সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া
তবে ইউনূসের বক্তব্যকে আপত্তিকর এবং নিন্দনীয় বলে অভিহিত করেছেন সেভেন সিস্টার্স অন্তর্ভুক্ত আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। অন্যদিকে ত্রিপুরার মহারাজা তথা তিপ্রা মোথা নেতা প্রদ্যোৎ মাণিক্য বাংলাদেশ থেকে চট্টগ্রামকে আলাদা করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা মঙ্গলবার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যকে স্থলবেষ্টিত বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে তাদের সমুদ্রে প্রবেশের অভিভাবক হিসাবে ব্যাখ্যা করেন। তার এই বক্তব্য আপত্তিকর এবং তীব্র নিন্দনীয়। তিনি লিখেছেন, ইউনূসের এই মন্তব্য ভারতের কৌশলগত ‘চিকেনস নেক’ করিডোরের সাথে জড়িত অবিরাম দুর্বলতার আখ্যানকে তুলে ধরে। ঐতিহাসিকভাবে, এমনকি ভারতের অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলোও বিপজ্জনকভাবে উত্তর-পূর্বকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ পথটি বিচ্ছিন্ন করার পরামর্শ দিয়ে আসছে। পাশাপাশি তিনি আবেদন করেন, ইউনূসের এই মন্তব্য যেন হালকা ভাবে না নেয়া হয়। কারণ এগুলো গভীর কৌশলগত বিবেচনা এবং দীর্ঘস্থায়ী এজেন্ডা প্রতিফলিত করে।
এই আবহে হিমন্তের দাবি, চিকেনস নেক করিডোরের নিচে এবং আশেপাশে আরও মজবুত রেল ও সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা অপরিহার্য। প্রয়োজনে চিকেনস নেককে কার্যকরভাবে বাইপাস করে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে মূল ভূখণ্ডের সংযোগকারী বিকল্প সড়ক পথের সন্ধান করাকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। যদিও এটি উল্লেখযোগ্য ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তবে সংকল্প থাকলে উদ্ভাবনের সাথে এটা অর্জন করা সম্ভব।
ইউনূসের দেয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপুরার তিপ্রা মোথা নেতা প্রদ্যোৎ বলেন, আমাদের আদিবাসীদের সমর্থন নিয়ে সমুদ্রে যাওয়ার পথ তৈরি করার সময় এসেছে ভারতের কাছে। একসময় চট্টগ্রাম শাসন করত এই আদিবাসীরাই। তাই আমরা আর এই অকৃতজ্ঞ শাসনের উপর নির্ভরশীল নই। ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরটি ছেড়ে দেয়া ভারতের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেন প্রদ্যোৎ তিনি বলেন, সে সময় সেখানে বসবাসকারী পাহাড়ি জনগণ ভারতের অংশ হতে চেয়েছিলেন।
রিপোর্টে প্রকাশ, সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে উত্তরপূর্ব ভারতের ৭ রাজ্যকে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন ইউনূস। তিনি নাকি বলেছিলেন, উত্তর-পূর্বে ভারতের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের সমুদ্রে পৌঁছনোর কোনও উপায় নেই। এই অঞ্চলে আমরাই সমুদ্রের দেখভাল করি। এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। এটি চীনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণ হতে পারে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে।
ইউনূসের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল, এক্সে একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, আশ্চর্যজনক যে ইউনূস চীনাদের কাছে প্রকাশ্যে আবেদন করেছেন যে, ভারতের ৭টি রাজ্য স্থলবেষ্টিত। চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে স্বাগত, কিন্তু ৭টি ভারতীয় রাজ্য স্থলবেষ্টিত হওয়ার তাৎপর্য ঠিক কী?
কংগ্রেসের মিডিয়া এবং প্রচার বিভাগের প্রধান পবন খেরা এক্সে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলেছেন, বাংলাদেশ চীনকে ভারতকে ঘেরাও করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের এই মনোভাব আমাদের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য খুবই বিপজ্জনক। সরকার মণিপুরের যত্ন নিচ্ছে না এবং চীন ইতিমধ্যেই অরুণাচলের গ্রামগুলোতে বসতি স্থাপন শুরু করেছে। খেরা আরও বলেছেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি এতটাই করুণ অবস্থায় পৌঁছেছে , যে দেশটির সৃষ্টিতে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, সেই দেশটিও আজ আমাদের বিরুদ্ধে লিপ্ত।
No comments