা কোপেনহেগেন থেকে এখনই কিছু না-পাওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন। তার পরও আশা করব, শত-হাজার কোটি যদি বাংলাদেশ পায়ও, সেই টাকার একটি ক্ষুদ্রাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে আবার বনায়ন, বেড়িবাঁধগুলো পুনর্নির্মাণ, তুরাগ-বালু শীতলক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধারে, জলাশয় ও জমি দখলকারীদের উচ্ছেদে ব্যয় করা হবে। ভবিষ্যতে আমাদের গ্রহটির পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া নিয়ে হাজারো মাইল দূরের শহরে দুশ্চিন্তার অবসানের উপায় নির্ধারণে সুচিন্তিত ও বাস্তব প্রস্তাব দিয়ে তাঁরা বিশ্ববাসীর বাহবা ও হাততালি পেয়েছেন। এখন দেশের মানুষের প্রশংসা পাওয়ার জন্য নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়, বন রক্ষায় ও লবণাক্ততা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে অন্তত দেশবাসীর প্রশংসা পাবেন। সোমবারের প্রথম আলোর শিরোনাম ‘বাংলাদেশের জলবায়ু কূটনীতি সফল, বাকি লড়াই ক্ষতিপূরণ আদায়ের’। তাই তো আমার জিজ্ঞাসা, সেই লড়াই সফল হলে কি ঢাকা শহরের পানি উদ্ধার করা খাল দিয়ে তরতর করে নেমে যাবে? বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ রক্ষা পাবে?
এবিএম মূসা: সাংবাদিক।
কোপেনহেগেন সম্মেলন তথা জলবায়ু পরিবর্তন, উচ্চ পরিমণ্ডলে উষ্ণায়ন, কার্বন নামের একটি পদার্থের নিঃসরণ ইত্যাকার জটিল বিষয়াদি নিয়ে যে মহা হইচই হয়ে গেল, তা নিয়ে পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ উদ্বেগজনক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কিন্তু আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সেসবের গুরুত্ব কতখানি বুঝেছেন, তা বলতে পারব না। তবে আমি নিজে কোপেনহেগেন থেকে বিশেষ সংবাদদাতাদের প্রতিবেদন আর রাষ্ট্রপ্রধানদের শলাপরামর্শ ও গলাবাজির খবরগুলো পড়ে বিশ্ব সম্মেলনটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব স্বল্পমাত্রায় অনুধাবন করার কোশেশ করেছি। মূল উদ্দেশ্যটি পুরোপুরি বুঝিনি, তবে একটুখানি খটকা লেগেছে, এর মধ্যে টাকা-পয়সার বিষয়টি কেন উঁকি মেরেছে। উষ্ণায়ন আর হিমমণ্ডল সৃষ্টির জন্য ‘উন্নত’ দেশগুলোকে দু-চার পয়সা নয়, দুই হাজার কোটি টাকা জরিমানা করে তহবিল গঠন ও লেনদেনের বিষয়টিও বুঝতে চেয়েছি। কারণ, সম্মেলনের কার্যসূচিতে বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণের কুফলের চেয়ে ক্ষতিপূরণ অধিকতর গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সম্মেলন শেষের সিদ্ধান্ত থেকে এমনটি মনে হয়েছে, কারণ ভাবছি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যা হারাবে, টাকা দিয়ে কি তার সব পাওয়া যাবে? রাজনৈতিক বক্তব্যও আমাকে বিভ্রান্ত করেছে।
আশির দশকে বিশ্বপরিবেশ নিয়ে সবার মনে প্রাথমিক দুশ্চিন্তা অথবা চিন্তাভাবনার সঞ্চার করেছিল ‘গ্রিনহাউস’ আন্দোলন। তাদের মূল বক্তব্য ছিল উন্নত দেশগুলোর শিল্পায়ন, এমনকি সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় অথবা বিলাসসামগ্রী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ-টেলিভিশন এমনকি যন্ত্রচালিত যানবাহনের গ্যাস নিঃসরণ বিশ্বপরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহজ কথায়, তারা বিশ্বকে জানাতে চেয়েছে, গ্যাস নিঃসরণ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে একটি প্রতিবন্ধকতার বলয় সৃষ্টি করছে। এ বলয়ের কারণে পৃথিবী বরফের নিচে চাপা পড়বে। কারণ, সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছানোর পথে একটি আস্তরণ পড়বে। এটি ছিল পরিবেশ ধ্বংস নিয়ে সাধারণ ধারণা। গ্রিনহাউস আন্দোলন পরে রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। কালক্রমে গ্যাস নিঃসরণের বিরুদ্ধে তাদের জোরদার আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং কার্যক্রম পুরোপুরি না হলেও অনেকখানি বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য ইউরোপের কয়েকটি দেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণেই গ্রিন পার্টি এখনো একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল।
গ্রিনহাউস আন্দোলনের এত বছর পর আচম্বিতে গ্যাস নিঃসরণের বৈশ্বিক উষ্ণতার দুশ্চিন্তাটি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আবহাওয়া পরিবর্তনে ভয়ংকর পরিস্থিতি উদ্ভবের আশঙ্কা, ভীতি ও দুশ্চিন্তা সাম্প্রতিককালে পরিবেশ-সম্পর্কীয় বিচিত্র সব কারণে এত বিস্তৃতি লাভ করেছে। আমাদের পরিবেশজনিত বর্তমানের নিজস্ব দুর্ভাবনা ভিন্ন ধরনের সমস্যা, যা আমাদেরই সৃষ্ট। আমাদের নীতিনির্ধারক মহারথিরা কোপেনহেগেনে আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে মহা দুর্ভাবনা প্রকাশ করেছেন। নিজ দেশের পরিবেশ ধ্বংস নিয়ে তাঁরা কতখানি উদ্বিগ্ন, নিজ দেশের পরিবেশ সংরক্ষণে কতখানি আন্তরিক? এ কারণে বিশ্ব পরিমণ্ডলে ভয়ংকর পরিস্থিতি আর স্বদেশে পরিবেশ ধ্বংস, এই দুইয়ের মধ্যে কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, এই ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। আগেই বলেছি, বাংলাদেশে পরিবেশ ধ্বংসের আশঙ্কাটি দেশেরই স্বার্থান্বেষী ও তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের সৃষ্টি। বিশ্ব নিয়ে দুুশ্চিন্তার বৃহত্তর পরিধির তুলনায় আমাদের দেশের জনগণের কাছে নিজেদের সংকটের গুরুত্ব অধিকতর। তা কি কোপ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী আমাদের নেতারা বোঝেন? বুঝলেও কতখানি গুরুত্ব দিচ্ছেন?
উল্লেখ্য, বিশ্বের সব বিজ্ঞ, স্বল্প বৃহত্ শক্তিমান ব্যক্তি কোপেনহেগেনে একত্র হয়ে দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। একটি হচ্ছে, বৃহত্ দেশের শিল্পায়নের পরিধি সংকুচিত করতে হবে। দুই. যেহেতু তাদের শিল্পায়ন দুনিয়ার বাকি সব, এমনকি তাদের নিজেদের দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও বিশ্ব ভূপরিমণ্ডলের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ হয়েছে, সে জন্য তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এরই মধ্যে এ দুটি বিষয় বিশ্বগ্রাসী সমস্যাবলির রাজনৈতিক নাকি অর্থনৈতিক পরিধির অন্তর্ভুক্ত, তা নিয়েও কোপেনহেগেনে ধুমধাড়াক্কা আলোচনা হয়েছে। কী অদ্ভুত ব্যাপার, বিশ্ববায়ুতে ক্ষতিকর প্রভাবটি প্রথম দিকে গণমানুষের অস্তিত্ব সংকটের প্রেক্ষাপটে বিবেচনায় এসেছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে দেখা গেল, এটি অর্থনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য আলোচ্য বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, কী আর করা যাবে, এখন ক্ষতিপূরণ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। সেই ভাবনাই হবে গরিব দেশগুলোর জন্য অধিকতর লাভজনক। সুতরাং ভবিষ্যতে ক্ষতির মাত্রা বাড়লে ক্ষতিপূরণের অঙ্কের পরিমাণ বাড়বে কি না, তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কে কত পাবে, তা নিয়েই মজাদার দরকষাকষির শেষ খবর পড়ে বেশ মজাই পেয়েছি। তদুপরি আমরা, মানে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সুতরাং সর্ববৃহত্ অঙ্কটি পেতে হবে, এই সত্যটি সম্মেলনে অনেকেই মোটামুটি মেনে নিয়েছেন। তাই পাওয়ার অঙ্কটি ৭০০ কোটি টাকা কিংবা অনেক বেশি বলে নির্ধারিত হতে পারে। বুঝতে পারছি, এখন থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি দেশগুলো কোপেনহেগেন থেকে এ প্রাপ্তি নিয়েই দিন গুনতে থাকবে। গোনা শেষ হওয়ার আগে পৃথিবী ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে। যাক না, নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতা দেখার কেউ থাকবে না।
এ তো গেল অর্থনৈতিক আর পরিবেশগত সমস্যা। সর্বশেষ খবরটিই সবচেয়ে আকর্ষণীয়, যা শনিবারের প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে। প্রথম পৃষ্ঠার খবরটি হচ্ছে, ‘কোনো চুক্তি নয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে শেষ হতে চলেছে কোপ-১৫, কোপেনহেগেন সম্মেলন।’ পড়ে মাথা চুলকাচ্ছিলাম, কথা হচ্ছিল আলো-বাতাস নিয়ে, মধ্যিখানে টাকা-পয়সার ফয়সালা নিয়ে দরকষাকষি চলেছে। তাতে বুঝলাম শেষ পর্যন্ত রাজনীতি এল কোত্থেকে! সম্মেলনে ১৯৩টি রাষ্ট্রের পরিবেশবিদ আর অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের আওতামুক্ত হয়ে বিশ্ব জলবায়ু পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের হাতে চলে গেল? তবে অবাক হইনি, আমরাও তো নিজের দেশের পরিবেশ সমস্যা শেষ পর্যন্ত দলীয়, স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় ক্ষমতার রাজনীতির পঙ্কিল পানিতে ডুবিয়েছি। এ জন্যই আমাদের বন-পাহাড়, জঙ্গল-জলাশয় আর নদী-নালা ধ্বংসের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন দেশীয় রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাধরেরা ও তাদের স্বার্থের ভাগিদারেরা। হয়তো এরই পাল্টা ব্যবস্থায়, আমাদের এখন জলবায়ু-সংশ্লিষ্ট বিশ্ব তহবিল নিয়ে ভাবতে হবে। দূষিত পদার্থ নির্গমন বন্ধ হবে, নাকি কমিয়ে আনা হবে, তা নির্ধারিত না হলেও জাতিসংঘ ঘোষিত জলবায়ু তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত ও ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে বেশির ভাগ রাষ্ট্র একমত হয়েছে।’ পত্রিকার পাতায় শেষ খবরটি পড়ে আশ্বস্ত হয়েছি। কোপেনহেগেন থেকে আমরা আর কিছু না-ই পাই, হয়তো প্রচুর টাকা-পয়সা পাব। কত, ৭০০ কোটি নাকি আরও বেশি? তার পরের ভাবনা, (১) এই টাকা দিয়ে আমরা কী করব? (২) বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়, নিজ দেশের পরিবেশ রক্ষা নিয়ে তাদের যে দুর্দশা ভোগ করতে হয়, তা লাঘবে এই অর্থ ব্যবহূত হবে কি?
অভাজনের ওপরের প্রশ্নগুলোর মাজেজা হচ্ছে, কখন সারা বিশ্ব রসাতলে যাবে, তা নিয়ে কোপে যাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, নিজ দেশের তলিয়ে যাওয়ার, সিডরে উড়ে যাওয়ার, বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার ব্যাপারে উঁচুমহলে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা কী ভাবছেন, তা জানতে ইচ্ছে করছে। ঢাকা শহর যে এখনি বছরের অর্ধেক সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকে, নদীমাতৃক বাংলাদেশ যে মরুভূমির দেশ হবে, তা কি শুধু বিশ্ব আবহাওয়া উষ্ণায়নের কারণে? এ প্রশ্নের জবাব কোপেনহেগেন সম্মেলনে যোগদানকারী আমাদের সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে দাবি করা কি অন্যায় হবে? অপ্রাসঙ্গিক হলেও একটি কৌতুককর বক্তব্যে রসবোদ্ধা পাঠকদের সমীপে পেশ করছি। বিশ্বনেতাদের দুশ্চিন্তা হলো, প্রথমত বরফ গলছে এবং এ কারণে সব মহাসমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, ব্যাপক শিল্পায়নের কারণে কার্বন নামের একটি বায়বীয় পদার্থ আবহাওয়ার উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে। রসালো বক্তব্য হচ্ছে, দ্বিতীয়টি নিয়ে আমাদের কোনো দায়দায়িত্ব বা দুশ্চিন্তা নেই। দেশের প্রায় সব শিল্প আমরা নিজেরাই এরই মধ্যে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি, আমাদের অন্তত কার্বন নিয়ে দুুশ্চিন্তা নেই।
আবারও বলছি, উপরিউক্ত দুটি জটিল বিষয় নিয়ে পণ্ডিত ব্যক্তিরা যখন মাথায় মাথা ঠেকিয়ে নিষ্কৃতির উপায় খুঁজছেন, তখন আমরা বঙ্গোপসাগর-তীরের বেড়িবাঁধের গাছ কাটছি, উপকূল অঞ্চলের বন ধ্বংস করছি। এ কি বিশ্ব পরিবেশ সমস্যা, নাকি আমাদের নিজেদের দুশ্চিন্তা? বলাবাহুল্য, আমাদের বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীকে অবশ্য কোপেনহেগেনে এ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করেনি। নেপালের মন্ত্রীরা যখন হিমালয়ে উঠে বরফ-গলা বন্ধ করা নিয়ে নজিরবিহীন বৈঠক করছেন, আমরা তখন বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ আর বালু নদী ভরাট করছি। নদীর স্রোত বন্ধ করে, জলাশয় ভরাট করে জমি-বাড়ি, কল-কারখানা, ব্যবসা প্রসারিত করছি। মালদ্বীপের মতো ক্ষুদ্র দ্বীপগুলো পানিতে ডুবে যাবে—তা নিয়ে আলোচনা করতে যাঁরা কোপেনহেগেনে গেছেন, তাঁদের উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা নিজ দেশে হুমকিধমকিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। যাঁরা বিশ্বপরিবেশ ধ্বংস বন্ধের উপায় নির্ধারণে সুদূর কোপেনহেগেনে গেছেন, তাঁরা কি ঘর হতে শুধু দু পা ফেলিয়া আশুলিয়া, বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ে, সীতাকুণ্ডু অথবা হাতিয়া গিয়েছিলেন?
জানি, উপরিউক্ত ‘অবান্তর’ প্রশ্নগুলো ওপরের মহলের অনেককে ক্ষুব্ধ করবে। এমনিতেই তাঁরা কোপেনহেগেন থেকে এখনই কিছু না-পাওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন। তার পরও আশা করব, শত-হাজার কোটি যদি বাংলাদেশ পায়ও, সেই টাকার একটি ক্ষুদ্রাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে আবার বনায়ন, বেড়িবাঁধগুলো পুনর্নির্মাণ, তুরাগ-বালু শীতলক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধারে, জলাশয় ও জমি দখলকারীদের উচ্ছেদে ব্যয় করা হবে। ভবিষ্যতে আমাদের গ্রহটির পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া নিয়ে হাজারো মাইল দূরের শহরে দুশ্চিন্তার অবসানের উপায় নির্ধারণে সুচিন্তিত ও বাস্তব প্রস্তাব দিয়ে তাঁরা বিশ্ববাসীর বাহবা ও হাততালি পেয়েছেন। এখন দেশের মানুষের প্রশংসা পাওয়ার জন্য নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়, বন রক্ষায় ও লবণাক্ততা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে অন্তত দেশবাসীর প্রশংসা পাবেন। সোমবারের প্রথম আলোর শিরোনাম ‘বাংলাদেশের জলবায়ু কূটনীতি সফল, বাকি লড়াই ক্ষতিপূরণ আদায়ের’। তাই তো আমার জিজ্ঞাসা, সেই লড়াই সফল হলে কি ঢাকা শহরের পানি উদ্ধার করা খাল দিয়ে তরতর করে নেমে যাবে? বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ রক্ষা পাবে?
এবিএম মূসা: সাংবাদিক।
No comments