ভয়ংকর বিপদে ইসরায়েল, গৃহযুদ্ধের শঙ্কা: ইসরায়েলকে দমনে কঠোর বার্তা দিল ইউরোপের এক দেশ

ভয়ংকর বিপদের মুখোমুখি ইসরায়েল। দেশটিতে সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েল গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

সংবাদ মাধ্যম দ্য জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জ্যুইশ পিপল পলিসি ইনস্টিটিউট (জেপিপিআই) পরিচালিত এক নতুন জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ ইসরায়েলি নাগরিক মনে করেন, দেশটির মধ্যে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এটাই বর্তমান পরিস্থিতির প্রতি দেশের জনগণের গভীর উদ্বেগকে প্রতিফলিত করছে।

জরিপটি অনুষ্ঠিত হয় সাবেক সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আহারন বারাকের মার্চ ২০ তারিখে করা এক সতর্কতার প্রেক্ষিতে। তিনি বলেছিলেন, আমরা গৃহযুদ্ধের এক মুহূর্তের দূরত্বে আছি। তার মতে, দেশীয় বিরোধের কারণে এই বিপদ আরও প্রবল হচ্ছে।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ২৭ শতাংশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যে, তারা বারাকের মতামতের সঙ্গে একমত। অন্যদিকে, ৩৩ শতাংশ বলেছেন যে বারাক কিছুটা বাড়িয়ে বলছেন, তবে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা এখনো বাস্তব। ১৬ শতাংশ মনে করেন, গৃহযুদ্ধের কোনো প্রকৃত বিপদ নেই।

জরিপে আরও দেখা গেছে, ডানপন্থি ব্যতীত সব রাজনৈতিক মতাদর্শের জনগণ গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

এর আগে মারিভ সংবাদপত্রে প্রকাশিত অপর এক জরিপে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিচারিক সংস্কারের বিষয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ এবং জনগণের মধ্যে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছিল। এই সময় ৫৮ শতাংশ ইসরায়েলি নাগরিক মনে করেছিল যে বিচারিক সংস্কারের কারণে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সেই প্রতিবাদগুলো ৭ অক্টোবর হামাসের হত্যাযজ্ঞের পর স্থগিত হয়।

ইসরায়েলকে দমনে কঠোর বার্তা দিল ইউরোপের এক দেশ

যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় লাগাতার ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। টানা কয়েক দিন ধরে বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও ভবন ধ্বংসের মাধ্যমে গাজায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

গাজার ভয়ানক এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশ ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা জিউসেপ কন্টে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। খবর আনাদুলো এজেন্সি।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ এপ্রিল) এক্স (পূর্বের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে জিউসেপ কন্টে বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। শুধু গত দুই সপ্তাহেই ৩০০ জনের বেশি শিশু ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে। এসব হামলা মূলত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের এই বর্বরতা মেনে নেওয়া যায় না। অথচ ইতালি ও ইউরোপ এ ব্যাপারে নীরব রয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট কেবল উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছে, যার বাস্তব কোনো ফল নেই।’

কঠোর ভাষায় দেওয়া বার্তায় ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইতালির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই নেতা বলেন, ‘ইসরায়েলের ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। একইসঙ্গে দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের ও তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও প্রয়োজন।’

গাজায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হতাহতের প্রতিবাদে ইতালির মিলান শহরে শত শত মানুষের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানান।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫০ হাজার ৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মুখে পড়লেও ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে।

এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গেল বছরের নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের নির্বিচার ও নৃশংস হামলার জেরে গাজার হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি ও আশ্রয়শিবির ছেড়ে পালাচ্ছেন। ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েলের নির্বিচার ও নৃশংস হামলার জেরে গাজার হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি ও আশ্রয়শিবির ছেড়ে পালাচ্ছেন। ছবি : সংগৃহীত

No comments

Powered by Blogger.